রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

রমজানের রোজার গুরুত্ব ও তারাবির নামাজ- Importance of Ramadan fasting and Taraweeh prayers

রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস- 

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, 'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য রমজানের রোজা ফরয করেছেন এবং আমি তারাবি সূন্নত করেছি। সুতরাং যারা ঈমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে (আখেরাতে প্রতিফল পাবার আশায়) রমজানের রোজা রাখবে ও তারাবিহ পড়বে তারা গুনাহ থেকে এমনভাবে পাক হয়ে যাবে যেমন তারা জন্মের সময় গুনাহ থেকে পাক ছিল।” (তারগীব)

  • ব্যাখ্যাঃ এই হাদীসে ব্যবহৃত কিয়াম শব্দের অর্থ হলো তারাবির নামায। যে ব্যক্তি মুমিন হবে এবং আখেরাতে প্রতিফল লাভের আশায় এ দুটি কাজ করবে তার সমস্ত গুনাহই মাফ হয়ে যাবে। তবে যে গুনাহ মানুষের অধিকার সংশ্লিষ্ট তা কেবলমাত্র তখনই মাফ হবে যখন হকদারকে সে হক আদায় করে দেয়া হবে অথবা হকদার সন্তুষ্ট হয়ে তাকে মাফ করে দেবে। 

তারাবির নামাজ কত রাকাত

তারাবির নামাজ মূলত বিশ রাকাত সহীহ শুদ্ধ হাদিস মতে। কেউ কেউ মনে করে আট রাকাত বা বার রাকাত বা ষোলো রাকাত, কিন্তু বেশি মত অনুযায়ী তা বিশ রাকাত হবে কোথাও বিশ রাকাতের নিচে তারাবিহ আদায় করা হয় না। 

সেহরি খাওয়ার ফজিলত

আবদুল্লাহ ইব্‌নে হারিস রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন, “আমি এমন এক সময় হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়েছিলাম, যখন তিনি সেহরী খাচ্ছিলেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'সেহরী খাওয়া কল্যাণকর, আল্লাহতায়ালা এ বরকত তোমাদেরকে দান করেছেন। অতএব সেহরী খাওয়া পরিত্যাগ করো না।' (তারগীব, নাসাঈ) 


  • ব্যাখ্যাঃ ইহুদীরা রোজা রাখার সময় সেহরী খেতো না। তাদের আলেমরা এ বেদয়াত সৃষ্টি করেছিল অথবা তাদের বিদ্রোহমূলক আচরণ ও সীমালংঘনের কারণে আল্লাহ তাদের সেহরী খেতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন। শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি 
  • ওয়াসাল্লামের উম্মতের জন্য সহজ বিধান দান করা হয়েছে এবং অনেক সুবিধাও দান করা হয়েছে। সে সব সুবিধার মধ্যে একটি হলো সেহরী খেয়ে রোজা রাখা। সেহরী বরকতময় হবার অর্থ হলো, রূহানী বরকতের সঙ্গে সঙ্গে সেহরী খাবার ফলে দিনে আল্লাহর ইবাদত ও অন্যান্য কাজ করা সহজ হয়ে যায়। 

রোজা হলো শরীরের যাকাত

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'আল্লাহ প্রত্যেকটি অপবিত্রতা দূর করার জন্যে কোন না কোন উপায় সৃষ্টি করেছেন। শরীরকে পবিত্র করার উপায় হলো রোজা, আর রোজা হলো সবরের অর্ধেক।' (ইবনে মাজাহ) 


  • ব্যাখ্যাঃ আধুনিক গবেষণার আলোকে মুসলিম অমুসলিম ডাক্তাররা এ ব্যাপারে একমত, রোজা রাখলে অনেক মারাত্মক রোগের হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। রোজা হলো এমন ইবাদত যা অন্য ইবাদত অপেক্ষা খাঁটি ও রিয়ার সন্দেহ থেকে পবিত্র। তাই লোভ লালসা আয়ত্বে আনার যে ক্ষমতা এর মাধ্যমে অর্জিত হয় তা অন্যান্য ইবাদত দ্বারা লব্ধ ক্ষমতার অর্ধেক হবে। এ হচ্ছে রোজার অর্ধেক সবর হওয়ার অর্থ। তবে এর আর কোন অর্থ আছে কিনা তা আল্লাহই ভাল জানেন। 

রোজা হলো ঢাল স্বরূপ

ওসমান ইব্‌নে আবুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যুদ্ধের সময় তোমাদের যেমন ঢাল থাকে শত্রুর আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য, রোজা তোমাদের জন্যে তেমনি ঢাল, যা জাহান্নাম থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করবে।” (তারগীব ও তারহীব)

