হালাল রিজিকের সন্ধানে
হালাল রিজিকের সন্ধানে হাদিস
হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“জীবিকার জন্য অবৈধ পন্থা অবলম্বন করো না। কোন ব্যক্তি তার জন্য নির্ধারিত সমুদয় রিজিক না পাওয়া পর্যন্ত মরবে না। যদি সে রিজিক পেতে বিলম্ব হয় তবুও। তাই আল্লাহকে ভয় করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকার সন্ধান করো। হালাল উপায়ে আয়-রোজগার করো, হারামের কাছেও যেও না।” (ইবনে মাজা)
পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই
- হাদিসঃ হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, “হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সর্বোত্তম উপার্জন হচ্ছে শ্রমের বিনিময়ে উপার্জন, যদি সে সদিচ্ছা ও ঐকান্তিকতার সঙ্গে কাজ করে।
হালাল উপার্জনের পথ
ব্যবসা-বাণিজ্য
- হাদিসঃ হযরত জুমাই ইবনে উমায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর মামার কাছ থেকে বর্ণনা করেন, তাঁর মামা বলেছেন, “এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, 'সব থেকে উত্তম উপার্জনের পথ কোনটি?'
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, 'ব্যবসা-বাণিজ্য। যদি তার মধ্যে আল্লাহর নাফরমানির পদ্ধতি অবলম্বন করা না হয় এবং নিজ কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে হয়। (মুসনাদে আহমাদ)
সম্পদ আহরণের
সঠিক
দৃষ্টিভঙ্গি
- হাদিসঃ কা'ব বিন উজরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ দিয়ে এক ব্যক্তি (দ্রুততার সাথে হেঁটে) গেল। সাহাবাগণ তাকে জীবিকা অর্জনে পেরেশান দেখে বললেন, 'যদি লোকটির এ দৌড়ঝাঁপ ও অনুরাগ আল্লাহর রাস্তায় হতো তবে কতই না উত্তম হতো।'
এ শুনে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'যদি এ ব্যক্তির দৌড়ঝাঁপ হয় নিজের ছোট ছোট সন্তানদের জন্য, তবে এ কাজ আল্লাহর রাস্তায় বলে গণ্য হবে। যদি সে তার বৃদ্ধ মাতা-পিতার লালন পালনের জন্য এ চেষ্টায় নিয়োজিত হয়ে থাকে এবং তার উদ্দেশ্য থাকে কারো কাছে হাত না পেতে সংসার চালানো, তবু তার
এ চেষ্টা তৎপরতা আল্লাহর পথে বলে গণ্য হবে। অবশ্য যদি তার এ পরিশ্রম ও পেরেশানী হয় অধিক ধন-সম্পদ অর্জন করে মানুষের সামনে জাহির করা ও বড়াই দেখানোর উদ্দেশ্যে, তবে তার সমস্ত পরিশ্রমই শয়তানের রাস্তায় বলে গণ্য হবে।” (তারগীব, তাবরানী)
ধন সম্পদ বৃদ্ধির সঠিক
চিন্তা-ধারা
- হাদিসঃ হযরত সুফিয়ান সাওরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, “অতীতে নবুয়ত ও খিলাফতের জামানায় সম্পদকে অপছন্দনীয় জিনিস বলে গণ্য করা হতো। কিন্তু আমাদের সময় সম্পদ মুমিনের জন্য ঢাল সমতুল্য।'
তিনি
বলেন, 'যদি আমাদের কাছে
আজ 'দিরহাম' ও 'দীনার' না
থাকতো তাহলে বাদশাহ ও আমীররা আমাদেরকে
রুমাল বানিয়ে নিতো। আজ যার কাছে
কিছু 'দিরহাম' ও 'দীনার' আছে
তা কাজে লাগানো দরকার
(যাতে মুনাফা হয় ও সম্পদ
বৃদ্ধি পায়)। কারণ,
এখন জামানাটা এমন যে, মানুষ
যদি অভাবগ্রস্থ হয়ে পড়ে তবে
সে প্রথমে নিজের 'দ্বীন'কে বিক্রি করে
দেবে। হালাল উপার্জন ব্যয়ের নাম অপব্যয় নয়।”
(মিশকাত)
- ব্যাখ্যাঃ 'বাদশাহ ও আমীররা আমাদেরকে রুমাল বানিয়ে নিতো' কথাটির তাৎপর্য হচ্ছে, যদি আমাদের কাছে অর্থ-সম্পদ না থাকতো তবে আমরা বাদশাহ ও ধনবান লোকদের কাছে যেতে বাধ্য হতাম। তারা আমাদেরকে তাদের খেয়ালখুশি মত যথেচ্চ ব্যবহার করতো। কিন্তু আমাদের কাছে অর্থ সম্পদ থাকায় এখন আমরা তাদের মুখাপেক্ষী নই।
- রাসূলের জামানায় এমনকি সাহাবাদের জামানায়ও মানুষের ঈমান ছিল মজবুত। সে জন্য অভাব অনটনের মধ্যেও তাঁরা সমস্ত প্রকার ঈমানী বিপত্তি থেকে নিরাপদ ছিলেন। কিন্তু আজকাল মানুষের ঈমান সাধারণতঃ দুর্বল। দারিদ্র ও পরমুখাপেক্ষী মানুষ নিজের ঈমানকে বিক্রি করতেও কুণ্ঠিত হয় না। তাই, হযরত সুফিয়ান সওরী এই নসীহত করেছেন। এর দ্বারা তিনি বিলাসী হওয়ার শিক্ষা দেননি।
হাদীসটির
শেষ বাক্যের তাৎপর্য হচ্ছে, হালাল রুজিতে অপব্যয় নেই, অপব্যয়ের সম্পর্ক
হারামের সাথে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যায়, যদি
কেউ উত্তম কাপড় পরে বা উত্তম
খাদ্য খায় তবে সে
জন্য আপনি তাকে বলতে
পারেন না, তিনি অপব্যয়
করছেন। অবশ্য এ জন্য শর্ত
হচ্ছে, এ উত্তম পোষাক
ও উত্তম খাদ্য হালাল উপায়ে অর্জিত হতে হবে। (মিশকাত)
রব্বানা তাকাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আনতাস সামিউল আলিম
পোস্ট ট্যাগ