শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই হাদিস আরবি

ইসলামে শ্রমিকের অধিকার ঘাম শুকানোর আগেই মজুরি দিন- Pay the wages or salary before the workers sweat

শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই হাদিস আরবি

রাসুল (সাঃ) এর কাছে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির চুল কোঁকড়ানো। মুখে দারিদ্র্যের ছাপ স্পষ্ট। রাসুল (সাঃ) এর সামনে হাত বাড়িয়ে বললেন, আমাকে কিছু খেতে দাও। নবী (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমার কি কিছুই নেই?' তিনি বললেন, 

'আমার একটা কম্বল আছে।' তিনি বললেন, 'যাও এবং কম্বলটি নিয়ে এসো।' নবীজি যখন কম্বলটি আনলেন, তখন তিনি তা দুই দিরহামে নিলামে বিক্রি করলেন। পরিবারের জন্য খাবার আনতে তিনি তাকে এক দিরহাম দিয়েছিলেন এবং এক দিরহাম দিয়ে একটি কুড়াল কিনেছিলেন এবং নিজের হাতে তার হাতলটি রাখেন; 

এবং সে লোকটিকে বলল, 'কাঠ কেটে আয়' উপার্জনের নির্দেশ দিয়ে (বুখারী ও মুসলিম) মহানবী (সা.) শ্রমের মর্যাদা অনেক উঁচুতে তুলেছেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, 'অতঃপর যখন সালাত শেষ হবে, তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং রিযিক সন্ধান কর (সূরা: জুমা, আয়াত-১০)। 

নবীজী কোরানের নির্দেশনা বাস্তবায়নে উৎসাহিত করেছেন এবং বলেছেন, ‘ফরজ নামাজের পরই হালাল উপার্জন ২য় ফরজ কর্তব্য’ (তিরমিজি)। "হালাল উপার্জনের মধ্যে সর্বোত্তম হল যা কায়িক শ্রম দ্বারা অর্জিত হয়" (সহিহ মুসলিম)। জনগণ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নের চাবিকাঠি হলো শ্রম। 

যে জাতি যত বেশি উদ্যমী ও পরিশ্রমী, সে জাতি তত বেশি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী। অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে যারা শ্রম দেয় তারাই শ্রমিক। আর যারা শ্রমিক নিয়োগ করে এবং তাদের শ্রমের বিনিময়ে মজুরি দেয় তারাই মালিক। 

ইসলাম শ্রমিক-মালিক সম্পর্ককে দাসত্বের দৃষ্টিতে দেখেনি; মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে। ইসলাম মালিক ও শ্রমিকের কর্তব্য ও অধিকার সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে।

ইসলামে শ্রমের মূল্যায়ন কিভাবে করা হয়

কোনো নবীই শ্রমে অনীহা প্রকাশ করেননি। সকল নবীই কায়িক শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। হজরত আদম (আঃ) কৃষিকাজ করতেন। হজরত নূহ (আঃ) কাঠমিস্ত্রি ছিলেন বা কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। 

হজরত সুলাইমান (আঃ)-এর পিতা নবী ও সম্রাট হজরত দাউদ (আ.) কামারের কাজ করতেন। হজরত মুসা (আঃ), হজরত শুয়াইব (আঃ)-এর খামারে ৮-১০ বছর কাজ করেন। এমনকি আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) দীর্ঘদিন মা খাদিজা (রা.)-এর অধীনে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। 

তিনি বলেন, ‘নিজের হাতে কাজ করে অর্জিত খাদ্যের চেয়ে পবিত্র আর কোনো খাদ্য নেই’ (বুখারি শরিফ)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হালাল উপার্জনে ব্যস্ততা আল্লাহর পথেচলার সমতুল্য। 

একজন লোক পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। সাহাবায়ে কেরাম লোকটির হৃষ্টপুষ্ট শরীর দেখে বললেন, এই লোকটি যদি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতেন! রাসুল (সাঃ) বললেন, 

'লোকটি যদি তার ছোট বাচ্চাদের বা তার বৃদ্ধ পিতা-মাতার জন্য উপার্জন করতে বা নিজেকে নির্ভরতা থেকে মুক্ত করতে বের হয় তবে সে আল্লাহর পথে আছে' (হায়সামি)।

