সাইদুল ইসতেগফার
সাইদুল ইসতেগফার
সাইদুল ইসতেগফার বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি। লা ইলাহা ইল্লা আনতা। খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা। ওয়া আনা আলা আহদিকা। ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাতা’তু। আউজু বিকা মিন শাররি মা-সানা’তু। আবুয়ু লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা। ওয়া আবুয়ু লাকা বি জাম্বি। ফাগফিরলী। ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনবা ইল্লা আনতা।
অর্থঃ হে আল্লাহ! একমাত্র আপনিই আমাদের প্রতিপালক। আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। আপনিই আমার স্রষ্টা এবং আমি আপনার দাস। আমি আপনার সঙ্গে কৃত ওয়াদা ও অঙ্গীকারের ওপর সাধ্যানুযায়ী অটল ও অবিচল আছি। আমি আমার কৃতকর্মের সব অনিষ্ট হতে আপানার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমার উপর আপনার দানকৃত সব নেয়ামত স্বীকার করছি। আমি আমার সব গুনাহ স্বীকার করছি। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।
কেননা, আপনি ছাড়া আর
কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।
সাইদুল ইসতেগফার বিষয়ে হাদীস
হযরত
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন,
“যখন বান্দা কোন গুনাহ করে
তখন তার অন্তরে একটি
কাল দাগ পড়ে যায়।
তারপর যদি সে গুনাহ
ত্যাগ করে আর ক্ষমাপ্রার্থী
হয় তবে ঐ দাগ
মুছে ফেলা হয়। কিন্তু
যদি সে গুনাহ করতে
থাকে তাহলে ঐ দাগ বাড়তে
থাকে, এমনকি তার সমস্ত অন্তরে
তা ছেয়ে যায়। এ অবস্থার নাম
হলো 'রান' বা মরীচিকা,
যা আল্লাহ নিজের কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
ইসতেগফার অন্তরকে
পবিত্র
করে
হযরত
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসারাম বলেছেন, 'মানুষের অন্তরে জং ধরে, যেমন
করে তামায় জং লাগে ।
ইসতেগফার (আল্লাহর কাছে আপন গুণাহের
জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা) সেই জং
দূর করে
ছোটখাট গুণাহ
থেকেও
বাঁচো
হযরত
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “হে আয়েশা, সাধারণতঃ
হালকা মনে করা হয়
এমন সব ছোটখাট গুণাহ
থেকেও বাঁচো। কেননা, আল্লাহ ওসবের ব্যাপারেও জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
হযরত
আবু তবীল রাদিয়াল্লাহু আনহু
নিজের ইসলাম কবুল করার ঘটনা
উল্লেখ করে বলেছেন, “আমি
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে
জিজ্ঞেস করি, 'ওই ব্যক্তি সম্পর্কে
আপনার ধারণা কি, যে সব
রকম গুণাহ করেছে। কোনও গুণাহই সে
বাদ দেয়নি এবং সে তার
সমস্ত কামনা বাসনা পূরণ করে নিয়েছে।
এ ব্যক্তির জন্যে কি তওবার দুয়ার
খোলা আছে?'
তিনি
জিজ্ঞেস করলেন, 'তুমি কি ইসলাম
গ্রহণ করবে?
আমি
বললাম, 'হ্যাঁ, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি
যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ
নেই এবং আপনি আল্লাহর
রাসূল।'
তারপর
তিনি বললেন, 'দেখো, ইসলাম গ্রহণ করার পর এখন
থেকে ভাল কাজ করো
এবং মন্দ কাজ ছেড়ে
দাও। তাহলে অতীতে যেসব মন্দ কাজ
করেছো আল্লাহ তাকেই নেকীতে পরিবর্তন করে দেবেন।
আমি
বললাম, 'ইসলাম গ্রহণ করার আগে আমি
অনেক প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছি। অনেক
খারাপ কাজ করেছি; এসব
কি ক্ষমা করে দেয়া হবে?”
