হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবন কাহিনী-কাফিররা
হযরত মুহাম্মাদ
(সাঃ)-এর সাথে আপোষরফা
করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে
জুলুম-নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। মুসলমানদের জান-মালের ওপর হুমকি অনেক
বেড়ে যায়। যেসব মুসলমান আর্থিক
দিক দিয়ে অস্বচ্ছল ছিলেন বিশেষভাবে তাঁদেরই নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশী বিঘ্নিত হয়।
আবিসিনিয়ার বর্তমান
নাম
কি
এমতাবস্থায় যেসব মুসলমান খুবই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁদেরকে আবিসিনিয়ায় হিজরত করার পরামর্শ দেন। কারণ তখন নাজ্জাশী নামে একজন মহৎপ্রাণ খৃস্টান রাজা আবিসিনিয়ায় (বর্তমানে যার নাম ইথিওপিয়া Ethiopia) রাজত্ব করতেন।
তখন কয়েকভাগে বিভক্ত
হয়ে ৮৩ জন মুসলমান
আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন। প্রথম গ্রুপে দশজন মুসলমান ছিলেন।
এরাই ছিলেন আল্লাহর জন্যে নিজেদের দেশ থেকে হিজরতকারী
প্রথম মুসলিম দল।
মুহাজির কারা? তাদের
ফিরিয়ে
আনার
চেষ্টা
মুসলমানদের আবিসিনিয়ায় হিজরতের পর তাঁদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্যে কাফিররা ‘আমর বিন্ আল-‘আস ও আবদুল্লাহ বিন আবি রাবী'আহর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলকে নাজ্জাশীর দরবারে পাঠায়। তারা তাদের লক্ষ্য হাসিলের উদ্দেশ্যে নাজ্জাশীর দরবারের লোকদেরকে ঘুষ দেয় এবং মুসলিম মুহাজিরদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেয়।
তারা অভিযোগ করে যে, এই মুহাজিররা হচ্ছে একদল স্বধর্মত্যাগী লোক এবং তারা এমন একটি অভিনব ধর্মের অনুসারী যার কথা ইতিপূর্বে কেউ শোনে নি। নাজ্জাশী পুরো বিষয়টি সম্বন্ধে জানার উদ্দেশ্যে মুসলমানদেরকে তাঁর সামনে আনার জন্যে আদেশ দিলেন।
তাঁদেরকে
নিয়ে আসা হলে নাজ্জাশী
জিজ্ঞেস করেন: “তোমরা যে নতুন ধর্মের
অনুসরণ করার কারণে আপনাদের
দেশ ছাড়তে হয়েছে সে ধর্মটি কি?”
তখন মুসলমানদের পক্ষ থেকে হযরত জাফর
বিন
আবি
তালিব
(রাঃ)
বললেন: “হে রাজা! ইতিপূর্বে
আমরা অজ্ঞতা, অনৈতিকতা এবং পাথর ও
মূর্তির পূজায় ডুবে ছিলাম, মৃতপ্রাণী
ভক্ষণ করতাম, সকল প্রকার অন্যায়-অবিচার করতাম, স্বাভাবিক বন্ধন ছিন্ন করতাম, মেহমানদের সাথে খারাপ আচরণ
করতাম এবং আমাদের মধ্যকার
শক্তিশালীরা দুর্বলদেরকে শোষণ করত।
নাজ্জাশী
ইসলামিক উক্তি
“এরপর
আল্লাহ্ আমাদের নিজেদের মধ্য থেকে এমন
এক ব্যক্তিকে নবী করে পাঠালেন
যার বংশধারা, সত্যবাদিতা, বিশ্বস্ততা, ও সততা আমাদের
ভালভাবে জানা ছিল। তিনি
আমাদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকেন এবং
আমরাও আমাদের পূর্বপুরুষরা যেসব পাথর ও
মূর্তির পূজা করতাম তা
পরিত্যাগ করতে বলেন।
“তিনি আমাদেরকে সত্যকথা বলা, ওয়াদা রক্ষা করা, আত্মীয়-স্বজনদের উপকার করা, প্রতিবেশীদের সাথে সদাচরণ করা, রক্তপাত থেকে বিরত থাকা এবং যিনা-ব্যভিচার পরিহার করার জন্যে আদেশ দিয়েছেন।
