স্ত্রীকে খুশি করার মেসেজ
স্ত্রীকে খুশি করার মেসেজ
হযরত
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন,
“আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি আপন চাদর
দিয়ে আমাকে আড়াল করে দিতেন আর
আমি মসজিদে বসে হাবশী লোকদের
যুদ্ধের অনুশীলন দেখতাম। যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তৃপ্ত না
হতাম ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি চাদর দিয়ে
আমাকে আড়াল করে রাখতেন।
সুতরাং
যদি তোমরা কোন কম বয়সের
মেয়েকে বিয়ে করো তাহলে তার
অনুভূতির খেয়াল রেখো। কারণ কম বয়সের
মেয়েদের খেলাধুলা ও চিত্ত বিনোদনের
শখ থাকে।” (বোখারী, মুসলিম)
- ব্যাখ্যাঃ হাবশী গোলামগণ মসজিদের অঙ্গনে বর্ণা ও অন্যান্য অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে যুদ্ধের অনুশীলন করতো। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাদরের আড়াল থেকে তাদের অস্ত্রখেলা দেখতেন। যতক্ষণ মন চাইতো তিনি প্রাণভরে সেই খেলা দেখতেন। যেহেতু হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা অল্পবয়স্ক মহিলা ছিলেন এবং এ বয়সের মেয়েদের অনুভূতি কেমন হয় তা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতেন সে জন্যই তিনি নিজের চাদর দিয়ে আড়াল করে
- তাকে নিয়ে যেতেন যুদ্ধের অনুশীলন দেখতে। এ দ্বারা উম্মতে মোহাম্মদীকে এ শিক্ষাই দেয়া হয়েছে যে, তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি খেয়াল রেখো এবং তাদের প্রাপ্য হক আদায় করো। তাদেরকে আনন্দ ও বিনোদনের ব্যবস্থা করে দেয়ার দায়িত্ব রয়েছে তোমাদের ওপর। শরীয়তের বৈধ সীমা এবং সামর্থ্যের মধ্যে পড়ে তাদের এমন সব আবদার অনুভূতি রক্ষা করা উচিত।
এ
হাদীস থেকে এটাও প্রমাণিত,
মহিলাদের দেখার ব্যাপারে পুরুষদের প্রতি যে ধরনের বিধি
নিষেধ আছে পুরুষদের দেখার
ব্যাপারে মহিলাদের উপর ততটা বিধি
নিষেধ নেই ৷
প্রকাশ্যে স্ত্রীদের
কাজের
প্রশংসা
করা
হযরত
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন,
“হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের মধ্যে হযরত খাদীজা রাদিয়াল্লাহু
আনহার প্রতি আমার যে পরিমাণ
ইর্ষা হতো অন্য কারো
প্রতি তেমনটি হতো না। আমি
তাকে দেখিনি, কিন্তু হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব বেশী তাঁর
কথা বলতেন। আর তিনি ছাগল
যবেহ করলে তার গোশত
প্রায়শঃ খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহুমার বন্ধুদের ঘরে পাঠিয়ে দিতেন।
আমি
অনেক সময় নবী করীমকে
বলতাম, 'মনে হয় দুনিয়াতে
খাদিজা রাদিয়াল্লাহু ছাড়া আপনার আর কোন স্ত্রী
নেই।' তিনি বলতেন, 'নিঃসন্দেহে
সে খুবই উত্তম মহিলা
ছিল। সে এমন ছিল,
সে ওমন ছিল, সে
এ কাজ করে গেছে,
সে ও কাজ করে
গেছে। তার থেকে আমি
সন্তান লাভ করেছি।” (বোখারী
ও মুসলিম)
- ব্যাখ্যাঃ হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু ছিলেন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রথমা স্ত্রী। দাওয়াত ও রিসালাতের প্রারম্ভ থেকেই সব রকম অবস্থায় তিনি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাহায্য করে গিয়েছেন। দাওয়াতের পথে সব রকমের কষ্টকে তিনি হাসি মুখে সহ্য করছিলেন। কোন কোন ঐতিহাসিক লিখেছেন, রিসালাতের শুরুতে হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহুর
- কাছে ২৫ হাজার দিরহাম ছিল, কিন্তু ৮/৯ বছরে সমস্ত সঞ্চয় দাওয়াতের কাজে তিনি বিলিয়ে দিয়েছিলেন। যেসব মুসলমান ঈমান আনার অপরাধে ঘর থেকে বিতাড়িত হতো, তিনি তাদের ব্যয়ভার গ্রহণ করতেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি এরকম এক স্ত্রীকে জীবনভর না ভুলে থাকেন তাতে বিস্ময়ের কি আছে!
