সিহাহ সিত্তাহ কি
সিহাহ সিত্তাহ কি
১। ইমাম বুখারীঃ নামে সুপরিচিত মুহাম্মাদ বিন ইসমা'ঈল (রঃ) কর্তৃক সংগৃহীত ও সংকলিত। তিনি হিজরী ১৯৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং হিজরী ২৫৬ সাল মোতাবেক ৮৭০ খৃস্টাব্দে ইন্তিকাল করেন।
২। সহিহ মুসলিমঃ ইমাম মুসলিম' নামে সুপরিচিত মুসলিম বিন হাজ্জাজ (রঃ) কর্তৃক সংগৃহীত ও সংকলিত। তিনি হিজরী ২০২ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং হিজরী ২৬১ সাল মোতাবেক ৮৭৫ খৃস্টাব্দে ইন্তিকাল করেন।
৩। সুনান আবু দাউদঃ ‘আবু দাউদ' নামে সুপরিচিত সুলায়মান বিন আশ'আছ (রঃ) কর্তৃক সংগৃহীত ও সংকলিত। তিনি হিজরী ২০২ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং হিজরী ২৭৫ সাল মোতাবেক ৮৮৮ খৃস্টাব্দে ইন্তিকাল করেন।
৪। সুনান ইবনে মাজাহ: ইবনে মাজাহ্’ নামে সুপরিচিত আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইয়াযীদ আল-কাযভীনী (রঃ) কর্তৃক সংগৃহীত ও সংকলিত। তিনি হিজরী ২০৯ সাল জন্মগ্রহণ করেন এবং হিজরী ২৭৩ সাল মোতাবেক ৮৮৬ খৃস্টাব্দে ইন্তিকাল করেন।
৫। জামি' আত্-তিরমিযী: আবু ‘ঈসা মুহাম্মাদ বিন ‘ঈসা আত্-তিরমিযী (রঃ) কর্তৃক সংগৃহীত ও সংকলিত। তাঁর জন্মতারিখ লিখিত নেই। তিনি হিজরী ২৭৯ সাল মোতাবেক ৮৯২ খৃস্টাব্দে ইন্তিকাল করেন।
৬। সুনান আন্-নাসাঈ: আবু ‘আবদুর রহমান আমদ বিন্ শু'আইব আন-নাসাঈ (রঃ) কর্তৃক সংগৃহীত ও সংকলিত। তিনি হিজরী ২১৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং হিজরী ৩০৩ সাল মোতাবেক ৯১৫ খৃস্টাব্দে ইন্তিকাল করেন।
এছাড়া ইমাম মালিক (রঃ) এর (জন্ম ৯৩ হিজরী ও ইন্তিকাল ১৭৯ হিজরী)-এর 'মুওয়াত্তা', আমাদ বিন হাম্বাল (রঃ) (জন্ম ১৬৪ হিজরী ও ইন্তিকাল ২৪১ হিজরী)-এর মুসনাদ' এবং আবু মুহাম্মাদ আল-হুসাইন বিন মাস'উদ (রঃ) (ইন্তিকাল ৫১৬ হিজরী সাল)-এর 'মিকাতুল মাছাবীহ্'-ও বিখ্যাত হাদীছ সংকলন। এছাড়া আরো অনেক হাদীছ সংকলন ও হাদীছের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণবিশিষ্ট কিতাব রয়েছে।
ফিকহ অর্থ কি
ফিক্হ শব্দের অর্থ হচ্ছে সমঝ বা অনুধাবন ও জ্ঞান।
ফকীহ কাকে বলে
ইসলামী আইনের পণ্ডিতগণ ফিকহের মাধ্যমে শারী'আহ বুঝা ও তা মেনে চলাকে সহজ করেছেন। যে ব্যক্তির ফিক্হ সম্বন্ধে বিস্তারিত জ্ঞান রয়েছে তাঁকে ফকীহ বলা হয়।
মুফতি কাকে বলে
আর যিনি শারী'আহ সম্পর্কিত বিষয়াদিতে রায় দেয়ার যোগ্যতা রাখেন তাঁকে মুফতী বলা হয়। তিনি যে রায় দেন তাকে বলা হয় ফতওয়া (বহুবচনে ফাতাওয়া) ৷