তিনি আমাদেরকে মিথ্যাসাক্ষ্য
দেয়া থেকে বিরত থাকার,
ইয়াতীমদের সম্পদ আত্মসাৎ না করার এবং
কোন মহিলার ওপর মিথ্যা অপবাদ
না দেয়ার জন্যে আদেশ দিয়েছেন। তিনি
আমাদেরকে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে
শরীক না করার জন্যে
হুকুম দিয়েছেন।
ঈমানের আলোঃ (imaneralo)
“তিনি
আমাদেরকে নামাজ আদায়, রোযা পালন ও
যাকাত দেয়ার জন্যে আদেশ দিয়েছেন। আমরা
তাঁর ওপর ও তিনি
আল্লাহর নিকট থেকে যা
এনেছেন তার ওপর ঈমান (iman) এনেছি
এবং তিনি আমাদেরকে যা
করতে বলেন ও যা
করতে নিষেধ করেন সে ব্যাপারে
আমরা তাঁর কথা মেনে
চলি।
সূরা মারিয়াম তেলাওয়াত করে শোনানো
“একারণে আমাদের গোত্রের লোকেরা আমাদের ওপর হামলা করে, আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে এবং আমাদেরকে সেই আগেকার অনৈতিকতা ও মূর্তিপূজায় ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। তারা মক্কায় আমাদের জীবনকে দুর্বিসহ করে তোলে।
তাই
আমরা ন্যায়বিচার ও শান্তিতে বসবাসের
উদ্দেশ্যে আপনার দেশে আশ্রয় চাইতে
এসেছি।" একথা শোনার পর
নাজ্জাশী তাঁদেরকে হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ওপর আল্লাহর
পক্ষ থেকে নাযিলকৃত কুর'আন থেকে কিছুটা
পড়ে শুনাতে বললেন। তখন হযরত জা'ফর
বিন
আবি
তালিব
(রাঃ)
কুর'আন মজীদের সূরাহ মারইয়াম
(১৯তম সূরাহ) তেলাওয়াত করে শুনান।
সূরাহ
মারইয়ামের তেলাওয়াত শুনতে শুনতে নাজ্জাশীর দুই চোখ বেয়ে
অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল এবং এতে
তাঁর দাড়ি ভিজে গেল। এরপর
তিনি বললেন: “এইমাত্র তোমরা যা পড়ে শুনালে
এবং মূসার
ওপর যা নাযিল হয়েছিল-
উভয়ই অভিন্ন উৎস থেকে নাযিল
হয়েছে। তোমরা আমার রাজ্যে বসবাস
করতে থাক, আমি আপনাদের
বহিষ্কার করব না।” এভাবে
মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফিরদের ঘৃণ্য চক্রান্ত আবার ব্যর্থ হয়ে
গেল।
ওমর রাঃ এর জীবনী
ও
ইসলাম
গ্রহণ
ইসলামিক গল্প
হযরত
মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নবুওয়াত
লাভের পর ষষ্ঠ বছরে
'ওমর
বিন আল-খাত্তাব ইসলাম
গ্রহণ করেন। তখন তাঁর বয়স
ছিল ত্রিশ বছরের নীচে। তিনি ছিলেন যেমন
শক্তিশালী ও সাহসী তেমনি
কঠোর প্রকৃতির লোক। তাঁর ইসলাম
গ্রহণের ঘটনাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তিনি
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)কে হত্যা
করার জন্য বের হয়েছিলেন।
তখন পথে হযরত নু'আইম
বিন
আব্দুল্লাহ
(রাঃ)-এর সাথে তাঁর
সাক্ষাত হয়। তিনি হযরত
মুহাম্মাদ (সাঃ)কে হত্যা
করতে যাচ্ছেন শুনে নু'আইম
তাঁকে প্রথমে নিজের ঘর সামলাতে বললেন
এবং জানালেন যে, “ওমরের বোন
ফাতিমা ও তাঁর স্বামী
সাঈদ
বিন
যায়েদ
(রাঃ)
ইসলাম গ্রহণ করেছেন।
এ খবর শুনে 'ওমর ভীষণ রেগে গেলেন এবং সাথে সাথে বোনের বাড়ীর দিকে ছুটলেন। তিনি তাঁর বোনের ঘরের কাছে পৌঁছেই কুর'আন তিলাওয়াত শুনতে পেলেন। সেখানে হযরত খাব্বাব বিন আলআরাহ্ (রাঃ) হযরত ফাতেমা বিতিল-খাত্তাব (রাঃ) ও হযরত সাঈদ বিন যায়েদ (রাঃ) কে কুর'আন মজীদের সূরাহ ত্বা-হা (২০তম সূরাহ) পড়ে শুনাচ্ছিলেন।
