ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। ইসলাম হচ্ছে সমগ্র বিশ্বলোকের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে গোটা মানব জাতির জন্যে পাঠানো হেদায়াত (পথনির্দেশ)। মানুষ তার সারা জীবনে যা কিছু করে তার সব কিছুই এর আদেশ নিষেধের আওতাভুক্ত।
আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য, আমাদের শেষ গন্তব্যস্থল ও অন্যান্য প্রাণী-প্রজাতির মধ্যে আমাদের অবস্থান বা মর্যাদা সম্বন্ধে ইসলাম আমাদেরকে অবগত করে এবং সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক তৎপরতাসহ আমাদের সকল ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক কর্মতৎপরতা পরিচালনার সর্বোত্তম পথ প্রদর্শন করে।
ইসলাম অর্থ কি?
‘ইসলাম’ একটি আরবী শব্দ যার মানে হচ্ছে
আত্মসমর্পণ ও আনুগত্য। আত্মসমর্পণ মানে আল্লাহ্ তা'আলার আদেশ-নিষেধকে মেনে নেয়া।
আর আনুগত্য মানে আল্লাহ্ তা'আলার আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী কাজ করা। আল্লাহ তা'আলার নিকট
আত্মসমর্পণ ও তাঁর আনুগত্য আমাদের জীবনে শান্তি নিয়ে আসে। আর ইসলাম’ শব্দের মানেও
‘শান্তি’ ।
ইসলামী জীবন বিধানঃ
যে ব্যক্তি ইসলামী জীবন ব্যবস্থা গ্রহণ
করে ও তার ভিত্তিতে আমল করে সে-ই মুসলমান ।
আল্লাহ মেহেরবান
আল্লাহ নামের পিক
আল্লাহ্
আল্লাহ্’ আরেকটি আরবী শব্দ। এ শব্দটি মহান সৃষ্টিকর্তার মূল নাম। মুসলমানরা মহান সৃষ্টিকর্তাকে বুঝাবার জন্যে আল্লাহ্ শব্দ ব্যবহারকেই বেশী পছন্দ করে। কিন্তু আল্লাহ্’ মানে মুসলমানদের God' নয়, যদিও কিছু লোক এরূপ ভুল ধারণা করে থাকে।
বরং প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে এই যে, মহান সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং এ নামটি নিজের জন্য নির্ধারণ করেছেন। মহান আল্লাহ তাআলা সকলের ও সবকিছুর স্রষ্টা। তিনি এক অতুলনীয় সত্তা; তাঁর কোন পুত্র-কন্যা নেই। মুসলমানদের জন্যে যে কোন কাজ ‘বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা কর্তব্য; এর মানে “আল্লাহর নামে” শুরু করা।
দীন ইসলাম
ইসলাম হচ্ছে শান্তি ও সুন্দরভাবে জীবন যাপনের ব্যবস্থা। আমরা চারদিকে তাকালে দেখতে পাই, সব কিছু- চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্রাদি, সুউচ্চ পাহাড়-পর্বত ও বিশালায়তন মহাসাগরসমূহ এক অপরিবর্তণীয় আইন মেনে চলছে; তা হচ্ছে আল্লাহ তাআলার আইন।
আমরা এ সবের মধ্যে কোন অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলা দেখতে পাই না। সব কিছুই যথাস্থানে রয়েছে। আমরা আল্লাহ্ তা'আলার সৃষ্ট প্রাকৃতিক ব্যবস্থায় নিখুঁত শৃঙ্খলা ও চমৎকার সমন্বয় দেখতে পাচ্ছি । সূর্য প্রতিদিন পূর্ব দিকে উদিত হয় ও পশ্চিম দিকে অস্ত যায়, এ নিয়মের কোন ব্যতিক্রম হয় না । .
চাঁদ ও গ্রহ-নক্ষত্রাদি রাতের বেলা আলো দেয়। রাত চলে যায়, আরেকটি নতুন দিনের আগমন ঘটে, এভাবেই চলতে থাকে। বসন্তকালে ফুল ফোটে এবং গাছপালা সবুজ পত্রপল্লবে ছেয়ে যায়। সব কিছুর জন্যই সুনির্ধারিত নিজস্ব গতিপথ ও পরিণতি বা জীবনচক্র রয়েছে, যার লঙ্ঘন বা ব্যতিক্রম সম্ভব নয়। তোমরা কি কখনো এই সব প্রাকৃতিক শক্তি আল্লাহ্ তা'আলার আইনের লঙ্ঘন হতে দেখেছ? না, কক্ষনো না।
কেন? কেবল এ কারণে যে, তাদেরকে আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদের পক্ষে আল্লাহর আনুগত্য করা ছাড়া অন্য কিছু করা সম্ভব নয়। এ কারণেই আমরা প্রাকৃতিক ব্যবস্থায় চিরস্থায়ী শান্তি দেখতে পাই। কিন্তু মানুষের বিষয়টি আলাদা, আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে ভাল ও মন্দের মধ্য থেকে যে কোনটিকে বেছে নেয়ার জন্যে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও ক্ষমতা দিয়েছেন।
শুধু তা-ই নয়, যেহেতু মানুষ ভুলে যায় ও ভুল করে সেহেতু তিনি আমাদের হেদায়াতের জন্য একের পর এক নবী-রাসূলগণকে (আঃ) তাঁর কিতাবসহ পাঠিয়েছেন এবং এভাবে ভুলে যাওয়া বিষয়গুলোকে বার বার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ্ তা'আলার সর্বশেষ বাণীবাহক (রাসূল) হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং সর্বশেষ কিতাব আল্-কুরআন। আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর আনুগত্য করতে প্রাকৃতিক ভাবে আমাদেরকে বাধ্য করেন নি।
