পুরুষের নামাজের সঠিক নিয়ম
পুরুষের নামাজের সঠিক নিয়ম
হযরত
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,
“নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'দুনিয়ার তিনটি জিনিস আমার খুবই প্রিয়,
নিজের স্ত্রী, সুগন্ধি ও নামাজ। নামাজ
আমার চোখের শীতলতা দানকারী।” (নাসাঈ)
- ব্যাখ্যাঃ এর অর্থ হলো, দুনিয়ার আকর্ষণীয় জিনিসের মধ্যে স্ত্রী ও সুগন্ধ এ দুটি জিনিস আমার প্রিয়। কিন্তু নামাজ এ দু'জিনিস থেকে আমার কাছে অধিকতর প্রিয়। নামাজ হলো আমার আত্মার জীবিকা ও হৃদয়ের আনন্দ। কারণ আল্লাহর স্মরণ ও একান্তভাবে তাঁর কাছে আবেদন-নিবেদন ও তাঁর সঙ্গে কথোপথন করার নাম হলো নামাজ। এ একই সত্য অন্য এক হাদীসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে, ‘বেলাল, আমার শান্তির (নামাজের) ব্যবস্থা করো।
রাসূলুল্লাহর নামাজ
হযরত
মুতাররেফ ইবনে আবদুল্লাহ শিখীর
রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
“আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে
দেখি তিনি নামাজ পড়ছেন।
আর তাঁর বক্ষ থেকে
রান্নার হাঁড়ি থেকে নির্গত শব্দের
মত শব্দ বের হচ্ছে।”
(মিশকাতুল মাসাবীহ)
নামাজে কিরআত
পড়ার
তারতিল
হযরত
উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরআন মজীদ *আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামিন* পড়ে থেমে
পড়তেন।"
তারপর
*আর রহমানির রহিম* পড়তেন এবং
থেমে
যেতেন।
অতঃপর
এভাবেই
(নামাজ
পড়ে
শেষ
করতেন)।”
(তিরমিযী)
- ব্যাখ্যাঃ এর অর্থ হলো, উচ্চ শব্দের নামাজে (মাগরিব, এশা এবং ফজরে) হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুরা ফাতিহার প্রত্যেক আয়াত পড়ে থেমে যেতেন এবং অন্য সূরা পড়ার সময়ও সাধরাণতঃ প্রত্যেক আয়াতের পরে থেমে যেতেন। তিনি কিছু কিছু রমযানী হাফিযদের (যারা রমযান মাসে তারাবীর নামাজে খুব তাড়াতাড়ি কোরআন পড়ে শেষ করেন) মত খুব তাড়াতাড়ি কোরআন পড়তেন না, নামাজের মধ্যেও না এবং নামাজের বাইরেও না।
- হযরত ইয়ালা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেছেন, “আমি হযরত উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে জিজ্ঞেস করি, 'নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে কোরআন পড়তেন?' তিনি বললেন, 'তাঁর পড়া পরিস্কার ও স্পষ্ট হতো। প্রত্যেক হরফ আলাদা আলাদা শুনতে পাওয়া যেতো।” (তিরমিযী)
নামাজ যাতে
কাযা
না
হয়
সে
জন্য
সতর্কতা
অবলম্বনের
দৃষ্টান্ত
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফরে কোথাও
রাতে অবস্থান করতেন, তখন যদি রাত
অধিক হয়ে যেতো তাহলে
ডান পাশে শুয়ে পড়তেন।
আর যদি ফজরের কিছু
পূর্বে কোথাও অবস্থান করতেন তা হলে হাতের
তালুতে মাথা রেখে শুয়ে
পড়তেন।” (মুসলিম)
- ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ তিনি শুতেন না, হাত উঁচু করে তার উপর মাথা রাখতেন। তিনি এ জন্যে এ রকম করতেন যে, রাতব্যাপী পরিশ্রান্ত হয়েছেন এবং সকাল হতে বেশী দেরী নেই, যদি কোন পাশে শুয়ে পড়েন তাহলে ফজরের নামাজ কাযা হয়ে যাবার আশংকা থাকে। এ জনে তিনি এভাবে শুতেন, যাতে আরামদায়ক ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ায় কোন ভয় থাকতো না।
তাহাজ্জুদের নামাজ
নবী
করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের নামাজে এতক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, দুই পা
ফুলে যেতো। কোন এক ব্যক্তি
জিজ্ঞেস করেন, 'আপনি এতো পরিশ্রম
করেন কেন?' তিনি বলেন, 'আমি
কি তাহলে আল্লাহর শোকরগুজার বান্দাহ হবো না?' (বোখারী)
- ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ আল্লাহ আমাকে গুনাহ থেকে পবিত্র করেছেন, এবং নবী বানিয়ে আমার উপর অনুগ্রহ করেছেন। তাঁর এই অনুগ্রহের দাবী হলো, আমি তাঁর অধিক থেকে অধিকতর শোকরগোজার হবো। মোমিন যত বেশী নিয়ামত পায়, তার মধ্যে ততো বেশী শোকরের মনোভাব বৃদ্ধি পায় এবং আল্লাহর বন্দেগীতে সে ততো অধিকতর নিজেকে নিবিষ্ট করে।”
- হযরত আবদ ইবনে আবি কায়েস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ‘রাতে দাঁড়ানো (তাহাজ্জুদ) ছেড়ে দিও না। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ছাড়তেন না। যখন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়তেন বা শরীরে ক্লান্তি এসে যেতো তখন তিনি বসে বসে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেন।” (তারগীব, আবু দাউদ)
কোরআনের আলোকে
চরিত্র
গঠন
হযরত
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন,
“নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের নৈতিক চরিত্র ছিল কোরআন।” (মুসলিম)
- ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ কোরআন মাজীদের মধ্যে যে সব উন্নত নৈতিক শিক্ষা আছে তা সবই তাঁর চরিত্রের মধ্যে পাওয়া যেতো। তিনি ছিলেন কোরআনে বর্ণিত সর্বোত্তম চরিত্রের বাস্তব নমুনা।
রাসূলে মকবুলের
চারিত্রিক
বৈশিষ্ট
হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনিল
আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, বদমেযাজী ছিলেন না, আর তাঁর
মুখ দিয়ে কখনো অশ্লীল বা
মন্দ কথা উচ্চারণ করতেন
না।” (বোখারী, মুসলিম)
হযরত
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
“আমি দীর্ঘ দশ বছর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেবা করেছি কিন্তু
তিনি কখনো আমার কাজে
অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ
করেননি। আমি কোন ভুল
করে বসলেও তিনি জিজ্ঞেস করতেন
না, আমি এমন ভুল
কেন করেছি? আর যে কাজ
আমার করা উচিৎ ছিল
তা যদি আমি না
করতাম তবুও তিনি জিজ্ঞেস
করতেন না, আমি কেন
সে কাজ করিনি।”
বন্ধুর জন্য
ভালবাসা
যাহের ইবনে হারাম রাদিয়াল্লাহু
আনহু নামে এক গ্রামবাসী
সাধারণত যখন গ্রাম থেকে
আসতেন তখন নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য উপহার স্বরূপ
কিছু জিনিস নিয়ে আসতেন। আবার যখন তিনি
আপন গ্রামে ফিরে যেতেন তখন
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামও শহরের কিছু জিনিস উপহার
স্বরূপ তাঁকে দান করতেন।
নবী
করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যাহের আমার গ্রাম্য বন্ধু
এবং আমি যাহেরের শহুরে
বন্ধু।' নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ভালবাসতেন। তিনি কৃষ্ণকায় ব্যক্তি
ছিলেন। একদিন যখন তিনি মদীনায়
নিজের -গ্রামের জিনিসপত্র বিক্রি করছিলেন তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিছন দিক দিয়ে
এসে তাঁকে জাপটে ধরেন। যাহের তাঁকে দেখতে পাননি। তিনি হুজুরের বাহুবন্ধনে
আবদ্ধ থেকেই বললেন, 'তুমি কে? আমাকে
ছেড়ে দাও।'
তারপর
তিনি যখন পিছন দিকে
ঘাড় ফিরিয়ে দেখতে পেলেন, নবীজী তাকে জাপটে ধরেছেন
তখন তিনি পূর্ণ বেগে
চেষ্টা করতে লাগলেন যাতে
তার পিঠ হুজুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের বুকে লেগে থাকে।
তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে লাগলেন, ‘এ
গোলামকে কে কিনবে?' (তিনি
গোলাম ছিলেন না। তবে তাঁর
রং হাবসী গোলামদের মতই কালো ছিল)।
যাহের
রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “হে
রাসূলুল্লাহ্! আমাকে বিক্রি করলে আপনার তেমন
লাভ হবে না। আমাকে
কেউ বেশী দাম দিয়ে
কিনবে না।' হুজুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি দুনিয়ার মানুষের
দৃষ্টিতে কম দামী হলেও
তাতে কিছু যায় আসে
না। আল্লাহর কাছে তোমার দাম
অনেক।” (মেশকাত)