মৃত ব্যক্তির জন্য শোক বার্তা
মৃত ব্যক্তির জন্য শোক বার্তা
হযরত
মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহুর এক ছেলে মারা
যায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এক শোকবার্তা পাঠান।
(খুব সম্ভব তিনি সে সময়
ইয়েমেনে ছিলেন)। তাঁর পত্রের
বিষয়বস্তু ছিল এ রকম:
বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহীম
আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদের তরফ থেকে মুয়াজ ইবনে জাবালকে এ পত্র, তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি আল্লাহর শোকর ও প্রশংসা করছি যিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। তুমিও আল্লাহর শোকর ও প্রশংসা করো। আল্লাহতায়ালা তোমাকে মহান পুরস্কার দান করুন এবং সবর দান করুন, আর
তোমাকে ও আমাকে শোকর করার তাওফীক দান করুন। আমাদের নিজের প্রাণ ও সন্তান আল্লাহর আনন্দময় নিয়ামত, এসব আমাদের কাছে রক্ষিত আল্লাহর আমানত। এসব যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের কাছে থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত আনন্দ পাও আর এসব চলে যাবার পর আল্লাহ তোমাদেরকে মহাপুররস্কারে পুরস্কৃত করেন। যদি তোমরা আখেরাতে পুরস্কার লাভের নিয়তে সবর করো তাহলে তোমাদের জন্যে
রয়েছে আল্লাহর রহমত, পুরস্কার ও হেদায়াত। সুতরাং
তুমি সবর করো। তোমার
অধৈর্য ও অশান্তি যাতে
তোমাকে সেই পুরস্কার থেকে
বঞ্চিত না করে সেদিকে
খেয়াল রেখো। এ কথায় মনে
দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস রাখবে,
যে চলে গেছে সে
আর ফিরে আসবে না
কখনো। আর যে ক্ষত
ও বেদনা সৃষ্টি হয়েছে এই হৃদয়ে তাও
কখনো দূর হওয়ার নয়।
যে দুর্ঘটনা ঘটে গেছে তা
তো ঘটতোই। ওয়াস্সালাম।” (আল মুআজ্জামূল কবীর,
তাবরানী)
মৃত ব্যক্তির
নিকটাত্মীয়দের
সান্তনা
দান
হযরত কুরা ইবনে ইয়াস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোথাও বসে থাকতেন তাঁর সাহাবীগণের মধ্যে কিছু সাহাবী তাঁর কাছে বসে থাকতেন। সেই সব সাহাবীগণের মধ্যে এমন একজন ছিলেন যাঁর একটি ছোট ছেলে ছিল। সে যখন হুজুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছন দিক দিয়ে
তাঁর কাছে আসতো তিনি
তাকে নিজের সামনে বসাতেন। তারপর সেই ছেলেটি মারা
যায়। তার পিতা শোকাতুর
হয়ে কয়েকদিন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সভায় আসেননি। তাতে নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করেন, 'অমুক আর আসে
না কেন? কি হয়েছে
তার?'
সকলে
তাঁকে বললেন, 'ওর ছোট ছেলেটি,
যাকে আপনি দেখেছেন, ছেলেটি
মারা গেছে। সম্ভবত এ কারণে তিনি
আসছেন না।'
তখন
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত
করেন এবং ছেলের বিষয়ে
জিজ্ঞেস করেন। তিনি ছেলেটির মৃত্যুর
খবর শুনে তাঁকে সান্তনা
দিয়ে বললেন, “তোমার কি পছন্দ হয়
বলো। তোমার ছেলে বেঁচে থাকুক
তুমি কি এটা পছন্দ
করো, নাকি এটা পছন্দ
করো, ছেলে প্রথমে যাক
ও তোমার জন্যে জান্নাতের দরজা খুলে দিক
এবং তুমি যখন সেখানে
পৌঁছবে সে তোমাকে স্বাগত
জানাবে?'
সেই
সাহাবী জবাব দেন, 'হে
আল্লাহর নবী! সে আমার
থেকে আগে জান্নাতে চলে
যাক এবং আমার জন্যে
জান্নাতের দরজা খুলে দিক,
এটাই আমার অধিক পছন্দ।
তখন
তিনি বললেন, 'সেই ছেলে তোমার
জীবিত অবস্থায় মরেছে। এখন এটাই ঘটবে
যে, সে তোমার জন্য
জান্নাতের দরজা খুলে তোমাকে
স্বাগত জানাবে।' (তারগীব ও তারহীব, নাসাঈ)
সফরে দায়িত্বশীলদের
পেছনে
থাকা
উচিত
হযরত
জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে কাফেলার পিছনে
থাকতেন। তিনি দুর্বল লোককে
এগিয়ে দিতেন। কখনো তাদেরকে নিজের
যানের উপর বসিয়ে নিতেন
এবং তাদের জন্য দোয়া করতেন।
নবীজী সঙ্গী-সাথীদের
সাথে
সুখ
দুঃখ
ভাগ
করে
নিতেন
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “বদরের যুদ্ধ কালে এক উটের উপর তিন তিন জন লোককে চড়তে হতো (বাহনের সংখ্যা কম ছিল)। আৰু লাবাবা ও আলী ইবনে আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলেন। যখন নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পায়ে হাঁটার পালা এলো তখন
তারা দু'জন বললেন,
'আপনি উটে চড়ে চলুন,
আমরা পায়ে হেঁটে যাবো।' নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'তোমরা দু'জন আমার
থেকে বেশী শক্তিশালী নও।
তাছাড়া আমি তোমাদের দু'জনের চেয়ে পায়ে
হেঁটে যাবার পুরস্কারের অধিকতর আকাংখী। মেশকাত
মহানবীর দয়া
ও
মহত্ব
হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেছেন, আনসারী নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমন কথা বলে
যা থেকে জানা যায়,
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের উপর তার ক্রোধ
আছে। একথা আমি সহ্য
করতে পারিনি। আমি নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গিয়ে সে কথা বলে
দেই। কথাটি তাঁকে বলতে আমার খুবই
দুঃখ হচ্ছিল।
তিনি
বললেন, ‘মুসা আলাইহিস সালামকে
এর থেকে অধিক দুঃখ
দেয়া হয়েছে। তিনি সবর করেছেন।'
তিনি আরো বলেন, ‘এক
নবী ছিলেন। তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে
মিথ্যা বলে ঘোষণা করে,
এবং তাঁকে পাথর মেরে আহত
করে। তখন সেই নবী
নিজের মুখের রক্ত মুছতে মুছতে
বললেন, 'হে আল্লাহ, তুমি
আমার সম্প্রদায়কে ক্ষমা করে দাও, কারণ
তারা জানে না।” (মুসনাদে
আহমদ)
নবীজী বিপদাপদে
সবার
আগে
থাকতেন
হযরত
বারা ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেছেন, “আল্লাহর কসম, যখন লড়াই
হতো তখন তিনি সবার
আগে থাকতেন এবং তাঁর আড়ালে
আমরা আত্মরক্ষা করতাম। আর যে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে থাকতো তাকেই আমাদের মধ্যে সব থেকে সাহসী
বলে স্বীকার করা হতো।” (বোখারী)
পোস্ট ট্যাগঃ