নোটঃ (Note) ইসলামিক বই সমূহে এইসব ঘটনা পাওয়া যায়।
যেমন, একটি বই ইসলাম ঈমান ও শিক্ষা। ‘ওমর দরজায় আঘাত
না করেই ঘরে ঢুকে
পড়েন এবং রাগের সাথে
বলেন: “তোমরা কোন্ ফালতু জিনিস
পড়ছিলে?”
হযরত
ফাতেমা (রাঃ) ও হযরত
সা'ঈদ (রাঃ) জবাব
দিলেন না। তাঁরা 'ওমরকে
ঢুকতে দেখেই হযরত খাব্বাব (রাঃ)
কে লুকিয়ে ফেলেছিলেন। ওমর রাগে অগ্নিশর্মা
হয়ে গেলেন এবং হযরত সা'ঈদ (রাঃ) কে
প্রহার করতে শুরু করলেন।
স্বামীকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে
গিয়ে হযরত ফাতেমা (রাঃ)
ও আহত হলেন।
বোনের শরীরে রক্ত দেখে ওমর শান্ত ও সংযত হলেন এবং তাঁরা কি পড়ছিলেন তা দেখতে চাইলেন। হযরত ফাতেমা বিতিল্ খাত্তাব (রাঃ) বললেন যে, কুর'আনের অংশবিশেষ পড়ছিলেন এবং তা স্পর্শ করতে হলে অবশ্যই 'ওমরকে ওযু করতে হবে। তখন ‘ওমর ওযু করলেন। অতঃপর তাঁকে কুর'আনের কয়েকটি আয়াত পড়তে দেয়া হলো।
ওমর আয়াতগুলো পড়লেন, তিনি কুরআনের আয়াতের
শব্দমালার সৌন্দর্য, ছন্দ, ঝংকার, বলিষ্ঠতা ও তাৎপর্যে মোহিত
হয়ে গেলেন। তিনি সাথে সাথেই
বললেন: “আমাকে মুহাম্মাদের নিকট নিয়ে চল,
আমি ইসলাম গ্রহণ করব।”
তখন
হযরত খাব্বাব (রাঃ) লুকানো অবস্থা
থেকে বেরিয়ে এলেন এবং 'ওমরকে
হযরত আল-আরকাম আল-মাখযূমী (রাঃ)-এর বাড়ী
দারুল আরকামে নিয়ে গেলেন। হযরত রাসূলূল্লাহ (সাঃ)
তখন সেখানে অবস্থান করছিলেন।
হযরত
আল-আরকাম আল-মাখযূমী (রাঃ)-এর বাড়ী ছিল
ছাফা পাহাড়ের নিকটে এবং তৎকালে এ
বাড়ীটি ছিল ইসলামের কেন্দ্র।
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ঘরের দরজায়
এগিয়ে এসে ওমরকে অভ্যর্থনা
জানালেন এবং তাঁর আগমনের
কারণ জিজ্ঞেস করলেন।
কালেমায়ে শাহাদাত
ওমর বললেন যে, তিনি ইসলাম
গ্রহণ করার জন্যে এসেছেন
এবং কালেমায়ে
শাহাদাত
('আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু; ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু) উচ্চারণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলাম
গ্রহণ করলেন। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)
এতে খুবই খুশী হলেন।
হযরত
‘ওমর (রাঃ) ছিলেন খুবই
প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাই তাঁর ইসলাম
গ্রহণের ফলে মুসলমানদের মনোবল
খুবই বেড়ে যায়। এর আগে হযরত
মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর চাচা
হযরত
হামযাহ
(রাঃ)
ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনিও খুবই প্রভাবশালী ব্যক্তি
ছিলেন। এ দুইজন সাহসী
ও প্রভাবশালী ব্যক্তির ইসলাম গ্রহণ ছিল ইসলামের প্রাথমিক
যুগের আন্দোলনের ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা।
তায়েফের অবস্থান কোথায়?
নবীজির তায়েফ গমন
