কিয়ামতের ৪১ টি আলামত
কিয়ামতের ৪১ টি আলামত
কিয়ামতের ৪১টি আলামতের মধ্যে সংক্ষিপ্ত আকারে কিছু উল্লেখ করা হলো।
যখন তুমি দেখবে স্ত্রীলোক তার মালিকের কর্তা হয়ে গেছে তখন বুঝবে কেয়ামত নিকটবর্তী।
আর তুমি যখন দেখবে খালি পা, নগ্ন দেহ, বধির ও বোবা লোকদের হাতে রাষ্ট্র ক্ষমতা, তখন বুঝবে কেয়ামত নিকটবর্তী।
আর যখন তুমি দেখবে, রাখালরা উঁচু প্রাসাদ তৈরীর কাজে পরস্পর প্রতিযোগিতা করছে তখন এটাকেও কেয়ামতের আলামত বলে গণ্য করবে।
কিয়ামতের দিন
রাসূলে
মকবুল
যাদের
জন্য
সুপারিশ
করবেন
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করছেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করি, 'হে আল্লাহর রাসূল, উম্মতের শাফায়াতের ব্যাপারে আল্লাহ আপনাকে কি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন?' তিনি বললেন, 'যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর কসম, আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, এ ব্যাপারে তুমিই সর্ব প্রথম আমাকে জিজ্ঞেস করবে। কারণ আমি জানি, তোমার মধ্যে জানার লোভ খুব বেশী।
যাঁর হাতে আমার জীবন
তাঁর কসম, আমার উম্মতকে
জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা আমার মধ্যে সব থেকে বেশী।
মানুষ উঁচু মর্যাদা লাভ
করুক, এটা নিয়ে আমি
মোটেও চিন্তিত নই, বরং আমার
চিন্তা তারা জান্নাত লাভ
করুক। যে সব লোক
ইখলাসের সঙ্গে এই সাক্ষ্য দেয়,
আল্লাহ
ছাড়া
আর
কোন
মাবুদ
উপাস্য
নেই
এবং
মুহাম্মদ
তাঁর
রাসূল,
আর
সাক্ষ্য
এমন
ভাবে
দেয়
যে,
তার
অন্তর
তার
কথার
সত্যতা
প্রমাণ
করে,
তাহলে
আমি
অবশ্যই
তার
জন্য
সুপারিশ
করবো।”
(তারগীব ও তারহীব, ইবনে
হাব্বান ও মুসনাদে আহমদ)
- ব্যাখ্যাঃ এর অর্থ হলো, পরিপূর্ণ একীন ও দৃঢ়তার সাথে আল্লাহ ও রাসূলকে বিশ্বাস করতে হবে। বিশ্বাসের প্রমাণ দিতে হবে বাস্তব কাজের মাধ্যমে। এমন দৃঢ় ঈমানদারদের জন্যই রাসূলে মকবুল তার নাজাতের জন্য কাল হাশরের মাঠে সুপারিশ করবেন।
হযরত
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে
যারা
কবীরা
(বড়
বড়)
গুনাহ
করেছে
আমি
তাদের
জন্যেও
সুপারিশ
করবো।'
(তারগীব ও তারহীব, আবু
দাউদ, বাযযার, তাবরানী, ইবনে হাব্বান ও
বায়হাকী)
- ব্যাখ্যাঃ এর অর্থ হলো, এক ব্যক্তি পূর্ণ ইখলাসের সঙ্গে ঈমান এনেছে ও কালেমা পড়েছে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত জীবনভর বড় বড় গুনাহ করে তওবা না করেই লোকটি মারা যায়। এমতাবস্থায় এটা স্পষ্ট যে, সে জান্নাতে যেতে পারবে না এবং তাকে জাহান্নামের আগুনেই নিক্ষেপ করা হবে। জীবনভর গুনাহ করার ফলে যদি লোকটির ঈমানও নিঃশেষ হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে তার জন্য সুপারিশ করার অনুমতি হবে না এবং তিনিও সুপারিশ করবেন না। আর তখন তাকে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে নিয়ে যাবার প্রশ্নই উঠে না।
তবে হ্যাঁ, যদি লোকটি জীবনভর গুনাহ করে থাকে এবং তার ফলে তাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেয়া হয় আর মহাজ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ আল্লাহর এটা জানা থাকে যে, তার অন্তরে তখনো ঈমান অবশিষ্ট ছিল, একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায়নি, যদিও তা অতি সামান্য, তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সুপারিশ করার অনুমতি দেয়া হবে। তখন তিনি সুপারিশ করবেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে বের করে
জান্নাতে
পৌঁছে দেয়া হবে। কারণ আল্লাহর
কাছে ঈমানের মূল্য অনেক বেশী। কোন্
