ঈমান বৃদ্ধির দোয়া
ঈমান বৃদ্ধির দোয়া
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআন ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর হাদিসে মানবজাতির জন্য যা অবতীর্ণ করেছেন সেগুলোকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করার নামই ঈমান। আরবি ভাষায় ঈমান শব্দের অর্থ বিশ্বাস।
বিশ্বাস একটি বিস্তৃত বিষয়। সন্দেহজনক আচরণ ত্যাগ করাই হলো ঈমান। আল্লাহর সাথে শিরক না করা, আল্লাহর রাসুলের সঙ্গে বিরোধিতা করে না, সৎ কাজের নির্দেশ দেয় এবং খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করাই ঈমান।
আত্মীয়ের সাথে সুসম্পর্ক
বজায় রাখা, গোপনাঙ্গের হেফাজত করা ঈমান, একজনের হক
না মারা, হারাম
হতে বিরত থাকা, মুনাফেকি করা
হতে বিরত থাকা ও ওজন কমানো থেকে বেঁচে থাকার নামই বিশ্বাস বা ঈমান।
ঈমান হলো আল্লাহ কুরআনে যা আদেশ করেছেন তা অনুসরণ করা, আল্লাহ যা ত্যাগ করতে আদেশ করেছেন তা ত্যাগ করা, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যা করেছেন তার অনুসরণ করা এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পথ ব্যতীত অন্য কোন নতুন পথ উদ্ভাবন না করাই হচ্ছে ঈমান। এমনকি রাস্তা থেকে ক্ষতিকারক বস্তু অপসারণ করাও ঈমানের অংশ হিসেবে বিবেচ্য।
ঈমান বা বিশ্বাস একটি সম্পদ
কিন্তু বর্তমান গণতন্ত্রের যুগে সেই বিশ্বাস রক্ষা করা খুবই কঠিন। প্রতিনিয়ত পাপের সাগরে ডুবে থাকা হচ্ছে মানুষকে। অপরাধ এড়ানোর অন্যতম উপায় হল আপনার ঈমান বাড়ানো। আবার সেই ঈমান বাড়াতে কিছু পদ্ধতি মেনে চলতে হবে।
ঈমান বৃদ্ধি করার আমল কি?
কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব যা ঈমান বাড়াতে এবং শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। এই উপায়গুলি দৈনন্দিন অভ্যাসের সাথে সম্পর্কিত। সকল কাজ ইসলামের সাথে সম্পর্কিত। সকল বিষয়ের মধ্যে একটি হল দৃঢ় বিশ্বাস বজায় রাখার জন্য, একজনকে সর্বদা পাপ এড়িয়ে চলতে হবে। নিচে ঈমান বৃদ্ধির কিছু আমলের বিষয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
আল্লাহর পরিচয়
আল্লাহপাকের পরিচয় এবং তাঁর সমস্ত নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করুন। একজন ব্যক্তি যত বেশি আল্লাহপাকের নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে জানবে, নিঃসন্দেহে সে তত বেশি বিশ্বাস করবে আল্লাহপাকের প্রতি ও ঈমানকে শক্ত করতে পারবে। এই কারণেই যারা আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে জানেন তারা যারা জানেন না তাদের চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী বা ঈমানদারী হয়ে থাকে।
আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা
সৃষ্টিতে আল্লাহর নিদর্শন এবং আল্লাহ মানুষকে যে জীবন পদ্ধতি দিয়েছেন তা অধ্যয়ন
করুন। মানুষ যত বেশি আল্লাহর সৃষ্টি
সম্পর্কে চিন্তা করে, তত বেশি
ঈমান বৃদ্ধি করতে পারবে।
