বিদায় হজ্জের ভাষণ আরবি
বিদায় হজ্জের ভাষণ আরবি
আল্লাহ্ তা'আলা হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ওপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেন তিনি তা পুরোপুরি পালন করেন। তিনি তাঁর স্রষ্টা ও প্রভুর সন্তুষ্টির জন্যে সকল প্রকার পরীক্ষা মোকাবিলা করেন ও দুঃখদুর্দশা সহ্য করেন। তিনি পৃথিবীর বুকে আল্লাহ্ তা'আলার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যে দীর্ঘ বিশ বছর যাবত চেষ্টা-সাধনা করেছেন।
এ জন্যে তিনি সম্ভব সব কিছু করেছেন এবং চেষ্টায় বিন্দুমাত্র ত্রুটি করেন নি। আরব ভূখণ্ডের জনগণ এক আল্লাহর আইন-বিধান মেনে নেয়ার ব্যাপারে খুবই অনাগ্রহী ছিল, কিন্তু সেই আরবের কঠিন মাটিতেই তিনি তাঁর কঠিন দায়িত্ব পালন করেন।
ইসলাম
হচ্ছে সর্বকালের সকল মানুষের জন্যে
মহান আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ
থেকে পাঠানো একমাত্র জীবনব্যবস্থা। সর্বশেষ নবী ও রাসূল
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর মাধ্যমে
এ জীবনব্যবস্থাকে পরিপূর্ণরূপে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া
হয়। ইসলামী জীবনব্যবস্থা পূর্ণতাপ্রাপ্ত হওয়ায় হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই বুঝতে পারছিলেন যে, এ পৃথিবীর
বুকে তাঁর অবস্থানের সময়
শেষ হয়ে আসছে।
হযরত
মুহাম্মাদ (সাঃ) হিজরী দশম
বর্ষে (৬৩২ খৃস্টাব্দের মার্চ
মাসের শুরুর দিকে) তাঁর অধিকাংশ সাহাবীকে
সাথে
নিয়ে হজ্জ সম্পাদন করতে
যান। ৯ই যিলহজ্জ ‘আরাফাতের
ময়দানে তাঁর অনুসারী এক
লাখ ২০ হাজার হজ্জযাত্রীর
সমাবেশে তিনি খুৎবাহ (ভাষণ)
দেন ৷
হযরত
মুহাম্মদ (সাঃ) বুঝতে পেরেছিলেন
যে, এ পৃথিবী থেকে
তাঁর বিদায় অত্যাসন্ন। তাই তিনি তাঁর
এ খুৎবায় তৎকালীন ও ভবিষ্যত মুসলিম
উম্মাহর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হেদায়াত
দেন। অর্থাৎ তিনি বিদায়ী ভাষণ
আকারে এ খুৎবাহ প্রদান
করেন। এ কারণে এবং
বিষয়বস্তুর গুরুত্বের কারণে ঐ খুৎবাহ বিদায়ী
হজ্জের খুৎবাহ বা বিদায়ী ভাষণ
নামে ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে ৷
হযরত রাসূলুল্লাহ
(সাঃ)
একটি
উটের
উপরে
বসে
ভাষণ দেন এবং তাঁর
অনুসারীরা পিনপতন নীরবতা সহকারে এ ভাষণের প্রতিটি
শব্দ মনোযোগ সহকারে শোনেন।
আল্লাহ্
তা'আলার প্রশংসা ও
শুকরিয়ার পর সর্বশেষ নবী
ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)
তাঁর ভাষণ শুরু করেন।
এরপর তিনি বলেন:
“হে
জনগণ! মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শোন।
