ওহুদ যুদ্ধের ঘটনা
ওহুদ যুদ্ধের ঘটনা
বদরের যুদ্ধে মক্কার কাফিররা মুসলমানদের হাতে যে বিরাট বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় তাদের পক্ষে তা ভুলে যাওয়া সম্ভব ছিল না।
তাই তারা
প্রতিশোধ গ্রহণের জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। এ
কারণে তখন থেকে এক
বছর যাবত তারা পুনরায় মদীনা আক্রমণের জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করে। ফলে বদরের
যুদ্ধের এক বছর পর ৬২৫ খৃস্টাব্দে উহুদের যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
মুসলমানরা বদরের যুদ্ধে অর্জিত তাঁদের বিজয় ও সাফল্যকে সুহংহত করছিলেন এবং মুসলিম জনগোষ্ঠীর আভ্যন্তরীণ বন্ধনকে শক্তিশালী করছিলেন। এ সময় হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরব উপদ্বীপের বিভিন্ন অংশে দূত ও প্রতিনিধিদল পাঠান হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর এক চাচা হযরত ‘আব্বাস (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করলেও তখনো মক্কায় বসবাস করছিলেন।
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)
তিনি তাঁর ভাতিজা
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ও মুসলমানদের
জন্যে অন্তরে খুবই মহব্বত পোষণ
করতেন। তিনি মক্কায় কাফিরদের
যুদ্ধপ্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তিনি এ যুদ্ধপ্রস্তুতির
পূর্ণ বিবরণসহ মদীনায় হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট একজন
লোক পাঠিয়ে দেন।
হযরত
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জানতে পারলেন
যে, দুইশত জন অশ্বারোহীসহ মক্কার
কাফিরদের তিন হাজার সৈন্যের
একটি বাহিনী মদীনার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
তখন তিনি মদীনার প্রবীণ
ব্যক্তিদের ডেকে তাঁদের সাথে
এ ব্যাপারে পরামর্শ করলেন।
আনছার ও মুহাজিরীন নির্বিশেষে মদীনার প্রবীণ ব্যক্তিগণ মদীনার ভিতরে থেকে প্রতিরক্ষাযুদ্ধ চালানোর পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন। কিন্তু যাদের বয়স অপেক্ষাকৃত কম সেই যুব শ্রেণী ভিন্ন মত ব্যক্ত করলেন। শক্তি ও সাহসিকতায় উদ্দীপ্ত যুবকরা মদীনার বাইরে গিয়ে যুদ্ধ করার পক্ষে মত দিলেন।
তাঁরা এ যুদ্ধকে আল্লাহর
দ্বীনের জন্য শহীদ হবার
একটা সুযোগ হিসেবে গণ্য করলেন। অন্যদিকে
যে সব প্রবীণ সাহাবী
বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে
পারেন নি তাঁরাও মদীনার
বাইরে গিয়ে যুদ্ধ করার পক্ষে মত
দিলেন। কিন্তু খাাজরায গোত্রের নেতা 'আবদুল্লাহ বিন উবাই বিন সালূল মদীনার বাইরে গিয়ে যুদ্ধ করার বিরোধিতা করে।
যা-ই হোক, বেশীর
ভাগ মুসলমান মদীনার বাইরে গিয়ে যুদ্ধ করার পক্ষে মত
দেয়ায় হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
তাতেই সায় দেন।
জুমুআর সালাত আদায়ের পর
সেদিন ছিল শুক্রবার। জুমুআর সালাত আদায়ের পর হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এক হাজার সৈন্য নিয়ে মদীনার বাইরে উহুদ পাহাড়ের উদ্দেশে রওয়ানা হন। কিন্তু মুসলিম বাহিনী মদীনা ও উহুদের মাঝামাঝি আশ্-শাওয়ী নামক স্থানে পৌঁছলে 'আবদুল্লাহ বিন উবাই তার নেতৃত্বাধীন তিনশত সৈন্য নিয়ে মদীনায় ফিরে আসে। এভাবেই সে মুনাফিকদের নেতায় পরিণত হয়।
