রিসালাত শব্দের অর্থ কি

রিসালাত কাকে বলে? ফেরেশতা কারা?- What is Risalat? Who are the angels?

রিসালাত শব্দের অর্থ কি

রিসালাহ বা রিসালাত শব্দের অর্থ হচ্ছে বার্তা বাহক, দূত ইত্যাদি। অর্থাৎ যিনি কোনো সংবাদ বহন করে থাকেন।

রিসালাহ্ হচ্ছে আল্লাহ্ ও মানুষের মাঝে যোগাযোগের মাধ্যম। মানুষ যাতে পার্থিব জীবনে সঠিক কর্মধারা অনুসরণ করতে পারে এবং এ পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযোগী সুখ-শান্তির জায়গায় পরিণত করতে পারে সে উদ্দেশ্যে দয়াময় মেহেরবান আল্লাহ্ তা'আলা মানুষের অনুসরণের জন্যে তাঁর পক্ষ থেকে হেদায়াত পাঠিয়েছেন। যারা এ হেদায়াত অনুসরণ করবে তারা মৃত্যুপরবর্তী জীবনে বিরাট পুরস্কার লাভ করবে ।

মানবজাতির সৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর মনোনীত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে মানবজাতির নিকট তাঁর হেদায়াত পাঠাতে শুরু করেন। তাঁর মনোনীত এই ব্যক্তিদেরকে নবী ও রাসূল (বহুবচনে যথাক্রমে আম্বিয়া ও রুসুল) রিসালাত বলা হয়। 

তাঁরা নিজ নিজ যুগের লোকদেরকে একমাত্র আল্লাহ্ তা'আলার বন্দেগী বা ইবাদাত করার জন্য আহবান জানান। তাঁরা আল্লাহর দেয়া জীবনবিধান অনুসরণের জন্য লোকদেরকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করেন এবং কার্যতঃ পথপ্রদর্শন করেন।

নবী রাসুল কারা

নবী-রাসূলগণ (আঃ) মানুষ ছিলেন। আমাদের কখনোই তাঁদেরকে আল্লাহ্ তা'আলার পুত্র বলে উল্লেখ করা উচিত নয়। আল্লাহ্ তা'আলা এক ও অনন্য এবং তাঁর কোন অংশীদার, পুত্র বা কন্যা নেই। আল্লাহ্ তা'আলার কোন পুত্র-কন্যা বা অংশীদার আছে বলে মনে করা ও উল্লেখ করা বিরাট গোনাহ বা পাপকাজ।

সকল নবী-রাসূলের (আঃ) দাওয়াত ছিল এক ও অভিন্ন। যেহেতু আল্লাহ্ এক তাই তাঁর বাণীও এক। এ বাণী হচ্ছে : “একমাত্র আল্লাহর ‘ইবাদাত কর (namaz time) এবং সকল মিথ্যা খোদাকে বা তাগুতকে পরিত্যাগ কর।”

অন্য কথায়, সব নবী-রাসূলই (আঃ) “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্- আল্লাহ্ ছাড়া কোন মা'বুদ বা উপাস্য নেই”- এই বাণী প্রচার করেন। আপনাদের মনে হয়ত প্রশ্ন জাগতে পারে যে, আমাদের জন্যে আল্লাহ্ তা'আলার হেদায়াতের প্রয়োজন কেন? এর জবাব অত্যন্ত সহজ। 

তা হচ্ছে, আমরা মানব-প্রজাতি অত্যন্ত দুর্বল ও অস্থিরমতি। ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আমাদের কোন জ্ঞান নেই এবং আমাদের যে সব বিষয়ে জ্ঞান আছে তা খুবই সীমিত। তেমনি আমরা কেউই পূর্ণতার অধিকারী নই। আপনারা বুঝতেই পারছেন যে, এতসব দুর্বলতার কারণে স্বভাবতঃই আমাদের পক্ষে নিজেদের জন্যে এমন কোন পথনির্দেশ রচনা করা সম্ভব নয়, 

যা সব সময় ও সকল অবস্থায় আমাদের জন্য উপযোগী হতে পারে। একারণেই আল্লাহ্ তা'আলা দয়া করে তাঁর নবীদের (আঃ) মাধ্যমে আমাদেরকে হেদায়াত (পথনির্দেশ) প্রদান করেছেন।