বর্তমান সৌদিআরবের একটি শহরের নাম তায়েফ। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) হযরত যায়েদ বিন হারিসাহ (রাঃ) কে সাথে নিয়ে তায়েফে পৌঁছলেন। প্রথমেই তিনি সেখানকার তিনজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কাছে গেলেন এবং তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন।
কিন্তু তিনজনই ইসলামের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে এবং তাঁর
সাথে দুর্ব্যবহার করে। শুধু তাই
নয়, তারা হযরত রাসূলুল্লাহ
(সাঃ)-এর বিরুদ্ধে রাস্তার
বখাটে ছেলেদের লেলিয়ে দেয় এবং তাঁকে
শহর থেকে বের করে
দিতে বলে।
নবীজির জেল জীবন বা কষ্টের
জীবন
বখাটে
ছেলেরা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর দিকে পাথর
ছুঁড়ে মারতে থাকে। পাথরের আঘাতে
তাঁর
পা
ক্ষতবিক্ষত
হয়ে
যায়। তারা হৈ
হুল্লুড় করে তাঁকে বিভিন্ন
ধরনের বিদ্রুপ করতে থাকে এবং
শেষ পর্যন্ত শহর থেকে বের
করে দেয়।
তিনি
ক্লান্ত-শ্রান্ত ও বিপর্যস্ত অবস্থায়
ব্যথিত হৃদয় নিয়ে একটি বাগানে এসে
আশ্রয় নেন এবং সেখানে
নামাজ আদায় করেন।
বাগানের মালিকরা পুরো ঘটনা দেখেছিল। তারা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)- এর ক্লান্ত-শ্রান্ত ও বিপর্যস্ত অবস্থার কারণে খুবই দুঃখিত হয়। তারা তাঁর মেহমানদারী করে। তারা তাদের খৃস্টান গোলাম ‘আদ্দাস-এর হাতে তাঁর জন্যে আঙ্গুর পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তী কালে 'আদ্দাস ইসলাম গ্রহণ করেন।
মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর
চারিত্রিক
বৈশিষ্ট্য
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রায়ই বলতেন যে, তায়েফের সেই দিনটি ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিন। কিন্তু তোমরা তাঁর মহত্ব ও মহানুভবতার কথা চিন্তা করে দেখ।
তায়েফবাসীরা তাঁর ওপর হামলা
করে, তাঁকে ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত করে
দেয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁর
ওপরে হামলা-কারীদের বিরুদ্ধে তিনি কিছুই বলেন
নি। বরং তাদের হেদায়াতের
জন্য তিনি আল্লাহর নিকট
দু'আ করেন।
এমনই
ছিল রহমাতুল্লিল
'আলামীন
হযরত
মুহাম্মাদ
(সাঃ)-এর
মহান
চারিত্রিক
বৈশিষ্ট্য।
ইহকাল ও পরকালে সাফল্য
ও সুখ-শান্তি পেতে
হলে আমাদের সকলকে অবশ্যই হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর দৃষ্টান্ত অনুসরণ
করতে হবে।
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পর পর কয়েকটি বড় ধরনের আঘাতের সম্মুখীন হন। চাচা আবু তালিব ও স্ত্রী হযরত খাদীজা (রাঃ) র ইন্তেকালের পর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি তায়েফে চরম নিষ্ঠুরতার সম্মুখীন হন।
তবে এর পর পরই আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে তাঁর জন্যে এমন এক সান্ত্বনার ব্যবস্থা করা হয় যা তাঁর দুঃখ কস্ট ভুলিয়ে দেয়। তা হচ্ছে তিনি তাঁকে শান্তি ও সান্ত্বনা দিতেন, সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা দিতেন এবং যখন তাঁর পাশে আর কেউ ছিল না তখন তিনিই তাঁর পাশে ছিলেন।