স্ত্রীদের অধিকারের
ব্যাপারে
সুবিচার
ও
সমতা
বিধান
হযরত
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেছেন, “রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদের কাছে থাকার ব্যাপারে
ও অন্যান্য সমস্ত অধিকারের বিষয়ে ন্যায় ও সুবিচার করতেন
এবং এ দোয়া করতেন:
“হে আল্লাহ, এই ন্যায়মূলক বিভাজন
তো আমি করতে পারি
কিন্তু অন্তরের ভালবাসা আমার হাতের বাইরে,
তাই আমি যদি কোন
স্ত্রীর সঙ্গে অধিক ভালবাসার সম্পর্ক
রেখে থাকি তাহলে তুমি
আমার হিসাব নিওনা।' (তারগীব ও তারহীব, আবুদাউদ,
তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ ও
ইবনে হাব্বান)
- ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে জানা যায়, যদি কারো একাধিক স্ত্রী থাকে তাহলে ভরণ-পোষণ, খোরাক - পোষাক ও অন্যান্য বিষয়ে পূর্ণ সুবিচারের সঙ্গে কাজ করা উচিত। অবশ্য যদি কোন স্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ অধিক হয় সে আকর্ষণের প্রভাব ন্যায়-বিভাজনের উপর না পড়ে তাহলে কিয়ামতের দিন তার জন্য হয়তো আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন না।
স্ত্রীকে উপযুক্ত
শিক্ষা
ও
প্রশিক্ষণ
দান
স্বামীর
কর্তব্য
হযরত
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেছেন, “হযরত সুফিয়া রাদিয়াল্লাহু
আনহুমার (নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী যিনি প্রথমে ইহুদী
ছিলেন) উট অসুস্থ হয়ে
পড়ে। হযরত যয়নাব রাদিয়াল্লাহু
আনহুমার কাছে একটি অতিরিক্ত
উট ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যয়নাব রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে বললেন, 'সুফিয়াকে একটি উট দিয়ে
দাও।'
যয়নাব
রাদিয়াল্লাহুর মুখ দিয়ে বেরিয়ে
যায়, ‘ওই ইহুদীকে আমার
উট কেন দেবো?” এতে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হন এবং যিলহজ্জ্ব,
মুহররম ও সফর মাসের
কয়েকদিন পর্যন্ত হযরত যয়নাব রাদিয়াল্লাহুর
সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেন। (আবু দাউদ)
- ব্যাখ্যাঃ এ থেকে জানা যায়, তিন দিনের বেশী দুই মুসলমানের পরষ্পরের মধ্যে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন রাখা অসঙ্গত বলে বিধান আছে দ্বীনী শিক্ষা প্রদানের প্রয়োজনে তাকে শিথিল করা যেতে পারে। কিন্তু শর্ত হলো, এর জন্য কোন দ্বীনী কারণ অবশ্যই থাকতে হবে। নবীজীর এই রাগ নিজের জন্যে ছিল না; বরং এ জন্যে তাঁর রাগ হয়েছিল যে, একজন মুসলমান অন্য মুসলমানকে ইহুদী বলে কেন খোঁটা দেবে। নবীর কাছে শিক্ষাপ্রাপ্ত এক স্ত্রীর মুখ দিয়ে অন্য স্ত্রীর সম্পর্কে এমন কটূক্তি যাতে আর না বেরোয় এ জন্যই নবীজী এ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।
দানশীলতার অনন্য প্রতীক ছিলেন মহানবী (সাঃ)
হযরত
জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
“নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কোন প্রার্থীকে কখনও
'না' বলেন নি। (বোখারী
ও মুসলিম)
পোস্ট ট্যাগঃ