মহানবীর বাণী ইসলামিক উক্তি
মহানবীর বাণী ইসলামিক উক্তি
হযরত কা'ব বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “হুজুরের মৃত্যুর পাঁচদিন পূর্বে তাঁর সঙ্গে আমার সাক্ষাতের কথা আমার স্বরণ আছে। সেদিন আমি হুজুরকে বলতে শুনেছি: প্রত্যেক নবীর উম্মাতের মধ্য থেকে তাঁর জন্য একজন না একজন বন্ধু অবশ্যই ছিল। আর আমার খলীল বা বন্ধু হচ্ছে আবুবকর ইবনে আবু কোহাফা।
আর আল্লাহতায়ালা তাঁর নবী মোহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিজের খলীল করেছেন। শোনো,
তোমাদের পূর্বের লোকেরা তাদের নবীদের কবরকে সেজদার স্থান বানাতো কিন্তু আমি তোমাদের এ
কাজ নিষেধ করছি। (আমার মৃত্যুর পর
যেন আমার কবরকে সেজদা
না করা হয়)।
এরপর
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বললেন, 'হে
আল্লাহ, আমি কি কথা
পৌঁছে দিয়েছি?' (এ কথা হুজুর
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন বার বলেন)। এরপর আবার
বলেন: 'হে আল্লাহ, তুমি
সাক্ষী থাকো (এ কথাও তিনি
তিন বার বলেন।
এরপর
কিছুক্ষণের জন্য হুজুর অচেতন
হয়ে যান। তারপর চেতনা
ফিরে এলে হুজুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, 'নিজের দাসদের সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় করো, তাদের
পেট ভরে খেতে দিও,
পরবার কাপড় দিও। আর তাদের
সাথে নরমতাবে
প্রতিবেশীর হক
হযরত
আমর বিন শোয়াইব তাঁর
দাদা ও পিতার কাছ
থেকে বর্ণনা করেন, “নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যে প্রতিবেশী থেকে
কেউ নিজের পরিবার-পরিজন ও সম্পদের বিপদ
আশংকা করে এবং দরজা
বন্ধ করে ঘুমায় সে
প্রতিবেশী মোমিন নয়। আর যার
অত্যাচার ও দৌরাত্ম থেকে
তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয় সেও মোমিন
নয়।
তুমি কি জান প্রতিবেশীর অধিকার কি? যদি সে সাহায্য চায় তবে তাকে সাহায্য করো। যদি সে ঋণ চায় তবে তাকে ঋণ দাও। যদি সে অনাহারী হয় তবে তাকে আহার দাও। যদি সে অসুস্থ হয়ে পড়ে তবে তার সেবাযত্ন করো। যদি সে কোন কারণে খুশী হয় তবে তাকে মোবারকবাদ দাও।
যদি সে বিপদের মধ্যে পড়ে তবে তাকে সবর করতে বলো। যদি সে মারা যায় তবে তাকে নিয়ে কবরস্থান পর্যন্ত যাও। তার ঘর অপেক্ষা উঁচু ঘর বেঁধে তার ঘরের হাওয়া বন্ধ করো না। যদি সে অনুমতি দেয় তবে তার ঘর অপেক্ষা উঁচু ঘর বাঁধতে পারো। তুমি নিজের হাঁড়ির মাংসের সুগন্ধ দ্বারা তাকে কষ্ট দিও না। হ্যাঁ, যদি তার ঘরে পাঠাও তবে আলাদা কথা।
যদি তুমি নিজের ছেলেমেয়ের
জন্যে ফল ক্রয় করো
তবে তার ঘরে কিছু
পাঠাও। আর যদি তুমি
তা না করতে পারো
তবে চুপি চুপি তা
ঘরে আনো এবং তোমার
ছেলেমেয়ে তা নিয়ে খেতে
খেতে যেন বাইরে না
যায়। তাহলে তোমার গরীব প্রতিবেশীর ছেলেমেয়ে
দুঃখিত হবে ও মনে
কষ্ট পাবে।” (তারগীব ও তারহীব)
ঈমানের হাকীকত-
ঈমান কখন সংশোধিত হয়
হযরত
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যতক্ষণ পর্যন্ত তার অন্তর সংশোধিত
না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত
কোন বান্দার ঈমান সংশোধিত হতে পারে না।
আর যতক্ষণ পর্যন্ত তার জিভ সংশোধিত
না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত
তার অন্তর সংশোধিত হতে পারে না।
এবং ঐ ব্যক্তি জান্নাতে
যাবে না যার উপদ্রব
থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ
থাকে না।' (তারগীব ও তারহীব)
মহানবীর বাণী ইসলামিক উক্তি
গুরুত্বপূর্ণ
হযরত
আবুযর গিফারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সহীফাতে কি শিক্ষা ছিল?'
