হযরত আদম আঃ এর জীবন কাহিনী
হযরত আদম আঃ এর জীবন কাহিনী
তাদের কাহিনীতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।” (সূরা ইউসুফ-১১১)
হাজার
হাজার বছর আগের কথা।
আল্লাহ্ তা'আলা ফেরেশতা
ও জিনদের সামনে ঘোষণা করলেন যে, তিনি মানুষ
সৃষ্টি করবেন যারা তাঁর ‘ইবাদাত
করবে এবং পৃথিবীর বুকে
বসবাস করবে। তিনি বললেন:
“নিশ্চয়ই
আমি পৃথিবীর বুকে আমার খলীফা
(প্রতিনিধি) পাঠাব।” (সূরা আল বাকারাহ-৩0)
তখন
ফেরেশতারা আল্লাহ্ তা'আলার নিকট
জিজ্ঞেস করল: “আপনি কি সেখানে
এমন কাউকে বানাবেন যে সেখানে বিপর্যয়
সৃষ্টি করবে ও রক্তপাত
ঘটাবে?” (সূরা আল- বাকারা-৩০) জবাবে আল্লাহ্
তা'আলা বললেন:
“নিশ্চয়ই
আমি এমন কিছু জানি
যা তোমরা জান না।” (সূরা
আল- বাকারাহ-৩০) তখন ফেরেস্তারা
চুপ হয়ে গেল।
আল্লাহ্
তা'আলা ফেরেশতাদেরকে বললেন:
“আমি মাটি থেকে মানুষ
সৃষ্টি করব। আমি যখন
তাকে সুষম করব ও
তাতে আমার রূহ ফুঁকে
দেব তখন তোমরা তার
সামনে সিজদায় নত হয়ে যেয়ো।”
(সূরা ছাদ: ৭১-৭২)
আল্লাহ্
তা'আলা কাদামাটি দ্বারা
হযরত আদম (আঃ) কে
সৃষ্টি করলেন এবং তাঁকে সর্বোত্তম
গঠনকাঠামো দিলেন। এরপর তিনি হযরত
আদম (আঃ) কে সিজদা
করার জন্যে ফেরেশতা ও জিনদের প্রতি
হুকুম দিলেন।
ফেরেশতারা আল্লাহ্ তা'আলার হুকুম পালন করল। মূলতঃ ফেরেশতারা কখনোই আল্লাহ্ তা'আলার হুকুম অমান্য করে না। কিন্তু জিন জাতির সদস্য ইবলীশ হযরত আদম (আঃ) কে সিজদাহ করতে অস্বীকার করল (সূরাহ আল-কাহ্ফ-৫০)।
আল্লাহ্ তা'আলা তাকে জিজ্ঞেস
করলেন: “আমি যাকে সৃষ্টি
করেছি তাকে সিজদা করা
থেকে কোন্ জিনিস তোমাকে
ফিরিয়ে রাখল?” জবাবে ইবলীশ বলল: “আমি তার চেয়ে
উত্তম; তুমি আমাকে আগুন
থেকে সৃষ্টি করেছ এবং তাকে
মাটি থেকে সৃষ্টি করেছ।”
(সূরাহ আল- আ'রাফ-১২)। বস্তুতঃ
অহঙ্কারের কারণে সে আল্লাহর হুকুম
অমান্য করল।
আদম আঃ
এর
উচ্চতা
হযরত আদম
(আঃ) এর উচ্চতা ছিল ৬০ হাত অথবা ৬০ ফিট বলে জানা যায়।
তখন
আল্লাহ্ তা'আলা তাকে
বললেন: “অতএব এখান থেকে
বেরিয়ে যাও। অতঃপর নিশ্চিতভাবেই
তুমি বিতাড়িত। আর নিশ্চিতভাবেই শেষবিচারের
দিন পর্যন্ত তুমি অভিশপ্ত।” (সূরা
আল হজ্ব:৩৪-৩৫)।
ইবলীশ তখন এই বলে
শপথ করল যে, সে
হযরত আদম (আঃ) ও
তাঁর বংশধরদেরকে গোমরাহ (বিপথগামী) করবে। কিন্তু তোমরা ইতিমধ্যেই জেনেছ যে, আল্লাহ্ তা'আলা মানুষকে গোমরাহ
হওয়া থেকে বাঁচার জন্যে
জ্ঞান ও ভালমন্দ পার্থক্য
করার পথনির্দেশ (হেদায়াত) দিয়েছেন।
আল্লাহ্ তা'আলা হযরত আদম (আঃ) কে কতগুলো নাম শিক্ষা দিলেন এবং ফেরেশতাদেরকে ঐসব জিনিসের নাম বলতে বললেন। (সূরা আল বাকারা-৩১) ফেরেশতারা বলল: “সমস্ত গৌরব আপনার; আপনি আমাদেরকে যা কিছু শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের আর কোন জ্ঞান নেই।
নিঃসন্দেহে আপনি সর্বজ্ঞ ও
মহাজ্ঞানী।” (সূরা আল বাকারাহ-৩১)। আল্লাহ্
তা'আলা তখন হযরত আদম
