দানের ফজিলত ও ঘটনা
দানের ফজিলত ও ঘটনা
হযরত মুয়াজ বিন জাবল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘উপহার ও দান যদি উপহার দানের রূপে হয় তবে তা গ্রহণ করতে পারো।
কিন্তু যদি এ উপহার ঘুষ হয়ে যায় এবং দ্বীনের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্যে দেয়া হয় তাহলে গ্রহণ করো না। অবশ্য তোমরা এ ঘুষ ছাড়তে পারবে না, কারণ তোমরা এমন দারিদ্র ও অনাহারের মধ্যে পড়বে যা এই ঘুষ নিতে তোমাদের বাধ্য করতে পারে। শোন, ইসলামের চাকা ঘুরছে।
সুতরাং তোমরা আল্লাহর কিতাব যেদিকে যায় সেদিকে থেকো। শোন, খুব শীঘ্রই আল্লাহর কিতাব ও শাসন ক্ষমতা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তখন তোমরা আল্লাহর কিতাবের সঙ্গে থেকো (তাকে ছেড়ে শাসন ক্ষমতার সঙ্গে থাকবে না)। শোন, তোমাদের উপর এমন শাসক শাসন চালাবে যারা তোমাদের ব্যাপারে সব কিছুর সিদ্ধান্ত করবে (আইন তৈরী করবে)।
তখন তোমরা
যদি তাদের কথা স্বীকার করে
নাও তাহলে তারা তোমাদেরকে গোমরাহীতে
নিক্ষেপ করবে আর যদি
তাদের কথা স্বীকার না
করো তাহলে তারা তোমাদেরকে হত্যা
করবে।'
লোকেরা জিজ্ঞেস
করল,
'হে
রাসূলূল্লাহ,
এমতাবস্থায়
আমাদের
কি
করা
উচিত?'
তিনি
বললেন, “ঈসা আলাইহিস সালাম
ও তাঁর সঙ্গীরা যা
করেছিল তোমাদের তাই করা উচিত।
তাদের করাত দিয়ে চিরে
ফেলা হয় ও চড়ে
চড়ান হয়, কিন্তু তবুও
তাঁরা বাতিলের কাছে মাথা নত
করেন নি । আল্লাহর
অবাধ্য হয়ে জীবন-যাপন
করা অপেক্ষা আল্লাহর আনুগত্যের মরে যাওয়া উত্তম।”
(তাবরানী)
না আমি
তাদের
না
তারা
আমার
হযরত কা'আব বিন উজরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হে কা‘আব! আমার পরে এমন সব শাসক আসবে, তাদের হাত থেকে আমি তোমাকে আল্লাহর আশ্রয়ে দান করছি।
যারা সেই সব অত্যাচারী শাসকদের কাছে যাবে এবং তাদের মিথ্যা কথাকে সমর্থন করবে এবং তাদের অত্যাচারের কাজে সাহায্যকারী হবে তাদের সঙ্গে না আমার কোন সম্পর্ক আছে না। তারা আমার সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখে। হাউযে কাওসারে তারা আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবে না। আর যারা ঐ সব অত্যাচারী শাসকদের কাছে যাবে না;
যদিও যায় তবু তাদের মিথ্যা কথাকে সত্য বলবে না এবং তাদের অত্যাচারের কাজে সাহায্যকারী হবে না, তারা আমার লোক (তারা আমার, আমি তাদের)। নিশ্চিত রূপে তারা হাউযে কাওসারে আমার সঙ্গে মিলিত হবে এবং আমি নিজের হাতে তাদের কাওসারের পানি পান করাবো, যার ফলে তাদের কখনও পিপাসা লাগবে না। (জামে আত তিরমিযী)
শাহাদাতের মৃত্যু
হযরত
মুয়াজ বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেছেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে
এ
কথা
বলতে
শুনেছি,
'যে
ব্যক্তি
সাচ্চা
মনে
আল্লাহর
কাছে
শাহাদাতের
আকাঙ্খা
করেছে
এবং
তারপর
তাকে
শহীদ
করে
দেয়া
হয়েছে
বা
তার
স্বাভাবিক
মৃত্যু
হয়েছে
(উভয়
অবস্থাতেই)
সে
শহীদের
মর্যাদা
পাবে।”
(আবু দাউদ ও তিরমিবী)
সহল বিন
হুনায়ফ
রাদিয়াল্লাহ
আনহুর
হাদীসে
বর্ণিত
হয়েছে,
'যে
ব্যক্তি
সাচ্চা
মনে
শাহাদাতের
তামান্না
করেছে,
যদি
সে
নিজ
বিছানায়
মরে
তবুও
আল্লাহতায়ালা
তাকে
শহীদের
মর্যাদা
দান
করবেন।
শাহাদাতের প্রকারভেদ
হযরত রাবী আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'শুধু কি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হলেই শাহাদাত? তাহলে তো আমার উম্মতের মধ্যে শহীদ খুবই কম হবে না, যে প্লেগে মারা যায় বা কলেরায় মারা যায়,
যে মহিলা প্রসবের সময়