আপনাদের নিশ্চয়ই স্মরণ আছে যে, সর্বপ্রথম
হযরত খাদীজা (রাঃ) ই হযরত
মুহাম্মাদ (সাঃ) কে আল্লাহর
রাসূল হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন ও তাঁর ওপর
ঈমান
এনেছিলেন।
বস্তুতঃ হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জন্য এটা ছিল একটা মারাত্মক আঘাত। কিন্তু তাঁর পক্ষে এ আঘাত সহ্য করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। কারণ মৃত্যু হচ্ছে জীবনের এক অনস্বীকার্য সত্য। সমস্ত মানুষকেই মরতে হবে; আমাদেরকেও একদিন মরতে হবে। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর শৈশব কাল থেকেই একের পর এক আঘাত ও দুঃখ পেয়ে আসছিলেন।
আল্লাহ্ তা'আলা তাঁকে
সারা জীবনই পরীক্ষা করেছেন। কারণ সর্বশেষ নবী
হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য তাঁর অতুলনীয়
ধৈর্য ও সহ্যের প্রয়োজন
ছিল। কিন্তু দুঃখ কষ্ট, জুলুম-নির্যাতন ও মৃত্যুর আঘাত
সহ এসব পরীক্ষা যতই
কঠিন ও অসহনীয় হোক
না কেন, তিনি জীবনের
সবগুলো পরীক্ষায়ই উত্তীর্ণ হয়েছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ্ তা'আলা এভাবেই
অন্য সকল জীবনব্যবস্থার ওপরে
ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য উপযুক্ত
করে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)কে গড়ে তোলেন।
আমাদেরকে
মনে রাখতে হবে যে, খাঁটি
মুসলমান হিসেবে বেঁচে থাকতে হলে আমাদেরকে বিভিন্ন
ধরনের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে এগোতে
হবে। কেবল তাহলেই আমাদের
প্রিয় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে
পরকালে জান্নাত স্বরূপ চিরন্তন রহমতের দ্বারা পুরস্কৃত করবেন।
তায়েফের সংক্ষিপ্ত ঘটনা
মক্কাবাসীদের নিষ্ঠুর আচরণে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) খুবই মর্মাহত হলেন। এবার তিনি মক্কার ষাট মাইল দূরবর্তী তায়েফ শহরে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং আশা করলেন, হয়ত সেখানকার লোকেরা তাঁকে সমর্থন করবে।
- নোটঃ হযরত খাদীজা (রাঃ) যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) অন্য কোন মহিলাকে বিবাহ করেন নি। অবশ্য হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর ইন্তেকালের পর তিনি কয়েকজন মহিলাকে বিবাহ করেন। হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে তাঁদেরকে বিবাহ করেন। এই মহিলাদের বেশীর ভাগই ছিলেন বিধবা।
মেয়েদের ইসলামিক
নাম
মহানবী সাঃ এর স্ত্রীদের নাম
হযরত রাসুলুল্লাহ
(সাঃ)
হযরত
খাদীজা
ছাড়া
অন্য
যে
মহিলাদেরকে
বিবাহ
করেন
তাঁরা
হলেন:
মহানবী
সাঃ
এর
স্ত্রীদের
নাম;
হযরত
সাওদাহ,
হযরত
‘আয়েশাহ,
হযরত
হাফছাহ,
হযরত
যায়নাব
বিনতুল
হারিস,
হযরত
যায়নাব
বিনতে
জাহাশ,
হযরত
উম্মে
হাবীবাহ,
হযরত
উম্মে
সালামা,
হযরত
জুওয়াইরিয়াহ
বিনতুল
হারিস,