আল্লাহ বলেন,
وَفِي الْأَرْضِ آيَاتٌ لِلْمُوقِنِينَ وَفِي أَنفُسِكُمْ أَفَلَا تُبْصِرُونَ
এবং "বিশ্বাসীদের জন্য, পৃথিবীতে নিদর্শন রয়েছে। আর তোমাদের মধ্যেও যা কি তোমরা উপলব্ধি করো না?" (সূরা জারিয়াত: ২০) আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে ধ্যান-জ্ঞান করা এবং অধ্যয়নের মাধ্যমে বিশ্বাস বা ঈমান বৃদ্ধি পায় তার অনেক প্রমাণ রয়েছে।
তৃতীয় নেক আমল করা
বেশি বেশি নেক আমল করা। যত বেশি ভাল কাজ করা যাবে, তত বেশি ঈমান বাড়তে থাকবে। এই ধরনের নেক আমলের মধ্যে রয়েছে মুখের কথার মাধ্যমে বা যিকর-আজকার করা, সালাত, রোজা ও হজ্বের মতো কাজের মাধ্যমে নেক আমল করা যেতে পারে।
এগুলো মাধ্যমেই একমাত্র ইবাদতই ঈমান বাড়ানোর উপায়।
ঈমান ভঙ্গের কারণ বা কমে যাওয়ার
কারণগুলো কি
প্রথম কারণ: আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে অজ্ঞতা ঈমান হারানোর অন্যতম কারণ। কারণ আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে মানুষ যত কম জানবে, ঈমান তত কম হবে।
দ্বিতীয় কারণ: সৃষ্টি ও শরীয়তে আল্লাহর আয়াত অধ্যয়ন করা থেকে বিরত থাকলে। কারণ আল্লাহর সৃষ্টিকে বিবেচনা না করা ঈমানের অভাবের অন্যতম কারণ।
তৃতীয় গুনাহের কাজে থাকা
গুনাহের কাজে শরিক থাকা। কেননা পাপ মনে ও ঈমানের উপর বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া করে থাকে। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لَا يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ
"ঈমান থাকা অবস্থায় কোনো ব্যক্তি ব্যভিচার করতে পারে না।"
চতুর্থ ভালো কাজ না করা
ভালো কাজ না করা ঈমান কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। কিন্তু যদি সে কোনো কারণ ছাড়াই কোনো ওয়াজিব কাজ ত্যাগ করে, তাহলে তার ঈমান নষ্ট হওয়ার সাথে সাথে তাকে শাস্তির মুখে পড়তে হবে। অবশ্য গ্রহণযোগ্য কারণে কোনো ওয়াজিব কাজ বাদ দিলে ঈমানের ঘাটতি হবে, তবে শাস্তি হবে না।
এ কারণেই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারীদেরকে বুদ্ধিবৃত্তিক ও ধর্মীয়ভাবে অপূর্ণ বলেছেন। কারণ হিসেবে, তিনি উল্লেখ করেন যে, যখন তাদের মাসিকের রক্তক্ষরণ হয়, তখন তারা নামাজ ও রোজা থেকে বিরত থাকে। তবে ঋতুস্রাবের সময় নামাজ ও রোজা না রাখার জন্য তাদের দোষ দেওয়া হয় না।
বরং তা না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুরুষদের তুলনায় তাদের আমল কম হওয়ায় তাদের ঈমানও পুরুষদের তুলনায় কম হয়ে থাকে।
দুর্বল
ঈমানের চিহ্ন সমূহ কি কি
- অপরাধের পর কোনো অপরাধবোধ কাজ করবে না।
- হৃদয় শক্ত হয়ে যাবে এবং কুরআন তিলাওয়াত করতে চাইবে না।
- আমল বা ইবাদতের সময় অলসতা চলে আসবে।
- সুন্নাহ্ পালনে অনীহা থাকবে।
- বেশির ভাগ সময় মন-আবেগ খারাপ থাকবে এবং আত্মা বিক্ষুব্ধ হবে।
- কুরআন তেলাওয়াত বা আল্লাহর কথা শোনার পর আপনি কিছুই অনুভব করবেন না। যেমন পরকাল ও জাহান্নামের ভয়ের কথা শুনলে চোখে পানি আসে না।