মারা যায়, যে ব্যক্তি আগুনে
পুড়ে মারা যায় বা
পানিতে ডুবে মারা যায়,
যে ব্যক্তি নিউমোনিয়ার শিকারে পরিণত হয়ে মারা যায়,
এরা সবাই শহীদের মর্যাদা
পাবে।” (তারগীব ও তাবরানী)
আত্মরক্ষা করতে
গিয়ে
মরাও
শাহাদাত
হযরত
সাঈদ বিন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেছেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একথা বলতে শুনেছি,
'যে সব লোক নিজের
সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত
হয় তারাও শহীদ। আর যে সব
লোক নিজের জীবন রক্ষা করতে
গিয়ে নিহত হয় তারাও
শহীদ। আর যে সব
লোক নিজের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের রক্ষা
করতে গিয়ে নিহত হয় তারাও
শহীদ।” (আবু দাউদ, নাসাঈ,
তিরমিজী ও ইবনে মাজাহ)
সুআদ
বিন মুকরিনের যে বর্ণনা নাসাঈতে
লিপিবদ্ধ করা হয়েছে তা
হলো, 'যে সব লোক
কোন অত্যাচারীর নিকট থেকে নিজের
অধিকার ফিরিয়ে নিতে গিয়ে নিহত
হয় তারাও শহীদ।'
জিহাদ থেকে
বিরত
থাকার
পরিণাম
হযরত
আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যে সব লোক
জিহাদ অর্থাৎ দ্বীনের জন্যে পরিশ্রম ও প্রাণপাত এবং
অর্থ ও জীবনের কোরবানী
করবে না আল্লাহ সে
সব লোকদের উপর গজব নাজিল
করবেন।” (তারগীব, তাবরানী)
ব্যাখ্যাঃ হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাস্তির পরিমাণের কথা এ হাদীসে
বলেননি। নীচে যে হাদীস
বর্ণনা করা হয়েছে তা
এ হাদীসের উৎকৃষ্ট ব্যাখ্যা।
দ্বীনের প্রচেষ্টা
থেকে
বিমুখ
থাকার
পরিণাম
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যখন তোমরা ‘ঈনাহ'-এর (সুদ) সঙ্গে ক্রয় বিক্রয় করবে, বস্ত্রদের লেজ ধরে থাকবে, চাষবাসে মগ্ন হয়ে যাবে এবং দ্বীনের জন্যে পরিশ্রম করা
এবং ধন-প্রাণ কোরবানী করা ত্যাগ করবে
তখন আল্লাহ তোমাদের উপর এমন অপমান
ও গোঁলামী চাপিয়ে দেবেন যা তোমরা যতক্ষণ
পর্যন্ত দ্বীনের দিকে না ফিরে
আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের উপর থেকে দূরীভূত
হবে না।' (আবু দাউদ)
- ব্যাখ্যা: এ হাদীসে ‘ঈনাহ্' শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে যার রূপ নানান ধরনের। সংক্ষেপে শরীয়তের অবকাশের সাহায্যে সুদের কারবারের নাম আরবীতে হলো ‘ঈনাহ’। যেহেতু তারা মুসলমান সে জন্যে খোলাখুলিভাবে সুদের কারবার করতে লজ্জা পেয়ে থাকে। সে জন্যে নানান ধরনের সুন্দর সুন্দর নামে এ কারবার চালাতে থাকে। এভাবে এ ধরনের লোক শরীয়ত নিয়ে খেলা করে এবং আল্লাহর সঙ্গে তামাশা করে। তারা মনে করে, মহাজ্ঞানী আল্লাহতায়ালা তাদের এ চালের মধ্যে পড়ে যাবেন।
এ হাদীসে যে সব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে তা সবই আমাদের সমাজে বর্তমান আছে। এসবই আমাদের অপমান ও গোলামীর প্রকৃত কারণ। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দৃষ্টিতে দ্বীনী কাজ ব্যবসা বাণিজ্য, চাষবাস ও অন্যান্য আর্থিক উপায়-উপকরণের তুলনায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত
এ থেকে পরিত্রাণের
কোন রাস্তা নেই। যখন আমরা
দ্বীনকে জীবন্ত করার ও শক্তিশালী
করার কাজে তৎপর হবো
তখন অপমান ও গোলামীর বেড়া
এক এক করে ভেঙ্গে
পড়তে থাকবে। এমনভাবে ভাঙ্গতে শুরু হবে যে,
মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর পথের পথিকও বিস্ময়
বোধ করবে।
পোস্ট ট্যাগঃ
দানের ফজিলত ও ঘটনা
মসজিদে দানের ফজিলত ও ঘটনা
দানিয়াল নবীর ঘটনা
দানের ঘটনা
দানের গুরুত্ব ও ফজিলত
দানের ফজিলত pdf
সাহাবীদের দানের ঘটনা
দানের বিরল ঘটনা
দানের ফজিলত হাদিস
দানের ফজিলত