(আঃ)
কে ঐসব জিনিসের নাম
বলতে বললেন। আর তিনি সাথে
সাথেই নামগুলো বলে দিলেন। (সূরা
আল বাকারা-৩৩)।
তখন
আল্লাহ্ তা'আলা ফেরেশতাদের
উদ্দেশে বললেন: “আমি কি তোমাদেরকে
বলি নি যে, নিশ্চয়ই
আমি আসমানসমূহ ও যমীনের গোপন
রহস্যাদি অবগত আছি এবং
তোমরা যা কিছু বল
ও যা কিছু গোপন
কর তা-ও অবগত
আছি?” (সূরা আল বাকারা-৩৩)।
এরপর আল্লাহ্ তা'আলা হযরত আদমকে (আঃ) বেহেশতে বসবাস করতে বললেন। সেখানে তাঁর প্রয়োজন পূরণ ও আনন্দের সকল উপকরণই ছিল।
কিন্তু তিনি
ছিলেন একা। তাই আল্লাহ্
তা'আলা তাঁর স্ত্রী
হিসেবে হযরত হাওয়া (আঃ)
কে সৃষ্টি করলেন। ফলে হযরত আদম
(আঃ) পুরোপুরি সুখে ছিলেন এবং
হযরত হাওয়া (আঃ) সহ বেহেশতে
বসবাস করতে লাগলেন।
আদম আঃ এর কবর কোথায়?
জানা যায় যে
হযরত আদম আঃ এর কবর মক্কায় অথবা জেরুজালেমে অবস্থিত বলে ভিন্ন মত আছে।
আল্লাহ্ তা'আলা হযরত আদম (আঃ) কে বললেন: “তুমি তোমার স্ত্রীসহ জান্নাতে বসবাস কর। এখানে যা খুশী স্বাধীনভাবে খাও, তবে ঐ গাছটির কাছে যেয়ো না।” (সূরা আল বাকারাহ-৩৫)। এর উদ্দেশ্য ছিল তাঁদেরকে পরীক্ষা করা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ শিক্ষা দেয়া।
আল্লাহ্ তা'আলা এ-ও দেখতে চাচ্ছিলেন
যে, তাঁদেরকে যে জ্ঞান দেয়া
হয়েছে ইবলীসের ধোঁকা থেকে নিজেদের রক্ষা
করার জন্যে তাঁরা তা ব্যবহার করেন
কিনা।
হযরত
আদম (আঃ) ও হযরত
হাওয়া (আঃ) কে গোমরাহ
করার জন্যে ইবলীশ প্রাণপণে চেষ্টা করতে লাগল। শেষ
পর্যন্ত সে সফল হল
এবং তাঁদেরকে সেই নিষিদ্ধ ফল
খাবার জন্যে প্রলোভন দিল।
হযরত আদম ও হযরত হাওয়া (আঃ) উক্ত গাছটির ফল খাওয়ার সাথে সাথেই বুঝতে পারলেন যে, তাঁরা নগ্ন হয়ে পড়েছেন। এর আগে তাঁদের নগ্নতা সম্বন্ধে কোন ধারণা ছিল না। ফলে এজন্য তাঁদের লজ্জিত হবারও কোন কারণ ছিল না। কিন্তু এখন তাঁরা লজ্জা অনুভব করলেন।
তাই তাঁরা গাছের পাতা দিয়ে নিজেদেরকে ঢাকার চেষ্টা করলেন এবং লুকিয়ে থাকারও চেষ্টা করলেন। কিন্তু সর্বজ্ঞ আল্লাহ্ তা'আলার নিকট থেকে লুকিয়ে থাকা যেতে পারে এমন কোন জায়গাই তো নেই। (সূরা আল আ'রাফ: ২০-২২) আল্লাহ্ তা'আলা দয়া করে তাঁদেরকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার ও দু'আ করার পদ্ধতি শিখিয়ে দিলেন (সূরাহ আল-বাকারাহ-৩৮-৩৯)।
আল্লাহ্ তা'আলা তাঁদের দু'আ কবুল করলেন ও তাঁদেরকে ক্ষমা করে দিলেন। এরপর আল্লাহ্ তা'আলা হযরত আদম (আঃ) ও হযরত হাওয়া (আঃ) কে পৃথিবীতে নেমে যাবার ও সেখানে বসবাস করার আদেশ দিলেন।
তিনি তাঁদেরকে এ-ও জানালেন যে, পৃথিবীর বুকে তাঁরা যাতে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত না হয় সেজন্য তাঁদের নিকট হেদায়াত পাঠাবেন।
পৃথিবীর বুকে প্রথম নবী
আল্লাহ্
তা'আলা হযরত আদম
(আঃ)-এর নিকট ওহী
মারফত হেদায়াত পাঠালেন। এভাবে তিনি হলেন পৃথিবীর
বুকে প্রথম নবী।
পোস্ট ট্যাগঃ