আমানত সম্পর্কে হাদিস
আমানত সম্পর্কে হাদিস
- ব্যাখ্যাঃ আমানত হচ্ছে খিয়ানতের বিপরীত। যে মানুষের মধ্যে আমানতদারির গুণ থাকে সে কোন হকদারে হক আদায় করতে ত্রুটি করে না, তা সে খোদা ও রাসূলের হক হোক বা মা-বাপের হক হোক বা আত্মীয়-স্বজন ও অন্য কারো হক হোক।
- ঈমান ও আমানত উভয়ের মূল হচ্ছে এক। মুমিনকে অবশ্যই আমানতদার হতে হবে। পবিত্রতা ও অযু ছাড়া নামায হবে না। আর যারা নামায পড়ে না তারা কেমন করে দ্বীনদার হতে পারে? মস্তকহীন দেহ যেমন অকেজো, তেমনি যে নামাযকে ত্যাগ করেছে সে সমগ্র দ্বীনকেই বিনাশ করেছে।
রবিয়া
জোরাশী বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দ্বীন হকের উপর দৃঢ়
থাকো। দৃঢ় থাকা অতি
উত্তম গুণ এবং অযুর
প্রতি যত্নবান হও। কেননা নামায
সব থেকে উৎকৃষ্ট কাজ
(আর অযু ছাড়া নামাজ হয় না)। জমিনকে
লজ্জা করো। কেননা জমিন
তোমার মূল (মাটি থেকেই
জন্ম তোমার আবার মাটিতেই বিলীন
হবে) এবং কিয়ামতের দিন
জমিন প্রত্যেক আমলকারীর আমলকে আল্লাহর কাছে বর্ণনা করবে।”
(তারগীব তাবরানী)
পুরস্কার ও সম্মান
হযরত
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'তিন প্রকার লোক
দ্বিগুণ পুরস্কার পাবে।
- প্রথমত সে আহলে কিতাবধারী, যে নিজের নবীর উপর ঈমান এনেছিল। তারপর আবার মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ঈমান এনেছে।
- দ্বিতীয়ত সেই গোলাম, যে আল্লাহর হক আদায় করেছে এবং নিজের মনিবের হকও আদায় করেছে।
- তৃতীয়ত সেই ব্যক্তি, যার কোন দাসী থাকলে সে তাকে উত্তম আচরণ শিখায়, দ্বীনের শিক্ষা দান করে, তারপর তাকে যুক্ত করে বিবাহ করে, সেও দ্বিগুণ পুরস্কার পাবে।
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ ফজিলত
হযরত ইবনে শাম্মাসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “আমরা আমর বিন আস রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে গিয়েছিলাম। তিনি তখন অন্তিম শয্যায়। তিনি আমাদের দেখে অনেকক্ষণ ধরে কাঁদলেন। তারপর (নিজের ইসলাম গ্রহণের কথা বর্ণনা করে) বললেন, 'আল্লাহ তায়ালা যখন ইসলামের জন্য আমার অন্তর উন্মুক্ত করলেন (অর্থাৎ যখন আমার ইসলাম গ্রহণের তওফীক হলো)
আমি রাসূলুল্লাহর
খেদমতে হাজির হলাম এবং নিবেদন
করলাম, 'হে আল্লাহর রাসূল!
আপনি হাত বাড়ান আমি
আপনার হাতে বায়'আত
গ্রহণ করবো। নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের হাত বাড়ালেন কিন্তু
আমি নিজের হাত টেনে নিলাম।
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'হে আমর! তুমি
নিজের হাত টেনে নিলে
কেন?' আমি বললাম, 'একটি
শর্ত আরোপ করতে চাই।'
হুজুর বললেন, 'কি শর্ত আরোপ
করতে চাও?'