জাহান্নামীর মধ্যে ঈমান আছে ও
কারও ঈমান গুনাহ করতে
করতে নিঃশেষ হয়ে গেছে তা
মহাজ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ আল্লাহ
ছাড়া আর কেউ জানে
না। তাই খুব শীঘ্রই
সজ্ঞান অবস্থায় তওবা করা ও
আপন প্রভুর দিকে ফিরে আসা
প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য।
এই
হাদীস এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য হাদীস, যাতে শাফায়াতের বিষয়বস্তু বর্ণনা করা হয়েছে,
সবগুলোই খুব বেশী ভয় প্রদর্শনকারী হাদীস। কিন্তু আফসোস! এসব হাদীসকে আমল না করার মানসিকতাই
বেশী লোকের মধ্যে বর্তমান। অনেকে এ হাদীসের ভ্রান্ত ব্যাখ্যা করে নিজের আমলকে ভুল পথে
পরিচালিত করেছে। এসব লোকের চোখ যেদিন আখেরাতের প্রকৃত চিত্র দেখতে পাবে সেদিন তারা
কাঁদবে এবং কাঁদতেই থাকবে।
দুই মুসলমানের পক্ষে তিন দিনের বেশী সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন রাখা নাজায়েয
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দুজন মুসলমানের পক্ষে তিন দিনের বেশী সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে রাখা ঠিক নয়। যদি তার থেকে বেশী দিন সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয় তাহলে তারা কখনও জান্নাতে একত্রিত হবে না। আর তাদের মধ্যে যে প্রথমে সালাম করে সম্পর্ক স্থাপন করবে তার গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
আর যদি সে মীমাংসার জন্যে হাত বাড়াতে
চায় ও অন্যজন তার সালাম গ্রহণ না করে এবং সম্পর্ক স্থাপন না করে তাহলে ফেরেশতারা সালামকারীর
সালামের জবাব দেবেন, আর সালামের জবাব যে দেয়নি, শয়তান তার সঙ্গী হবে।”
(তারগীব ও তারহীব)
- ব্যাখ্যাঃ যদি কোন দ্বীনী কারণ না থাকে তাহলে তিন দিনের বেশী সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকা জায়েয নয়। যদি কোন দ্বীনী কারণ থাকে তাহলে তার থেকে বেশী দিন পর্যন্ত সম্পর্ক ছিন্ন করা যেতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একমাস আপন স্ত্রীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে রেখেছিলেন। কারণ তাঁর সামনে শিক্ষা দানের উদ্দেশ্য ছিল। সে ঘটনার বিস্তৃত বিবরণের প্রয়োজন এখানে নেই।
অসিয়ত করার গুরুত্ব
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কোন ব্যক্তি সত্তর বছর ধরে নেক কাজ করতে থাকে। কিন্তু মরার সময় ধন-সম্পদের বিষয়ে ভুল অসীয়ত করে মন্দ কাজের মধ্যে মৃত্যুবরণ করে, ফলে সে জাহান্নামে চলে যায়।
- ব্যাখ্যাঃ সত্তর বছর ধরে মন্দ কাজ করেছে এমন ব্যক্তি তওবা করে নেক জীবন যাপন করা শুরু করে দেয় এবং এমন নেককার হয়ে যায় যে, নিজের ধন-সম্পদের বিষয়ে অন্যায় অসীয়ত করে না। এরকম ব্যক্তি জান্নাতে চলে যায়। এর অর্থ এমনটি করা ঠিক নয় যে, সে জীবনভর বড় বড় গুনাহ করতে থাকে এমনকি মরার সময় পর্যন্তও তওবা করে না, কেবল এটুকু ন্যায়মূলক অসীয়ত করার জন্যেই সে জান্নাত পেয়ে যাবে।
বিদ্রুপকারীর শাস্তি
হযরত হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু (হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাতী) বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যে সব লোক দুনিয়াতে অন্যের প্রতি বিদ্রুপ করতো আখেরাতে তাদের সামনে জান্নাতের এক দরজা খুলে তাদের বলা হবে, 'এসো (এর মধ্যে প্রবেশ করো)। তারা দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী নিয়ে দরজার দিকে যাবে। যখন তারা দরজার কাছে পৌঁছবে তখন তাদের মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে।
তারপর