তিনি
বললেন, “হ্যাঁ, এসব ক্ষমা করে
দেয়া হবে।
আনন্দের
আতিশষ্যে আমি বলে উঠি,
'আল্লাহু আকবর'। তারপর
আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহানত্ব ঘোষণা
করতে করতে আমি লোকের
দৃষ্টির বাইরে চলে যাই।” (তারগীব
ও তারহীব, বাযযার ও তাবরানী)
খাঁটি তওবা
কবুল
হওয়ার
দৃষ্টান্ত
বনী ইসরাঈলের মধ্যে কিফল নামে এক ব্যক্তি ছিল। সে সব সময় গুণাহর কাজ করে বেড়াতো এবং কখনও তওবা করার অনুভূতি তার মধ্যে জাগতো না। এক সময় তার কাছে এক মহিলা এলো। সে ষাট দীনারের বিনিময়ে তার সাথে ব্যভিচার করতে রাজি করালো মহিলাকে।
কিন্তু ব্যভিচারের ঠিক পূর্ব মূহূর্তে
স্ত্রী-লোকটি কাঁপতে লাগলো এবং কাঁপতে কাঁপতে
কেঁদেই ফেলল। তখন কিফল তাকে
জিজ্ঞেস করল, —তুমি কাঁদছো কেন?
আমি কি জোর করে
তোমাকে এ কাজে বাধ্য
করেছি?”
মেয়েটি
বলল, 'না, কিন্তু এমন
পাপের কাজ আমি এর
আগে আর কখনও করিনি।
একমাত্র অভাবের কারণেই আজ আমাকে এ
পথে নামতে হয়েছে।
কিফল
বললো, 'যখন এখনও পর্যন্ত
এ কাজ তুমি করোনি
তখন আজও এ কাজ
তোমাকে করতে হবে না।'
তারপর সে মেয়েটির কাছ
থেকে সরে আসে এবং
বলে, 'যাও, এই ষাট
দীনারও আমি তোমাকে দিলাম।
আমি আল্লাহর কাছে তওবা করছি,
এখন থেকে কিফল আর
কখনও আল্লাহর নাফরমানী করবে না।
সেই
রাতেই তার মৃত্যু হয়।
সকালে তার দরজায় একথাগুলো
লিখিত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়, মহান ও পরাক্রমশালী
আল্লাহ কিফল-এর গুণাহ
ক্ষমা করে দিয়েছেন।” (মুসনাদে
আহমদ)
ছোট পাপও
ধ্বংসের
কারণ
হতে
পারে
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'তোমরা সে সব পাপকর্ম থেকেও বাঁচো যাকে হালকা ও সাধারণ মনে করা হয়ে থাকে। কারণ মানুষ হালকা গুণাহ করতে করতে এমন অবস্থায় পৌঁছে যায় যে, সে পাপই তাকে ধ্বংস করে দেয়।'
এর উদাহরণ দিয়ে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যেমন কিছু লোক
এক জঙ্গলে গিয়েছে। তারপর যখন রান্না করার
সমস্যা সামনে এলো তখন কাঠ
সংগ্রহের জন্যে সবাই জঙ্গলের মধ্যে
চলে গেল। যখন ওরা
ফিরে এলো তখন সঙ্গে
করে কাঠের বোঝা নিয়ে এলো। এতে
প্রচুর কাঠ জমা হয়ে
গেল এবং সেই কাঠে
আগুন জ্বালিয়ে ওরা রান্না করে নিল।
- ব্যাখ্যাঃ যেমন করে ছোট ছোট কাঠের টুকরো এক সঙ্গে জমা হয়ে পরিমাণে বিপুল হয়ে যায় এবং তা দিয়ে রান্নার কাজ সমাধা হয় তেমনি যখন মানুষ ছোট ছোট পাপ ক্রমাগত করতে থাকে তখন তা একত্রিত হয়ে তার ধ্বংসের কাজটি সম্পন্ন করে।
আল্লাহর অনুগ্রহের
প্রশস্ততা
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন প্রভুর কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন, “আল্লাহপাক নেকী ও বদীকে লিখে রাখেন। যখন কোন ব্যক্তি নেকী করার নিয়ত করে কিন্তু তা সম্পন্ন করতে পারে না তখনও তার আমলনামায় এক নেকী লেখা হয়। আর সে যদি কোন নেকী করার নিয়ত করে ও তা সম্পন্ন করে তাহলে ঐ নেকী আল্লাহর নিকট দশ থেকে সাত শত বা আরো বেশী নেকী লেখা হয়।