কিছু সংখ্যক বড় বড় মুসলিম ব্যক্তিত্ব সহজ পদ্ধতিতে ইসলামী আইন-কানুন ও বিধি- বিধান অনুধাবনের বিকাশ ঘটাবার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁদের মধ্যে চারজন ইসলামী আইন বা শারী'আহর সংকলন ও ব্যাখ্যার জন্যে সব চেয়ে বেশী সুপরিচিত ছিলেন।
ইসলামী ফিকহ
ইসলামী আইন-কানুন ও বিধিবিধানের বিজ্ঞানকে ফিক্হ বলা হয়। কুর'আন মজীদ ও হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সুন্নাহর ভিত্তিতে ইসলামী আইন-কানুন, বিধি-বিধান সংগ্রহ, সংকলন ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এর মধ্যে শামিল রয়েছে।
শারী'আহ হচ্ছে ইসলামী জীবনব্যবস্থার আইন-কানুন। ‘শারী'আহ' শব্দের মানে হচ্ছে একটি সুস্পষ্ট সোজা পথ বা দৃষ্টান্ত। শারী'আহ হচ্ছে মানুষের অনুসরণের জন্য আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত সর্বোত্তম আইন-ব্যবস্থা।
শারী‘আহ বা ইসলামী
আইন হচ্ছে মুসলমানদের জন্য আচরণবিধি। দু'টি প্রধান সূত্রের
ওপর ভিত্তি করে এসব আচরণবিধি
তৈরী করা হয়েছে। এ
দু'টি সূত্র হচ্ছে
কুর'আন ও হযরত
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সুন্নাহ।
শারী'আহর উদ্দেশ্য হচ্ছে
মানবজাতির জন্যে পৃথিবীর জীবনে ও পরকালের জীবনে
সাফল্য ও কল্যাণ নিশ্চিত
করা।
সমাজে
যাতে যা কিছু উত্তম
(মারূফ) তা প্রতিষ্ঠিত হতে
পারে এবং যা কিছু
মন্দ (মুনকার) তা যাতে সমাজ
থেকে উৎখাত হয়ে যায় সে
উদ্দেশ্যে মানুষকে পথনির্দেশ দেয়ার জন্যে শারী'আহ প্রয়োজনীয়
সকল আইন-কানুন দিয়েছে।
শারী'আহ এমন একটি সুস্পষ্ট
ও
সোজা
পথ
দিয়েছে
যা
মানুষকে
জীবনে
উন্নতি
অগ্রগতি
ও
পরিপূর্ণতা
এবং
আল্লাহ্
তা'আলার
সন্তুষ্টি
অর্জনের
দিকে
নিয়ে
যায়।
কুর'আন হচ্ছে শারী'আহর মূল ভিত্তি। কুর'আন মজীদে শারী'আহর মূলনীতি নিহিত রয়েছে। অন্যদিকে হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সুন্নায় এসব মূলনীতি বাস্তবায়নের নীলনক্সা রয়েছে।
উদাহরণ স্বরূপ, কুর'আন বলেছে:
ছালাত কায়েম কর, ছাওম পালন
কর, যাকাত দাও, পরামর্শ করে
সিদ্ধান্ত নাও, হারাম পথে
অর্থ উপার্জন বা ব্যয় করো
না- কিন্তু এগুলো কিভাবে করতে হবে তা
কুরআনে বলা হয়নি। আমরা
কিভাবে আল্লাহর হুকুমসমূহ বাস্তবে কার্যকরী করব তা হযরত
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সুন্নায়
বলা হয়েছে।
কুর'আন মজীদ হচ্ছে
হেদায়াতের মূল কিতাব, আর
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে এ
হেদায়াত অনুসরণের পন্থা শিখিয়ে দিয়েছেন। হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
আমাদেরকে কেবল হেদায়াত অনুসরণ
করতে বলেন নি, বরং