শুধু তা-ই নয়, আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর নবীদের (the prophet) মাধ্যমে আমাদের নিকট তাঁর কিতাবসমূহ পাঠিয়েছেন। (কুর'আন : সূরাহ আল্-বাকারাহ্ - ২ : ২১৩) এই নবীগণকে (আঃ) রাসূলও বলা হয়। কুর'আন হচ্ছে আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে পাঠানো সর্বশেষ হেদায়াতের কিতাব। আল্লাহ্ তা'আলা বিভিন্ন সময়ে প্রতিটি জাতির নিকট নবী-রাসূল (আঃ) পাঠিয়েছেন (কুর'আন : সূরাহ ইউনুস-১০ : ৪৭,) পথভোলা মানুষদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্যে যুগে যুগে নবী-রাসূল (আঃ) পাঠানো হয়েছিল।

সব নবী রাসুলের নামের তালিকা
আল্লাহর প্রেরিত ২৫ জন নবীর নাম

আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর একটি উক্তি অনুযায়ী, যুগে যুগে আগত নবী- রাসূলগণের (আঃ) মোট সংখ্যা ছিল এক লাখ চব্বিশ হাজার। কুর'আন মজীদে এদের মধ্য থেকে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পঁচিশ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন :

২৫ জন নবীর নাম
Names of 25 Prophets

  • হযরত আদম (Adam Adam ادم), 
  • হযরত ইদ্রীস্ (Idris), 
  • হযরত নূহ্ (Nah Nah نوح ), 
  • হযরত হূদ্ (Had هود), 
  • হযরত ছালেহ্ (Ṣāliḥ), 
  • হযরত ইব্রাহীম্ (Ibrāhīm Abrakam), 
  • হযরত ইসমা'ঈল্ (Ismā'îl Ishmael), 
  • হযরত ইস্হাক Ishaq Isaac, 
  • হযরত লূত্ Lat Loot لوط, 
  • হযরত ইয়াকূব' Ya'qub Jacob, 
  • হযরত ইউছুফ Yusuf, 
  • হযরত শূ‘আইব Shu'aib, 
  • হযরত আইউব্ Ayyub, 
  • হযরত মূসা Mūsā Moses, 
  • হযরত হারূন Hārūn Auron, 
  • হযরত যুল্ কি Dhul Kifl Ezekiel, 
  • হযরত দাউদ Dawud Darvid, 
  • হযরত সুলাইমান Sulaiman Solomon, 
  • হযরত ইয়াস্ Ilyās Ellas, 
  • হযরত আল্-ইয়াসা' Al Yasa' Elisha , 
  • হযরত ইউনুস্ Yūnus, 
  • হযরত যাকারিয়্যা Zakariyā Zechariah, 
  • হযরত ইয়াহ্ইয়া Yahyā , 
  • হযরত ‘ঈসা Īsā ও 
  • হযরত মুহাম্মাদ Muhammad (sm) 

(তাঁদের সকলের প্রতি সালাম)।

মুসলমান হিসেবে আমরা সকল নবী ও রাসূলের (আঃ) ওপর ঈমান রাখি। (কুর'আন: সূরা আল্-বাকারাহ্ ২ : ২৮৫) হযরত আদম (আঃ)-এর মাধ্যমে মানবজাতির নিকট আল্লাহ্ তা'আলার হেদায়াত পাঠানো শুরু হয় এবং হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর মাধ্যমে তা সমাপ্ত করা হয়।

প্রশ্ন হচ্ছেঃ ফেরেশতা কারা? তারা কি করে? আমরা কি তাদেরকে দেখতে পাই? মানুষ ও তাদের মধ্যে পার্থক্য কি?

ফেরেশতা কিসের তৈরি

ফেরেশতারা আল্লাহ্ তা'আলার বিশেষ এক ধরনের সৃষ্টি। বিশেষ বিশেষ ও সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর ঐশী নূর (জ্যোতি) থেকে তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। অন্যদিকে প্রথম মানুষ হযরত আদম (আঃ)-কে কাদামাটি থেকে এবং জিন্- প্রজাতিকে আগুন থেকে সৃষ্টি করা হয়। ইবলিস-যে শয়তান হিসাবে পরিচিত- সে জিন জাতিরই সদস্য। 

অনেক লোক মনে করে যে, ইবলীস ফেরেশতাদের নেতা ছিল। কুর'আন মজীদের বক্তব্য অনুযায়ী এ ধারণা ঠিক নয়। (আল্-কুর'আন্: সূরাহ আল্- কার্ফ - ১৮:৫০)

