ইসলামের মূল ভিত্তি কয়টি
ইসলামের মূল ভিত্তি কয়টি
ইসলামের
মূল ভিত্তি মূলত পাচটি যথা ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ ও যাকাত। ইসলামের তাৎপর্য ও ফজিলত
সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।
হযরত
মুয়াবিয়া বিন হায়দা আল
কুশায়রী রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজের ইসলাম
কবুল করার কাহিনী বর্ণনা
করে বলেছেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে
জানতে চাইলাম, 'আমাদের প্রভু কোন পয়গাম দিয়ে
আপনাকে পাঠিয়েছেন এবং আপনি কোন
দ্বীন এনেছেন?'
তিনি
বললেন, 'আল্লাহ আমাকে দ্বীন ইসলাম দান করে পাঠিয়েছেন।
আমি
জিজ্ঞেস করলাম, 'দ্বীন ইসলাম কি?'
“তিনি
বললেন, ইসলাম হলো এই যে,
তুমি তোমার সমস্ত সত্ত্বা আল্লাহতে সোপর্দ করে দেবে এবং
অন্যান্য উপাস্যকে ত্যাগ করবে। আর নামায কায়েম
করবে ও যাকাত দেবে।”
(আল ইসতীআব)
- ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসের তাৎপর্য হলো, নিজেকে, নিজের শরীর ও জীবনকে, সমস্ত শক্তি ও যোগ্যতাকে অর্থাৎ নিজের সবকিছুকে আল্লাহতে সোপর্দ করে দেয়ার নামই হলো ইসলাম। এটাই তাওহীদের অর্থ। এটা হলো এর ইতিবাচক দিক।
- এর নেতিবাচক দিক হলো এই যে, মানুষ নিজেকে, নিজের জীবনকে, নিজের শক্তি ও যোগ্যতাকে অর্থাৎ নিজের সমগ্র জীবনকে অন্য কারো কাছে সোপর্দ করতে অস্বীকার করুক, অন্য সবকিছু থেকে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে নিক, অন্য কাউকে কোন দিক দিয়েই সামান্যতমও আল্লাহর সাথে শরীক না করুক।
- অন্য কথায়, নিজের কোন জিনিসকে যেন নিজের মনে না করে বরং তা যেন আল্লাহর আমানত মনে করে। নিজের সবকিছু আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে দেবার পর সে যদি তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সে সব ব্যবহার করে তবে তার অর্থ হয়, তার নিজ আত্মসমর্পণের প্রতিশ্রুতি সঠিক নয়।
এ
হাদীস থেকে দ্বিতীয় যে
কথা জানা গেল তা
হলো, নামায ও যাকাত মক্কী
যুগেই ফরয হয়ে গিয়েছিল,
অবশ্য এর বিস্তৃত রূপ
পরবর্তী সময়ে দান করা হয়েছে।
কালেমা তাইয়েবা বাংলা
হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন চাচাকে বললেন,
'হে চাচা, আমি সকলের কাছে
কেবল মাত্র একটি কালেমার দাবী
করি। এ কালেমা হলো
এমন যে, যদি এরা
এটাকে স্বীকার করে নেয় তবে
এর বদৌলতে সমগ্র আরব এদের অধীনে
এসে যাবে এবং অনারব
জাতি এদের জিযিয়া দান
করবে।'
নবী
করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ কথা শুনে
সবাই বিস্মিত হলো। তারা বলল,
'তুমি একটি কালেমার কথা
বলছো? তোমার বাপের কসম, আমরা দশটি
কালেমা স্বীকার করার জন্য প্রস্তুত।
বল সে কালেমা কি?'
'আবু
তালিবও জিজ্ঞেস করলেন, 'হে ভাইপো, বলো
তো তোমার সে কালেমাটি কি?
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন, 'সে
কালেমাটি হলো লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ,
আল্লাহ
ছাড়া
কোন
ইলাহ
নেই!
(মুসনাদে আহমদ, নাসাঈ)
- ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসও মক্কী যুগের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাওহীদের এ বাণী 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ' কেবলমাত্র এক কালেমা নয়, বরং এর দ্বারা ইসলামের সম্পূর্ণ জীবন ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে, যা মানুষের জীবনের সমস্ত দিককেই পরিব্যপ্ত করে নেয়।
- কেবল নামায, রোযা কায়েম করা নয় বরং এ বাণী রাজনৈতিক ব্যবস্থাকেও পাল্টে দিতে সক্ষম। এ জন্যই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে পেরেছেন, এর ফলে সমগ্র আরব তোমাদের শাসনাধীনে এসে যাবে ও অনারব জাতি তোমাদেরকে জিযিয়া দেবে। রাজনৈতিক ক্ষমতা ছাড়া এমনটি কি কখনো সম্ভব?
