মহানবী সাঃ এর জীবনী রচনা
মহানবী সাঃ এর জীবনী রচনা
মহানবীর ঘরে
দরিদ্রতা
হযরত
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
“নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের পরিবার বর্গের মাসের পর মাস কেটে
যেতো, কিন্তু দেখা যেতো কারো
ঘরে বাতি জ্বলছে না।
আর চুলো জ্বালানোর পরিস্থিতিও
দেখা দিত না। যয়তুনের
তেল পেলে তা তাঁরা
মাথায় মেখে নিতেন।” (তারগীব
ও তারহীব)
- ব্যাখ্যা: এটা সেই সময়কার কথা যখন কুফর ও ইসলামের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল। তখন তাঁদের সমস্ত মনোযোগ ছিল দ্বীনকে বাঁচানোর দিকে। কেবলমাত্র পানি ও খেজুরের ওপর কাটাতে হতো তাঁদের দিন। রান্না করার মতো সচ্ছলতা তাদের ছিল না।
সাহাবায়ে কেরামের
দরিদ্রতার
স্বরূপ
হযরত
শিফা বিনতে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
“আমি কিছু অর্থের জন্য
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আবেদন করি।
কিন্তু তিনি অক্ষমতা প্রকাশ
করেন। (এতে আমার মধ্যে
অসন্তোষ সৃষ্টি হয়)। জামায়াতে
নামাযের সময় হয়েছে এমন
সময় আমি বেরিয়ে আমার
মেয়ের বাড়িতে গিয়ে হাজির হই। সেখানে আমি
দেখতে পাই, আমার মেয়ের
স্বামী শুরাহবীল ইবনে হাসান ঘরে
বসে আছে। আমি তাকে
বললাম, “নামাযের সময় হয়ে গেছে
আর তুমি ঘরে বসে
আছো?' এ কথা বলে
আমি তাকে তিরস্কার করতে
থাকি।
সে
বলে, ‘খালাম্মা, আমাকে তিরস্কার করবেন না। আমার কাছে
মাত্র একটি কাপড় ছিল,
তা নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছ থেকে
ব্যবহারের জন্য নিয়েছেন। (আমার
কাছে আর কাপড় নেই,
যা পড়ে আমি মসজিদে
যেতে পারি)।'
তখন
আমি বলি, 'আমার মাতা-পিতা
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের জন্যে কোরবান হোক। আজ আমি
তাঁর উপর অসন্তুষ্ট হয়েছিলাম।
অথচ তাঁর এ অবস্থা
আমার জানা ছিল না।'
শুরাহবীল জানায়, আমার কাছে মাত্র
একটি ছেঁড়া জামা ছিল। তবে
জামাটি আমি তালি দিয়ে
রেখেছিলাম।” (তারগীব ও তারহীব, তাবরানী
ও বায়হাকী)
এ দুনিয়া
তো
মুমিনের
জন্য
মুসাফিরখানা
হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি চাটাইয়ের ওপর
শুয়েছিলেন। যখন তিনি ওঠেন
তখন আমি তাঁর গায়ে
পাটির দাগ দেখতে পাই।
আমি বলি, 'হে আল্লাহর রাসূল,
আমরা যদি আপনার জন্যে
ভাল বিছানা তৈরী করে দিই
তাহলে কেমন হয়?”
তিনি
বললেন, 'দুনিয়াতে আমার
কি
দরকার?
আমি
তো
দুনিয়ার
সেই
মুসাফিরের
মতো,
যে
কোন
গাছের
ছায়ায়
কিছুক্ষণের
জন্যে
বিশ্রাম
নিয়ে
তারপর
সেই
গাছ
ও
তার
ছায়া
পরিত্যাগ
করে
পুনরায়
পথে
নেমে
পড়ে।”
(তিরমিযী)
- ব্যাখ্যা: খুব সম্ভব এটা সেই সময়ের ঘটনা যখন আরবে কুফর ও ইসলামের মধ্যে সংঘর্ষ শেষ হয়ে গিয়েছিল। জাহেলী জীবন ব্যবস্থার দীপ নিভে গিয়েছিল এবং ইসলাম ও মুসলমানদের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা এসে গিয়েছিল। এই অবস্থায় তাঁর সাদাসিধে জীবনের নমুনা আগামী দিনের
- উম্মতের জন্য নতুন শিক্ষা নিয়ে হাজির হয়। আর সে শিক্ষা হলো, মুসলমান প্রয়োজনীয় জীবনোপকরণ অবশ্যই ব্যবহার করবে কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার বা সুযোগের সদ্ব্যবহার করে বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে দেয়ার মতো মানসিকতায় কখনো আচ্ছন্ন হবে না।
মহানবীর মাদাসিধা
জীবন
যাপন
হযরত
আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেছেন, “নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটিমাত্র ছেঁড়া হাওদা ও পুরাতন চাদরে
হজ্জ্ব করেন। সেই চাদরের দাম
চার দিরহাম বা চার দিরহামের
কম ছিল।” (তিরমিযী)
- ব্যাখ্যাঃ এখানে বিদায় হজ্বের সময় তাঁর সাদাসিধে জীবনের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে যখন সমগ্র দেশ ইসলামের শাসনাধীনে এসে গিয়েছিল।