কারণ আমি জানি না
এরকম কোন উপলক্ষ্যে আবার
তোমাদের সাথে আমার সাক্ষাত
হবে কিনা I
হে
জনগণ! তোমরা এই মাসকে, এই
দিনকে, এই নগরীকে যেরূপ
পবিত্র গণ্য কর, প্রত্যেক
মুসলমানের জীবন ও সম্পদকে
ঠিক তদ্রূপ পবিত্র আমানত গণ্য করবে। মনে
রেখো, অবশ্যই তোমাদেরকে আল্লাহর সামনে হাযির হতে হবে ও
তোমাদের কাজকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে
হবে।
তোমাদের
নিকট আমানতস্বরূপ রক্ষিত জিনিস তার প্রকৃত মালিককে
ফিরিয়ে দেবে। সমস্ত রকমের বকেয়া সূদ বাতিল হয়ে
যাবে এবং তোমরা কেবল
তোমাদের মূল অর্থ ফেরত
পাবে। আল্লাহ্ সূদকে হারাম করেছেন, আর আমি আমার
চাচা ‘আব্বাস বিন আবদুল মুত্তালিবের
পাওনা সকল সূদ বাতিল
করে দিচ্ছি।
হে জনগণ! তোমাদের ওপর তোমাদের স্ত্রীদের কতক সুনির্ধারিত অধিকার রয়েছে এবং তাদের ওপর তোমাদের সুনির্ধারিত অধিকার রয়েছে। তাদের সাথে সদাচরণ কর এবং তাদের প্রতি অনুগ্রহ দেখাও। কারণ তারা তোমাদের অংশীদার ও নিষ্ঠাবান সাহায্যকারী।
শয়তান থেকে সাবধান থেকো।
সে তোমাদেরকে আল্লাহর ইবাদাত থেকে বিচ্যুত করার
জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। অতএব,
দ্বীনের ব্যাপারে তোমরা তার সম্পর্কে সাবধান
থাকবে।
হে
জনগণ! মনোযোগ দিয়ে শোন। সকল মু'মিন পরস্পর ভাই
ভাই। তোমাদের জন্যে অন্য মুসলমানের মালিকানাধীন
কিছু নেয়া জায়েয হবে না যদি
না সে তা স্বেচ্ছায়
তোমাকে দিয়ে দেয়।
হে জনগণ! কেউ কারো তুলনায় মর্যাদাবান নয় যদি না সে আল্লাহর আনুগত্যের ক্ষেত্রে অগ্রণী হয়। নেক আমল ব্যতিরেকে কোন অনারবের ওপরে কোন আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই।
হে জনগণ!
আমার কথাগুলো নিয়ে চিন্তা করো। আমি তোমাদের
জন্য
দু'টি
জিনিস
রেখে
যাচ্ছি;
কুর'আন
ও
আমার
সুন্নাহ
(দৃষ্টান্ত)।
তোমরা যদি এ দু'টির অনুসরণ কর,
তাহলে তোমরা বিপথগামী হবে না।
মনোযোগ
দিয়ে আমার কথা শোন।
আল্লাহর ইবাদাত করবে, নামাজ আদায় করবে, রামাদান মাসে ছাওম পালন
করবে এবং যাকাত দেবে
৷
হে
জনগণ! তোমাদের অধীনে যারা কাজ করে
তাদের প্রতি খেয়াল রেখো। তোমরা নিজেরা যা খাবে ও
পরিধান করবে তাদেরকেও তদ্রূপ
খাবার খাওয়াবে ও তদ্রূপ পোশাক
পরিধান করাবে।
হে
জনগণ! আমার পরে আর
কোন নবী বা রাসূল
আসবেন না এবং নতুন
কোন দ্বীন ও নাযিল হবে না।
যারা
আমার কথাগুলো শুনেছো তারা তা অন্যদের
নিকট পৌঁছে দেবে এবং পুনরায়
তারাও অন্যদের কাছে পৌঁছে দেবে।”
এরপর
তিনি উপর দিকে মুখ
করে জনতাকে সম্বোধন করে বললেন: “হে
জনগণ! আমি কি তোমাদের
নিকট আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়েছি?”
