ধৈর্য নিয়ে হাদিস
ধৈর্য নিয়ে হাদিস
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “এক ব্যক্তি হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যা-তা বলে, আর সে সময় হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে বসেছিলেন এবং তিনি বিস্ময়ের সঙ্গে মুচকি মুচকি হাসছিলেন।
সে
ব্যক্তি
অনেক
কিছু
বলার
পর
যখন
হযরত
আবু
বকর
রাদিয়াল্লাহু
আনহু
দু'একটা
কথার
জবাব
দিলেন
তখন
নবী
করীম
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি
ওয়াসাল্লাম
রাগান্বিত
হয়ে
সেখান
থেকে
উঠে
চলে
যান।
হযরত
আবু
বকর
রাদিয়াল্লাহু
আনহু
এই
ঘটনার
পর
নবীজীর
সঙ্গে
সাক্ষাত
করে
বললেন, 'হে
রাসূলুল্লাহ!
সে
আপনার
উপস্থিতিতে
আমাকে
যা-তা
বলছিল
আর
আপনি
মুচকি
মুচকি
হাসছিলেন।
কিন্তু
যখন
আমি
এক-আধটা
কথার
জবাব
দিতে
গেলাম
তখন
আপনি
রাগান্বিত
হয়ে
সরে
গেলেন
কেন?'
তিনি
বললেন, “যখন
সে
তোমাকে
যা-তা
বলছিল
তখন
এক
ফেরেশতা
তোমার
পক্ষ
হয়ে
তার
জবাব
দিচ্ছিল।
কিন্তু
তুমি
যখন
তাঁর
পাল্টা
জবাব
দিতে
গেলে
তখন
সেই
ফেরেশতা
চলে
গেল
এবং
সেখানে
শয়তান
এসে
হাজির
হলো।” (মিশকাত)
ক্ষমা ও মহত্বের শিক্ষা
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “হযরত খালিদ বিন ওলীদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, 'আমার ও আম্মার ইবনে ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু আনহুর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।
আমি
তাঁকে
খুব
কড়া
কথা
বলি।
তখন
আম্মার
রাদিয়াল্লাহু
আমার
বিরুদ্ধে
অভিযোগ
করার
জন্য
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি
ওয়াসাল্লামের
কাছে
উপস্থিত
হন।
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, পিছন পিছন খালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুও সেখানে পৌছে যান। তিনি হযরত আম্মার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অভিযোগ করতে দেখে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনেই তাঁকে কড়া কড়া কথা বলতে শুরু করেন।
তাঁর শক্ত ভাষা ক্রমান্বয়ে বেড়ে যেতে থাকে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ করে ছিলেন। কিছুই বলছিলেন না। তাতে আম্মার রাদিয়াল্লাহু আনহু কেঁদে ফেলেন এবং বলেন, 'হে রাসূলুল্লাহ! আপনি কি খালিদকে দেখছেন না?'
তখন
নবী
করীম
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি
ওয়াসাল্লাম
মাথা
উঁচু
করেন
এবং
বলেন, 'যে
আম্মারের
সঙ্গে
শত্রুতা
করবে
আল্লাহ
তার
শত্রু
হয়ে
যাবে
এবং
যে
আম্মারকে
ঘৃণা
করবে
আল্লাহ
তাকে
ঘৃণা
করবেন।'
খালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, 'তাঁর এই কথা শুনে আমি সভা থেকে বেরিয়ে আসি। তখন আমার কাছে এটাই সব থেকে প্রিয় বলে মনে হচ্ছিল, যে কোন রকমে আহ্মার রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যাক।
সুতরাং
আমি
তাঁর
সঙ্গে
সাক্ষাৎ
করে
আমার
শক্ত
ভাষার
জন্যে
তাঁর
কাছে
ক্ষমা
চাই।
তিনি
আমাকে
ক্ষমা
করে
দেন
এবং
আমার
ওপর
সন্তুষ্ট
হন।” (মিশকাত)
ধৈর্যের অনুপম দৃষ্টান্ত
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহুর এক ছেলে অসুস্থ ছিল। সেই সময় আবু তালহা এক সফরে চলে যান, আর এদিকে ছেলেটি মারা যায়। আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু সফর থেকে ফিরে এসে জিজ্ঞেস করেন, 'আমার ছেলের অবস্থা কি?'