এমতাবস্থায় হযরত
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে মাত্র
৭০০ সৈন্য নিয়ে উহুদে পৌঁছতে ও কাফিরদের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করতে হয়।
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ওহুদে পৌঁছেন
মক্কার কুরাইশ বাহিনী ইতিমধ্যেই উহুদে পৌঁছে সেখানে শিবির স্থাপন করেছিল। হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ওহুদে পৌঁছেন এবং ফজরের সালাত আদায় করেন, এরপর সেনাবাহিনীকে বিন্যস্ত ও মোতায়েন করেন। তিনি হযরত আবদুল্লাহ বিন জুবাইরের (রাঃ) সেনাপতিত্বে পঞ্চাশ জন তীরন্দায সৈন্যকে একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ গিরিপথ রক্ষার কাজে মোতায়েন করেন।
তিনি তাঁদেরকে নির্দেশ দেন যে, তাঁরা
যেন কোন অবস্থায়ই ঐ
জায়গা ছেড়ে না যান।
সকাল
বেলা দুই সেনাবাহিনী পরস্পর
মোকাবিলা করে। দুই পক্ষে
প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। খুব শীঘ্রই
মুসলমানরা রণাঙ্গণে প্রাধান্য বিস্তার করে এবং কাফির
বাহিনী পিছু হটে যেতে
বাধ্য হয়। মুসলমানরা মক্কার
কাফির বাহিনীর ফেলে যাওয়া খাদ্যদ্রব্য
ও অন্যান্য মালামাল হস্তগত করে।
আবদুল্লাহ বিন জুবাইর (রাঃ)
প্রকৃত পক্ষে তখনো যুদ্ধ শেষ হয়নি। কিন্তু হযরত ‘আবদুল্লাহ বিন জুবাইর (রাঃ) বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও গিরিপথে মোতায়েন তাঁর নেতৃত্বাধীন তীরন্দায সৈন্যদের প্রায় সকলেই তাঁদের অবস্থান পরিত্যাগ করে রণাঙ্গণে কাফির সৈন্যদের ফেলে যাওয়া মালামাল জমা করার কাজে লেগে যান।
এই বিশৃঙ্খলা মক্কার
কুরাইশ বাহিনীর অন্যতম সেনাপতি খালিদ বিন আল ওয়ালিদের জন্যে একটি বিরল সুযোগ
সৃষ্টি করে। তিনি পিছন
দিক থেকে মুসলিম বাহিনীর
ওপর হামলা চালান। হযরত আবদুল্লাহ বিন
জুবাইর (রাঃ) ও আরো
ছয় জন তীরন্দায- যারা
গিরিপথ ছেড়ে যাননি- অত্যন্ত বীরত্বের সাথে লড়াই করেন
এবং শেষ পর্যন্ত তাঁদের
সকলেই শহীদ হন।
হামজা রাঃ এর মৃত্যু
খালিদ বিন আল-ওয়ালিদের বাহিনী মুসলিম বাহিনীর ওপর হঠাৎ করে ঝাঁপিয়ে পড়ে যে জন্য মুসলিম সৈন্যরা মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না। ফলে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই মুসলমানদের আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়ে যায়। তাঁরা নিজেদেরকে শত্রুসৈন্যদের দ্বারা ঘেরাও অবস্থায় দেখতে পান।
ঐ অবস্থায়ই
দুই পক্ষে পুনরায় যুদ্ধ চলতে থাকে। এ
যুদ্ধে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর চাচা হামজা
রাঃ শহীদ হন। এছাড়া আরো
অনেক মুসলমান শহীদ এবং হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজে আহত হন।
ইতিমধ্যে
এ মর্মে গুজব ছড়িয়ে পড়ে
যে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
শহীদ হয়েছেন। এর ফলে মুসলমানদের
মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে, তাদের মনোবল ভেঙ্গে যায় এবং অনেকে
পালিয়ে যেতে থাকেন।
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পাহাড়ের ওপরে