সমবেত জনতা সমস্বরে জবাব
দিলেন: “হ্যা, আপনি পৌঁছে দিয়েছেন;
এ ব্যাপারে আল্লাহ্ সাক্ষী আছেন।”
হযরত
রাসূলুল্লাহর (সাঃ)-এর খুৎবাহ
শেষ হবার সাথে সাথেই
আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ
থেকে নীচের আয়াতটি নাযিল হয়:
বিদায় হজ্জের
ভাষণ
আরবি
اليومَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ
وَاقْمَتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
“আজ
আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে
পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের
ওপর আমার নি'আমতকে
সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং
ইসলামকে তোমাদের জন্য জীবনবিধানরূপে মনোনীত
করলাম।”-(সূরা আল মায়িদাহ-৩)
বিদায় হজের
ভাষণের
শিক্ষা
সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ তা'আলা যেন আমাদেরকে তাঁর দয়া ও অসীম রহমত দানে ধন্য করেন যাতে আমরা কেবল তাঁরই জন্যে এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে তাঁর দ্বীনের অনুসরণ করতে পারি।
তিনি আমাদেরকে আমাদের
মৃত্যু সম্পর্কে চিন্তা করার এবং তাঁর
সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী
ও রাসূল, বিশ্ব জাহানের জন্য রহমত (রাহমাতুল্লিল
'আলামীন) হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর অতুলনীয় দৃষ্টান্ত
অনুসরণ করে আমাদের জীবন
পরিচালনার তাওফীক দিন। আমীন
নবীজির
মৃত্যুর সময়ের ঘটনা
নবীজির
মৃত্যুর সময়ের ঘটনা বিদায় হজ্জ
থেকে মদীনায় ফিরে আসার পর
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অসুস্থ হয়ে
পড়েন। তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি
ঘটে এবং রোগ মারাত্মক
হয়ে দেখা দেয়। ফলে
তাঁর পক্ষে নামাযে ইমামতী করা অসম্ভব হয়ে
পড়ে। তাই তিনি তার
ঘনিষ্ঠতম বন্ধু হযরত আবু বকর
(রাঃ)- কে নামাজে ইমামতী
করতে বলেন।
রাসুল সাঃ
এর
মৃত্যু
তারিখ
অসুস্থতার
শেষ পর্যায়ে তাঁর ভীষণ মাথাব্যথা
হয় এবং খুব খারাপ
ধরনের জ্বর হয়। শেষপর্যন্ত
মানবজাতির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম মানুষ হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)
এ রোগেই ইন্তেকাল করেন। রাসুল সাঃ এর মৃত্যু
তারিখ সেদিন ছিল একাদশ হিজরীর
১২ই রাবীউল আউয়াল (মোতাবেক ৬৩২ খৃস্টাব্দের ৮ই
জুন)।
মানবজাতির
ইতিহাসের পূর্ণতম মানুষ হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল
করেন।
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ইন্তেকালের সংবাদ মুসলমানদের জন্যে খুবই হৃদয়বিদারক ছিল। প্রথমে তাঁরা এ সংবাদ বিশ্বাসই করতে পারেন নি। হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর অন্যতম বিখ্যাত সাহাবী হযরত ‘উমার ফারূক (রাঃ) এ খবর শোনার পর খুবই দিশাহারা হয়ে পড়েন;
তিনি
এই বলে হুমকি দেন
যে, কেউ যদি বলে
যে, হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)
ইন্তেকাল করেছেন তাহলে তাকে তিনি হত্যা