তাঁর আনুগত্য করা বা না করার ব্যাপারে তিনি আমাদেরকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। কেন? কারণ, তিনি আমাদেরকে পরীক্ষা করতে চান। এ পরীক্ষার পরে একটি পুরস্কার ও শাস্তির দিন’ আসবে। এটিই হচ্ছে শেষ বিচারের দিন (ইয়াওমুদ্দীন)।
যারা এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে তাদেরকে জান্নাতে (বেহেশতে) চিরস্থায়ী সুখ-শান্তি দ্বারা পুরস্কৃত করা হবে এবং যারা অকৃতকার্য হবে তাদেরকে জাহান্নামে (দোজখে) ভয়ঙ্কর শাস্তি ভোগ করতে হবে। আমরা আল্লাহ তাআলার আনুগত্য ও তাঁর ইবাদাত-বন্দেগীর মাধ্যমে এ পুরস্কার লাভ করতে ও শাস্তি থেকে বাঁচতে পারি।
আমরা জানি যে, সমগ্র প্রকৃতি জুড়ে শান্তি ও শৃঙ্খলা বিদ্যমান, কারণ, কোন কিছুই কখনোই আল্লাহর আনুগত্যের বরখেলাফ করে না। চন্দ্র-সূর্য, পাহাড়-পর্বত, গাছপালা এবং স্থলভাগ ও সমুদ্রে বিচরণকারী প্রাণীকুল-কোন কিছুই বা কেউই আল্লাহর
আনুগত্য
আনুগত্যের ব্যতিক্রম কিছু করতে পারে না। তারা ঠিক তা-ই করে যা করার জন্যে আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। এ ব্যাপারে তাদের কোন স্বাধীনতা নেই। এ ক্ষেত্রে কেবল মানুষ ও জ্বীনই হচ্ছে ব্যতিক্রম।
(জিন একটি অদৃশ্য প্রজাতি) তাদেরকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দেয়া হয়েছে। এর মানে হচ্ছে, তারা আল্লাহ্ তা'আলার আনুগত্য করবে কি করবে না সে সম্পর্কে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে ও তা অনুসরণ করতে পারে। কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলা নবী-রাসূলগণের (আঃ) মাধ্যমে আমাদের নিকট যে হেদায়াত পাঠিয়েছেন।
আমরা যদি তার অনুসরণ করি তাহলে আমরা যে দুনিয়াতে বসবাস করছি অবশ্যই সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। মানুষের মূল প্রকৃতি অনুযায়ী সকল মানুষই যা কিছু ভাল তা পছন্দ করে, আর যা কিছু মন্দ তা অপছন্দ করে। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা সকলেই সত্যবাদিতা পছন্দ করি ও মিথ্যাকে ঘৃণা করি। এমন কি একজন মিথ্যাবাদীও মিথ্যাবাদী হিসেবে চিহ্নিত বা পরিচিত হওয়া পছন্দ করে না।
কেন? কারণ, আমরা আমাদের অন্তরে জানি যে, মিথ্যা বলা একটি মন্দ কাজ। একইভাবে, অন্যদের সাহায্য করা, দয়া করা, ভদ্র-নম্রতা, পিতামাতা ও শিক্ষকদেরকে সম্মান করা, সততা ও অন্য সমস্ত ভাল আচরণ সব সময়ই পছন্দনীয়।
অন্যদিকে রূঢ়তা, নিষ্ঠুরতা, মিথ্যাচার, অন্যদেরকে কষ্ট দেয়া, পিতা-মাতা ও শিক্ষকদের প্রতি অসম্মান, কাউকে গালি দেয়া বা কারো নাম বিকৃত করণ এবং অন্যান্য খারাপ আচরণকে সকলেই অপছন্দ করে। ইন্নাদ্দীনা ‘ইন্দাল্লাহিল ইসলাম “নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য একমাত্র জীবনব্যবস্থা হচ্ছে ইসলাম।” (islamic life quotes) (সূরাহ আলে ইমরান-৩ঃ ১৯)
মারূফ ও মুনকার
তাই আমরা বলতে পারি যে, মানবপ্রকৃতি যা-কিছু ভাল তাকে পছন্দ করে এবং যা-কিছু মন্দ তাকে অপছন্দ করে। আরবী ভাষায় - কুর’আনের ভাষায় – ভাল কাজকে মা'রূফ’ ( ১) ও মন্দ কাজকে মুনকার’ (২) বলা হয়।
এছাড়া মানব প্রকৃতি শান্তিকে ভালবাসে এবং বিশৃঙ্খলাকে ঘৃণা করে। আল্লাহর আইন মেনে চলার ফলেই শান্তি আসে, আর আল্লাহর আইন অমান্য করার ফলেই বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। বস্তুতঃ শান্তি মানব প্রকৃতিরই অংশবিশেষ; ইসলামই এ শান্তি প্রতিষ্ঠা করে।
একারণেই ইসলামকে প্রকৃতির ধর্ম বলা হয়; আরবী ভাষায় বলা হয় দীনুল ফিত্রাহ। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলাম মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায় ও পাপাচার উৎখাতের জন্যে আহ্বান জানায়।
অন্যায় ও পাপাচারের উৎখাত এবং সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার এ যৌথ প্রচেষ্টাকে ‘জিহাদ’ বলা হয়। ‘জিহাদ’ মানে, সমাজে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং সমাজ থেকে মিথ্যা নিশ্চিহ্ন করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালানোর। জিহাদের লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করা।
অনলাইন থেকে সংগৃহীত