তিনি বললেন, “ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সহীফার সমূদয় শিক্ষা উপমার সাহায্যে দান করা হয়েছিল
এবং তা হল এই:
হে বিশ্বাসঘাতক শাসক,
তোমাকে
ক্ষমতা দান করে পরীক্ষার
মধ্যে ফেলা হয়েছে। আমি
তোমাকে এ জন্যে পাঠাইনি
যে, তুমি দুনিয়ার সম্পদ সঞ্চর
করে জমা করবে। বরং
আমি তোমাকে এ জন্যে শাসক
করেছি যেন তুমি ন্যার
বিচারের মাধ্যমে অত্যাচারিতের ফরিয়াদকে আমার কাছে পৌঁছতে
দেবে না। কারণ আমি
মজলুমের প্রার্থনা প্রত্যাখ্যান করি না, যদিও
সে কাফের হয়।
'আর
বুদ্ধিমান ব্যক্তি যতক্ষণ পর্যন্ত সে সজ্ঞান থাকে
তার পক্ষে নিজের সময়কে বিভক্ত করে নেয়া আবশ্যক।
কিছু সময় আল্লাহর কাছে
দোয়া ও মোনাজাতে ব্যয়
করবে।
কিছু সময় নিজের এহতেসার ও আত্মপর্যালোচনায় ব্যয় করবে। কিছু সময় মহাপ্রতাপশালী ও মহিমাময় প্রভু আল্লাহর সৃষ্টি-কৌশল নিয়ে চিন্তা করবে। কিছু সময় ব্যয় করবে নিজের আয় রোজগারের জন্য।
আর বুদ্ধিমান ব্যক্তি
কেবল
তিনটি
জিনিষের
জন্য
ভ্রমণ
করবে।
এক. আখেরাতের সম্বল
সংগ্রহ
করার
জন্যে।
দুই. আর্থিক
অবস্থা
স্বচ্ছল
করার
জন্য।
তিন. হালাল
জিনিষ
উপভোগ
করার
জন্য।
'আর
বুদ্ধিমান
ব্যক্তির
উচিত,
নিজের
অবস্থার
সংশোধনের
দিকে
মনোযোগ
দেয়া।
নিজের
জিহ্বাকে
আয়ত্বে
রাখবে।
যে
ব্যক্তি
নিজের
মুখ
থেকে
নির্গত
কথার
হিসাব
করে
তার
মুখ
থেকে
কেবল
কল্যাণকর
কথাই
বের
হয়।
(নিরর্ধক
কথা
বলা
থেকে
সে
বিরত
থাকে)।'
'আমি
জিজ্ঞেস করলাম, 'হে রাসূলুল্লাহ, মুসা
আলাইহিস সালামের ওপর অবতীর্ণ কালামে
কি শিক্ষা ছিল?'
‘তিনি
বললেন, 'তা সমস্তই শিক্ষা
ও উপদেশের কথা ছিল। উদাহরণ
স্বরূপ: ‘সেই ব্যক্তির ব্যাপারে
আমি বিস্ময়বোধ করি, যে ব্যক্তি
মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও দুনিয়া উপভোগে মত্ত থাকে! সেই
ব্যক্তির জন্যও আমি বিস্ময়বোধ করি,
যে জাহান্নামের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেও অট্টহাসিতে মেতে
উঠে!