আমি
বললাম, 'আমার শর্ত হচ্ছে,
ইসলাম গ্রহণের পূর্বে জাহেলিয়াতে আমার দ্বারা যত
গোনাহ হয়েছে, তা সব যেন
মাফ করা হয়।'
হুজুর
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'হে আমর! তুমি
জানো না; ইসলাম গ্রহণই
পূর্বের সমস্ত গোনাহ মিটিয়ে দেয়। এছাড়া হিজরত এবং হজও পূর্বের
গুনাহ মুছে দেয়। (মুসলিম)
দশটি সেরা ইসলামিক কাজ
হযরত
মু'আয বিন জাবাল
রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,
“আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে নিবেদন করলাম, 'আমাকে এমন কাজ বলে
দিন যা আমাকে জান্নাতে
নিয়ে যাবে এবং জাহান্নাম
থেকে দূরে রাখবে।' হুজুর
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'তুমি খুবই গুরুত্বপূর্ণ
কথা জিজ্ঞেস করেছো, এ ব্যাপারটি তার
জন্যই সহজ আল্লাহতায়ালা যার
জন্য সহজ করেন।
- দেখো, আল্লাহতায়ালার বন্দেগীতে রত থাকো
- তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করো না
- ঠিকমত নামায আদায় করো
- যাকাত দাও
- রমযানের রোযা রাখো এবং
- খানায়ে কাবার হজ্জ্ব করো।
এরপর
বললেন, 'কল্যাণসমূহের দুয়ার সম্পর্কে কি আমি তোমাদের
জানাবো না? (জেনে রাখো)
রোযা হচ্ছে ঢালের মত; (মানুষকে পাপের
পথ থেকে তা রক্ষা
করে)। পানি যেমন
আগুনকে নিভিয়ে দেয় তেমনি দান-খয়রাত মানুষের পাপসমূহ মিটিয়ে দেয়। এ ছাড়া অর্ধরাতের
পর মানুষের তাহাজ্জুদ নামায পড়াও (তার পাপসমূহ মিটিয়ে
দেয়)।' এরপর হুজুর
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াতটি পাঠ
করলেন:
অতঃপর
তিনি বললেন, 'আমি কি তোমাদের
দ্বীনের মস্তক, স্তম্ভ ও শীর্ষের কথা
জানাবো না? (জেনে রাখো)
দ্বীনের মস্তক হচ্ছে ইসলাম, স্তম্ভ হচ্ছে নামায এবং শীর্ষ হচ্ছে
জিহাদ!' আবার তিনি বললেন,
'আমি কি তোমাদের সেই
জিনিস জানাবো না, যা উক্ত
সমস্ত প্রকার নেকীর মূল?'
আমি
বললাম, 'হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল,
আপনি নিশ্চয় তা আমাকে জানান!
তিনি নিজের পবিত্র জিহ্বা ধারণ করে বললেন,
তুমি এটাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখো।' আমি প্রশ্ন করলাম,
'হে আল্লাহর নবী, 'যা কিছু আমরা
বলে থাকি তার জন্য
কি আমরা পাকড়াও হবো?
হুজুর
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'হে মু'আয,
তোমার জীবন দীর্ঘায়িত হোক।
জিহ্বা থেকে বেরিয়ে আসা
কথাই তো, যা না
বুঝেই বলা হয়, মানুষকে
নিম্নগামী করে দোযখে নিক্ষেপ
করে।” (মেশকাত)
- ব্যাখ্যা: এ হাদীসে জিহাদকে শীর্ষ আমল বলা হয়েছে এবং পরিশেষে জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ওপর সর্বাপেক্ষা বেশী গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। যেন মানুষ যা কিছু বলে বুঝেশুনে বলে। জিহ্বা যদি লাগামহীন হয়ে যায় তবে অধিক পাপ সংঘটিত হবে।
- মানুষকে গালি-গালাজ করা, নিন্দা করা, অপবাদ দেয়া সবই জিহ্বার কাজ; আর এ পাপগুলো মানুষের হক সংক্রান্ত! সুতরাং রোযা ও নামাযের পাবন্দী থাকা সত্ত্বেও মানুষের হক লংঘন করা পাপের জন্য মানুষকে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে।
হাদীসটিতে
তাহাজ্জুদ নামাযের প্রেরণা দিয়ে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা সাজদার ১৬-১৮ আয়াত পাঠ
করেছেন। আয়াতগুলোর অর্থ হচ্ছে: মুমিনগণ!
নিদ্রা ত্যাগ করে শয্যা থেকে
উঠে ভক্তি-ভালবাসা ও ভয় সহযোগে
নিজ প্রভুকে ডাকে এবং আল্লাহর
প্রদত্ত মাল থেকে আল্লাহর
পথে খরচ করে। কোন
প্রাণী জানে না, কত
যে নয়ন-স্নিগ্ধকারী নেয়ামতসমূহ
আল্লাহতায়ালা তাদের এ কাজের প্রতিদান
হিসাবে তাদের জন্য প্রস্তুত করে
রেখেছেন।
পোস্ট ট্যাগঃ