ফেরেশতাদেরকে যেসব কাজ সম্পাদনের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তাদেরকে সে জন্যে প্রয়োজনীয় গুণাবলী ও ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি নেই। তারা সব সময়ই আল্লাহ্ তা'আলার আদেশ পালন করে, তাদের তাঁর হুকুম অমান্য করার ক্ষমতা নেই। 

অন্যদিকে মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দেয়া হয়েছে এবং তারা স্বেচ্ছায় জলপথ বা মন্দপথ বেছে নিতে পারে। এ কারণেই শেষ বিচারের দিনে মানুষকে তার কাজকর্মের হিসাব দিতে হবে।

আল্লাহ্ তা'আলা ফেরেশতাদেরকে যে হুকুম দেন তারা তা পালন করে। তারা হচ্ছে আল্লাহর ইচ্ছা কার্যকর করার জন্যে সৃষ্ট পাপমুক্ত বান্দাহ্। তারা মানুষকে তাদের স্বাধীন ইচ্ছা কার্যকর করতে সাহায্য করে। মানুষ কি করবে সে সম্পর্কে নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং ফেরেশতারা আল্লাহর হুকুমে তাদের এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে সাহায্য করে।

ফেরেশতাদের অন্যতম করণীয় হচ্ছে আল্লাহ্ তা'আলার গুণগান, প্রশংসা ও তা'রীফ করা। তারা কখনোই ক্লান্ত হয় না। তারা আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য সদাসর্বদা প্রস্তুত থাকে। তাদের নিদ্রার প্রয়োজন নেই, বা মানুষের জন্য যেসব জিনিস প্রয়োজন তাদের জন্যে তার প্রয়োজন নেই। 

ফেরেশতা দেখতে কেমন

মানুষের আকৃতি ধারণ করে আমাদের সামনে উপস্থিত না হলে আমরা ফেরেশতাদেরকে দেখতে পাই না । জিবরাইল (আঃ) ফেরেশতা একবার হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর ছাহাবীগণের এক সমাবেশে তাঁদের সামনে মানুষের বেশে হাযির হয়েছিলেন। তিনি তাঁদেরকে শিক্ষা দেয়ার জন্য এসেছিলেন। 

কিন্তু একমাত্র হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-ই জানতেন যে, তিনি একজন ফেরেশতা। ফেরেশতাগণ, তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য সুবিধাজনক যেকোন আকৃতি ধারণ করতে পারে।

ফেরেশতাগণ

আল্লাহ্ তা'আলার সীমাহীন রাজত্বে অসংখ্য ফেরেশতা রয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য ফেরেশতাগণ হচ্ছেনঃ

আযরাইল (আঃ) (মৃত্যুর ফেরেশতা)
ইস্রাফীল (আঃ)
জিব্রাঈল (আঃ)
মিকাঈল (আঃ)

জিব্রাঈল (আঃ) হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নিকট এবং অন্য সকল নবী-রাসূলের (আঃ) নিকট আল্লাহ্ তা'আলার ওহী নিয়ে আসতেন। আযরাইল (আঃ) কে মালাকুল মাওত বা মৃত্যুর ফেরেশতাও বলা হয়। আমাদের জীবনের সমাপ্তি ঘটানোর দায়িত্ব তাঁর ওপরে ন্যস্ত রযেছে। বিশ্বজাহানের ধ্বংসের দিনে ও শেষ বিচারের দিনে ইস্রাফিল (আঃ) শিঙ্গায় ফুঁক দেবেন।

মানুষের দুই কাধের ফেরেশতার নাম কি

কিছু ফেরেশতা সব সময়ই মানুষের কাজকর্ম লিখে রাখার কাজে ব্যস্ত। তাদেরকে ‘সম্মানিত লিপিকারগণ' (কিরামান কাতিবীন্) বলা হয়। আমরা যেসব কথাবার্তা বলি তার একটি শব্দও লিপিবদ্ধ বা রেকর্ডকৃত হওয়া থেকে বাদ পড়ে না। (আল-কুর'আন: সূরাহ কাফ্- ৫০ : ১৮)

আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর সীমাহীন রাজত্বকে অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও নিখুঁতভাবে পরিচালনা করেন, আর ফেরেশতারা হচ্ছে তাঁর একান্ত অনুগত বান্দাহ্। আমাদের মধ্যে যারা সব সময় আল্লাহ্ তা'আলার আদেশ মেনে চলে ফেরেশতারা তাদেরকে জান্নাতে সাদর অভ্যর্থনা জানাবে এবং গুনাহ্গারদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। (সূরা আল যুমার ৪৭১-৭৪)

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url