হযরত
মাইমুনা
বিনতুল
হারিস
ও
হযরত
ছাফিয়াহ
বিনতে
হুইয়াই
(রাদিয়াল্লাহু
তা'আলা
'আনহু)।
ইসলামের এই ঐতিহাসিক নবীজির স্ত্রীদের নামে মেয়েদের ইসলামিক নাম রাখা যায়।
এসময় একটি অলৌকিক ঘটনাও ঘটেছিল যা বয়কট প্রত্যাহারের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে কাফিরদেরকে বাধ্য করে। কাফিররা যখন বয়কট চালিয়ে যাওয়া না-যাওয়া নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয় তখন তাদের মধ্য থেকে কিছু লোক কা'বাহ্ ঘরে লটকে দেয়া বয়কটের সিদ্ধান্ত বিষয়ক দলীলটি তুলে নিতে চায়।
কিন্তু সকলে সেখানে গিয়ে
দেখে যে, একমাত্র আল্লাহ্
নাম ছাড়া পুরো দলীলটিই উই
পোকায় খেয়ে ফেলেছে। এ থেকে তারা
বুঝতে পারল যে, এ
বয়কট আল্লাহ্ তা'আলার পছন্দ
নয়। তাই তারা সর্বসম্মতভাবে
বয়কট তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত
নেয়।
কাফিররা বয়কট তুলে নিলে বানু হাশিম ও বানু আবদুল মুত্তলিব আবার মক্কায় ফিরে আসেন। কিন্তু কাফিররা বয়কট তুলে নিলেও হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ও মুসলমানদের প্রতি জুলুম-নির্যাতন আগের মতই অব্যাহত রাখে।
এ সত্ত্বেও তাঁরা
অত্যন্ত ধৈর্য ও দৃঢ়তার পরিচয়
দিয়ে দ্বীনের প্রচার অব্যাহত রাখেন। কারণ তাঁরা জানতেন
যে, অবশ্যই মিথ্যা বিদায় নেবে ও সত্য
টিকে থাকবে। (সূরাহ বনি ইসরাঈল-৮৯)
আল্লাহর দ্বীন অবশ্যই কুফরের ওপর বিজয়ী হবে।
ইসলামের
জনপ্রিয়তা ও শক্তি ক্রমেই
বৃদ্ধি পেতে থাকে। দিনের
পর দিন ইসলাম অধিকতর
শক্তিশালী হতে থাকে। আর
আল্লাহ্ তা'আলাই ইসলামের
শক্তি ও বিজয় নির্ধারণ
করে রেখেছিলেন।
সময়
বয়ে চলল। হযরত মুহাম্মাদ
(সাঃ)-এর বয়স পঞ্চাশ
বছর হয়ে গেল। তাঁর
নবুওয়াতের দশবছর পূর্ণ হয়ে গেছে। ইসলামের
দুশমনদের বিরোধিতা ও শত্রুতা সমানে
অব্যাহত রয়েছে। এরই পাশাপাশি তাঁর
জন্যে আরো দুঃখ কষ্ট অপেক্ষা
করছিল।
খাদিজা রাঃ এর ইন্তেকাল
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর চাচা আবু তালিব মারা গেলেন। আবু তালিবই সব সময় তাঁর ভাতিজা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করে আসছিলেন। কিন্তু তিনি ইসলামে ঈমান আনেননি; এ অবস্থায়ই তিনি মারা যান।
আবু তালিবের
মৃত্যুতে হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর হৃদয়টা ভেঙ্গে
চুরমার হয়ে গেল। কিন্তু
তাঁর জন্যে আরো দুঃখ অপেক্ষা
করছিল। তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী
হযরত খাদীজা
(রাঃ)
ও
ইন্তেকাল
করলেন।
হযরত
খাদীজা (রাঃ) শুধু যে,
স্ত্রী হিসেবে তাঁর সেবাযত্ন করতেন
তা-ই নয়, বরং
বিপদাপদে ও দুর্দিনে তিনি
তাঁর স্বামীর পাশে অটল পাহাড়ের
ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকতেন।
মুসলমানদের উপর অত্যাচার