অন্য জায়গায় বলেছেন, 'যে ব্যক্তি পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে সন্ধ্যা কাটায়, সে তার সন্ধ্যাকালীন সময়ের গুনাহ মাফ করে ফেলায়' (তাবরানী)।

ইসলামে শ্রমিকের অধিকার

এই পুঁজিবাদী বিশ্বে শ্রেণী বৈষম্য স্পষ্ট। শ্রমিকের ঘামে গড়ে উঠেছে আধুনিক সভ্যতা, তারাই আধুনিক বিশ্বের কাছে সবচেয়ে অবহেলিত। এই শ্রেণী বৈষম্যকে চূর্ণ 

করে ইসলাম বৈষম্যহীন মানবিক ইশতেহার ঘোষণা করেছিল। যার প্রতিটি অংশই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ রক্ষার আহ্বান জানায়। কাউকে বঞ্চিত না করার নির্দেশনা। 

ক. বড় অফিসাররুপী নিয়োগকর্তার কাঁধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হল শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরি পরিশোধ কর’ (বায়হাকী, মিশকাত)। 

যারা শ্রমিকের মজুরি আদায়ে কুণ্ঠাবোধ করে তাদের সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘বকেয়া পরিশোধের ক্ষমতাকে অবহেলা করা জুলুম বা অবিচার’ (বুখারি)। 

হাদিসে কুদসিতে- আল্লাহতায়ালা বলেন, 'কিয়ামতের দিন আমি তাদের বিরুদ্ধে হব, যারা বিশ্বাসঘাতকতা করে, মানুষকে বিক্রি করে এবং যে কাউকে কাজের জন্য নিয়োগ দেয়, সে তার কাজ শেষ করেছে; কিন্তু তিনি তার ন্যায্য মজুরি দেননি' (বুখারি শরীফ)।

খ. নিয়োগকর্তার জন্য এটি আবশ্যক যে শ্রমিককে তার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বা তাকে অক্ষম করে এমন কোন কাজ করতে বাধ্য না করা। 

হজরত শুয়াইব (আ.) হজরত মুসা (আ.)-কে নিযুক্ত করার সময় বলেছিলেন, 'আর আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না; ইনশাআল্লাহ! আপনি আমাকে পরোপকারী পাবেন' (সূরা নং ২৮ঃ ২৬)। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'শ্রমিকরা তোমাদের ভাই, আল্লাহ তাদের উপর তোমাদের কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন। আল্লাহ যার ভাইকে তার দায়িত্বে রেখেছেন, সে যা খাবে তাকে খাওয়াবে এবং সে যা পরবে তাই তাকে পরিধান করাবে। 

তিনি তাকে এমন কঠিন কাজ দেবেন না যা তার সামর্থ্যের বাইরে, তবে যদি কোন কাজ কঠিন হয় তবে সে তাকে সাহায্য করবে' (মুসলিম, মিশকাত)।

গ. মালিকের আরেকটি দায়িত্ব হল শ্রমিককে আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সকল ইবাদত যেমন নামাজ ও রোজা পালনের সুযোগ দেওয়া। উপরন্তু, নিয়োগকর্তা শ্রমিককে তার ধর্ম পালনে উৎসাহিত করবেন। তারা তাদের ধর্ম পালনে সহায়ক হবে। 

যেমন রমজানে কাজ কম করে করানো, ইফতার-সেহরির জন্য সময় দেওয়া ইত্যাদি।

ঘ. নিয়োগকর্তাকে অবশ্যই শ্রমিকের অভিযোগ ও প্রতিকারের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সেটা স্বেচ্ছায় হোক বা আদালতের নির্দেশে। এতে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হয়, নিপীড়ন নির্মূল হয়। 

নিয়োগকর্তা এবং শ্রমিকদের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি পায় এবং অসন্তোষ জন্মায় না।

অবশেষেঃ

আমরা যা ইবাদত বন্দেগী ইসলাম ও জীবনে

যিকির, আজগার, নামাজ, রোজা, হজ্ব ও যাকাত আদায় করে থাকি তা একমাত্র মহান আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি ও মহানবী সাঃ এর দেখানো পথে করতে হবে। আল্লাহপাক কবুল করুন। আমিন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url