হযরত খাদিজা রাঃ এর জীবনী রচনা
হযরত খাদিজা রাঃ এর জীবনী রচনা
“যখন কেউ আমার ওপর ঈমান আনেনি তখন খাদীজা ঈমান এনেছেন। তিনি তাঁর সম্পদে আমাকে অংশীদার করেছেন।
কথাগুলো
বলেছেন আল্লাহ্ তা'আলার প্রেরিত
সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর স্ত্রী
হযরত খাদীজাতুল কুব্রা (মহীয়সী খাদীজা) (রাঃ) সম্পর্কে।
আব্রাহার
হস্তীবাহিনীসহ মক্কা আক্রমণের ১৫ বছর আগে
৫৫৫ খৃস্টাব্দে হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর জন্ম। তাঁর
পিতার নাম ছিল খুওয়াইলিদ
ও মাতার নাম ছিল ফাতিমা
বিনতে যাইদাহ।
হযরত খাদীজা (রাঃ) তৎকালে একজন মহীয়সী ও সচ্চরিত্রা ধনী মহিলা হিসেবে মক্কা নগরীতে সুপরিচিতা ছিলেন। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর বয়স যখন ২৫ বছর ও হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর বয়স ৪০ বছর তখন তাঁদের মধ্যে বিবাহ হয়।
তাঁদের ছয়টি
সন্তান
হয়েছিল
দু'টি
পুত্রসন্তান:
হযরত
আল-কাসিম
ও
হযরত
'আবদুল্লাহ
(রাঃ)। তাঁরা যথাক্রমে
তাহির
ও
তায়্যিব
নামেও পরিচিত; এবং চারটি কন্যাসন্তান:
হযরত
যায়নাব,
হযরত
রুকাইয়াহ,
হযরত
উম্মে
কুলসুম
ও
হযরত
ফাতিমা
(রাঃ)।
প্রথম মুসলমান
হযরত খাদীজা (রাঃ) হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সাথে বিবাহের পর ২৫ বছর বেঁচে ছিলেন ও তাঁর সাথে ঘর করেছিলেন। হযরত খাদীজা (রাঃ) বেঁচে থাকাকালে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আর কোন বিবাহ করেননি; তখন হযরত খাদীজা (রাঃ) ছিলেন তাঁর একমাত্র স্ত্রী
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর ওপর সর্বপ্রথম যখন ওয়াহী নাযিল হল এবং আল্লাহ্ তা'আলা তাঁকে নবী হিসেবে মনোনীত করলেন তখন সাথে সাথেই যিনি তাঁর ওপর ঈমান আনেন তিনি হচ্ছেন হযরত খাদীজা (রাঃ)।
তিনিই হচ্ছেন প্রথম মুসলমান। তখন তাঁর বয়স ছিল ৫৫ বছর। তাঁর ইসলাম গ্রহণ মক্কাবাসীদের মধ্যে ইসলাম প্রচারে খুবই সহায়ক হয়। তিনি সব সময়ই হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে সহায়তা করেন। বিপদাপদের সময় তিনি হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে সাহস যোগাতেন ও সান্ত্বনা দিতেন।
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে আল্লাহ্
দ্বীনের প্রচারের ক্ষেত্রে তিনি সাধ্যমত সকল
প্রকার সাহায্য করেন। হযরত খাদীজা (রাঃ)
তাঁর ধনসম্পদ ইসলামের খেদমতে ব্যয় করেন। হযরত রাসূলুল্লাহ
(সাঃ)
সব সময়ই ইসলাম প্রচারের কাজে ব্যস্ত থাকতেন
আর হযরত খাদীজা (রাঃ)
তাঁদের ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা ও অন্যান্য সাংসারিক
কাজকর্ম করতেন।
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও হযরত খাদীজা (রাঃ) কে বিভিন্ন সময় বহু দুঃখবেদনা ও কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়। তাঁদের দুই পুত্র হযরত আল-কাসিম ও হযরত 'আবদুল্লাহ (রাঃ) শৈশবেই ইন্তেকাল করেন।
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নবুওয়াত লাভের পঞ্চম বছরে তাঁদের কন্যা হযরত রুকাইয়াহ (রাঃ) তাঁর স্বামী হযরত 'উছমান বিন আফ্ফান (রাঃ)-এর সাথে আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন।