করবেন। বস্তুতঃ হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)
- এর প্রতি তাঁর গভীর মহব্বতের
কারণে দিগ্বিদিক জ্ঞানহারা হয়ে পড়ার ফলেই
তিনি একথা বলেছিলেন।
ওফাত অর্থ কি
ওফাত অর্থ হলো মৃত্যূবরণ করা। হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একজন মানুষ ছিলেন। (সূরাহ আল্-কাহফ-১১০) তিনি ছিলেন মরণশীল। তাই তিনি ইন্তেকাল করেন। মুসলমানদের জন্যে এ সংবাদ যতই বেদনাদায়ক ও হৃদয়বিদারক হোক না কেন, এ সত্যকে মেনে নেয়া ছাড়া তাঁদের কোন গত্যন্তর ছিল না।
হযরত
আবু
বকর
(রাঃ)
দুঃখভারাক্রান্ত মনে ও মলিন
মুখে এগিয়ে যান ও হযরত
মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর কপালে
চুম্বন করেন। তিনি কাঁদতে কাঁদতে
মসজিদের বাইরে অপেক্ষারত জনতার কাছে চলে এলেন।
হযরত
ওমর (রাঃ)-এর
কথাও তাঁর কানে এল।
তখন তিনি অশ্রুসজল অথচ
দৃঢ়কণ্ঠে সমবেত জনতাকে সম্বোধন করে বলেন,
“যে
মুহাম্মাদের পূজা করেছে সে
নিশ্চিত জেনে রাখুক যে
মুহাম্মাদ (সাঃ) মারা গেছেন। আর
যে আল্লাহর 'ইবাদাত করেছে সে জেনে রাখুক
যে, আল্লাহ্ জীবিত এবং তিনি কখনো
মৃত্যুবরণ করেন না। ”
এরপর
তিনি কুর'আন মজীদ
থেকে এ আয়াতটি তেলাওয়াত
করেন:
وَمَا مُحَمَّدُ الاَرَسُولُ قَدْ خَلَتْ
مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَنَا بِنُ مَاتَ اَوَقُتِلَ
انْقَلَبْتُمُ عَلَى أَعْقَابِكُمْ
وَمَنْ يَنْقَلِبُ عَلَى عَقِبَيْهِ فَلَن يَضُرَ اللهَ شَيْئًاء وَسَيَجْزِى اللهُ
الشَّكِرِينَ
“মুহাম্মাদ
(সাঃ) তো একজন রাসূল। তার
পূর্বে (অন্য) রাসূলগণ গত হয়েছে। সে
যদি মারা যায় বা
নিহত হয় তাহলে কি
তোমরা পিছন দিকে ফিরে
যাবে? আর যে পিছন
দিকে ফিরে যাবে সে
আল্লাহর কোন ক্ষতিই করতে
পারবে না। আর আল্লাহ্
খুব শ্রীঘ্রই কৃতজ্ঞদের পুরস্কৃত করবেন।” (সূরাহ আলে ইমরান-১৪৪)
হযরত
আবু বকরের বক্তব্য মুসলমানদেরকে কঠিন বাস্তবতাকে মেনে
নিতে অনুপ্রাণিত করে এবং তাঁদের
মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও আশা সৃষ্টি
করে। কারণ তাঁরা বুঝতে
পারেন যে, আল্লাহ্ই তাঁদেরকে
সাহায্য করবেন এবং কুর'আন
ও হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সুন্নাত তাঁদেরকে
পথপ্রদর্শন করবে।
দায়িত্ব সম্পাদন
আল্লাহ্ তা'আলা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর ওপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন তা তিনি সম্পূর্ণরূপে ও ভালভাবে সম্পাদন করেন। তিনি শুধু ইসলামী হুকুমাত প্রতিষ্ঠা ও তাকে শক্তিশালীই করেন নি। বরং ইসলামের সমস্ত বিধি-বিধান বাস্তবায়ন করেন।
তাঁর জীবনের শেষের
দু'বছরে যাকাত, জিজিয়া
(ইসলামী হুকুমাতের অমুসলিম অধিবাসীদের ওপর যাকাত দান
ও জিহাদে অংশগ্রহণের পরিবর্তে আরোপিত নিরাপত্তা কর) ও হজ্জ
সংক্রান্ত বিধি-বিধান নাযিল
হয় এবং তিনি সেসব
বিধি-বিধানও বাস্তবায়ন করেন।
হযরত
মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর একটি
মিশন ছিল, একটি লক্ষ্য
ছিল এবং তা অর্জন
করা অপরিহার্য ছিল। তা হচ্ছে,