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কয়েকজন সাহাবী তাঁকে পাহাড়ের ওপরে একটি জায়গায় নিয়ে যান। সেখান থেকে তিনি উচ্চৈস্বরে মুসলমানদের আহ্বান করেন এবং তাঁদেরকে পুনরায় সংঘবদ্ধ হবার নির্দেশ দেন। হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জীবিত আছেন দেখতে পেয়ে বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত ও পর্যুদস্ত মুসলমানরা খুব শীঘ্রই নতুন করে সংঘবদ্ধ হন।
এ যুদ্ধে কাফিররা
যুদ্ধের জন্যে সভ্যজগতে প্রচলিত নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে। তারা মুসলমানদের
মৃতদেহ বিকৃত করে। বিশেষ করে
আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ্ চরম পৈশাচিকতার আশ্রয়
নেয়। সে হযরত হামযাহ
(রাঃ)-এর কালিজা বের
করে চিবায়।
মুসলিম বাহিনী পাল্টা হামলা
দিনের
শেষে পুনরায় সংঘবদ্ধ মুসলিম বাহিনী পাল্টা হামলার জন্যে প্রস্তুত হয়। কিন্তু মক্কার
কাফির বাহিনী ইতিমধ্যেই বদরের যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে পেরে আত্মতৃপ্তি
লাভ করে রণাঙ্গণ ছেড়ে
চলে যায়।
হযরত
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মদীনায় ফিরে
আসেন। কিন্তু মক্কার কাফিররা যাতে পুনরায় মদীনা
আক্রমণ করতে না আসে
তা নিশ্চিত করার জন্যে তিনি
তাদের পিছনে একটি সৈন্যদল পাঠান।
আবু সুফিয়ান তাদের পিছনে মুসলমান সৈন্যদের আসার কথা শুনে
মক্কার দিকে অগ্রসর হবার
গতি বাড়িয়ে দেয়।
উহুদ যুদ্ধের ফলাফল
উহুদ যুদ্ধের সামগ্রিক ফলাফল ছিল উভয় পক্ষের জন্যে সমান সমান। কারণ কোন পক্ষই জয়লাভের দাবী করতে পারত না। তবে এ যুদ্ধে মুসলমানদের খুবই চড়া মূল্য দিয়ে এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। গনিমতের মালের লোভে গিরিপথে নিয়োজিত তীরন্দাযরা তাঁদেরকে দেয়া নির্দেশ অমান্য করায় ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় মুসলমানদেরকে
এ যুদ্ধে বিরাট
ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়, অথচ
মুসলমানরা চূড়ান্ত বিজয়ের প্রায় কাছাকাছি পৌছেছিল। পার্থিব সম্পদের মহব্বতের জন্যে কতই না চড়া
মূল্য দিতে হয়! এই
দুনিয়ার মহব্বতে কিছুতেই আমাদের মুক্তি ও পরকালীন পুরস্কারের
চূড়ান্ত লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হওয়া
উচিত নয়।
বস্তুতঃ
যে কোন রণাঙ্গণে শৃঙ্খলা
ও সেনাপতির আনুগত্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হযরত
‘আবদুল্লাহ বিন জুবাইরের অধীনস্থ
৫০ জন তীরন্দায যদি
তাঁর আদেশ অমান্য না
করতেন তাহলে উহুদ যুদ্ধের ফলাফল
অন্য রকম হত।
বদর যুদ্ধ
Battle of Badr
বদর যুদ্ধের ইতিহাস: আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ছিলেন মানবজাতির মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী ও ব্যতিক্রমধর্মী বাস্তবদর্শী। আল্লাহ্ তা'আলা তাঁকে এভাবেই তৈরী করেন। তিনি মদীনার ভিতরের ও বাইরের উভয় ধরনের বিপদ মোকাবিলা করার জন্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
তখনকার ক্ষুদ্র মুসলিম জনসমষ্টির অস্তিত্বের প্রতি যে কোন হুমকি
মোকাবিলা করাই তখনকার জন্যে
সব চেয়ে বেশী প্রয়োজন ছিল।