হযরত রুকাইয়াহ (রাঃ) বার বছর বয়সে তাঁর পিতামাতার নিকট থেকে দূরে চলে যান এবং চার বছর পর ফিরে আসেন। সন্তান থেকে এ দীর্ঘ বিচ্ছেদ হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর জন্যে খুবই বেদনাদায়ক ছিল হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) নবুওয়াত লাভ করার পর কুরাইশরা তাঁকে ইসলাম প্রচার থেকে বিরত রাখার জন্যে সাধ্যমত চেষ্টা করে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়।
এক্ষেত্রে হযরত খাদীজা (রাঃ) তাঁকে সাহস যোগান ও সান্ত্বনা দেন। কাফিররা যখন হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সহ মুসলমানদের বিরুদ্ধে বয়কট আরোপ করে এবং তাঁদেরকে শিবি আবি তালিবে দীর্ঘ তিন বছর কাটাতে হয় তখন হযরত খাদীজা (রাঃ) কে অনেক দুঃখকষ্ট সহ্য করতে হয়।
নবুওয়াতের দশম বছরে (৬২০ খৃস্টাব্দে) ১০ই রামাদান তারিখে প্রথম মুসলমান মহীয়সী মহিলা হযরত খাদীজা (রাঃ) ইন্তেকাল করেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
তাঁর
ইন্তেকাল হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর জন্যে বিরাট
আঘাত ছিল। তিনি বলেন; “আমি এ দৃশ্য সহ্য
করতে পারছি না। তবে আমি
বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ্
এর মধ্যে অনেক কল্যাণ নিহিত
রেখেছেন।”
হযরত
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হযরত খাদীজা
(রাঃ)কে এতই ভালবাসতেন
যে, তাঁর ইন্তেকালের পর
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রায়ই তাঁর
কথা স্মরণ করতেন।
খাদিজার কাহিনী
হযরত খাদীজা (রাঃ) ছিলেন মানবজাতির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতমা মহিলাদের অন্যতম। হযরত জিবরাঈল (আঃ) নিয়মিত আল্লাহ্ তা'আলার নিকট থেকে তাঁর জন্যে সালাম নিয়ে আসতেন। হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর ইন্তেকালে তাঁর কন্যা হযরত ফাতিমা (রাঃ) খুবই মর্মাহত হন।
এর পর
থেকে তিনি সব সময়ই
পিতার কাছে থাকতেন এবং
প্রায়ই মায়ের জন্যে অশ্রুবিসর্জন করতেন ও বলতেন: “কোথায়
আমার মা? কোথায় আমার
মা?” হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
তাঁকে সান্ত্বনা দিতেন এবং বলতেন যে,
আল্লাহ্ তা'আলা হযরত
খাদীজা (রাঃ) কে জান্নাতে
স্থান দিয়েছেন।
মুসলিম
কিশোরী ও তরুণীদের জন্যে
হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর কথা
স্মরণ রাখা প্রয়োজন। তিনি
তাঁর স্বামীর প্রতি কতই না আন্তরিক
ছিলেন এবং তিনি আল্লাহর
পথে কতই না চেষ্টা-সাধনা ও ত্যাগ স্বীকার
করেছেন। আজকের দিনে কোন মুসলমান
হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর মত
স্ত্রী পেলে তিনি গর্বিত
হবেন। হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর গুণে গুণান্বিতা
মহীয়সী মুসলিম মহিলাগণ এ বিশ্বকে বদলে
দিতে পারেন।
হযরত ফাতিমা রাঃ এর জীবনী
হযরত
মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর চার
কন্যার মধ্যে হযরত ফাতিমা
(রাঃ)
ছিলেন সকলের ছোট। তিনি 'সাইয়িদাতুন
নিসা'য়ি ফী আহলিল