মানুষের জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ্
তা'আলার আইন- বিধানের
কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। তাঁর দায়িত্ব
ছিল আল্লাহর ইবাদাত, তাওহীদের প্রতি আনুগত্য, রিসালাতে ঈমান ও আখিরাতে দৃঢ় ঈমানের ওপরে ভিত্তিশীল একটি
সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। তিনি তাঁর
এ দায়িত্ব পুরোপুরি ও সাফল্যের সাথে
সম্পাদন করেন।
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) পৌত্তলিকতার কেন্দ্র মক্কা নগরীতে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। তিনি সত্যের খাতিরে, আল্লাহ্ তা'আলার জন্যে বহু অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেন, বিরোধিতা মোকাবিলা করেন, অপমান-লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করেন, শেষ পর্যন্ত তাঁর বাড়ীঘর ও জন্মভূমি পরিত্যাগ করে যান।
তিনি
মিথ্যা, অসত্য ও পাপাচারের বিরুদ্ধে
লড়াই করেন এবং কখনো
তাঁর মৌলিক নীতিমালার প্রশ্নে আপোস করেন নি।
তাঁকে সব রকমের পার্থিব
প্রলোভন দেয়া হয়, কিন্তু তিনি
এসব ফাঁদে পড়েন নি।
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) যা প্রচার করতেন তা নিজে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পালন করতেন। তাঁর চরিত্র ও আচরণ ছিল খুবই আকর্ষণীয় যা লোকদেরকে চুম্বকের ন্যায় আকর্ষণ করত। তাঁর আচার-আচরণ এমন কি তাঁর ভয়ানক দুশমনদেরকেও অভিভূত করত। তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল।
খুবই আকর্ষণীয়। তাঁর
জীবন ছিল আল্লাহ্ তা'আলার আদেশ-নিষেধের
প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের নির্ভেজাল ও নিখুঁত দৃষ্টান্ত।
তাঁর সঙ্গীসাথীগণ অন্য যে কারো চেয়ে তাঁকেই বেশী ভালবাসতেন। তাঁর জীবন ছিল একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা, শিক্ষক, সেনাপতি, ও রাষ্ট্রনায়কের জীবন। তিনি ছিলেন স্বামী, পিতা, বন্ধু ও ভাই হিসেবে অতুলনীয়। সর্বোপরি তিনি ছিলেন আল্লাহর খাঁটি বান্দা।
তিনি যখন যুদ্ধ
করেছেন কেবল সত্যের জন্যই
যুদ্ধ করেছেন এবং কখনোই যুদ্ধনীতির
লঙ্ঘন করেন নি। চরম
উস্কানির মুখেও তিনি সর্বোচ্চ ধৈর্যের
পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর ছাহাবীগণ তাঁকে
এতই ভালবাসতেন যে, তাঁরা তাঁর
আহ্বানে জীবন দিতেও দ্বিধা
করতেন না।
হযরত মুহাম্মাদ
(সাঃ)-এর
জীবন
আমাদের
জন্য
অনুসরণীয়
উজ্জ্বলতম
দৃষ্টান্ত।
তিনি আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে এবং
সকল দিকবিভাগের জন্য শিক্ষা রেখে
গেছেন। তাঁর জীবন ছিল
ইসলামের পরিপূর্ণ বাস্তব রূপ যা আল্লাহ্
তা'আলার পরিপূর্ণ হেদায়াত-গ্রন্থ কুরআনের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছিল।
মানবজাতিকে আল্লাহর 'ইবাদাতের সর্বোত্তম পথ দেখানোর জন্যে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে নবী ও রাসূল হিসেবে পাঠানো হয়। তেইশ বছরের নবুওয়াতী জীবনে তিনি পরিপূর্ণরূপে এ দায়িত্ব পালন করেন।