- আল্লাহর নাম স্মরণ করা এবং যিকির করা একটি কঠিন কাজ বলে মনে হতে পারে।
- শরিয়া আইন ভঙ্গ করার পর কোনো খারাপ অনুভূতি থাকবে না।
- পার্থিব সম্পদ ও সম্মানের আকাঙ্ক্ষা সর্বদা বিদ্যমান থাকবে।
- নিজেকে নিয়ে সবসময় ব্যস্ত থাকা।
- অন্যের ধর্ম কর্ম করাকে অবজ্ঞা করা ও ছোট করে দেখা।
ঈমান বৃদ্ধির দোয়া বা আমল নিচে আলোচিত হলো
১. আপনার পাপকে স্বীকার করুন
আল্লাহ তায়ারা কুরআনে বলেছেন, এবং তোমার প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। সর্বদা তাঁর দিকে মনোনিবেশ করুন। অতঃপর সে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আপনাকে সর্বোত্তম প্রয়োজনীয় জিনিস দেবে, যারা ভালো কাজ করবে তাদের সম্পদ বৃদ্ধি করবে এবং আপনি যদি মুখ ঘুরে দাঁড়াতে থাকেন আনুগত্য থেকে তাহলে আখিরাতের দিনে আপনার শাস্তি হবে। সুরা হুদ; আয়াত-৩
মানুষ যেকোনো সময় অপরাধ করতে পারে এটা একটা স্বাভাবিক বিষয়, এই পাপের জন্য নিরাশ না হয়ে অনুতপ্ত হওয়া উচিত। তওবা করলে আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমা করেন। তবে কিছু শর্তের উপর নির্ভর করে আপনার তাওবা কবুল করা হবে কি না। তা হলোঃ
তাওবা কবুল হওয়ার শর্তাবলী
- প্রথম: পাপ কাজ ত্যাগ করা।
- দ্বিতীয়: কৃত পাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া।
- তৃতীয়: একই ভুলের বা গোনাহের কাজের যেনো পুনরাবৃত্তি না হয় তার চিন্তা করা।
- চতুর্থ: যে কেউ যদি ক্ষতিগ্রস্থ হয় বা তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তাকে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যখন একজন মুসলমান তার পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়, তখন সে স্বাভাবিক ভাবেই সর্বদা ভালো কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত হয় এবং ভালো কাজ তার ঈমানকে বৃদ্ধি করে থাকে।
২.
সময়মত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ুন
নামাজ
মানুষকে সকল অনিষ্ট থেকে রক্ষা করে। এছাড়া ঈমান বৃদ্ধির জন্য নামাজের চেয়ে উত্তম
বিকল্প কিছু নেই। রাসুল (সাঃ) এর হাদিস অনুসারে, আপনি যদি নিয়মিত প্রবাহিত নদীতে ৫
বার গোসল করেন তবে আপনার শরীরে কোন ময়লা থাকে না, তাই আপনি যদি দৈনিক সময়মত ৫ ওয়াক্ত নামাজ
পড়েন তবে কোন গুনাহ থাকার আশংকা নেই। আগেও বলা হয়েছে পাপ কাজ না করলে ঈমান বাড়বে।
যাইহোক,
নামাজ আদায় করার সময় কয়েকটি বিষয় অনুসরণ করতে হবে, যথা:
- ক. খুশু খুজু মানে নামাজ পড়ার সময় আল্লাহর ধ্যান মাথায় রাখতে হবে।
- খ. নামাজ পড়া শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করতে হবে।
- গ. নামাজে সূরা কিরাত সহীহ শুদ্ধভাবে পড়তে হবে।
- ঘ. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, নামাজ আদায় নবীজির (সাঃ) সুন্নাহ সহকারে এবং তার দেখানো নিয়ম অনুসরণ করা আবশ্যক।
৩.
নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করুন
কুরআন মানব আত্মার খোরাক, আত্মার আলো এবং সঠিক পথের পথপ্রদর্শক। যখনই আপনি আপনার অন্তরের শক্তি হারিয়ে ফেলেন এবং ঈমানের অভাব অনুভব করেন, তখনই কুরআনের দিকে ফিরে যান এবং প্রকৃত শান্তি পান। কোরান ব্যাখ্যা করে কিভাবে আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করতে হয়। আল্লাহপাক বলেনঃ
যখন কোরআন নাজিল হয়, তখন তাদের কেউ কেউ বলেছিল, এই কোরআন তোমাদের মধ্যে কতটুকু ঈমান বৃদ্ধি করেছে? সুতরাং যারা ঈমান এনেছে, এই কুরআন তাদের ঈমানকে বাড়িয়ে দেয় এবং তারা আনন্দিত হয়” সূরা তওবাঃ ১২৪
৪. স্বেচ্ছায় রমজানের রোযা রাখা
রোজা তাকওয়া পাওয়ার অন্যতম উপায়। কারণ খুব কম মানুষই অভিনয়ের বা মিথ্যার খাতিরে রোজা রাখেন। আত্মার পরিশুদ্ধির জন্য রোজা অপরিহার্য। রোজা শয়তানের ষড়যন্ত্র ও অসৎ ইচ্ছাকে প্রতিহত করার ক্ষমতা তৈরি করে। অধিকন্তু, রোজা আল্লাহর সাথে আলাদা সম্পর্ক স্থাপন করে। যেহেতু রোজা আল্লাহর সাথে একটি গভীর সম্পর্ক তৈরি করে এবং পাপ পরিহার করে দেয়, তাই রোজা এমন একটি মধ্যপন্থী ইবাদত যা ঈমান বৃদ্ধি করে থাকে।
৫.
সর্বদা যিকির বা আল্লাহকে স্মরণ করুন
জিকির বলতে মূলত আল্লাহর বাণীকে সর্বদা স্মরণ করা। এখন কেউ সুবহানাল্লাহ বা আলহামদুলিল্লাহ বলতে পারে এটাকেও আল্লাহপাকের যিকির বা স্মরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। আল্লাহ বলেনঃ যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে এবং আল্লাহকে স্মরণ করে তারা মনের প্রশান্তি লাভ করে, তোমরা জেনে রাখ, আল্লাহকে স্মরণ করলেই মনের প্রশান্তি পাওয়া যায়। সূরা: আর রাদ: ২৮
যিকিরের
মাধ্যমে সর্বদা আপনার অন্তরে আল্লাহর নাম উচ্চারিত হবে এবং যাদের অন্তরে আল্লাহর নাম
রয়েছে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়াও, প্রতিদিন আপনি নিম্নলিখিত যিকির করতে পারেন,
সুবহানাল্লাহ - দিনে ১০০ বার।
সুবহানাল্লাহি
ওয়া বিহামদিহি - দিনে ১০০ বার।
আলহামদুলিল্লাহ
আল্লাহ
আকবর
লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ
সুবহানাল্লাহ
ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার
সকাল
এবং বিকেল দরুদ পড়া।
৬.
সর্বদা মৃত্যুকে স্মরণ করুন
সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে কে ধনী আর কে গরীব, কে বৃদ্ধ আর কে যুবক তা বিবেচনা করা হবে না এবং সবাই মারা যাবে। যখন আমরা প্রায়ই এই মৃত্যুর কথা ভাববো, তখন আমাদের হৃদয় সর্বদা ভাল কাজ বা আমল করার জন্য উদগ্রীব থাকবে। স্বর্গের আকাঙ্ক্ষা আমাদের হৃদয়ে জেগে উঠবে। মৃত্যুকে সবসময় স্মরণ করলে আমাদের ঈমানও বৃদ্ধি পায়।
৭. আলেমদের সাথে থাকা এবং ইসলামী জ্ঞান অর্জন করা
আলেমদের সাথে মেলামেশা, তাদের সঙ্গে ইসলামের আলোচনা এবং ইসলামী জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে ঈমানকে শক্তিশালী করা যায়। আল্লাহ বলেন, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে? শুধুমাত্র বুদ্ধিমান মানুষ চিন্তা করতে পারে। - সুরা জুমার: ৯
৮. আল্লাহর কাছে সব সময় ক্ষমা প্রার্থনা করুন
নবীজি সাঃ বলেছেন, প্রার্থনা মুমিনের হাতিয়ার। যদি ঈমানের পতন ঘটে থাকে, তাহলে আমাদের সর্বাবস্থায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা উচিত। কখনও কখনও প্রার্থনা বা দোয়া কবুল হয়।