ক্রমান্বয়ে মুসলমানদের শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকায় কুরাইশরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তখন তারা ইসলাম ও মুসলমানদের ওপর বড় ধরনের আরেকটা আঘাত হানার ষড়যন্ত্র করে। তারা বানু হাশিম ও বানু আবদুল মুত্তালিবকে পুরোপুরি বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেয়।
কাফিররা তাঁদেরকে শি'বি আবি
তালিব নামে একটি সংকীর্ণ
উপত্যকায় নির্বাসিত করে। তাঁদের এ
বয়কট তিন বছর অব্যাহত
থাকে। এ সময় বানু
হাশিম ও বানু আবদুল
মুত্তালিব-এর লোকেরা অবর্ণনীয়
দুঃখকষ্টের সম্মুখীন হন। ঘটনাক্রমে স্বয়ং
কুরাইশ গোত্রের লোকদের নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য সৃষ্টি হওয়ায় তিন বছরের মাথায়
এ বয়কট প্রত্যাহার করা হয়। নির্বাসিত
থাকাকালে বানু হাশিম ও
বানু আবদুল মুত্তালিবের লোকেরা অত্যন্ত দৃঢ়তা ও ঐক্যের পরিচয়
দেন।
ইসলামিক পোস্ট
ইসলামিক
পোস্ট গুলো নিয়মিত পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ইনশাআল্লাহ আরো বেশি বেশি ইসলামিক পোস্ট
পাবেন।
পোস্ট ট্যাগঃ
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী রচনা
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী গ্রন্থ
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী রচনা
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী গ্রন্থ pdf
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী বই
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী গ্রন্থ নাম
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী কাহিনী
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী গ্রন্থ পিডিএফ
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী বাংলায়
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর জীবনী
হযরত মুহাম্মদ সা এর জীবন কাহিনী
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী ইংরেজি
হযরত মুহাম্মদ এর জীবনী
হযরত মুহাম্মদ জীবনী
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাম এর জীবনী
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর কাহিনী
হযরত মুহাম্মদ এর জীবন কাহিনী
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী গ্রন্থ app
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর ঘটনা
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর জীবন কাহিনী
তাহেরি হুজুরের নতুন ওয়াজ
দানিয়াল নবীর ঘটনা
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর দাদার নাম কি
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী নিয়ে বক্তব্য
মহানবী হযরত মুহাম্মদ
নবী হযরত মুহাম্মদ এর জীবনী
নবী হযরত মুহাম্মদ এর জীবন কাহিনী
বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর পুরো জীবনী
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর জীবনী
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী pdf
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সম্পূর্ণ জীবনী
মুহাম্মদ স এর জীবনী