উপদেশ মূলক হাদিস
উপদেশ মূলক হাদিস
হযরত
জাবির বিন সুলায়ম রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেছেন, “আমি এক ব্যক্তিকে
দেখতে পেলাম, তিনি যা বলেন,
লোকেরা তা মেনে নেয়।
তাঁর মুখ দিয়ে যে
কথাই বের হয়, লোকেরা
তাই গ্রহণ করে নেয়, কোন
কথার বিরোধিতা করে না। আমি
জিজ্ঞেস করলাম, 'এ লোকটি কে?'
সকলে
জবাব দেয়ঃ ইনি হলেন রাসূলূল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।' 'আমি তাঁর কাছে
গিয়ে এভাবে সালাম দিলাম
'আলাইকাস
সালাম ইয়া রাসূলুল্লাহ!
তখন
তাকে এভাবে দোয়া করা হয়। তুমি
আসসালামু আলাইকা বলো।'
'আমি
জিজ্ঞেস করলাম, 'আপনি কি আল্লাহর
রাসূল?'
‘হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'হ্যাঁ, আমি সে আল্লাহর রাসূল তুমি বিপদের সময় যাঁকে ডাকলে তিনি বিপদ দূর করে দেন। যদি পানি না থাকে এবং তুমি ডেকে তাঁর কাছে পানি চাও তবে তিনি পানি বর্ষণ করেন ও শস্য উৎপাদন করেন।
যদি তুমি কোন
জনমানব ও বৃক্ষহীন এলাকায়
ভ্রমণ করো এবং তোমার
উটনী হারিয়ে গেলে তুমি তাঁকে
ডেকে তাঁর কাছে সেই
উটনী ফেরত চাও তবে
তিনি তোমার উটনীকে ফিরিয়ে দেন।'
আমি
আবেদন করি, 'আমাকে কিছু নসীহত করুন।'
"তিনি বললেন,
'কখনো কাউকে গালি দেবে না
বা কটু কথা বলবে
না।' এরপর থেকে আমি
কোন স্বাধীন ব্যক্তিকে, বা কোন গোলামকে
গালি দেইনি আর কোন উট
বা ছাগলকেও কটু কথা বলিনি
'হুজুর
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বিতীয় নসীহত করে বললেন, এ
রকম কারো সঙ্গে সদ্ব্যবহার
বা কারো উপকার করাকে
তুচ্ছ মনে করো না,
চিন্তা করো না যে,
আমি এ সামান্য উপকার
বা সদ্ব্যবহার করে কি করবো?
কারণ সদ্ব্যবহার যত সামান্যই হোক
না কেন, আল্লাহর কাছে
প্রত্যেক সদ্ব্যবহারের অনেক উচ্চ মূল্য
আছে।'
‘আর
হে জাবির! তুমি তোমার এজারকে
পায়ের (হাঁটু ও গোড়ালির) মাঝামাঝি
পর্যন্ত রাখবে। বড় জোর তা
গোড়ালি পর্যন্ত রাখার অবকাশ আছে। সাবধান! তোমার
এজার যেন গোঁড়ালির নিচে
না যায়। কারণ এটা হলো
অহংকারের লক্ষণ। আল্লাহতায়ালা এমনটি পছন্দ করেন না।'
‘আর
যদি কেউ তোমাকে কটু
কথা বলে এবং তোমার
দোষ বর্ণনা করে তোমাকে লজ্জিত
করে, তবে এর বিনিময়ে
তার যে দোষ তোমার
জানা আছে তা বর্ণনা
করে তাকে লজ্জিত করো
না, তাহলে আল্লাহই তার কাছ থেকে
প্রতিশোধ নেবেন। (তারগীব ও তারহীব, আবু
দাউদ, তিরমিযী ও নাসাঈ)
অত্যাচার, লোভ,
কৃপণতা
ও
স্বার্থপরতা
থেকে
বেঁচে
থাকার
তাগিদ
হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'অত্যাচার করা থেকে বিরত থাকো। কারণ কিয়ামতের দিন অত্যাচার অত্যাচারীর জন্যে অন্ধকারের (বিপদের) কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
আর 'শুহ' (অর্থাৎ লোভ, কৃপণতা ও
স্বার্থপরতা) থেকে বাঁচো। কারণ
এ জিনিস অতীতে মানব সম্প্রদায়ের জন্য
ধ্বংস ডেকে এনেছে। মানুষকে
লড়াই ও রক্তপাতের জন্যে
প্ররোচিত করেছে। মানুষের জীবন, সম্পদ ও ইজ্জত নষ্ট
করেছে এবং অন্যান্য আরো
গুণাহের কারণ হয়েছে।” (তারগীব
ও তারহীব, মুসলিম)
- ব্যাখ্যা: ‘শুহ্হ্'
শব্দের
অর্থ
হলো,
সম্পদের
প্রতি
লোভ,
কৃপণতা
ও
স্বার্থপরতা
এবং
গ্রহণে
আগ্রহ,
দানে
অনীহা।
পাঁচটি মন্দ
কাজ
হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাজিরগণকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, 'পাঁচটি
মন্দ কাজ এমন আছে
যাতে তুমি যদি জড়িয়ে
পড়লে বা তা তোমার
মধ্যে বাসা বাঁধলে তুমি
খুবই খারাপ পরিণতির সম্মুখীন হবে। আমি আল্লাহর
কাছে আশ্রয় চাচ্ছি, যেন এ পাঁচটি
মন্দ কাজ তোমাদের মধ্যে
জন্ম না নেয়!