যখন
কোরাইশ নেতাগণ তাদের সব থেকে বড়
সর্দার আবু তালিবের কাছে
রাসূলের দাওয়াতের ব্যাপারে অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন তখন তিনি এ
কথা বলেছিলেন। তারা মনে করেছিল,
অভিযোগ পেলে আবু তালিব
নিজের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক প্রভাব
সৃষ্টি করে এ দাওয়াতকে
বন্ধ করে দেবেন।
এ
রকম আরেকটি ঘটনায় চাচা আবু তালিবকে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, “হে চাচা, যদি
আমার ডান হাতে সূর্য
এনে দেয়া হয় আর বাম
হাতে চাঁদ, তবুও আমি যে
দ্বীনের দাওয়াত দিচ্ছি যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাকে বিজয়ী না
করবেন বা আমার মৃত্যু
না ঘটবে ততক্ষণ পর্যন্ত
আমি আমার এ দাওয়াত
বন্ধ করতে পারি না।
এখন
প্রশ্ন হলো, দ্বীনের বিজয়-এর অর্থ কি?
কুরআন মজীদে যেখানে, যেখানে এ শব্দ ব্যবহৃত
হয়েছে সেখানে এর অর্থ হলো
রাজনৈতিক বিজয়। (সূরা ফাতেহার আয়াত
নং ২৮, সূরা সাফ-এর আয়াত নং
৯, সূরা তাওবার আয়াত
নং ৩৩ দেখুন।)
ইসলামের দাওয়াত
দুনিয়া
ও
আখেরাত
উভয়
স্থানের
সৌভাগ্য
নিশ্চিত
করে
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরায়ইশ নেতাদের কথা শুনে বলেন, 'তোমাদের যে সব জিনিষ আমাকে দিতে চাইছো, তার আদৌ কোন লোভ আমার নেই।
আমি তোমাদের যে দাওয়াত দিচ্ছি তার উদ্দেশ্য কখনও এ নয় যে, আমি ধন-দৌলত সঞ্চয় করতে চাই বা বা যশ ও সুনাম অর্জন করতে চাই বা তোমাদের উপর শাসন চালাতে চাই। বরং আল্লাহতায়ালা আমাকে তোমাদের কাছে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন এবং আমাকে আপন কিতাব দান করেছেন। তিনি আমাকে তোমাদের ভ্রান্ত জীবনপদ্ধতির পরিণতির ব্যাপারে সাবধান করে দিতে এবং এ দাওয়াত কবুল করার ফলে যা পাওয়া যাবে তার সুসংবাদ দান করার জন্যে পাঠিয়েছেন। তাই আমি তোমাদেরকে আমার রবের পয়গাম পৌঁছে দিয়েছি।
আর এর আগেও
তোমাদের মঙ্গল কামনা আমার লক্ষ্য ছিল
এবং আজো আছে। তোমরা
যদি আমার দাওয়াত কবুল
করো তবে এ দুনিয়া
ও আখেরাত উভয়স্থানেই তোমরা সৌভাগ্যের অধিকারী হবে।” (আল বেদায়াহ ওয়ান
নেহায়াহ, ৩য় খন্ড)
- ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসও মক্কী যুগের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং এর শেষ বাক্য চিন্তা করার মত। যদি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াত কেবল ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো এবং জীবনের সমগ্র সমস্যা ও বিষয়ের আলোচনা না করতো এবং কেবলমাত্র আখেরাত গড়ার জন্যে হতো তাহলে আখেরাতের সঙ্গে এ দুনিয়ার কথা যে বলা হয়েছে তার কি অর্থ হয়?
