মা বাবার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য হাদিস
মা বাবার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য হাদিস
হযরত আবু বুরদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “আমি মদীনায় উপস্থিত হলে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য এলেন। তিনি বললেন, 'তুমি কি জানো, আমি কি জন্য তোমার কাছে এসেছি?' 'আমি বললাম, ‘না।'
তিনি বললেন, 'আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ কথা বলতে
শুনেছি, 'যে ব্যক্তি পিতার
মৃত্যুর পর পিতার সঙ্গে
সদ্ব্যবহার করতে চায় পিতার
বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে তার সদ্ব্যবহার করা
উচিত।'
আর
আমার পিতা (ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু)
এবং তোমার পিতার (আবু মুসা আশ'আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু)
মধ্যে ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব ও ভালবাসা ছিল।
আমি আমার পিতার সঙ্গে
সদ্ব্যবহার করতে চাই। সে
জন্যই আমি তোমার সঙ্গে
সাক্ষাত করতে এসেছি।”
পিতা মাতার
প্রতি
সন্তানের
দায়িত্ব
ও
কর্তব্য
সদ্ব্যবহার
করা
নেকীর
কাজ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে দীনার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “মক্কার রাস্তায় হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে (যখন তিনি হজ্জ করতে গিয়েছিলেন) এক গ্রামবাসীর সাক্ষাত হয়।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু
আনহু তাকে সালাম দেন
এবং যে খচ্চরের ওপর
বসেছিলেন তার ওপর তাকে
বসিয়ে নেন ও নিজের
পাগড়ি তাকে দিয়ে দেন।
ইবনে দীনার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি
বললাম, 'আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন। এরা গ্রামবাসী। এরা
তো অল্পে সন্তুষ্ট হয়ে যায়। তবুও
আপনি এসব কেন করলেন?'
আবদুল্লাহ
ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু জবাব
দেন, ‘এর পিতা আমার
পিতা ওমর ইবনুল খাত্তাবের
বন্ধু ছিলেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ কথা বলতে
শুনেছি, 'নিজের পিতার বন্ধুর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা খুব বড়
নেকীর কাজ।'
কর্মচারীদের সঙ্গে
দুর্ব্যবহার
করার
পরিণাম
হযরত আবু মাসউদ বাদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “আমি আমার এক গোলামকে কোড়া মারছিলাম এমন সময় কেউ পিছন থেকে আওয়াজ দেয়, 'হে আবু মাসউদ, জেনে নাও।' ক্রোধের কারণে আমি বুঝতে পারিনি কে কথা বলছেন।
যখন তিনি কাছে এলেন তখন দেখি, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি বললেন, 'জেনে রাখো আৰু মাসউদ, তুমি এই গোলামের ওপর যতটুকু কর্তৃত্ব রাখো তার চেয়ে অনেক বেশী কর্তৃত্ব আল্লাহ তোমার উপর রাখেন।'
আমি
অনুতপ্ত হৃদয়ে বললাম, 'আমি আর কখনো
কোন গোলামকে মারবো না।' অন্য এক
বর্ণনায় এসেছে, আমি বললাম, 'হে
আল্লাহর রাসূল! আমি তাকে আল্লাহর
ওয়াস্তে মুক্ত করে দিলাম।'
হুজুর
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'যদি তুমি তাকে
মুক্ত না করে দিতে
তাহলে তুমি জাহান্নামের বেষ্টনীতে
পড়ে যেতে।” (তারগীব ও তারহীব; মুসলিম,
আবু দাউদ ও তিরমিযী)
নিজে খাওয়ার
আগে
ইয়াতীমকে
খাওয়ানো
হযরত
হাসান বসরী রাদিয়াল্লাহু আনহু
বর্ণনা করেছেন, “আমি মুসলমানদের (অর্থাৎ
সাহাবাগণকে) এমন অবস্থায় দেখেছি
যে, তাঁরা সকাল বেলা স্ত্রীদের
বলতেন, 'হে আমার স্ত্রী,
প্রথমে ইয়াতীমকে খাওয়াও, সবার আগে ইয়াতীমকে
খেতে দাও।” (আল হাক)
অভাবে আত্মত্যাগের
অপূর্ব
নজির
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক সঙ্গীকে একটি ছাগলের মাথা উপহার স্বরূপ দেয়া হয়। তিনি বললেন, 'আমার অমুক সঙ্গী আমার চেয়ে বেশী অভাবী, এটি ওকেই দাও।' সুতরাং মাথাটি তাঁর কাছে পাঠানো হয়।
তিনি অন্য এক
ব্যক্তির নাম নিয়ে বললেন,
'সে আমার চাইতে অভাবী,
এটা তাকে দিয়ে এসো।'
এভাবে সাতজন ব্যক্তির কাছে সেটা পাঠানো
হয়। অবশেষে সেটা ঘুরে ফিরে
প্রথম ব্যক্তির কাছেই আসে।” (সহীফাতুল হাক)
হারাম খাবার সম্পর্কে হাদিস-হারাম
খাবার
বমি
করে
ফেলে
দেয়ার
দৃষ্টান্ত
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেছেন, “হযরত আবুবকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহুর এক গোলাম ছিল, যে উপার্জন করে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ তাঁকে দান করতো। হযরত আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তা কাজে লাগাতেন।
একদিন সে গোলাম সামান্য
খাবার জিনিস এনে তাঁকে দেয়
এবং তিনি তা খান।
গোলামটি জিজ্ঞেস করে, 'আপনি কি জানেন
এটা কোথা থেকে পেয়েছি।'
তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘কোত্থেকে পেয়েছো?'