- ১. ‘যেনা।' এ যদি কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে বহুল প্রচলিত হয়ে পড়ে তাহলে তাদের মধ্যে এমন এমন রোগ দেখা দেবে যা আগে ছিল না।
- ২. মাপ ও ওজনে কম দেয়া।' এ মন্দ কাজ যদি কোন জাতির মধ্যে জন্ম নেয় তবে আল্লাহতায়ালা তাদের উপর দুর্ভিক্ষ ও অনাবৃষ্টি পাঠান এবং তারা অত্যাচারী শাসকের শিকারে পরিণত হয়।
- ৩. 'যাকাত' দান না করা।' এ মন্দ কাজ যাদের মধ্যে দেখা দেয় তাদের উপর আকাশ থেকে বৃষ্টি হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। আর সে অঞ্চলে যদি পশু বা পাখি না থাকে তবে আদৌ বৃষ্টি হয় না।
- ৪. ‘আল্লাহ এবং রাসূলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা।' এ মন্দ কাজ যখন দেখা দেয় তখন আল্লাহ তাদের ওপর অমুসলিমদের আধিপত্য চাপিয়ে দেন। এই আধিপত্যবাদীরা তখন মুসলমানদের সহায়-সম্পদ কেড়ে নিতে থাকে।
- ৫. 'কিতাব অনুযায়ী শাসনকার্য না চালানো।' যদি মুসলমান শাসকরা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী শাসনকার্য না চালায় তবে আল্লাহতায়ালা মুসলিম সমাজে ভাঙ্গন সৃষ্টি করে দেন। তারা নিজেদের মধ্যে পরস্পর লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে এবং সমাজে সন্ত্রাস ও খুন-খারাবী শুরু হয়ে যায়।” (বায়হাকী, ইবনে মাজাহ)
- ব্যাখ্যাঃ হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাজিরবৃন্দের সামনে এ কথা এ জন্যই বলেছিলেন, কারণ ইসলামী শাসনের ক্ষমতা তাদের হাতেই আসার কথা ছিল। আনসারগণের তুলনায় তারাই কিতাব ও সুন্নাহর জ্ঞান অধিক রাখতো।
- প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার যোগ্যতাও সব মিলিয়ে তাদের মধ্যে বেশী ছিল। জাহেলী যুগেও এ সব লোক আরব গোত্রের প্রশাসক ছিল এবং ইসলামী সমাজও এদের ওপর বেশী ভরসা করতো। কিন্তু এ হেদায়াত সমগ্র উম্মতের জন্যই প্রযোজ্য।
কিয়ামতের কয়েকটি
লক্ষণ
হযরত
তারিক বিন শিহাব বর্ণনা
করেছেন, “আমরা আবদুল্লাহ ইবনে
মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে বসেছিলাম। এ
সময় এক ব্যক্তি সেখানে
এসে বললেন, “নামায শুরু হয়ে গেছে।'
তখন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু উঠে দাঁড়ালেন এবং আমরাও তাঁর সঙ্গে উঠে দাঁড়ালাম। যখন আমরা মসজিদে প্রবেশ করলাম তখন দেখতে পেলাম, মসজিদে আগে যারা প্রবেশ করেছিল তারা সব রুকুতে চলে গেছে। তখন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু মসজিদের যেখানে ছিলেন সেখানেই তাকবীর পড়ে রুকুতে চলে গেলেন এবং আমরাও রুকুতে চলে গেলাম।
তারপর লাইনে গিয়ে যোগ দেবার জন্যে
এগিয়ে গেলাম এবং আমরা ঠিক
তাই করলাম যেমনটি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ করেছিলেন।
'নামায শেষে এক ব্যক্তি
দ্রুতগতিতে এসে আবদুল্লাহ ইবনে
মাসউদকে বললেন, ‘হে আবু আবদুর
রহমান, আলাইকাস সালাম (এটা তাঁর পারিবারিক
ডাক নাম। লোকটি বিশেষভাবে
তাঁকেই সালাম করেন)।
তখন
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু
বললেন, 'আল্লাহ ও তাঁর রাসূল
সত্যিই বলেছেন।'
যখন আমরা নামায শেষ করে মসজিদ থেকে বেরিয়ে এলাম তখন তিনি নিজের ঘরের মধ্যে চলে গেলেন আর আমরা বাইরে বসে রইলাম। আমাদের মধ্যে কেউ বললো, 'তোমরা কি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর সালামের জবাব শুনেছো?
