জিহাদ নামের অর্থ কি
জিহাদ নামের অর্থ কি
ইসলামে জিহাদের বিধান
জিহাদের প্রথম পর্যায়ে একজন মুসলমান তার কামনা-বাসনা ও আশা-আকাঙ্ক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে এ লক্ষ্যে পৌছার জন্যে আমাদের কঠোর চেষ্টা-সাধনা করা প্রয়োজন। এটা হচ্ছে মানুষের আভ্যন্তরীন জিহাদ যা বাইরের সর্বাত্মক জিহাদের ভিত্তিস্বরূপ।
বাইরের
জিহাদের লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের সমাজে ও জীবনে মা'রূফ (ভাল কাজ
ও ন্যায়)-এর প্রতিষ্ঠা এবং
মুনকার (অন্যায় ও পাপাচার)-এর
উৎখাত। একাজের জন্যে আমাদের সকল প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানসিক
সম্পদ ব্যবহার করা অপরিহার্য। এমন কি ইসলামের স্বার্থে আমাদের জীবন কুরবানী করাও প্রয়োজন
হতে পারে।
জিহাদের
উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এটা অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে। আল্লাহর
সন্তুষ্টি অর্জনই হচ্ছে সকল ইসলামী চেষ্টা-সাধনার মূল ভিত্তি।
আমরা
জানি যে ইসলামের মৌলিক কর্তব্যসমূহ অর্থাৎ শাহাদাত, ছালাত, যাকাত, ছাওম ও হজ্জ। এসব
কর্তব্য পালন করে আমরা আল্লাহ্ তা'আলার আনুগত্য করার মাধ্যমে তাঁর রহমত ও নে'আমত অর্জনের
শিক্ষা পাই যাতে আমরা শেষ বিচারের দিনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারি এবং পুরষ্কার
স্বরূপ চিরন্তন সুখ শান্তি ও আনন্দের জায়গা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি।
ইসলামের উক্ত মৌলিক কর্তব্যকাজসমূহ আমাদেরকে শুধু ইসলামের জন্যে বাঁচতে ও ইসলামের জন্যে মরতে উদ্বুদ্ধ করে। আর আমরা জানি যে, পৃথিবীর জীবনে ও পরকালীন জীবনে নিশ্চিত সাফল্যের অধিকারী হবার জন্যে এটাই একমাত্র ও সুনিশ্চিত পথ।
অন্য কথায়, ইসলামের নির্ধারিত সকল কর্তব্যকাজের
উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদেরকে জিহাদে নিয়োজিত থাকার জন্যে প্রস্তুত করা। আমাদের ছালাত,
যাকাত, ছাওম ও হাজ্জের চূড়ান্ত ফলাফল হচ্ছে জিহাদ। জিহাদ বাদ দিয়ে ইসলামের কথা চিন্তাই
করা যায় না।
আমরা
তো এটাই দেখতে চাই যে, সত্য টিকে থাক ও মিথ্যা বিলুপ্ত হোক। কিন্তু আমরা জানি যে, এরূপ
আপনা আপনিই হয় না। বরং এ লক্ষ্য হাসিল করতে হলে আমাদেরকে সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করতে
হবে। আমাদের অন্যান্য ফরয কাজ যদি আমাদেরকে জিহাদে নিয়োজিত হতে উদ্বুদ্ধ না করে তাহলে
সে সব ফরয কর্তব্য অর্থহীন হয়ে যাবে।
জিহাদের
পদ্ধতি হচ্ছে স্বয়ং রাসূলে আকরাম হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কর্তৃক প্রদর্শিত পদ্ধতি। তাঁর
জীবন হচ্ছে আমাদের জন্য অনুসরণীয় পরিপূর্ণ আদর্শ। আমরা তাঁর জীবন সম্বন্ধে জানতে পারব
ইসলামী বই পুস্তকের মাধ্যমে।
মুসলমান
হিসেবে আমাদের কর্তব্য হচ্ছে আল্লাহ্ তা'আলার আদেশ-নিষেধ মেনে চলা এবং অন্যদেরকে তা
মেনে চলার জন্যে আহবান জানানো। আল্লাহ্ তা'আলাই
আমাদের ওপর এ দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। আল্লাহ্ তা'আলা কুর'আন মজীদে এরশাদ করেন: আরবী
শব্দের বাংলা অর্থ নিচে দেওয়া হলো-
আল্লাহর পথে জিহাদ
“তোমরা-হচ্ছে-শ্রেষ্ঠ-উম্মত-মানবজাতির-জন্যে-যাদেরকে-প্রেরণ-করা-হয়েছে;-তোমরা-ভাল-ও-ন্যায়-কাজের-আদেশ-দাও-ও-মন্দ-কাজ-প্রতিহত-কর,-আর-আল্লাহর-ওপর-ঈমান-পোষণ-কর।”-(সূরাহ-আলে-ইমরান-১১০)
আমাদের
দায়িত্ব অন্যদেরকে আল্লাহ্ তা'আলার আনুগত্য করতে বলা, তবে তা এমন পন্থায় হতে হবে
যাতে মানুষ এজন্যে আগ্রহী ও উদ্বুদ্ধ হয়। এক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের জীবনধারাও খুবই
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমরা যা বলি আমাদের নিজেদের জীবনে তা অনুসরণ করি কিনা
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যাদের কথা ও কাজের মধ্যে মিল নেই আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে
মোটেই পছন্দ করেন না।
আল্লাহ্
তা'আলা এরশাদ করেছেন: আরবী শব্দের বাংলা অর্থ নিচে দেওয়া হলো-
“তোমরা-কি-লোকদেরকে-সৎকর্মের-আদেশ-দাও-এবং-নিজেদেরকে-ভূলে-যাও?”-(সূরাহ-আল্-বাকারাহ-২:
৮৮)
আরবী
শব্দের বাংলা অর্থ নিচে দেওয়া হলো-
-“হে-ঈমানদারগণ!-কেন-তোমরা-এমন-কথা-বল-যা-তোমরা-কর-না?-এটা-আল্লাহর-নিকট-সর্বাধিক-ঘৃণার-বিষয়-যে,-তোমরা-তা-বল-যা-তোমরা-কর
না।”-(সূরাহ-আছ-ছফ্-২-৩)
জিহাদ
এসব আয়াতে আমাদেরকে নিজেদের কাজকে আমাদের কথার সাথে মিলিয়ে দেখার নিদের্শ দেয়া হয়েছে। একারণে আমাদের নিজেদেরকে অবশ্যই ভাল কাজ করতে হবে এবং অন্যদের প্রতিও এজন্য আহবান জানাতে হবে। অন্যদেরকে ভাল কাজের দিকে আহবান করতে গেলে আমরা নিজেদের দুর্বল দিক সম্পর্কে সচেতন হব এবং এভাবে আমরা আমাদের দুর্বলতা ও ঘাটতি দূর করতে পারব।
আমরা কেউই পূর্ণতার অধিকারী নই। তবে আমরা যদি আমাদের জিহাদের
কর্তব্য পালনের জন্যে চেষ্টা চালিয়ে যাই তাহলে ধীরে ধীরে আমাদের অপূর্ণতা কমে যাবে
এবং আমরা উন্নতমানের অনুগত বান্দাহ হতে পারব এবং সমাজের অন্য মানুষদেরকেও আল্লাহর দ্বীনের
দাওয়াত দিতে উৎসাহী হব।
ইসলামে জিহাদের বিধান
ইসলামে জিহাদের বিধান pdf
ইসলামে লটারির বিধান