ইফতারের দোয়া পড়ার ফজিলত

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যে মুসলমান রোজা রাখলো এবং ইফতারের সময় (ইয়া আযীম থেকে আল আযীম পর্যন্ত) দোয়াটি পাঠ করলো সে যেন আপন গুনাহ থেকে এমনভাবে পাক হয়ে গেল, যেমন তার মা তাকে জন্ম দেয়ার সময় সে পাক ছিল।” (তারগীব ও তারহীব) 


  • ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসে ইফতারের যে দোয়া বর্ণনা করা হয়েছে তার অর্থ হলো, “হে মহান আল্লাহ! হে মহা শক্তিমান! তুমি আমার মালিক! তুমি ছাড়া আমার আর কোন ইলাহ নেই। আমার সব বড় গুনাহ তুমি মাফ করে দাও। কেননা হে মহান, তুমিই কেবল গুনাহ মাফ করতে পারো।” 

রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'কেবল আহারাদি থেকে বিরত থাকার নাম রোজা নয়, অশ্লীল কথাবার্তা ও অশালীন আলোচনা থেকে দূরে থাকার নামই আসল রোজা। অতএব, হে রোজাদার! কেউ যদি তোমাকে গালি দেয় বা তোমার সঙ্গে অভদ্র আচরণ করে তাহলে তাকে বলো, 'আমি রোজাদার, আমি রোজাদার'।” (অর্থাৎ উত্তেজিত হয়ে বলবে)’

মুসাফিরের রোযা

হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ভ্রমণ করছিলাম। আমাদের মধ্যে কিছু লোক রোজা রেখেছিল আর কিছু লোক রোজা রাখেনি। আমরা একস্থানে গিয়ে তাঁবু খাঁটিয়ে বসলাম। খুব গরমের দিন ছিল। 

যাদের কাছে কম্বল ছিল তারাই সব থেকে বেশি আরাম ও ছায়ার মধ্যে ছিল। আর কিছু লোক কেবল আপন হাত দিয়ে সূর্যের কিরণ থেকে নিজেকে বাঁচাচ্ছিল।' তিনি আরো বলেন, 'ওখানে পৌঁছে রোজাদার লোকেরা তো শুয়ে পড়লো আর যারা রোজা ছিল না তারা উঠে তাঁবু খাঁটাল এবং বাহনকে পানি খাওয়াল'।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'আজ যারা রোজা রাখেনি তারা সমস্ত নেকী কুড়িয়ে নিল। অন্য এক বর্ণনায় আছে, 'তাদের (অর্থাৎ সাহাবাদের) রায় হলো এই যে, যে মুসাফির রোজা রাখার ক্ষমতা রাখে তার পক্ষে রোজা রাখা উত্তম, আর যে মুসাফির নিজেকে দুর্বল মনে করে তার পক্ষে না রাখাই উত্তম।” (মুসলিম) 


  • ব্যাখ্যাঃ খুব সম্ভব এ ভ্রমণ মক্কা বিজয়ের অভিযানের সময়কার, যা রমযান মাসে হয়েছিল। এ সফরে লোকেরা যাতে রোজা ভেঙ্গে ফেলতে পারে সে জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই এক স্থানে এসে রোজা ভেঙ্গে ফেললেন। কিন্তু কিছু লোক রোজা ভাঙ্গল না, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের রোজা রাখতে নিষেধ করেননি। 
  • এক স্থানে পৌঁছে কাফেলা বিশ্রামের জন্য থামলে যারা রোজাদার ছিল তারা নিঃসাড় হয়ে বসে পড়ল আর যারা রোজা ছিল না তারা সতেজ শরীরে তাঁবু খাঁটাল ও সফরের বাহনগুলোকে পানি খাওয়াল। হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, 
  • ‘একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক গাছের ছায়ায় বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকা এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। কিছুলোক তখন তার চোখে মুখে পানির ছিটা দিচ্ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, 'এর কি হয়েছে?' লোকেরা জবাব দিল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এ লোক রোজা রেখেছিল। সহ্য করতে পারেনি, তাই অজ্ঞান হয়ে গেছে।' তিনি বললেন, 'সফরে রোজা রাখা কোন নেকীর কাজ নয়। আল্লাহ তোমাদেরকে যে সুযোগ দিয়েছেন তার ফায়দা গ্রহণ করো।” (তারগীব, নাসায়ী) 

ব্যাখ্যাঃ যে ব্যক্তির স্বাস্থ্য দুর্বল এবং রোজা রাখলে এ রকম বিপর্যয়কর অবস্থায় পড়ার আশঙ্কা থাকে তার উচিত আল্লাহর দেয়া সুযোগ গ্রহণ করা। 