এ লক্ষ্যে মুসলমানদেরকে একটি সুদৃঢ় ঐক্যবদ্ধ
শক্তিতে পরিণত করার ক্ষেত্রে তিনি
বিন্দুমাত্র শিথিলতা দেখাননি।
বদর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর জনশক্তি ও পার্থিব উপায়-উপকরণ ছিল খুবই কম। মক্কা থেকে আগত মুহাজিরদের আশ্রয় দেয়ার কারণে মদীনার অর্থনীতি ছিল খুবই চাপের মধ্যে। কিন্তু হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ছিলেন আশাবাদী ও আত্মবিশ্বাসের অধিকারী।
তিনি এ ব্যাপারে নিশ্চিত
ছিলেন যে, সঠিক সময়ে
অবশ্যই আল্লাহর সাহায্য আসবে। অতএব, মুসলমানদের জন্যে বস্তুগত উপায়-উপকরণের তুলনায় ঈমানী শক্তিই বেশী প্রয়োজনীয় ছিল।
ঈমানী শক্তি ও তদনুযায়ী আমল
ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এদিকে মদীনায় মুসলমানরা অপেক্ষাকৃত নিরাপদে আছে দেখে মক্কার কাফিররা ক্রোধে ক্ষিপ্ত হয়ে ছিল। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে নিশ্চিহ্ন করার জন্যে ইতিপূর্বে তারা যত চেষ্টা চালিয়েছিল তার সবই ব্যর্থ হয়েছিল। অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্যে তারা যে পথ দিয়ে আশ্-শামে যাতায়াত করত তা মদীনার পাশ দিয়েই চলে গিয়েছিল এবং একারণে মুসলমানদের পক্ষে তাদের ওপর আক্রমণ চালানো সহজ ছিল।
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে নিশ্চিহ্ন বা দমন করার পথ
ফলে তারা খুব অস্থির হয়ে পড়েছিল এবং নিজেদের মনেই ক্রোধে ফেটে পড়ছিল। কিন্তু হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে নিশ্চিহ্ন বা দমন করার কোন পথ তারা খুঁজে পাচ্ছিল না। তাই তারা এ নতুন ইসলামী সমাজের হাত থেকে চিরতরে রেহাই পাবার লক্ষ্যে এর ওপর হামলা চালানোর জন্যে মরিয়া হয়ে ছুতা খুঁজছিল। খুব শীঘ্রই এ ধরনের একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হল। আশ্-শাম থেকে মক্কার কাফিরদের একটি কাফেলা পণ্যদ্রব্য ও অস্ত্রশস্ত্রবাহী প্রায় এক হাজার উটসহ মক্কার পথে আসছিল।
এ কাফেলার নেতৃত্ব দিচ্ছিল মক্কার কুরাইশদের অন্যতম নেতা আবু সুফিয়ান। আবু সুফিয়ান ভয় করতে লাগল যে, মুসলমানরা তাদের ওপর আক্রমণ করতে পারে। তাই সে আর কালবিলম্ব না করে এ মর্মে মক্কায় বাণী পাঠিয়ে দিল।
আবু সুফিয়ানের বাণী পেয়ে সাথে সাথেই মক্কার কাফিরদের একহাজার সৈন্যের একটি বাহিনী মদীনায় মুসলমানদের ওপর হামলা চালাতে যাবার জন্যে প্রস্তুত হল। মক্কার কাফির বাহিনীর মদীনা আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়েছে এ খবর হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)- এর নিকট পৌঁছল।
তখন তিনি আল্লাহর সাহায্যে
মদীনার বাইরে গিয়ে কাফিরদের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন।
কারণ কাফিরদের হামলাকে বিনা প্রতিরোধে চলতে
দেয়া কিছুতেই ঠিক নয়।
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তিনশত তের জন সৈন্যের এক বাহিনী
হযরত
মুহাম্মাদ (সাঃ) তিনশত তের
জন সৈন্যের এক বাহিনী তৈরী
করলেন। এদের মধ্যে কয়েকজন
ছিলেন নিতান্তই কিশোর বয়সী সৈন্য। মুসলিম সৈন্যদের তেমন কোন অস্ত্রশস্ত্র
ছিল না। কিন্তু তা
সত্ত্বেও ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান হয়ে এ ক্ষুদ্র