ছেলের মা উম্মে সুলাইম বললেন, 'সে আগের থেকে এখন অনেক শান্তিতে আছে।' তারপর তিনি আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সামনে খানা রাখেন। তিনি (আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু) সেই খানা খেয়ে উম্মে সুলাইমকে নিয়ে বিছানায় যান।
স্বামী
পরিতৃপ্ত
হয়ে
যখন
বিছানায়
বিশ্রাম
নেয়া
শুরু
করলেন
তখন
উম্মে
সুলাইম
আবু
তালহা
রাদিয়াল্লাহু
আনহুকে
বললেন, 'উঠুন, আপনার
ছেলেকে
দাফন
করে
আসুন।' (ইমাম
বোখারী
আর ইমাম মুসলিম রাদিয়াল্লাহুর বর্ণনায় আছে: আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহুর এক ছেলে, যে উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহুর গর্ভে জন্মলাভ করেছিল, সে মারা যায়। সে সময় আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু সফরে ছিলেন।
উম্মে সুলাইম ঘরের লোকজনকে বলে, ‘তোমরা ছেলের মৃত্যুর খবর আবু তালহাকে দিও না, আমি নিজেই দেবো।' তারপর তিনি যখন ফিরে আসেন তখন উম্মে সুলাইম তাঁর সামনে রাতের খানা রাখেন। তিনি খাওয়া শেষ করেন। তারপর উম্মে সুলাইম নিজেকে রাতের পোষাকে সাজিয়ে তোলেন।
আবু
তালহা
রাদিয়াল্লাহু
আনহু
তাঁকে
নিয়ে
বিছানায়
যান
এবং
যখন
তিনি
তৃপ্তি
শেষে
শান্তির
রাজ্যে
ফিরে
আসেন
তখন
তাঁর
স্ত্রী
বললেন, 'আচ্ছা
বলুন
দেখি,
যদি
কোন
লোক
কারো
কাছে
কিছু
গচ্ছিত
রাখে,
এবং
তারপর
সে
তার
গচ্ছিত
জিনিস
ফেরত
চায়
তাহলে
তা
ফেরত
দিতে
অস্বীকার
করার
কোন
অধিকার
আছে?'
আবু
তালহা
রাদিয়াল্লাহু
জবাব
দেন, 'না
গচ্ছিত
জিনিস
নিজের
কাছে
আটকে
রাখার
কোন
অধিকার
তাদের
নেই।'
তখন
উম্মে
সুলাইম
বললেন, 'আপনার
ছেলে,
যে
আপনার
কাছে
আল্লাহর
আমানত
ছিল,
তা
আল্লাহ
ফিরিয়ে
নিয়েছেন।
আপনি
যাতে
আখেরাতে
পুরস্কারের
অধিকারী
হতে
পারেন
সে
জন্য
আপনার
সবর
করা
উচিত।” (বোখারী, মুসলিম,
রিয়াদুস
সালেহীন)
বৈঠকাদিতে বসার আদব কায়দা
হযরত
জাবির
বিন
সামুরা
রাদিয়াল্লাহু
আনহু
বর্ণনা
করেছেন, “আমাদের
অভ্যাস
ছিল,
যখন
আমরা
হুজুর
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি
ওয়াসাল্লামের
সভায়
উপস্থিত
হতাম
তখন
আমরা
সকলের
পিছনে
বসতাম। (আমাদের
মধ্যে
কেউ
দেরীতে
এসে
মানুষকে
ডিঙিয়ে
গিয়ে
হুজুর
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি
ওয়াসাল্লামের
নিকটে
বসার
চেষ্টা
করতো