মৃত্যুর সময়
মহানবী
যে
সম্পদ
রেখে
যান
তার
বিবরণ
হযরত
আমর বিন হারিস রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম
ইন্তিকালের
সময়
কোন
দিরহাম
বা
কোন
দীনার
রেখে
যাননি।
কোন
গোলাম,
বাঁদী
বা
কোন
অন্য
জিনিসও
রেখে
যাননি।
কেবলমাত্র
একটি
সাদা
রঙের
স্ত্রীজাতীয়
খচ্চর
রেখে
গিয়েছিলেন,
যাতে
তিনি
চড়তেন।
এছাড়া
নিজের
অস্ত্র-শস্ত্র
ও
সামান্য
জমিজমা
যা
রেখে
গিয়েছিলেন,
তা
সবই
আল্লাহর
রাস্তায়
দান
করে
গিয়েছিলেন।”
(বোখারী)
দ্বীনের পথে
দাওয়াত
দানকারীর
বৈশিষ্ট
হযরত
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'দ্বীনের দাওয়াত দানের ব্যাপারে আমাকে যত বেশী তয়
দেখানো হয়েছে আর কাউকে ততটা
দেখানো হয়নি। আর আল্লাহর দ্বীনের
দাওয়াতের পথে আমাকে যতো
কষ্ট দেয়া হয়েছে অন্য কাউকে ততো
কষ্ট দেয়া হয়নি। এমন মাসও আমাদের
ওপর দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে, বেলালের বহন করা খাবার
ছাড়া আমার ও সহযাত্রী
বেলালের কাছে আর কোন
খাবার জিনিস ছিল না।” (তিরমিযী)
- ব্যাখ্যা: খুব সম্ভব এটা তায়েফের দাওয়াতী অভিযানের সফর। এই সফরে নবীজীকে অনেক কষ্ট ভোগ করতে হয়। এই সফরে সামান্য কিছু শুকনো খেজুর ছাড়া আর কোন খাবার তাঁদের সঙ্গে ছিল না। উপরে যে ভয়, আতঙ্ক ও কষ্টের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এ পথের মুসাফিরের জন্য এ সবই চির সঙ্গী হিসাবে বিরাজ করে।
দরিদ্রতা দাওয়াত
দানকারীর
একটি
বৈশিষ্ট
হযরত
নোমান ইবনে বশীর রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেছেন, “একবার ওমর ইবনুল খাত্তাব
রাদিয়াল্লাহু আনহুর মনে পড়ে যায়,
মানুষের কাছে আজ কত
ধন-দৌলত। তখন তিনি বললেন,
'আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, ক্ষুধায় কাতর অবস্থায় তাঁর
সারা দিন কেটে গেছে।
তিনি এই পরিমাণ শুকনো
খেজুরও পেতেন না, যা দিয়ে
ক্ষুধা নিবৃত করতে পারেন।” (মুসলিম)
- ব্যাখ্যা: প্রত্যেক যুগে হকের দাওয়াত দানকারীর জন্যে এ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে।
মহানবী ও
তাঁর
সাহাবীদের
দুঃসহ
দারিদ্র
জীবন
হযরত
কা'আব বিন উজরা
রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হই
এবং তাঁকে স্নান অবস্থায় দেখতে পাই। আমি জিজ্ঞেস
করি, 'আমার পিতা আপনার
জন্যে উৎসর্গিত হোক। আপনার মুখ
মলিন কেন?' তিনি বললেন, 'তিন
দিন পার হয়ে গেছে,
পেটে এক কণা খাবারও
যায়নি।'
কা'আব বিন উজরা
রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, 'আমি
তাঁর জন্যে কিছু ব্যবস্থা করতে
চলে যাই। দেখি এক
ইহুদী বালতি ভর্তি করে নিজের উটকে
পানি পান করাচ্ছে। আমি
তাঁর সঙ্গে প্রতি বালতির জন্যে একটি খেজুরের শর্ত
স্থির করে বালতি ভর্তি
করতে শুরু করে দিই।
এভাবে আমি অনেক খেজুর
সংগ্রহ করি। তারপর সেগুলো
নিয়ে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হই।
তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘এ সব তুমি
কোথায় পেলে?'
আমি
সমস্ত ঘটনা তাঁকে বলি।
সব শুনে তিনি জিজ্ঞেস
করেন, 'হে কা’আব,
তুমি কি আমাকে ভালবাসো?'
আমি বলি, 'হ্যাঁ, আপনার জন্যে আমার পিতা উৎসর্গিত
হোক।' তিনি বললেন, “যারা
আমাকে ভালবাসে দারিদ্র ও অনাহার নিচের
দিকে প্রবাহিত বন্যার পানির চেয়ে অধিক দ্রুতগতিতে তাদের
দিকে এগিয়ে আসে। হে কাআব
তোমাকেও পরীক্ষার মধ্যে পড়তে হবে। তাই উপোস,
অনাহার এবং আর্থিক দৈন্যের
মোকাবিলা করার জন্যে হাতিয়ার
সংগ্রহ করে নাও।'
- ব্যাখ্যা: আল্লাহর
প্রতি
ভালবাসা,
আখিরাতের
চিন্তা,
হিসাবের
দিনের
স্মরণ,
জাহান্নামের
ভয়,
জান্নাতের
আগ্রহ
এবং
দয়াময়
প্রভুর
সঙ্গে
সাক্ষাতের
জ্বলন্ত
আকাঙ্খা
আর
উদগ্র
বাসনা
হলো
সেই
সব
হাতিয়ার
যা
দিয়ে
আর্থিক
আঘাত
ও
আর্থিক
অসচ্ছলতার
মোকাবিলা
করা
যেতে
পারে।
পোস্ট ট্যাগঃ