তিনি
‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম' বলার পরিবর্তে 'আল্লাহ
ও তাঁর রাসূল সত্যিই
বলেছেন' এ কথা কেন
বললেন? এ ব্যাপারটি কি
কেউ তাঁকে জিজ্ঞাসা করবে?' হযরত তারিক বললেন,
'আমি বললাম, আমি তাকে জিজ্ঞেস
করবো।'
তারপর
যখন তিনি ঘরের ভেতর
থেকে আবার বাইরে এলেন
তখন তাঁকে আমি এ ব্যাপারে
জিজ্ঞেস করি। জবাবে আবদুল্লাহ
ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ হাদীসটি বর্ণনা
করেন:
“কিয়ামতের সময় ঘনিয়ে এলে লোকেরা বিশেষ বিশেষ লোককে সালাম করবে। আর ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি সাধারণভাবেই আকর্ষণ বেড়ে যাবে লোকদের। (অর্থাৎ দুনিয়াদারী বেড়ে যাবে) এমন কি স্ত্রীও স্বামীকে ব্যবসা বাণিজ্যের কাজে সাহায্য করবে।
এভাবে কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ের লোকেরা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে নেবে। মিথ্যা
সাক্ষ্য দেবে, সত্য সাক্ষ্য গোপন
করবে। জুয়া খেলা খুব সাধারণ
হয়ে যাবে।” (মুসনাদ আহমদ)
দুটো জিনিস
বিপদের
কারণ
হবে
হযরত
ওয়াসিলা ইবনে আসকা রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের হাত দিয়ে মাথার
দিকে ইশারা করে বললেন, 'এ
ধরনের ঘর ছাড়া প্রত্যেক
ঘর মালিকের জন্যে বিপদের কারণ হবে। এবং
যে নিজের জ্ঞান মোতাবেক আমল করবে সে
ছাড়া প্রত্যেক জ্ঞানী ব্যক্তির জন্যে তার জ্ঞান বিপদের
কারণ হবে।” (তারগীব ও তারহীব, তাবরানী)
- ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসের প্রথম অংশের অর্থ হলো, অপ্রয়োজনীয় ও উঁচু আড়ম্বরপূর্ণ ঘর তৈরীর চিন্তা করা উচিৎ নয়। আর তিনি হাত দিয়ে মাথার দিকে যে ইশারা করেন তার অর্থ হলো, ঘর এতটা উঁচু হওয়া দরকার যেন ছাদ মাথায় না লাগে।
- কারণ উঁচু ও আড়ম্বরপূর্ণ ঘর সে সব লোক তৈরী করে যাদের মনে অহংকারের ভাব থাকে, যদিও সে তা অনুভব করে না। আর এ ধরনের কাজ এ কথাই প্রমাণ করে, হয় তার আখেরাতের ঘর বাঁধার চিন্তা আদৌ নেই অথবা থাকলেও খুবই কম।
কেয়ামতের দিন কোন ব্যক্তি কাঁদবে
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যে চোখ কোন হারাম জিনিসের উপর দৃষ্টিপাত করেনি সে চোখ ব্যতীত সমস্ত চোখ কিয়ামতের দিন কাঁদবে।
আর
সে চোখও কাঁদবে না
যা আল্লাহর রাস্তায় জেগেছে (অর্থাৎ জিহাদের সময় পাহারাদানকারী চোখ)। আর সে
চোখও কাঁদবে না, যা থেকে
দুনিয়ায় আল্লাহর ভয়ে সামান্যতম অশ্রুও
ঝরেছে।' (তারগীব ও তারহীব)
পোস্ট ট্যাগঃ
উপদেশ মূলক হাদিস
উপদেশ মূলক হাদীস
উপদেশ মূলক বাণী হাদিস
উপদেশমূলক কথা
উপদেশ দেওয়া