জাহান্নাম অর্থ
জাহান্নাম একটি আরবি শব্দ। যার অর্থ আগুনের গর্ত, শাস্তির স্থান, ভয়ংকর আগুনের সমুদ্র। হাদীস থেকে জানা যায় পৃথিবীর আগুন থেকে জাহান্নামের আগুন প্রায় ৭০ গুণ বেশি উত্তাপ। জাহান্নামিদের খেতে দেয়া হবে যাক্কুম নামক বড় বড় কাঁটাযুক্ত বৃক্ষাদি। তাদের খাবার পানি হবে উত্তপ্ত রক্ত ও পুঁজ। শরীয়তের পরিভাষায় জাহান্নাম অর্থ, যারা আল্লাহপাকের নাফরমানি করে তাদের জন্য যেটা শাস্তির স্থান হিসেবে তৈরি করে রাখা হয়েছে, তাকে জাহান্নাম বলা হয় থাকে।
জাহান্নাম কে সৃষ্টি করেছে?
যেহেতু আল্লাহ একমাত্র স্রষ্টা এবং যদি আল্লাহ
কেবল ভাল কিছুই সৃষ্টি
করেন, তাহলে শয়তান (soitan), কুফর, দোযখ, নিষিদ্ধ কাজ (মুনকারাত ও
মা'সিয়াত) কে সৃষ্টি করেছে? এখানে এসে কঠোর মু'তাযিলাপন্থী চিন্তাবিদগণ নীরব হয়ে গেছেন।
সুন্নাত আল-জামা'আতের
ভাষ্য অনুযায়ী অশুভের দ্বিতীয় স্রষ্টা নেই; তাঁদের মতে
সৃষ্টি করা এবং মানুষের
জন্য তা নির্ধারণ করা
এক জিনিস নয়। উল্লেখিত জিনিসগুলো
তিনি ঠিকই সৃষ্টি করেছেন;
কিন্তু শয়তানের অনুসরণ করা, কুফর অবলম্বন ও
নিষিদ্ধ কাজ করার মাধ্যমে
দোযখের প্রতি গমন মানুষের জন্য
নির্ধারণ তিনি করেন নি
বরং এর বিপরীত আদেশ
দিয়েছেন এবং সমস্ত অশুভ
তৎপরতায় তিনি অসন্তুষ্ট হন
বলে জানিয়ে আল কুরআনের মাধ্যমে জানিয়ে
দিয়েছেন।
তার ইচ্ছা ছাড়া
যেহেতু কোন কাজ হয়
না, তাই যখন কেউ
কুফর বা অসিদ্ধ কাজ
করার জন্য অগ্রসর হয়,
তখন তিনি অনিচ্ছাসত্ত্বেও তার
সে কাজ করার ক্ষমতা
বহাল রাখেন এবং মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে
অসাড় করে দেন না।
কারণ যদি তিনি কেবল
ভাল কাজ করার সময়
ক্ষমতা দেন আর খারাপ
কাজ করার সময় সে
ক্ষমতা প্রত্যাহার করে নেন,
তাহলে
মানুষের ইচ্ছা ও কর্মক্ষমতার স্বাধীনতায়
ক্রমাগত হস্তক্ষেপ করা হয় এবং
সৃষ্টির মাঝে মানুষের যে
অবস্থান তা পরিবর্তিত হয়ে
মানুষ আর এক ধরনের
ফেরেশতায় রূপান্তরিত হয়ে যায়। বস্তুত
এতে মানুষের পার্থিব জীবন অচল হয়ে
যেত এবং আল্লাহপাকের মানুষ
সৃষ্টির পরিকল্পনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতো।
সেজন্য আল্লাহ
তা'আলা একদিকে যেমন
শয়তান, কুফর, দোযখ, নিষিদ্ধ কাজ (মুনকারাত ও
মা'সিয়াত) কে সৃষ্টি করেছেন,
অপরদিকে তেমনি কিতাব ও নবী রাসূলগণকে পাঠিয়ে
ভাল ও মন্দের বিস্তারিত
বর্ণনা সম্বলিত তাঁর বিধান প্রেরণ
করেছেন এবং সব কিছুর
প্রতিফল স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি ভাল কাজের
আদেশ দিয়েছেন, তাতে মহান আল্লাহপাক সন্তুষ্ট হন বলেছেন এবং
তার শুভ পরিণতির কথা
উল্লেখ করেছেন।
অপরদিকে, খারাপ কাজ নিষিদ্ধ করেছেন এবং তার অশুভ পরিণতির কথা মানুষকে স্মরণ করে দিয়েছেন কঠোরভাবে। আর এভাবেই এ জড় জগতের সাময়িক পরিমণ্ডলে প্রতিকূল পরিবেশ ও বিপরীত-ধর্মী আদেশ নিষেধের মাধ্যমে তিনি মানুষের পরীক্ষা করতে চান, যে কোন কোন ব্যক্তি বিশ্বাসী ও সৎকর্মশীল হিসেবে প্রত্যাবৃত্ত হয় বা কেয়ামতের ময়দানে হাজির হন।
অধিকন্তু, ভাল-মন্দ, শুভ-অশুভ, এগুলো মানুষের জন্য প্রযোজ্য। আল্লাহতায়ালার কাছে সব কিছুরই নিজস্ব অবস্থান আছে। কিন্তু তিনি সকলের সব ধারণার বহু ঊর্ধ্বে ও সব কিছুর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।
অনলাইন থেকে সংগৃহীত