তিনি নিজে তার চর্চা
করেছেন। তিনি নিজে যা
‘আমল করতেন তা-ই তাঁর
অনুসারীদের করতে বলতেন। বস্তুতঃ
আল্লাহর রাসুল হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর জীবন ছিল
জীবন্ত কুর'আন।
Islamic law
মানুষের
জীবনের প্রতিটি দিক ও প্রতিটি
ক্ষেত্রের জন্যেই শারী'আহর বিধিবিধান
রয়েছে। শারী'আহ হচ্ছে
পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ আইন-বিধান। এর অনুসরণের ফলে
এ পৃথিবীর জীবনে ও আখিরাতে সাফল্য,
কল্যাণ ও শান্তি নিশ্চিত
হয়।
শারী'আহ ও মানুষের
তৈরী আইনের মধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ
পার্থক্য রয়েছে। যেমন:
- ১। মানুষ যখন প্রয়োজন অনুভব করে তখন আইন তৈরী করেন এসব আইনের সংখ্যা শুরুতে থাকে খুবই কম, পরে বছরের পর বছর এর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
- অপরদিকে ইসলামী আইন পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ এবং এতে মানুষের জীবনের সকল দিকই শামিল রয়েছে। জ্ঞানী লোকেরা (আলেমগণ) সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্যে শারী'আহর ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণ করেন।
- ২। মানুষের গড়া আইন স্থায়ী নয়। শারী 'আহ হচ্ছে সকল মানুষের ও সকল আকাঙ্ক্ষা ও ইচ্ছার সাথে তাল মিলিয়ে এসব আইন| সময়ের জন্যে স্থায়ী আইন। সময় ও পরিবর্তন করা হয়। উদাহরণ স্বরূপ, কোন দেশে| পরিস্থিতির পরিবর্তনের কারণে তা পরিবর্তিত কোন সময় মদপানকে নিষিদ্ধ করা হতে পারে, কিন্তু হয় না।
- উদাহরণ স্বরূপ, ইসলামী আইনে জনগণের চাপ বৃদ্ধি পেলে পরে এ আইন পরিবর্তন| মদপান ও জুয়াখেলার কোন অনুমতি নেই। এ হতে পারে। আমেরিকান সরকার একবার সকল। আইন কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। এ প্রকার এ্যালকোহলযুক্ত পানীয় (মদ) নিষিদ্ধ করেছিল, কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় নি, ফলে কিছুদিন পরে আইনটি বাতিল করা হয়।
- অপরদিকে শরীআহ হচ্ছে এমন আইন যা সব সময়ের মানুষের জন্যে সঠিক এবং সব জায়গায়ই প্রযোজ্য।
- ৩। মানুষের ভবিষ্যত সম্বন্ধে জ্ঞান নেই ৷ আল্লাহ্ তা'আলা সব কিছু জানেন এবং তিনি মানুষের গড়া আইন কালের পরীক্ষায় টিকে থাকতে| সর্বশক্তিমান। তিনি মহাজ্ঞানী, তাই তাঁর আইন সর্বোত্তম ও পরিপূর্ণ। বিশ্বজনীন।
- ৪ । মানুষ হচ্ছে সৃষ্ট জীব। তাই তার গড়া আইন হচ্ছে| আল্লাহ্ তা'আলা হচ্ছেন সৃষ্টিকর্তা, আর তাঁর সৃষ্টির সৃষ্টি। আইন হচ্ছে তাঁরই সৃষ্টি মানুষের জন্য।