জান্নাহ’- অর্থাৎ ‘বেহেশতের নারীদের
নেত্রী'
হিসেবে সুপরিচিতা। তাঁর আরেকটি খেতাব
হচ্ছে ‘আয্-যাত্রা” অর্থাৎ
‘দীপ্তিমতী সুন্দরী'। একারণে তাঁকে
'ফাতিমাতুয্-যাহরা'ও বলা হয়।
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নবুওয়াত লাভের পাঁচ বছর আগে হযরত ফাতিমা (রাঃ) জন্মগ্রহণ করেন। হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মদীনায় হিজরতের পর হযরত ফাতিমা (রাঃ) ও তাঁর বোনেরা তাঁদের সৎমাতা হযরত সাওদাহ (রাঃ)-এর সাথে হিজরত করেন।
হযরত ফাতিমা (রাঃ)
তাঁর মাতা হযরত খাদীজা
(রাঃ)-এর ইন্তেকালের পর
পরিপূর্ণ আন্তরিকতা ও মহব্বতের সাথে
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর খেদমত
করেন। হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
ও তাঁকে খুবই ভালবাসতেন এবং
তাঁর প্রতি অত্যন্ত স্নেহমমতা প্রদর্শন করতেন।
হযরত
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সকল
স্ত্রীই হযরত ফাতিমা (রাঃ)
কে ভালবাসতেন। তিনি দেখতে তাঁর
মাতা হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর মত ছিলেন
এবং তাঁকে দেখে যে কারোই
তাঁর মহীয়সী মাতার কথা মনে পড়ত।
বদর-যুদ্ধের পর এক অনাড়ম্বর
অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে হযরত 'আলী
(রাঃ)-এর সাথে হযরত
ফাতিমা (রাঃ)-এর বিবাহ
হয়। অনুষ্ঠানে আগত মেহমানদেরকে খেজুর
ও মধুর শরবত দিয়ে
আপ্যায়ন করা হয়। এ
সময় তাঁর বয়স ছিল
প্রায় ১৮ বছর। অবশ্য
কোন কোন মতে তখন
তাঁর বয়স ছিল ১৫
বছর ৷
হযরত
ফাতিমা (রাঃ) তাঁর দাম্পত্য
জীবনে খুবই সুখী ছিলেন।
তাঁর স্বামী হযরত ‘আলী (রাঃ) তাঁকে
সম্মান করতেন। অন্যদিকে হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
সব সময়ই প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বামীকে মেনে চলতে ও
তাঁর খেদমত করার জন্যে হযরত
ফাতিমা (রাঃ) কে উপদেশ
দিতেন।
হযরত
ফাতিমা (রাঃ) সব সময়ই
তাঁর ঘরকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন
করে রাখতেন। ফলে তাঁর ঘর
দেখতে সাদাসিধা ও অনাড়ম্বর হলেও
তাতে একটা পবিত্র ভাব
থাকত। সেখানে সব সময়ই শান্তি
ও শান্ত পরিবেশ বিরাজ করত ৷
হযরত
ফাতিমা (রাঃ) ও হযরত
আলী (রাঃ) তাঁদের বৈবাহিক
জীবনে পাঁচজন সন্তান লাভ করেন। তাঁরা
হলেন তিন পুত্র: হযরত হাসান,
হযরত
হুসাইন
ও
হযরত
মুহাসিন
(রাঃ)
এবং দুই কন্যা: হযরত
যায়নাব ও হযরত উম্মে
কুলসুম (রাঃ)। হযরত
মুহাসিন (রাঃ) শিশু বয়সে
ইন্তেকাল করেন।
বিভিন্ন
হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী হযরত ফাতিমা (রাঃ)
র হাসিখুশী ব্যক্তিত্ব, দয়া, নম্রতা, ও উচ্চ মর্যাদার
কারণে তিনি একজন মহীয়সী
মহিলা হিসেবে গণ্য হতেন এবং
সমকালীন মহিলারা তাঁকে খুবই সম্মান করতেন।
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-
“সারা
বিশ্বের সকল নারীর মধ্যে
চারজন নারী সর্বশ্রেষ্ঠ: খাদীজা,
ফাতিমা, মারইয়াম (হযরত ঈসা (আঃ)-এর মাতা) ও
আছিয়াহ (ফির'আউনের স্ত্রী)।”