'সেই
ব্যক্তির জন্যেও আমি বিস্ময়বোধ করি,
যে তকদীরের ফায়সালার প্রতি ঈমান রাখে অথচ
তার সময় ব্যয় হয়
পার্থিব সম্পদ সংগ্রহে পেরেশানীতে!
‘সেই
ব্যক্তিকে নিয়েও আমার বিস্ময় হয়,
যে দুনিয়া এবং তার বিবর্তনকে
দেখে, তবুও দুনিয়াকেই নিজের
লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে রাখে।
‘সেই
ব্যক্তির জন্যও আমার বিস্ময় হয়,
যে কাল কিয়ামত দিনের
হিসাব-নিকাশের কথা বিশ্বাস করে
অথচ সেই মত আমল
করে না ।
'তারপর
আমি বললাম, 'হে আল্লাহর রাসূল,
আমাকে উপদেশ দিন I
তখন
তিনি বললেন, 'আমি তোমাকে অন্তরে
সব সময় আল্লাহর ভয়
জাগরুক রাখার উপদেশ দিচ্ছি। এটাই হলো সমস্ত
নেকীর মূল।'
আমি
বললাম, 'হে আল্লাহর রাসূল,
আমাকে আরও কিছু উপদেশ
দিন।'
তিনি
বললেন, 'কোরআনের তেলাওয়াত ও মহান প্রভু
আল্লাহর স্মরণকে নিজের কর্তব্য বানিয়ে নাও। এটা দুনিয়াতে
তোমার পক্ষে হবে আলো ও
আখেরাতে হবে তোমার পুঁজি।'
'আমি
বললাম, 'হে রাসূলুল্লাহ, আরো
কিছু বলুন।'
- “তিনি
বলেন, 'খুব বেশী হাসাহাসি
থেকে নিজেকে বাঁচাও। কারণ অতিরিক্ত হাসাহাসি
অন্তরকে মৃত করে দেয়
এবং মুখমন্ডলের জ্যোতি নষ্ট করে দেয়।'
‘আমি
আবার বললাম, 'হে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমাকে আরো কিছু নসীহত
করুন।'
তিনি
বললেন, 'আল্লাহর পথে জিহাদকে নিজের
জন্য ফরজ করে নিও।
এ জিহাদই আমার উম্মতের রাহবানিয়াত
বা সন্ন্যাস।
ব্যভিচার ও
সুদ
খাওয়ার
পরিণতি
হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু
আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন,
“তিনি বলেছেন, 'যখন কোন জাতির
মধ্যে বা লোকালয়ে প্রকাশ্যভাবে
ব্যভিচার ও সুদ খাওয়া
হতে থাকে তখন বুঝে
নিও যে তারা নিজেদেরকে
আল্লাহর শাস্তির যোগ্য বলে ঘোষণা করে
দিয়েছে।” (তারগীব ও তারহীব, fa
পুজের চৌব্বাচ্চায়
কাকে
রাখা
হবে?
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “আমি রাসূলুল্লাহকে বলতে শুনেছি, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশিত শান্তির মধ্যে কোন শাস্তিকে নাকচ করার জন্যে সুপারিশ করে এবং যে ব্যক্তি জেনে-শুনে বাতিলের সাহায্য-সহযোগিতা করে, তাদের ওপর আল্লাহ নারাজ থাকবেন। অবশ্য তারা যদি তওবা করে তবে তা অন্য কথা।
আর যে ব্যক্তি
কোন ঈমানদার ব্যক্তির উপর দোষারোপ করে
তাকে জাহান্নামে স্থান দেয়া হবে। অবশ্য সে
যদি তওবা করে এবং
তার ভাইয়ের কাছ থেকে ক্ষমা
চেয়ে নেয় তবে তা
ভিন্ন কথা।' (তারগীব ও তারহীব, আবু
দাউদ)