ব্যভিচার মানে কি
ব্যভিচার মানে কি
ব্যভিচার
মানে কি- ব্যভিচার হচ্ছে বিবাহ বহির্ভূতভাবে যৌন চাহিদা মেটানোকে বুঝায়। অর্থাৎ ইসলামিক
রীতি নীতি ছাড়া অসামাজিক কার্যকলাপকেই ব্যভিচার বুঝায়।
হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'হে কোরায়েশ যুবকগণ!
তোমরা ব্যভিচার করো না ।
যারা নিষ্কলুষতা ও পবিত্রতার সঙ্গে
যৌবন অতিবাহিত করবে তারা জান্নাতের
হকদার হবে।' (তারগীব ও তারহীব, বায়হাকী)
মোহাম্মদ বিন মুনকাদির কর্তৃক বর্ণিত, “খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হযরত আবুবকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লিখেন, 'আরবের নিকটস্থ বাইরের এলাকায় এমন একজন পুরুষ মানুষ পাওয়া গেছে যার থেকে লোকেরা স্ত্রীলোকের ন্যায় কাম বাসনা চরিতার্থ করে।’ হযরত আবুবকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহর সাহাবাদের ডাকলেন (এবং তাঁদের সামনে এ সমস্যা তুলে ধরলেন)। এই পরামর্শ সভায় হরযত আলী রাদিয়াল্লাহ্ আনহুও উপস্থিত ছিলেন।
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু
বললেন, 'আপনারা হযরত লুত আলাইহিসসালামের
উম্মত সম্পর্কে জানেন, এই পাপের জন্যে
আল্লাহতায়ালা তাদের কত কঠোর শাস্তি
দান করেছিলেন। (এ ব্যাপারে) আমার
অভিমত হচ্ছে, উল্লিখিত ব্যক্তিকে আগুনের শাস্তি দান করা হোক।'
রাসূলুল্লাহর সাহাবাগণ এই অভিমতের সঙ্গে
একমত হলেন এবং খলীফার
আদেশে উক্ত ব্যক্তিকে আগুনে
জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
- ব্যাখ্যাঃ এ অপরাধের শাস্তি কোরআন মাজীদে বর্ণিত হয়নি। নিজ এলাকায় এ অপরাদের জন্য কি শাস্তি দেয়া আবশ্যক তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা ইসলামী রাষ্ট্রের। শান্তি উভয়কে দেয়া হবে। যেখানে ইসলামী হুকুমত নেই সেখানকার ধর্মভীরু মুসলমানরা তাদের আলেমদের পরামর্শক্রমে কোন শাস্তি নির্দিষ্ট করতে পারে।
ব্যভিচার বা মনে
কুচিন্তা
লালন
করা
হযরত
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,
“হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'আদম সন্তানের জন্য
তার অংশের যেনা নির্দিষ্ট আছে,
যা সে অবশ্যই করবে।
কামভাবে দেখা,
চোখের
যেনা।
কাম-সূচক
কথাবার্তা
শোনা,
কানের
যেনা।
এ
বিষয়ে
কথাবার্তা
বলা,
জিহ্বার
যেনা।
হাত
দিয়ে
ধরা,
হাতের
যেনা।
এজন্য
হেঁটে
যাওয়া,
পায়ের
যেনা।
এ
সম্পর্কে
কামনা
বাসনা
পোষণ
করা,
অন্তরের
যেনা।
এরপর
লজ্জাস্থান
হয়
ব্যাভিচার
কাজটা
সম্পন্ন
করে
অথবা
বিরত
থাকে।'
এ
সম্পর্কে আবু দাউদ ও
মুসলিমের এক বর্ণনা এরূপ,
‘এবং দুই হাত যেনা
করে, তাদের যেনা হচ্ছে- ধরা।
দু'পা যেনা করে,
তাদের যেনা, হেঁটে যাওয়া। এবং চুম্বন করা
মুখের যেনা।”
- ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসটি বড়ই গুরুত্বপূর্ণ। হাদীসটির মূল কথা হচ্ছে, মানুষ যেন কুচিন্তা মনের মধ্যে লালন না করে। মানব দেহের মধ্যে অন্তর হচ্ছে শাসক স্বরূপ। অন্তরে কুচিন্তার উদয় হলে যদি তা অন্তরের মধ্যে লালন করা হয় তবে পাপ থেকে মানুষ বিরত থাকতে পারে না।
- অন্তর যখন খারাপ চিন্তা লালন করতে থাকে তখন সমস্ত অংগ-প্রতংগ অন্তরের কামনা পূর্ণ করার কাজে রত হয়। সুতরাং অন্তরে কুচিন্তা উদয় হলে সর্বশক্তি দিয়ে তা দূর করার চেষ্টা করা উচিত I
এ
হাদীসে এ কথা বলা
হয়নি যে, প্রত্যেক ব্যক্তির
জন্য যেনার অংশ তকদিরে লিখে
দেয়া হয়েছে এবং তকদিরের লেখা
কে মিটাতে পারে। বরং এ
কথা
বলা
হয়েছে
যে,
মানুষ
যদি
নিজের
ঈমানী
শুদ্ধতা
অর্জন
না
করে;
তবে
যেনা
ও
অন্য
প্রকার
পাপ
থেকে
সে
নিজেকে
বাঁচাতে
পারবে
না।