- উভয় স্থানের সৌভাগ্যই বা কোন দিক দিয়ে হতে পারে? কেবলমাত্র কি এ দিক দিয়ে যে, কিছু নেক লোক তৈরী হয়ে যাবে? না, তা নয়। বরং এর থেকে অবশ্যই আরো অধিক কিছু পাওয়ার কথাই এখানে বলা হয়েছে। দ্বীনের দাওয়াত সমগ্র জীবনের জন্য এবং জীবনের সবদিকের উপরই পরিব্যপ্ত। এই দাওয়াত দুনিয়ার কল্যাণ ও আখেরাতের চিরন্তন সাফল্যের জামানত দান করে।
ইসলামের সঠিক
পরিচয়
তুলে
ধরার
একটি
আদর্শ
ভাষণ
নবী
করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র স্ত্রী উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা (আবিসিনিয়ায় নাজ্জাশীর দরবারে যে ঘটনা ঘটে
তার উল্লেখ করে) বর্ণনা করেছেন,
“তিনি বলেন, 'জাফর ইবনে আবি
তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু মুসলমানদের প্রতিনিধি
হিসেবে নাজ্জাশীর দরবারে উপস্থিত হন এবং ইসলামের
এই পরিচয়মূলক ভাষণ দান করেন।
তিনি
বলেন, 'হে বাদশাহ! আমরা
অজ্ঞানতার জীবন-যাপন করছিলাম।
আমরা নিজের হাতে গড়া প্রাণহীন
মূর্তিকে পূজা করতাম। মৃত
পশু খেতাম। সব রকম 'বেহায়া'
কাজ ও ব্যভিচার করতাম।
আত্মীয়-স্বজনের অধিকার কেড়ে নিতাম। প্রতিবেশীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতাম। আমাদের প্রত্যেক শক্তিশালী ব্যক্তি দুর্বলের উপর অন্যায় অবিচার
করতো।
এ রকম অবস্থায় আমরা দীর্ঘদিন অতিবাহিত করি। এমন সময় আল্লাহ আমাদের কাছে আমাদেরই মধ্যে থেকে একজনকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করলেন। যাঁর বংশীয় উচ্চ মর্যাদা, সত্যবাদীতা, আমানতদারী, সততা এবং যাঁর পবিত্র চরিত্রের সবকিছুই আমাদের খুব ভালভাবে জানা ছিল।
তিনি আমাদেরকে মহান
ও পরাক্রান্ত আল্লাহর দিকে আহ্বান করেন,
যেন আমরা কেবলমাত্র তাকেই
স্বীকার করি, তাঁকেই আপন
উপাস্য বানাই এবং সেসব পাথর
ও দেবদেবীকে পরিত্যাগ করি যেগুলোকে আমরা
ও আমাদের পূর্ব পুরুষগণ পূজা করছিলাম।
তিনি
আমাদেরকে সত্য কথা বলার,
আমানতে খেয়ানত না করার, আত্মীয়-স্বজনদের হক্ক আদায় করে
দেয়ার, প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার, নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ এবং রক্তপাত করা
থেকে বিরত থাকার শিক্ষা
দান করেছেন। তিনি আমাদের ব্যভিচার
করতে, মিথ্যা সাক্ষী দিতে, ইয়াতীমদের সম্পদ কুক্ষিগত করতে এবং পবিত্র
মহিলাদের উপর দুর্নাম করতে
নিষেধ করেছেন।
আমাদেরকে
তিনি একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে প্রভূ
হিসাবে মেনে নিতে নিষেধ
করেছেন। তাঁর সাথে কাউকেই
বিন্দুমাত্র শরীক না করার
হুকুম দিয়েছেন এবং তিনি আমাদেরকে
নামায পড়ার ও যাকাত দেয়ার
আদেশ দিয়েছেন।” (মুসনাদে আহমদ)
- ব্যাখ্যাঃ এ হলো ইসলামী দাওয়াতের বিস্তৃত পরিচয়- যা জাফর ইবনে আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু নাজ্জাশী এবং তাঁর সভাসদণের সামনে দিয়েছিলেন। যদি ইসলামের দাওয়াত একান্ত সাদামাটা অস্পষ্ট অজ্ঞাত হতো তবে এত বিশদ বিবরণের আদৌ কোন প্রয়োজন ছিল না।
- কেবলমাত্র এতটুকু বলাই যথেষ্ট হতো যে, আমরা তো কেবল 'আল্লাহ আল্লাহ' বলার লোক, জীবনের অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। কোরায়শ সর্দারগণ অকারণে আমাদেরকে নিজের দেশ থেকে বিতাড়িত করে দিয়েছেন।
ক্ষমতাসীনরা ইসলামের
দাওয়াত
পছন্দ
করেন
না
হযরত
আলী ইবনে আবু তালিব
রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
“মাফরুক বিন আমর আশ
শায়বানী নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন 'হে কোরায়শ গোত্রের
ব্যক্তি, আপনি কিসের প্রতি
আহ্বান জানাচ্ছেন?'
তখন
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তার দিকে এগিয়ে
যান এবং বলেন, 'আমি
তোমাদের আহ্বান জানাচ্ছি যে, তোমরা সাক্ষ্য
দান করো, আল্লাহ ছাড়া
আর কোন উপাস্য নেই
এবং আমি আল্লাহর রাসূল'।
'মাফরুক
তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, “হে কোরাইশ, আপনি
আর কিসের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন?
তখন
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে এ পর্যন্ত
(সুরা আনআমের ১৫১ থেকে ১৫৩
পর্যন্ত)
আয়াতসমুহ
পড়ে শোনান।
তারপর
মাফরুক বলেন, 'আর কিসের প্রতি
আহ্বান জানাচ্ছেন?'