রোজা সম্পর্কে আলোচনা মর্তবা ফজিলত

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যে ব্যক্তি শরয়ী কারণ (সফর ও অসুস্থতা) ছাড়া রমজানের একটা রোজা ভাঙল, সে যদি তা পূরনের জন্যে জীবন ভর রোজা রাখে তবু তার রমজানের এক রোজা পূরণ হবে না।” (তিরমিযী, আবু দাউদ)


রোজা না রাখলে কি হয় না রাখার ভয়ানক পরিণতি


হযরত আবু উমামা আল বাহিলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “আমি শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, এমন সময় দুই ব্যক্তি এলো। তারা আমার বাহু ধরে এক দুর্গম পাহাড়ের কাছে নিয়ে গেল এবং আমাকে সেই পাহাড়ে চড়তে বললো। আমি বললাম, 'আমি এ পাহাড়ে চড়তে পারবো' তারা বললো, 'আমরা আপনার জন্য সব সহজ করে দেবো, 

আপনি চড়েন।' অতএব আমি পাহাড়ে চড়লাম এবং পাহাড়ের মাঝখানে উপস্থিত হলে খুব জোরে চিৎকারের শব্দ শুনতে পেলাম। আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম, 'এ সব কিসের আওয়াজ?' তারা বললো, 'এ সব জাহান্নামবাসীদের চিৎকার।' তারপর তারা আমাকে আরও এগিয়ে নিয়ে নিয়ে গেল। 

এক জায়গায় দেখলাম কিছু লোককে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের চোয়াল ফেড়ে দেয়া হয়েছে এবং সেখান থেকে রক্ত ঝরছে। জিজ্ঞেস করলাম, ‘এরা কারা?’ তারা বললো, 'এরা বে-রোজাদার। এরা রমযান মাসে খাওয়া-দাওয়া করতো।” (তারগীব, ইবনে হিব্বান)

ঈদ পুরস্কারের দিন

হযরত সা'আদ বিন আওস আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার পিতার কাছ থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন, 'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যখন ঈদ-উল-ফিতরের দিন উপস্থিত হয় তখন আল্লাহর ফেরেস্তাগণ সমস্ত রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে বলতে থাকে, 'হে মুসলমানগণ। 

আপন প্রভৃর কাছে চলো, যিনি অতি দয়ালু। যিনি নেকি ও মঙ্গলের কথা বলেন এবং সেমতে আমল করার তৌফিক দান করেন, আর তার জন্য বহু পুরস্কার দান করে থাকেন। তাঁর তরফ থেকে তোমাদেরকে তারাবি পড়ার হুকুম দান করা হয়েছে, তাই তোমরা তারাবি পড়েছো। 

তোমাদেরকে দিনে রোজা রাখার হুকুম দান করা হয়েছে, তাই তোমরা রোজা রেখেছো এবং আপন প্রভূর আনুগত্য দেখিয়েছো। সুতরাং চলো, নিজের নিজের পুরস্কার গ্রহণ করো।' তারপর মানুষ যখন ঈদের নামায পড়া শেষ করে তখন আল্লাহর এক ফেরেস্তা ঘোষণা করে, ‘হে মানবগণ! 

তোমাদের প্রভু তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। অতএব তোমরা কামিয়াবি ও সফলতা নিয়ে ঘরে ফিরে যাও। এই ঈদের দিনটি পুরস্কারের দিন। এই দিনকে ফেরেস্তাদের দুনিয়ায়ও (আসমানে) পুরস্কারের দিন বলা হয়ে থাকে।” (তারগীব ও তারহীব"

যাকাতের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু বলেছেন, “আমাদেরকে নামায় কায়েম ও যাকাত আদায় করার হুকুম দেয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি নামায পড়ে কিন্তু যাকাত দেয় না তার নামায আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে না।' অন্য বর্ণনায় আছে, 'সেই ব্যক্তি মুসলমান নয় যার আমল কিয়ামতে তাকে কোন ফল দেবে না।' (তারগীব)

যাকাত হলো আল্লাহর হক

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “নবী করীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যখন তুমি তোমার সম্পদের যাকাত (যা তোমার ওপর ফরয) আদায় করে দেবে তখন তোমরা আল্লাহর হক আদায়ের দায়িত্ব থেকে যুক্ত হবে। আর যে হারাম সম্পদ সঞ্চয় করল এবং তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করল সে তার জন্য কোন প্রতিদান পাবে না, বরং তার গুনাহ হবে।” (তারগীব, ইব্‌নে খোষায়মাহ, ইবনে হেব্বান)


ইসলামে বৈধ বা হালাল খাবারগুলো কি কি


পোস্ট ট্যাগ
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস আরবি
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস পিক
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস আরবী
রোজার উপর হাদিস
রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url