তৃতীয় কথা, যা প্রণিধানযোগ্য তা হচ্ছে, যেনার প্রারম্ভিক ব্যাপারগুলোও যেনার হুকুমের মধ্যে গণ্য। এ কারণে কোন স্ত্রীলোকের প্রতি কামভাবে দৃষ্টিপাত করতে, কামসূচক কথাবার্তা বলতে, কামদ্দীপক কথা-বার্তা শুনতে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন।
যদি লোকেরা এই
সমস্ত গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে
তবে সে খারাপের শেষ
পর্যায় পর্যন্ত যাবে না। এখানে
এ কথাটাও বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার
যে, খারাপ চিন্তা মনের মধ্যে লালন
করলে তার জন্য আল্লাহর
কাছে পাকড়াও হতে হবে।
ইসলামে পোষাকের বিধান
হযরত
ইয়াকুব বর্ণনা করেছেন, “এক ব্যক্তি আবদুল্লাহ
ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে
জিজ্ঞেস করেন, 'আমি কি রকম
কাপড় পরবো?' তিনি উত্তর দিলেন,
‘এ রকম কাপড় পরো,
যেন বেওকুফ লোক তোমাকে দেখে
তুচ্ছ মনে না করে
আর বিজ্ঞজন আপত্তি না করে। লোকটি
প্রশ্ন করলেন, 'কাপড় কি রকম মূল্যের
হওয়া দরকার?' তিনি উত্তর দিলেন,
'পাঁচ দিরহাম থেকে বিশ দিরহামের
মধ্যে।' (তারগীব ও তারহীব,
- ব্যাখ্যাঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর যুগে পাঁচ দিরহামের মূল্য অনেক ছিল। আজকের দিনে পাঁচ দিরহামে মাথাটা ঢাকার মত একটি টুপিও হবে না; কিন্তু তখনকার সময় পাঁচ দিরহামে সমস্ত পোষাক তৈরী হয়ে যেতো। এ পার্থক্য অবশ্য বুঝতে হবে।
লোভ ও
কৃপণতা
হযরত
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত,
“তিনি বলেন, 'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'লোভ, কৃপণতা ও
ঈমান
কোন বান্দাহর অন্তরে কখনও একত্র হতে
পারে না।”(নাসায়ী)
অর্থাৎ একপক্ষে ঈমান এবং অন্য পক্ষে লোভ ও কৃপণতা এই দুই প্রকার জিনিস একত্রে থাকতে পারে না। উভয়ের যে কোন একটি অবশ্য থাকতে পারে। কেননা ঈমানের দাবী হচ্ছে মানুষ অর্থের পূজারী হবে না, যা কিছু সে উপার্জন করবে তা সে দ্বীনের পথে ও সম্বলহীন লোকদের জন্য খরচ করবে।
অন্য পক্ষে লোভ বা কৃপণতা
মানুষের অর্থ বেশী বেশী
করে জমা করার ও
খরচ না করে বাঁচিয়ে
রাখার মানসিকতা সৃষ্টি করে। যে মানুষ
লোভ বা কৃপণতার শিকার
হয সে দ্বীনের প্রয়োজনে
অর্থ ব্যয় করতে পারে না,
এবং খোদার বান্দাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করতেও
পারে না।
অনুকরণ করার ইচ্ছা নিষেধ
হযরত
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত,
“তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সব পুরুষ
ও স্ত্রীলোকদের প্রতি লা'নত করেছেন
যারা একে অপরের সাদৃশ্য
অনুকরণ করে।” (তারগীব ও তারহীব, বোখারী,)
হযরত
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই পুরুষের প্রতি
লা'নত করেছেন যে
স্ত্রীলোকের বেশ ধারণ করে
ও সেই স্ত্রীলোকের প্রতি
লা'নত করেছেন যে
পুরুষের বেশ ধারণ করে।”
হযরত
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত,
“তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহর খেদমতে একজন হিজড়াকে আনা
হয় যার নিজের দুই
হাত ও দুই পায়ে
মেহেদি লাগানো ছিল। হুজুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'এ লোকটি কি
রকম, এ মেহেদি কেন
লাগিয়ে রেখেছে। লোকেরা বললো, মেয়েদের মত দেখানোর জন্য
মেহেদি লাগিয়েছে। রাসূলুল্লাহর আদেশে তাকে মদীনা থেকে
মাকামে নকীতে বহিষ্কার করা হলো।
লোকেরা
বললো, 'হে আল্লাহর রাসূল,
আপনি কেন ওকে হত্যার
হুকুম দিলেন না?'
হুজুর
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাবাব দিলেন, 'যারা নামায পড়ে
(অর্থাৎ মুসলমান, তাদের হত্যা করা (কোরআন মাজিদে)
নিষিদ্ধ করা হয়েছে।” (তারগীব
ও তারহীব)
পোস্ট ট্যাগঃ
ব্যভিচার মানে কি
ব্যভিচারিণী কাকে বলে
ব্যভিচার অর্থ কি
ব্যভিচার এর মানে কি
ব্যভিচার কাকে বলে
ব্যভিচারের সংজ্ঞা
ব্যভিচারিণী অর্থ কি