তাঁর সম্মানে অভ্যাস, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও কথাবার্তার দিক থেকে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সাথে হযরত ফাতিমা (রাঃ)-এর খুবই মিল ছিল। হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কোন মজলিসে থাকাকালে হযরত ফাতিমা (রাঃ) সেখানে প্রবেশ করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উঠে দাঁড়াতেন এবং নিজের পাশে তাঁর বসার জন্যে জায়গা করে দিতেন।
হযরত
ফাতিমা (রাঃ) উহুদের যুদ্ধে
অংশগ্রহণ করেন। তিনি আহত মুসলিম
সৈনিকদের সেবা-শুশ্রূষা করেন।
এ যুদ্ধে হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
আহত হলে হযরত ফাতিমা
(রাঃ) কাপড় দিয়ে তাঁর ক্ষতস্থান বেঁধে
দেন।
হযরত
রাসূলুল্লাহ যখন মক্কা বিজয়
করেন তখনও হযরত ফাতিমা
(রাঃ) তাঁর সাথে ছিলেন।
হযরত
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন মদীনা
থেকে বাইরে যেতেন তখন হযরত ফাতিমা
(রাঃ) তাঁকে বিদায় জানাতেন। আবার তিনি যখন
ফিরে আসতেন তখন হযরত ফাতিমা
(রাঃ) এসে তাঁর সাথে
দেখা করতেন।
হযরত ফাতিমা
রাঃ
এর
ইন্তেকাল
সম্পূর্ণ
ঘটনা
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ইন্তেকালের কয়েক মাস পর হিজরী ১১ সালের ৩রা রামাদান হযরত ফাতিমা (রাঃ) ইন্তেকাল করেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৩০ বছর।
ইন্তেকালের
পূর্বে তিনি ওয়াছিয়াত করেন
যে, তাঁর লাশ যেন
এমনভাবে ছালাতুল জানাযার জন্যে নেয়া হয় যাতে কেউ
বুঝতে না পারে যে,
তা একজন নারীর লাশ,
নাকি একজন পুরুষের লাশ।
যেহেতু
হযরত ফাতিমা (রাঃ) হযরত রাসূলুল্লাহ
(সাঃ)-এর ইন্তেকালের পর
খুব শ্রীঘ্রই ইন্তেকাল করেন সেহেতু তিনি
বেশী সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করতে পারেন নি।
তাঁর নিকট থেকে বর্ণিত
হাদীছের সংখ্যা আঠারো-উনিশটির মত।
হযরত ফাতিমা (রাঃ) ছিলেন একজন আদর্শ মুসলিম কন্যা, স্ত্রী ও মাতা। সকল বয়সের মুসলিম নারীদেরই উচিত তাঁকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা।
হযরত আয়েশা রাঃ এর সংক্ষিপ্ত
জীবনী
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর প্রথমা স্ত্রী হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর ইন্তেকালের পরে হযরত ‘আয়েশা (রাঃ) কে বিবাহ করেন। এই মহীয়সী মুসলিম নারী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নবুওয়াতের চতুর্থ বছরে ৬১৩ বা ৬১৪ খৃস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং নয় বছর বয়সে হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে তাঁর বিবাহ হয়।
তাঁর বয়স
যখন ১২ বছর, মতান্তরে
১৫ বছর, তখন তিনি
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ঘরে
যান ও তাঁর সাথে
বসবাস শুরু করেন।
হযরত
‘আয়েশা (রাঃ)র পিতা
ছিলেন হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ঘনিষ্ঠতম বন্ধু
ইসলামের ইতিহাসের প্রথম খলীফাহ হযরত আবু বকর
(রাঃ)। তাঁর মায়ের
নাম
ছিল
হযরত
উম্মে
রূমান
(রাঃ)।
হযরত ‘আয়েশা (রাঃ) ছিলেন একজন মহীয়সী মুসলিম মহিলা। তিনি ছিলেন বিরাট প্রতিভার অধিকারী এবং তাঁর স্মরণশক্তি ছিল বিস্ময়কর। তিনি জ্ঞানার্জন খুবই ভালবাসতেন এবং তাঁর বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান ও তীক্ষ্ণ বিচারক্ষমতার কারণে বিখ্যাত ছিলেন।