তিনি
(সুরা আন নহলের ৯০
আয়াত) সম্পূর্ণ পড়ে শোনান। তখন
মাফরুক বললেন, 'আল্লাহর কসম, হে কোরায়শ,
আপনি উচ্চ নীতি নৈতিকতা
ও সর্বোত্তম কাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন'। (আল বেদায়াহ,
৩য় খন্ড )
- ব্যাখ্যা: এ ঘটনাও মক্কী যুগের ঘটনা। হজ্জ্বের সময় হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত কখনও একাকী আবার কখনও হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সঙ্গে নিয়ে প্রত্যেক গোত্রের তাঁবুতে গিয়ে তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন। এক বছর হজ্জ্বের সময় শায়বান গোত্রের লোক এলে তিনি হরযত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ও হযরত আলী রাদিয়াল্লাহুকে সঙ্গে নিয়ে গোত্রের সর্দারদের কাছে উপস্থিত হন।
- সেই সর্দারদেরই একজন ছিলেন মাফরুক। তিনি হযরত আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর পূর্ব পরিচিত ছিলেন। প্রারম্ভিক আলোচনা এদের দু'জনের মধ্যেই হয়। তারপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার সঙ্গে ও অন্যান্য লোকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
তিনি
তাদের বলেন, “ইনি আল্লাহর রাসূল,
যাঁর কথা তোমরা শুনে
থাকবে।'
তারা
বললেন, “হ্যাঁ, আমরা এর কথা
শুনেছি।' তখন মাফরুক রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করেন,
'আপনার দাওয়াত কি?'
এ ব্যাপারে তিনি সূরা আন'আম এর ১৫১ নয় আয়াত থেকে ১৫৩ নং আয়াত পর্যন্ত পড়ে শোনান। এতে বিশেষভাবে তাওহীদ ও পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার শিক্ষা দান করা হয়েছে। আর দারিদ্রের ভয়ে শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া ইয়াতীমের সম্পদ হরণ ও ওজনে কম দিতে নিষেধ করা হয়েছে। আর বলা হয়েছে, যদি কিছু বলো, তাহলে ন্যায় কথা বলো।
যদি
সে ন্যায় কথা আত্মীয়-স্বজনদের
বিরুদ্ধে যায় তবু। তাছাড়া
আরো বলা হয়েছে যে,
'আল্লাহর সঙ্গে বন্দেগীর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করো ৷
সূরা আন'আম হলো মক্কী যুগের সূরা।
এতে চমৎকার করে
দ্বীনের বুনিয়াদী শিক্ষা সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
এতে কেবল ইবাদতের বিষয়েই
বলা হয়নি; বরং জাহেলী জীবন-ব্যবস্থার ত্রুটিসমূহকে তীব্রভাবে সমালোচনা করা হয়েছে। ইসলামী
সমাজ ব্যবস্থা যে ভিত্তির ওপর
স্থাপিত হবে তার উল্লেখ
করে বলা হয়েছে, তাহলেই
মানবজাতি সব রকমের সুখ,
শান্তি এবং মঙ্গল ও
সৌভাগ্য লাভ করবে। যদি
ইসলামী দাওয়াত কেবলমাত্র ইবাদতের মধ্যে সীমিত হতো তবে এ
সমস্ত বুনিয়াদী নীতি সেখানে বর্ণনা
করার কোন প্রয়োজন ছিল
না।
পরবর্তীকালে
এসব ভিত্তির ওপরই ইসলামী কল্যাণ
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সূরা বনী ইসরাইলের
তৃতীয় রুকুতে এ নীতি আরো
বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। আর এ সূরা
ও মক্কী যুগের সূরা।
দ্বিতীয়টি
হলো সূরা নাহাল-এর
আয়াত। ওটাও মক্কী যুগের
সূরা (আয়াত নং-৯০)।
এই আয়াতেও ইসলামের দাওয়াতকে বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে।মাফরুক
বিন আমর এ দাওয়াতের
কথা শুনে বলে উঠলেন,
(‘যে দাওয়াত আপনি দিচ্ছেন সম্ভবতঃ
তা শাসকদের পছন্দ হবে না। ')
এখন প্রশ্ন হলো, যদি দাওয়াত কেবল ব্যক্তিগতভাবে কিছু নীতি মেনে চলার দাওয়াত হতো এবং তা মানবজীবনের সকল বিভাগকে যদি নিজ আওতায় না গ্রহণ করতো এবং পৃথিবীর সমস্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে স্বীয় নীতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত না করতে চাইতো তবে এর উপর বাদশাহ ও ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের অসন্তুষ্ট হওয়ার কোন কারণ থাকতো না।
সুতরাং এ কথা সুস্পষ্ট
যে, এ দাওয়াত কোন
সাদামাটা কথা নয়। এ
দাওয়াততো মানব জীবনের সমস্ত
ব্যবস্থাকে নতুনভাবে আল্লাহর নিয়ম-নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত করার
দাওয়াত।
পোস্ট ট্যাগঃ