ঈমানের শাখা কতটি
সকল মানুষকে একদিন কবর থেকে জীবিত করে একত্রিত করা হবে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় (যার নাম হাশরের ময়দান), এ কথার প্রতি বিশ্বাস রাখা হচ্ছে ঈমানের অংশ। আল্লাহ তাআলা বলেন-
তারা কি চিন্তা করে দেখে না যে, নিশ্চয়ই তারা পুনরুত্থিত হবে। সেই মহাদিবসে। যেদিন মানুষ দাঁড়াবে বিশ্ব প্রতিপালকের সম্মুখে।
(সূরা
আল মুতাফফিফীন: আয়াত ৪-৬) আব্দুল্লাহ
ইবনে উমর রদিয়াল্লাহ থেকে
বর্ণিত সহীহ মুসলিমের এক
হাদীসে বলা হয়েছে-
বাংলা অর্থ:
মানুষ বিশ্ব প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে। তখন তারা স্বীয় ঘামে হাবুডুবু খাবে। (বুখারী ৪৯৩৮)
ঈমানের শাখা-৯.
মুমিনের জন্য জান্নাত আর
কাফিরের জন্য জাহান্নাম পরকালীন
জীবনে মুমিন এবং কাফিরের আবাসস্থল
হবে যথাক্রমে জান্নাত ও জাহান্নাম, এর
উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।
আল্লাহ
তাআলা বলেন-
বাংলা অর্থ:
হ্যাঁ,
যে ব্যক্তি পাপ উপার্জন করেছে
এবং পাপ তাকে ঘিরে
রেখেছেন, তারা জাহান্নামের অধিবাসী।
সেটি তাদের স্থায়ী আবাস। আর যারা ঈমান
এনেছে এবং সৎকাজ সম্পাদন
করেছে, তারা জান্নাতের অধিবাসী।
তারা চিরদিন সেখানেই অবস্থান করবে। (সূরা: আল বাকারা-আয়াত-৮১)
আব্দুল্লাহ
ইবনে উমর রাদিয়ালা থেকে
সহীহ আল বুখারী ও
সহীহ মুসলিমে বলা হয়েছে, নবী
করীম (সাঃ) বলেছেন-
বাংলা অর্থ:
তোমাদের
কারও মৃত্যু হলে সকাল সন্ধ্যায়
তাকে তার আবাসস্থল দেখানো
হয়। জান্নাতী হলে জান্নাতে আর
জাহান্নামী হলে জাহান্নামে। বলা
হবে এটিই তোমার আবাসস্থল।
এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে।
(সহীহ আল বুখারী-১৩৭৯ ও মুসলিম-২৮৬৬)
আল্লাহর
প্রতি
গভীর
ভালোবাসা
থাকা
আল্লাহ
তাআলার প্রতি গভীর ভালোবাসা ঈমানেরই অন্যতম অংশ। কুরআনুল কারীমে
বলা হয়েছে-
বাংলা অর্থ:
মানুষের
মধ্যে এমনও রয়েছে যারা
আল্লাহকে ছাড়া অন্যকে রব হিসেবে গ্রহণ
করে এবং তাদেরকে সেই
রকম ভালোবাসে যেমন ভালোবাসা হয়
আল্লাহকে। অথচ যারা ঈমানদার
তারা আল্লাহকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। (সূরা
আল বাকারা: আয়াত-১৬৫)
আনাস
রাদিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত সহীহ
আল বুখারী ও সহীহ্ মুসলিমের
এক হাদীসে বলা হয়েছে, নবী
করীম (সাঃ) বলেছেন-
বাংলা অর্থ:
তিনটি
জিনিস যার মধ্যে বর্তমান
রয়েছে, সে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ অনুভব করতে পেরেছে।
- ১. যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার সবচেয়ে বেশি প্রিয়।
- ২. কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই অন্যকে ভালোবাসে।
- ৩. যাকে আল্লাহ কুফর থেকে মুক্তি দান করেছেন, সে পুনরায় কুফরের দিকে ফিরে যাওয়াকে এমন অপছন্দ করে যেমন অপছন্দ করে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে। (বুখারী-১৬, মুসলিম-৪৩)
মনে
সর্বদা
আল্লাহর
ভয়
জাগ্রত
থাকা
মনে
সর্বদা আল্লাহর ভয় জাগ্রত থাকাও
ঈমানের আরেকটি অংশ। আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়াতাআলা ইরশাদ করেন-
বাংলা অর্থ:
তোমরা
যদি প্রকৃত মুমিন-ই হয়ে থাক,
তাহলে তাদেরকে নয় আমাকেই ভয়
কর। (সূরা আলে ইমরান:
আয়াত-১৭৫)
বাংলা অর্থ:
তোমরা
মানুষকে ভয় করো না,
আমাকে ভয় কর। (সূরা
মায়েদা: আয়াত -৪৪)
বাংলা অর্থ:
আর
ভয় কেবলমাত্র আমাকেই কর। (সূরা আল
বাকারা: আয়াত-৪০)
অন্য
জায়গায় আল্লাহ ভীতিকে মুমিনের বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করা
হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
বাংলা অর্থ:
তারা
সর্বদা আল্লাহর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত।
(সূরা আম্বিয়া: আয়াত- ২৮)
বাংলা অর্থ:
তোমরা
এক টুকরা খেজুরের বিনিময়ে হলেও জাহান্নামের আগুন
থেকে বাঁচো। (সহীহ আল বুখারী-১৪১৭, সহীহ মুসলিম-১০১৬)
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) বলেছেন-
বাংলা অর্থ
আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে তাহলে কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে। (বুখারী-৪৬২১)
আল্লাহর
প্রতি
সু
ধারণা
রাখা
আল্লাহর
প্রতি সু-ধারণা রাখা
এবং তাঁর রহমতের প্রত্যাশী
হওয়াও ঈমানের