হযরত ‘আয়েশা (রাঃ) ইসলামী পরিবেশে
লালিত পালিত ও বড় হন।
তাঁর পিতা ছিলেন একজন
মহান মুসলিম ও হযরত রাসূলুল্লাহ
(সাঃ)-এর ঘনিষ্ঠতম বন্ধু।
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিয়মিত তাঁদের
বাড়ীতে যাতায়াত করতেন। হযরত ‘আয়েশা (রাঃ)-এর যখন
বুদ্ধির বিকাশ ঘটে তখনই তিনি
মুসলিম হন।
হযরত
‘আয়েশা (রাঃ) শিশু বয়সেই
কুর'আন মজীদের বেশ
কয়েকটি সূরাহ মুখস্ত করে ফেলেন। তাঁর
পিতা হযরত আবু বকর
(রাঃ) ছিলেন জ্ঞানী ব্যক্তি এবং তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে
জ্ঞানস্পৃহার অধিকারী হন।
হযরত
রাসূলূল্লাহ (সাঃ) যখন মক্কা
থেকে মদীনায় হিজরত করেন তখন হযরত
'আয়েশা (রাঃ) ও তাঁর
বড় বোন হযরত আসমা'
(রাঃ) তাঁর সফরের মালামাল
বাঁধার কাজে সাহায্য করেন।
হযরত ‘আয়েশা (রাঃ) ভাগ্যক্রমে মানবজাতির শ্রেষ্ঠতম শিক্ষক, আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর তত্ত্বাবধানে শিক্ষা লাভ করেন।
এই শিক্ষা তাঁকে
ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম বিখ্যাত মহিলায় পরিণত করে। তিনি তাঁর
স্বামী হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
কে খুবই ভক্তি-শ্রদ্ধা
ও মহব্বত করতেন এবং হযরত রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) ও তাঁকে খুবই
ভালবাসতেন।
তিনি
তাঁর স্বামীর খেদমত করতে ভালবাসতেন। তিনি
যাঁতায় পিষে আটা তৈরী
করতেন, রুটি তৈরী করতেন
ও সেকতেন এবং অন্যান্য গার্হস্থ্য
কাজকর্ম করতেন। বিছানা বিছানো এবং সব রকমের
ধোয়ামোছার কাজও নিজেই করতেন।
তিনি হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জন্যে সব
সময়ই নামাজের আগে উযূ'র
পানি প্রস্তুত রাখতেন।
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে কেবল তাঁর শারীরিক সৌন্দর্যের জন্যে ভালবাসতেন না, বরং তাঁর বুদ্ধিমত্তা, সঠিক বিচারক্ষমতা ও ব্যক্তিত্বের জন্যও ভালবাসতেন। অন্যদিকে হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যা পছন্দ করতেন হযরত ‘আয়েশা (রাঃ) ও তা পছন্দ করতেন এবং হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যা অপছন্দ করতেন তিনি তা অপছন্দ করতেন।
হযরত ‘আয়েশা (রাঃ) হযরত মুহাম্মাদ
(সাঃ)-এর চেয়ে যদি
কাউকে বেশী ভালবেসে থাকেন
তো আল্লাহ্কে বেশী ভালবাসতেন। আর
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর শিক্ষাও
ছিল তা-ই।
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
অত্যন্ত সাদাসিধা
জীবন যাপন করতেন। কোন
কোন সময় পরিবারের সদস্যদের
খাবার জন্য কিছুই থাকত
না। কোন কোন সময়
ঘরে যে খাবার থাকত
তা মেহমানদের খাইয়ে নিজেরা না খেয়ে থাকতেন।
তাঁরা এ দুনিয়ার আরাম-
আয়েশের তুলনায় পরকালীন জীবনের আরাম-আয়েশকে বেশী
গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন। এ-ও ইসলামের অন্যতমশিক্ষা।
হযরত
‘আয়েশা (রাঃ) নিয়মিত হযরত
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে
নামাজ আদায় করতেন। তাঁরা ঘন্টার পর ঘন্টা নামাজে