- ৫। মানুষের তৈরী আইন বিশেষ জাতি বা দেশ| আল্লাহর আইন সকল জাতি, সকল দেশ ও বিশেষের জন্যে উপযোগী হতে পারে। কিন্তু তা সকল সময়ের জন্য। এ আইন সার্বজনীন বা বিশ্বজনীন হতে পারে না
- ৬। মানুষ শুধু তাদের নিজেদের প্রয়োজন পূরণের জন্যে আইন তৈরী করে। সংসদ সদস্যরা যদি ধনীদের ওপর করের হার কমাতে চান, তো তাঁরা তা করতে পারেন। এমন কি এর ফলে বেশীর ভাগ মানুষের কষ্ট হলেও এবং দেশে বেকারত্বের হার অনেক বেড়ে গেলেও তাঁরা সেদিকে দৃষ্টি দেন না।
অপরদিকে
আল্লাহ্তা'আলা সকল অভাব ও
প্রয়োজনের উর্ধে। তিনি কোন কিছুর
ওপর নির্ভরশীল নন। তাই তাঁর
আইন অল্প সংখ্যক স্বার্থপর
লোকের জন্যে নয়, বরং সকল
মানুষের জন্যে।
শারী'আহর আরো দু'টি উৎস আছে।
তা হচ্ছে: ইজমা (মতৈক্য) ও কিয়াস (একই
ধরনের বিষয়ের আলোকে যুক্তিপ্রয়োগ)। তবে এ
দু'টি উৎসের আইনকে
অবশ্যই কুর'আন ও
সুন্নাহর ওপর ভিত্তিশীল হতে
হবে।
ইজ্মা' বা মতৈক্য
কেবল সেই সব ক্ষেত্রে
প্রযোজ্য যে বিষয়ে কুর'আন বা সুন্নাহ
থেকে কোন সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করা যায় না।
এক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কে
ব্যাপক জ্ঞানের অধিকারী লোকেরা একত্রিত হয়ে আলাপ-আলোচনার
মাধ্যমে ঐ বিষয়ের সমস্যাটির ব্যাপারে একটি
সর্বসম্মত সমাধান উদ্ভাবন করবেন। আল-খুলাফাউর রাশিদূনের
যুগে ইজ্জ্মা'র
উৎপত্তি ঘটে।
কিয়াস
মানে হচ্ছে কোন বিষয় সম্পর্কে
অনুরূপ বিষয়ের সাথে তুলনা করে
সিদ্ধান্ত গ্রহণ। যে ক্ষেত্রে কুর'আন ও সুন্নাহ
থেকে সরাসরি কোন পথনির্দেশ পাওয়া
যায় না সেক্ষেত্রে কিয়াস
প্রয়োগ করা হয়। এ
ক্ষেত্রে অতীতের অনুরূপ কোন পরিস্থিতির সাথে
তুলনা করে যুক্তিবিজ্ঞানের পদ্ধতিতে
একটি সমস্যার সমাধন বের করা হয়।
সুন্নাহ শব্দের অর্থ কী
সুন্নাহ শব্দের মানে হচ্ছে পদ্ধতি পথ বা দৃষ্টান্ত। ইসলামে সুন্নাহ বলতে হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাজ বা তাঁর জীবনের দৃষ্টান্তকে বুঝায়। আলহাদীছে (হাদীছ-এর বহুবচন) এ সুন্নাহ নিহিত রয়েছে। আলহাদীছ হচ্ছে হযরত রাসূলূল্লাহ (সাঃ)-এর কথা, কাজ ও তাঁর অনুমতিক্রমে করা কাজের বিবরণের সংকলন।
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ইন্তিকালের পর অত্যন্ত যত্ন ও সতর্কতা সহকারে আলহাদীছে সংগ্রহ ও সংকলিত করা হয়। ছয়টি হাদীছ সংকলনকে সব চেয়ে নির্ভরযোগ্য বলে গণ্য করা হয়।
পোস্ট ট্যাগঃ
ইসলামী আইনের উৎস
ইসলামী আইনের উৎস কয়টি
ইসলামী আইনের উৎস বই
ইসলামী আইনের উৎস pdf
ইসলামী আইনের উৎস কি কি
ইসলামী আইনের উৎস সমূহ
ইসলামি আইনের উৎস
ইসলামী আইনের উৎস গুলো কি কি
মুসলিম আইনের উৎস
সেহরির দোয়া