অন্যতম অংশ। মহান আল্লাহ
তায়ালা বলেন-
বাংলা অর্থ:
Bengali meaning
অবশ্যই
আল্লাহর রহমত সচ্চরিত্র লোকদের
অতি নিকটেই রয়েছে। (সূরা : আল আ'রাফ-আয়াত : ৫৬)
সূরা আয-যুমারে
বলা
হয়েছে-
বাংলা অর্থ:
আপনি
বলে দিন, (মহান আল্লাহ বলেন)
হে আমার বান্দাগণ! যারা
নিজেদের সাথে বাড়াবাড়ি করে
ফেলেছো তারা আল্লাহর দয়া
ও অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো
না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন।
নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, দয়াবান।
(সূরা জুমার: আয়াত-৫৩)
তবে
শর্ত হচ্ছে আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলির মতো
আর কাউকে যেন অনুরূপ সত্তা
ও গুণাবলির অধিকারী মনে না করা
হয়। ইরশাদ হচ্ছে- জাবির রদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত হাদীসে
বলা হয়েছে, নবী করীম (সাঃ)-এর মৃত্যুর তিন
দিন আগে আমি তাঁকে
বলতে শুনেছি-
বাংলা অর্থ:
তোমাদের
প্রত্যেকেই যেন মৃত্যুর সময়
আল্লাহর প্রতি ভালো ধারণা রেখে
মৃত্যুবরণ করে। (সহীহ মুসলিম-২৮৭৭)
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত
হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) বলেছেন-
অর্থ:
আল্লাহ
তায়ালা ইরশাদ করেন, বান্দা আমাকে যে রকম মনে করে আমি
তার আশে পাশেই থাকি।
আর যেখানেই সে আমাকে মনে করে,
স্মরণ করে আমি তার
সাথেই থাকি। (সহীহ আল বুখারী-৭৪০৫ ও সহীহ
মুসলিম-২৬৭৫)
আল্লাহর
প্রতি
নির্ভরতা
ঈমানের
একটি শাখা হচ্ছে, আল্লাহর
প্রতি নির্ভরতা বা তাওয়াক্কুল। আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন-
বাংলা অর্থ
যারা
মুমিন তাদের তো আল্লাহর উপরই
ভরসা করা উচিত। (সূরা
আলে ইমরান-আয়াত)
অন্য
আয়াতে বলা হয়েছে-
অর্থ:
তোমরা
কেবল আল্লাহর উপরই নির্ভরশীল হও,
যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। (সূরা:
মায়িদা-আয়াত: ২৩)
যারা সত্যিই আল্লাহর উপর নির্ভর করতে পারে, আল্লাহ তাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আল্লাহ তাআলা বলেন-
Bengali meaning
যে
ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করবে,
তার জন্য তো একমাত্র
আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর কাজ সমাপ্ত
করবেনই।
(সূরা:
আত তালাক: আয়াত-৩)
বুখারী
ও সহীহ মুসলিমে ইবনে
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত
হয়েছে-
বাংলা অর্থ
যে
সত্তর হাজার লোক বিনা হিসাবে
জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের সম্পর্কে
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে প্রশ্ন করা
হলে তিনি বলেন, এসব
লোক হচ্ছে তারা, যারা ঝাড়ফুক করে
না, যাদুটোনা চর্চা করে না, গণক
বা জ্যোতিষীদের কথায় বিশ্বাস করে না, এসবের
বিপরীতে কেবলমাত্র তাদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা রাখে।
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ)-কে
ভালোবাসা
নবী
করীম (সাঃ) কে ভালোবাসাও ঈমানের
একটি অংশ। সহীহ আল
বুখারী ও সহীহ মুসলিমে
আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-
বাংলা অর্থ:
তোমাদের কেউ
ততক্ষণ
পর্যন্ত
মুমিন
হতে
পারবে
না,
যতক্ষণ
আমি
তার
কাছে
তার
সন্তান-সন্ততি
ও
অন্যদের
চেয়ে
বেশি
প্রিয়
না
হবো।
(সহীহ
আল
বুখারী-১৫,
সহী
মুসলিম-৪৪)
সহীহআল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে
আনাস রাদিয়াল্লাহ থেকে বর্ণিত আরেক
হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ
বলেছেন- ‘তিনটি জিনিস যার মধ্যে বিদ্যমান
রয়েছে সে ঈমানের প্রকৃত
আস্বাদন পেয়েছে। (তার একটি হচ্ছে)
যার কাছে আল্লাহ ও
তাঁর রাসূল অন্য সবকিছু থেকে
অধিক প্রিয়।' (বুখারী-১৬, মুসলিম-৪৩)
আরেক হাদীসে বলা হয়েছে- ‘এক ব্যক্তি নবী করীম (সাঃ)এর নিকট আগমন করে- বললেন- হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে? রাসূলুল্লাহ জবাবে বললেন- তুমি সেজন্য কী ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছ? লোকটি বলল,
হে আল্লাহর
রাসূল! সেজন্য বেশি রোযা অথবা
দান সাদকার প্রস্তুতি আমার নেই, আমি
কেবল আল্লাহর ও তাঁর রাসূলকে
ভালোবাসি। তিনি বললেন, তুমি
যাকে ভালোবাস তাঁর সাথেই তুমি
থাকবে।