বাহিনী আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) সেনাপতিত্বে মদীনা থেকে রওয়ানা হল
এবং ১২৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-
পশ্চিমে অবস্থিত বদর নামক স্থানে উপস্থিত
হল।
মুসলিম
বাহিনীর শুধু সৈন্যসংখ্যাই কম
ছিল না, বরং তাদের
অস্ত্রশস্ত্রও ছিল খুবই কম।
আর তৎকালে যুদ্ধের জন্যে অপরিহার্য বাহন ঘোড়া ছিল
মাত্র কয়েকটি। কিন্তু তাঁরা ছিলেন সাহসী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও ঈমানী শক্তিতে
বলীয়ান। কারণ তাঁরা জানতেন
যে, তাঁরা ন্যায় ও সত্যের জন্য
লড়াই করতে এসেছেন।
আবু সুফিয়ানের কাফেলা
ইতিমধ্যে আবু সুফিয়ানের কাফেলা তাদের চলার পথ পরিবর্তন করে অন্যপথে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে সক্ষম হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও মক্কার কাফির বাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ও মুসলমানদেরকে নিশ্চিহ্ন না করে ফিরে যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিল।
ফলে বদরে দুই
পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল।
এটা ছিল ৬২৪ খৃস্টাব্দের ১৭ই রামাদান। মুসলমানরা
অতুলনীয় সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সাথে
মক্কার কাফির বাহিনীর হামলার জবাব দিলেন। তাঁরা
কাফির বাহিনীকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত ও বিতাড়িত করেন।
কাফির বাহিনীর সত্তর জন নিহত হয়
এবং আরো সত্তর জন
মুসলমানদের হাতে বন্দী হয়
৷
বদরের
যুদ্ধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে, প্রকৃত
শক্তি হচ্ছে আল্লাহতে ঈমানের শক্তি, অস্ত্রশস্ত্র ও সৈন্যসংখ্যা নয়।
এ যুদ্ধ মুসলমানদের জন্যে ইতিহাসের ভবিষ্যত গতিধারা নির্ণয় করে দিল।
বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়
সেদিনের যুদ্ধে পার্থিব উপায়-উপকরণের স্বল্পতা সত্ত্বেও সত্যের সৈনিকরা বিজয়ী হলেন এবং মিথ্যার বাহিনী অপমানিত - অপদস্থ ও পরাজিত হল। কুর'আন মজীদ ঘোষণা করেছে , “সত্য এসেছে ও মিথ্যা বিতাড়িত হয়েছে”।
(সূরাহ বনি
ইসরাঈল-৮১) আর প্রকৃতই
বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় কেবল সর্বশক্তিমান আল্লাহ্
তা'আলার সাহায্য ও
অনুগ্রহের কারণেই সম্ভব হয়েছিল। (সূরাহ আল আনফাল-১৭)
অবশ্য হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নেতৃত্বাধীন মুসলিম
বাহিনী পুরোপুরি আল্লাহ্ তা'আলার ওপর
নির্ভর করে অত্যন্ত সাহসিকতার
সাথে লড়াই করেছিল।
বদরের যুদ্ধে এক একজন মুসলিম সৈন্যকে গড়ে তিনজন কাফির সৈন্যের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করতে হয়। কারণ কাফির বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা ছিল মুসলিম বাহিনীর সৈন্যসংখ্যার তিন গুণেরও বেশী। তা সত্ত্বেও মুসলমানরা জয়লাভ করেন।
আর এ যুদ্ধে মুসলমানরা পরাজিত হলে তাঁদের জন্যে তার পরিণাম হত খুবই ভয়াবহ। যা-ই হোক, মক্কার কাফির বাহিনী পরাজিত ও লাঞ্ছিত হয়ে চরম আক্রোশ নিয়ে মক্কায় ফিরে যায়। অতএব, খুব শীঘ্রই আরেকটি যুদ্ধ সংঘটিত হবার খুবই সম্ভাবনা ছিল।
পোস্ট ট্যাগঃ