না।” (আবু
দাউদ)
ওয়াদা ভঙ্গ ও মিথ্যা বলা জঘন্য অপরাধ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'আমার সময়ের লোক অর্থাৎ সাহাবীগণ সর্বোত্তম লোক।
তারপর
উত্তম
লোক
তারা,
যারা
আমার
সময়ের
লোকদের
পরে
আসবে,
অর্থাৎ
তাবেয়ীন।
তারপর
তারা,
যারা
তাদের
পরে
আসবে,
অর্থাৎ
তাবে-তাবেয়ীন)।
এ কথা তিনি তিন বা চার বার বললেন। অতপর বলেন, 'তারপর এমন কিছু লোক আসবে যাদের সাক্ষ্য কসমের থেকে বেশী হবে। আর যাদের কসম সাক্ষ্যের থেকে বেশী হবে।' আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন,
'আমাদের
অভিভাবকগণ
আমাদের
ছেলেবেলায়
মিথ্যা
কসম
খাওয়ার
জন্য,
মিথ্যা
সাক্ষী
দেওয়ার
জন্য
এবং
প্রতিশ্রুতি
দিয়ে
তা
পালন
না
করার
জন্য
আমাদের
মারধোর
করতেন। (মুসনাদে
আহমদ)
- ব্যাখ্যা: এর অর্থ হলো, পরবর্তী সময়ের মানুষের চোখে প্রতিশ্রুতির কোন মূল্য থাকবে না। তারা মিথ্যা সাক্ষী দেবে এবং মানুষের সামনে যে প্রতিশ্রুতি ও ওয়াদা করবে তা পালন করবে না।
অনাড়ম্বর জীবন যাপনের তাগিদ
হযরত আবদুর রুমী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “আমি উম্মে তালুক রাদিয়াল্লাহু আনহুমার কাছে যাই। তাঁর ঘরের ছাদ খুবই নিচু ছিল। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করি, ‘আপনার ঘরের ছাদ এত নীচু কেন?'
তিনি
বললেন, 'এক
পত্রে
আমীরুল
মোমেনীন
হযরত
ওমর
ইবনুল
খাত্তাব
রাদিয়াল্লাহু
আনহু
গভর্ণরদেরকে
এই
হেদায়াত
লিখে
পাঠিয়েছিলেন,
তোমরা
উঁচু
অট্টালিকা
তৈরী
করবে
না।
যদি
এরকম
করো
তাহলে
খারাব
যুগের
আবির্ভাব
ঘটবে।” (আল
আদাবুল
মুফরাদ)
- ব্যাখ্যা: উঁচু ও শানদার অট্টালিকা, ধন-দৌলত এসবই মানুষের গর্ব ও অহংকারের বস্তু হবে। স্পষ্টতই তা উম্মতের দুনিয়া পূজার লক্ষণ। এতে আখেরাতমুখী মানসিকতা মরে যাবে। হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু উম্মতের এই দ্বীনী অধঃপতন রোধ করার জন্যই এই হুকুমনামা জারী করেছিলেন।
জীবজন্তুর প্রতি দয়া
হযরত
আনাস
রাদিয়াল্লাহু
আনহু
বলেছেন, “আমরা
কোন
সফরে
কোথাও
বিশ্রাম
নিতে
গেলে
পশুদের
পিঠ
থেকে
বোঝা
না
নামিয়ে
আমরা
তসবীহ
ও
নামাযে
নিযুক্ত হতাম না।’’
পোস্ট ট্যাগঃ
ধৈর্য নিয়ে হাদিস
ধৈর্য নিয়ে উক্তি হাদিস
ধৈর্য্য নিয়ে হাদিস
ধৈর্য ধরুন
ধৈর্য নিয়ে কোরআনের আয়াত
ধৈর্য হাদিস
ধৈর্য নিয়ে কথা
ধৈর্য সম্পর্কে হাদিস