আর
কেউ যদি মন্দ কাজ
করার ইচ্ছা করে কিন্তু তা
সম্পন্ন না করে তাহলে
তার আমলনামায় একটি পূর্ণ নেকী
লেখা হয়। যদি সে
মন্দ কাজ করার নিয়ত
করে এবং তা সম্পন্ন
করে, তবে আল্লাহতায়ালা তার
আমলনামায় কেবল একটি বদী
লেখেন, অথবা যদি সে
তওবা করে তবে তা
মুছে দেন। আর ধ্বংস
হয়ে যাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তিই মাত্র আল্লাহর ওখানে ধ্বংস হয়ে যাবে।” (তারগীব
ও তারহীব, বোখারী ও মুসলিম)
- ব্যাখ্যাঃ এ রকম হাদীসকে হাদীসে কুদ্সী বলা হয় যা আল্লাহর সূত্র উল্লেখ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করে থাকেন। এ হাদীসে আল্লাহর অসীম দয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর থেকে বড় দয়ার কথা আর কি হতে পারে যে, একটি নেকীর কাজ আদৌ করা হয়নি কেবলমাত্র করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়েছে কিন্তু তবুও বান্দার আমলনামায় তিনি তা নেকী হিসেবে লেখেন।
- আর সে যদি নেকীর ইচ্ছা করে ও সে কাজ সম্পন্ন করে তাহলে তিনি সেটাকে দশটি নেকী বা তার থেকে বেশী, সাত শত নেকী বা তারো অধিক হিসেবে লেখেন। অন্য দিকে কেউ মন্দ কাজ করার ইচ্ছা করে সে কাজটি সম্পন্ন না করলে আল্লাহর কাছে তা নেকীর কাজ বলে গণ্য হয়ে যায়। আর যদি সে মন্দ কাজের ইচ্ছা করে ও সে কাজটি সম্পন্নও করে, তাহলে মাত্র একটি বদী তার আমলনামায় লেখা হয়; এমনকি সে যদি তওবা করে তাহলে তাকে ক্ষমাও করে দেয়া হয়।
এ
হাদীসের শেষ বাক্যটি হল
সম্পূর্ণ হাদীসের প্রাণ- যার অর্থ হলো
আল্লাহর রহমতের পরিধি অত্যন্ত প্রশস্ত। এমতাবস্থায় কোন দূর্ভাগা ব্যক্তি
যদি একের পর এক
গুণাহ করতে থাকে, জীবনে
কখনও তওবা করার তাওফিক
তার হয় না এবং
এ অবস্থায় মারা যায়- তাহলে
জাহান্নামেই তার ঠাঁই হবে।
যেখানকার জন্য জীবনভর সে
নিজেকে প্রস্তুত করেছে শেষ পর্যন্ত সেখানেই
যেতে হবে তাকে।
কোরআন পাঠ
করার
নিয়ম
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কোরআন ধীরে ধীরে ও পরিষ্কারভাবে পাঠ করো এবং এর ‘গারায়েব’ অনুযায়ী আমল করো। 'গারায়েব'-এর অর্থ হলো- সেসব আহকাম, যা আল্লাহতায়ালা ফরয করে দিয়েছেন এবং সেসব আহকাম, যা করতে আল্লাহতায়ালা নিষেধ করেছেন।” (মেশকাত)
পোস্ট ট্যাগঃ
সাইদুল ইসতেগফার
সাইদুল ইস্তেগফার অর্থ সহ
সাইদুল ইস্তেগফার ফজিলত
সাইদুল ইস্তেগফার ছবি
সাইদুল ইস্তেগফার ভিডিও
সাইদুল ইস্তেগফার বাংলা অর্থসহ
সাইদুল ইস্তেগফার বাংলা অর্থ
সাইয়েদুল ইস্তেগফার অডিও
সাইয়েদুল ইস্তেগফার আরবি ও বাংলা
সাইদুল ইস্তেগফার এর ফজিলত
সাইদুল ইস্তেগফার সাইয়েদুল ইস্তেগফার
সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার
সাইয়েদুল ইস্তেগফার এর দোয়া