দাঁড়িয়ে থাকতেন এবং আল্লাহ্ তা'আলার নিকট ক্রন্দন
করতেন ও ক্ষমা প্রার্থনা
করতেন।
হযরত রাসূলুল্লাহ
(সাঃ)
একাদশ
হিজরী
সালে
অসুস্থ
হয়ে
পড়েন।
হযরত
আয়েশা
(রাঃ)
ভক্তি-শ্রদ্ধা
ও
ভালবাসা
সহকারে
তাঁর
সেবাশুশ্রূষা
করেন।
হযরত
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ)
তাঁর
কোলে
মাথা
রেখেই
ইন্তেকাল
করেন।
হযরত ‘আয়েশা (রাঃ) তাঁর পিতা হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর ইন্তেকালের সময়ও হাযির ছিলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন যে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে দাফন করার জন্যে কয় টুকরা কাপড় ব্যবহার করা হয়েছিল। জবাবে তিনি জানান, তিন টুকরা।
তখন
হযরত আবু বকর (রাঃ)
তাঁর কন্যাকে বলেন যে, তাঁকেও
যেন তিন টুকরা কাপড়
দিয়ে দাফন করা হয়।
হযরত ‘আয়েশা (রাঃ) তাঁর পিতার কবরের পাশে তাঁর নিজের দাফনের জন্যে জায়গা সংরক্ষিত রেখেছিলেন। কিন্তু পরে দ্বিতীয় খলীফাহ হযরত উমার (রাঃ) ঘাতকের আঘাতে গুরুতররূপে আহত হলে তিনি তাঁর পুত্র 'আবদুল্লাহ (রাঃ) কে হযরত ‘আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট পাঠান এবং তাঁকে হযরত আবু বকরের (রাঃ) পাশে কবর দেয়ার জন্যে অনুমতি চান।
হযরত ‘আয়েশা
(রাঃ) এতে সম্মতি দেন
এবং বলেন, “আজকে আমি 'উমারকে
আমার ওপর অগ্রাধিকার দিচ্ছি।”
এ থেকেই বুঝা যায় তিনি
কত বড় মহান হৃদয়ের
মহিলা ছিলেন।
হযরত
‘আয়েশা (রাঃ) সব সময়ই
সত্যের পক্ষে সমর্থন জানাতেন। তিনি অনেককে ইসলাম
শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি ইসলামী বিধি-বিধানের অনেক বিষয়ে, বিশেষ
করে নারীদের সাথে সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধানে পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। তিনি ২২১০টি হাদীস
বর্ণনা
করেন।
হযরত
'আয়েশা (রাঃ)-এর জীবন
ইতিহাস থেকে বুঝা যায়
যে, একজন মুসলিম মহিলা
উন্নতির কোন্ উচ্চ শিখরে
আরোহণ করতে পারেন।
ইসলামের
আবির্ভাবের পূর্বে সমাজে নারীদের মর্যাদা ছিল খুবই নীচু।
ইসলাম তাদেরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা দিয়েছে। ইসলাম দেখতে চায় যে, একজন
নারী তার মেধা- প্রতিভার
উন্নতি ঘটাবে এবং মাতা ও
স্ত্রী হিসেবে সমাজে অবদান রাখবে, স্বামীর অনুগত থাকবে ও স্বীয় সতীত্ব
রক্ষা করবে।
মুসলিম
কিশোরী ও তরুণীদের জন্যে
হযরত ‘আয়েশা (রাঃ)-এর জীবন
একটি অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। তাদের উচিত স্বামীর প্রতি
তাঁর ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালবাসার উদাহরণ
থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। জ্ঞানার্জন ও
শিক্ষার প্রতি হযরত ‘আয়েশা (রাঃ)-এর বিশেষ
আগ্রহ ও প্রবণতা মুসলিম
নারীদের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত।
পোস্ট ট্যাগঃ
হযরত খাদিজা রাঃ এর জীবনী রচনা
হযরত খাদিজা রাঃ এর জীবনী
হযরত খাদিজা রাঃ এর জীবনী pdf
হযরত খাদিজা রা এর জীবনী
হযরত খাদিজা (রাঃ) জীবনী
খাদিজা রাঃ এর জীবনী pdf
খাদিজা রাঃ এর জীবনী বই
হযরত খাদিজা রাঃ এর জীবনী pdf download
মা খাদিজা রাঃ এর জীবনী