তাদের সামনে অন্য এক দরজা খুলে দেয়া হবে এবং বলা হবে, ‘এসো, এসো। তারা পেরেশানী নিয়ে
সেদিকে যাবে। যখন তারা দরজার কাছে পৌঁছবে তখন সে দরজাও বন্ধ করে দেয়া হবে। বার বার
এ রকম হতে থাকবে। এমনকি শেষে এমন অবস্থা দাঁড়াবে যে, তাদের সামনে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত
হবে, তাদের ডাকা হবে, কিন্তু তারা হতাশার কারণে সেদিকে আর যাবে না।”
(তারগীব ও তারহীব, বায়হাকী)
জাহান্নামের সর্বনিম্ন শাস্তির নমুনা
হযরত
নোমান ইবনে বশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
বর্ণনা করেছেন, “তিনি বলেছেন, 'জাহান্নামে যে ব্যক্তিকে সব থেকে কম শাস্তি দান করা
হবে, তার দুই পায়ের তলায় জাহান্নামের আগুনের দুই অঙ্গার রেখে দেয়া হবে। এর ফলে কোন
চুলোর উপর ডেকচির পানি যেমন ফুটতে থাকে তেমনি তার মাথার ঘিলু টগবগ করে ফুটতে থাকবে।”
(তারগীব ও তারহীব, বোখারী ও মুসলিম)
যেদিন আপন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ মানুষের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য
হযরত
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
কাছে বসেছিলাম। এমন সময় তিনি হাসলেন। তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমরা জানো কেন
আমি হাসলাম?'
আমরা
বললাম, 'আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সবচে ভাল জানেন।' তিনি বললেন, 'আমার এ জন্যে হাসি পেয়েছে
যে, কিয়ামতের দিন এক অভিযুক্ত ব্যক্তি আল্লাহকে বলবে, 'হে আমার প্রভু, আমার উপর কোন
জুলুম হবে না?”
আল্লাহতায়ালা
বলবেন, 'না, আজ তোমার উপর কোন জুলুম হবে না।' তখন সে বলবে, ‘আজ আমি কাউকে আমার বিরুদ্ধে
সাক্ষী দেয়ার অনুমতি দেবো না। আমার সাক্ষী আমি নিজেই দেবো।'
তখন
আল্লাহতায়ালা বলবেন, 'আজ তুমি নিজেই নিজের হিসেব নেওয়ার জন্যে যথেষ্ট এবং তোমার আমলনামা
তৈয়ারকারী ফেরেশতারাই সাক্ষী দেয়ার জন্যে যথেষ্ট।'
হুজুরসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারপর তার মুখ বন্ধ করে দেয়া হবে এবং তার
শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আদেশ দেয়া হবে, তোমরা তার কাজের সাক্ষ্য দান করো।' তখন সব
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তার প্রত্যেক কাজের সাক্ষ্য দান করবে। তারপর তার মুখ খুলে যাবে এবং
বলার শক্তি ফিরে আসবে।
তখন
সে নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে তিরস্কার করতে করতে বলবে, ‘তোমাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত
হোক, আমি তো দুনিয়ায় তোমাদের রক্ষা করে এসেছি আর তোমরা আজ আমার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিলে।'
- ব্যাখ্যাঃ এর অর্থ হলো, আমি দুনিয়াতে তোমাদের মোটা তাজা করার জন্যে হারাম ও হালালের প্রভেদ করিনি, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির কথা মনে স্থান দেইনি আর তোমরাই ঠিক সময়ে ব্যথা দিলে, আমাকে অপরাধী সাব্যস্ত করে ছাড়লে?
গীবত করার পরিনতি
হযরত
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যে রাতে মিরাজে যান সে রাতে জাহান্নাম দেখেন। সেখানে তিনি দেখেন যে, কিছু লোক পঁচা
মৃতদেহ খাচ্ছে। তিনি জিজ্ঞেস করেন, “হে জিবরাঈল! এরা কারা?' তিনি (জিবরাঈল আলাইহিস
সালাম) বলেন, 'এ সব লোক হলো তারা, যারা মানুষের অনুপস্থিতিতে তাদের গোস্ত খেত (অর্থাৎ
তাদের গীবত করতো)।” (তারগীব ও তারহীব, আহমদ)
পোস্ট ট্যাগঃ
কিয়ামতের ৪১ টি আলামত
কিয়ামতের ৪১ টি আলামত pdf
কিয়ামতের ১৪১ টি আলামত
৪১ টা আছে আলামত
কিয়ামতের ১৪১ টি আলামত pdf
কিয়ামতের ১৪১ টি আলামত কি কি
কিয়ামতের ১৪১ আলামত