সে বলে, “ইসলাম কবুল করার পূর্বে আমি এক ব্যক্তির ভবিষ্যত বলে দিয়েছিলাম। আমি ঐ বিদ্যা জানতাম না। আমি তাকে ধোঁকা দিয়েছিলাম। এখন তার সঙ্গে দেখা হলে সে তার পারিশ্রমিক হিসাবে এগুলো দান করেছে, যা আপনি খেয়েছেন।'
এ কথা শুনে
হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু
আনহুর পেটে যা গিয়েছিল
তা গলায় আঙ্গুল দিয়ে বমি করে ফেলেন।”
(বোখারী)
ঋণ ও
আমানত
সম্পর্কে হাদিস
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “আমার পিতা হযরত যুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু 'জামাল' যুদ্ধের সময় আমাকে ডাকেন। আমি গিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়ালে তিনি বললেন, 'হে আমার প্রিয় পুত্র! আজ মানুষ হয় অত্যাচারীরূপে নিহত হবে অথবা অত্যাচারিত হয়ে নিহত হবে।
আমি আমার ব্যাপারে মনে
করি, আমি অত্যাচারিত রূপে
নিহত হবো। আজ আমার
কেবল মানুষের ঋণের চিন্তা হচ্ছে,
তা যেন কোন রকমে
পরিশোধ হয়ে যায়। তুমি
কি মনে করো? ঋণ
শোধ করার পর কিছু
অর্থ থাকবে কি?' তারপর তিনি
বলেন, 'হে পুত্র!, আমার
সম্পত্তি বিক্রী করে ঋণ পরিশোধ
করে দিও।'
হযরত আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, 'তার যত ঋণ ছিল তা নিজের পরিবার পরিজনদের খরচের জন্যে নেয়া হয়নি। বরং মানুষ তাঁকে বিশ্বাস করে তাঁর কাছে আমানত রাখতে আসতো।
তখন তিনি তাদের বলতেন, ‘এ সব আমানত হিসেবে রেখো না, বরং যাতে তোমার অর্থ মারা না যায় সে জন্যে এ অর্থ ঋণ হিসেবে আমার কাছে থাকবে। আমানত হিসেবে যদি রাখো আর তা যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে আইনতঃ তুমি তা ফিরিয়ে নিতে পারো না।
এ জন্যে এটাকে ঋণ হিসেবে মনে করো, আমার কাছে তা যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে তোমার যেন ক্ষতি না হয়।” (বোখারী)
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির
সঙ্গে
নরম
ব্যবহার
করার
তাগিদ
হযরত আবু কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “যখন তিনি তাঁর কাছে একজন ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে ডেকে পাঠালেন তখন লোকটি দেখা করার পরিবর্তে আত্মগোপন করে। পরে তার সঙ্গে দেখা হলে তার কাছে ঋণ পরিশোধের কথা বলা হয়। সে বলে, 'আমার অবস্থা খুবই খারাপ।'
তিনি
বললেন, 'আল্লাহর কসম, ঠিক করে
বলো, তুমি কি এখন
ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না?'
তখন সে আল্লাহর কসম
খেয়ে বলে, 'এখন ঋণ শোধ
করার মতো অবস্থা সত্যি
আমার নেই।'
তিনি
বললেন, 'আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ কথা বলতে
শুনেছি, 'যে ব্যক্তি কিয়ামতের
দুঃখ-দুর্দশা থেকে বাঁচতে চায়
তার উচিত অসচ্ছল ঋণগ্রস্ত
ব্যক্তিকে আরো কিছু সময়
দান করা অথবা তাকে
ক্ষমা করে দেয়া।” (মুসলিম)
- ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসে এ কথা বর্ণনা করা হয়নি যে, আবু কাতাদা রাদিয়াল্লাহু তাকে আরো কিছু সময় দান করেছিলেন নাকি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু যেভাবে এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে তা থেকে মনে হয়, তিনি এ ঋণ ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
পোস্ট ট্যাগঃ