তাওয়াক্কুল অর্থ কি
তাওয়াক্কুল
শব্দের অর্থ হচ্ছে ভরসা, নির্ভর করা মহান আল্লাহপাকের উপর।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যে ব্যক্তি অভাব-অনটনে পড়ে তা দূর করার জন্য মানুষের কাছে হাত পাতে, সে ব্যক্তিতো এরই উপযুক্ত যে, তার অভাব পূর্ণ হবে না।
আর
যে ব্যক্তি নিজ অভাবের কথা
আল্লাহতায়ালাকে জানায় ও তার কাছে
অভাব পূরণের প্রার্থনা করে আল্লাহতায়ালা হয়
তাকে দুনিয়াতেই রিজিক বাড়িয়ে দেবেন নইলে আপন সান্নিধ্যে
ডেকে নেবেন, যেখানে তাকে নিজের নেয়ামতরাজি
দিয়ে ধন্য করবেন। (মুসনাদে আহমদ)
- ব্যাখ্যাঃ এ হাদীস মানুষকে তাওয়াক্কুলের শিক্ষা দান করে। এ হাদীস বলে, তোমার প্রতিটি প্রয়োজন আল্লাহতায়ালার কাছে পেশ করো। তাঁর কাছে দেয়ার মত সব কিছুই আছে। সেই মানুষের কাছে কেন হাত পাতবে, যার নিজের বলে কিছু নেই?
ধৈর্যের পুরস্কার
হযরত
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজন মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, 'তোমাদের
মধ্যে যে নারী তিনটি
সন্তানের মৃত্যু-শোকে পরকালের পুরস্কারের
আশায় সবর ও ধৈর্য
অবলম্বন করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ
করবে।'
একথা
শুনে মহিলাদের একজন বলে উঠলেন,
'হে আল্লাহর রাসূল! যদি কোন মেয়ের
দুটি সন্তান মারা যায় আর
সে সবর করে?'
হুজুর
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘সেও জান্নাতে যাবে।'
আবু
হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত
অন্য একটি হাদীসে বলা
হয়েছে, “এক মহিলা নিজের
কোলে একটি শিশু নিয়ে
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন,
“হে আল্লাহর নবী, আমার জন্য
দোয়া করুন। (যেন সন্তানটি জীবিত
থাকে)! আমি তিনটি সন্তানকে
দাফন করেছি।'
হুজুর
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমার তিনটি সন্তানই মারা গেছে?' মহিলা
বললেন, 'হ্যাঁ।'
হুজুর
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'তবে তো তুমি
জাহান্নাম থেকে বাঁচার মজবুত
অবলম্বন পেয়ে গেছো।” (তারগীব ও তারহীব, সহিহ
মুসলিম)
তাওয়াক্কুল ও
দৃঢ়তা
প্রদর্শন
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবী আওফা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, “কোন এক জিহাদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (লড়াই করার জন্য) অপেক্ষা করছিলেন। (অপেক্ষা করতে করতে) এক সময় সূর্য অস্তমিত হওয়ার উপক্রম হলো।
তখন হুজুর
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠলেন এবং মুজাহিদদের উদ্দেশ্য
করে বললেন, 'হে মুজাহিদবৃন্দ, তোমরা
শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য অন্তরে
আকাঙ্খা পোষণ করো না।
বরং আল্লাহর কাছে নিজেদের নিরাপত্তার
জন্য প্রার্থনা করতে থাকো। কিন্তু
যদি শত্রুর মুখোমুখি হয়ে যাও তখন
ধৈর্য ও দৃঢ়তার সাথে
লড়াই করো এবং এই
কথার ওপর দৃঢ় আস্থা
রেখো, জান্নাত তরবারির ছায়ার নীচে অবস্থিত।
এরপর
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করলেন, 'হে আল্লাহ! হে
কিতাব নাযিলকারী, মেঘ পরিচালনাকারী এবং
শত্রুর বাহিনী সমূহকে পরাজয় দানকারী, তুমি শত্রুদের পরাজিত
করো এবং তোমার সাহায্য
দিয়ে তাদের ওপর আমাদের বিজয়
দান করো।' (বোখারী ও মুসলিম)
এরপর
আক্রমণ করা হয়, মুসলমানেরা
বিজয় লাভ করে এবং
শত্রুদল পরাজিত হয়।”
গোপন কথা
গোপন
রাখাও
আমানত
হযরত
জাবের বিন আবুদল্লাহ রাদিয়াল্লাহু
আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,
“হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যখন কোন ব্যক্তি
তোমার সঙ্গে কথা বলে ও
এদিক ওদিক ফিরে দেখে
তখন তার সে কথা
তোমার কাছে আমানত স্বরূপ
জেনো।” (আবু দাউদ)
ব্যাখ্যা:
হাদিসটির তাৎপর্য হচ্ছে, যে ব্যক্তি কথা
বলেছে সে কথাটি গোপন
রাখার জন্য মুখে না
বললেও তার কথা গোপনযোগ্য
বুঝা দরকার। তার অনুমতি ছাড়া
একথা অন্য কাউকে জানানো
উচিত হবে না। তাহলে
আমানতের খেয়ানত করা হবে। কথা
বলার সময় তার এদিক
ওদিক দেখার তাৎপর্য হচ্ছে সে তার কথাকে
অন্য লোক থেকে গোপন
রাখতে চায়।
জুলুম নিয়ে উক্তি, জুলুমের
বদলে
জুলুম
করা
হযরত
হোযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'তোমরা অন্যদের অনুসারী হয়ো না। এরূপ
চিন্তা করো না যে
লোকে আমাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করলে আমরাও তাদের
সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবো। আর লোকে যদি
আমাদের উপর যুলুম করে
তবে আমরাও যুলুম করবো। না, বরং তোমরা
এই দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ
করো যে মানুষ যদি
তোমাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে
তাহলেও তোমরা তাদের উপর কোন যুলুম
করবে না। (তারগীব ও
তারহীব, তিরমিযী)
দ্বীনি মজলিসের ফজিলত
হযরত
আবদুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যে ব্যক্তি আগে
থেকেই বসে আছে তাকে
তুলে দিয়ে অন্য কেউ যেন
বসে না যায় বরং
আগন্তুকদের জন্য (মজলিসের লোকদের পক্ষে) জায়গা সৃষ্টি করা এবং বসবার
সুযোগ করে দেয়া উচিত।”
(মুসনাদে আহমদ)
হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, “হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'তোমরা কোন স্থানে তিনজন একত্রে থাকলে একজনকে বাদ দিয়ে দুইজন পরস্পর গোপনে কথাবার্তা বোলো না।'
আবদুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এ হাদিস বর্ণনা করলে তাঁর সাগরেদ আবু সালেহ জিজ্ঞাসা করেন, 'যদি মজলিশে চারজন থাকে তবে তাদের মধ্যে দুজন পরস্পরে গোপন কথাবার্তা বলতে পারে কি?' আবদুল্লাহ ইবনে ওমর উত্তর দেন, ‘সে অবস্থায় কোন দোষ নেই” (মুসনাদে আহমদ)
পোস্ট ট্যাগঃ