মুমিনের ১০ টি বৈশিষ্ট্য
মুমিনের ১০ টি বৈশিষ্ট্য
আজকে
আমরা একজন মুমিনের ১০ টি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করব। আপনারা আজকে একজন মুমিনের
১০ টি বৈশিষ্ট্য এবং মুমিনের জীবনী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবো ইনশাআল্লাহ। নিচে দশটি
- আল্লাহর পথে
যুদ্ধ
কারী
- তাওবাকারী
- ইবাদাতকারী
- আল্লাহর প্রশংসাকারী
- সিয়াম পালনকারী
- রুকু কারী
- সিজদাকারী
- সৎ
কাজের
আদেশদাতা
- অসৎ
কাজের
নিষেধকারী
- আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা হেফাযতকারী
মুমিনের জীবনী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে নিচের পোস্টটি বিস্তারিত পড়তে হবে মনোযোগ সহকারে।
পেটে পাথর বেঁধে দ্বীন কায়েমের সংগ্রাম করার দৃষ্টান্ত
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে শাকীক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “আমি হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে এক বছর মদীনা মুনাওয়ারায় ছিলাম। একদিন আমরা হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুমার ঘরের কাছে বসে আছি এমন সময় তিনি বললেন,
‘এক সময় আমাদের
অবস্থা এমন ছিল যে,
আমাদের গায়ে কর্কশ জীর্ণ মোটা চাদর ছাড়া
নরম কাপড় ছিল না। কয়েক
দিন কেটে গেলেও আমরা
এই পরিমাণ খাদ্য পেতাম না, যা দিয়ে
মানুষ পেট সোজা রাখতে
পারে। আমরা পেটে পাথর
চাপা দিতাম যাতে আমাদের শরীর
সোজা থাকে। আমরা কাপড় দিয়ে
ঐ পাথর পেটে বেঁধে
রাখতাম।” (মুসনাদে আহমদ)
দ্বীনের পথে
চলতে
গিয়ে
দুঃখ-কষ্টের
তোয়াক্কা
করলে
চলে
না
হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “মক্কার মুশরিকদের এক দলের রাস্তা অবরোধ করার জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু ওবায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে আমাদেরকে প্রেরণ করেন। আমাদের সঙ্গে তিনি এক থলে খেজুর দিয়ে দেন।
হুজুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষে এর বেশী আর
কিছু আমাদের জন্যে দেয়া সম্ভব ছিল না। সুতরাং
আবু ওবায়দা রাদিয়াল্লাহু আমাদেরকে প্রতি দিন একটি করে
খেজুর খেতে দিতেন। কোন
একজন জাবির রাদিয়াল্লাহুকে জিজ্ঞেস করেন, 'আপনারা একটিমাত্র খেজুর নিয়ে কি করতেন?'
তিনি
বললেন, 'আমরা সে খেজুর
মুখে নিয়ে ছেলেদের মত অনেকক্ষণ ধরে
চুষতাম, তারপর পানি খেয়ে নিতাম।
এতেই যথেষ্ট হয়ে যেতো। নাহলে
লাঠি দিয়ে গাছের পাতা পেড়ে ধুয়ে
তা খেয়ে নিতাম।” (মুসলিম)
সাহাবাগণের কষ্টকর
জিহাদী
জীবনের
বর্ণনা
হযরত সা'আদ ইবনে আবি ওক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “আমি আরবদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি যে আল্লাহর পথে মুশরিকদের উপর তীর দিয়ে আক্রমণ করি। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে গিয়ে জিহাদ করতাম।
আর আমাদের অবস্থান
এমন হতো যে, আমাদের
কাছে খাবার কিছুই থাকতো না। কাঁটা-ঝাড়ের
পাতা ও বাবলা পাতা
আমাদের খাদ্য হতো। এমনকি আমাদের
প্রত্যেকের অবস্থা এমন হয়ে গিয়েছিল
যে, আমাদের মল ছাগল-নাদির
মত হতো, যা একটুও
নরম হতো না।” (বোখারী
ও মুসলিম)
কোন দুঃখ
কষ্টই
মুমিনকে
কাবু
করতে
পারে
না
হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুস'আব ইবনে ওমায়ের রাদিয়াল্লাহুকে তাঁর কাছে আসতে দেখেন। তার অবস্থা ছিল এই যে, সে মেষের চামড়া লুঙ্গি হিসেবে পরেছিল। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'এ ব্যক্তিকে দেখো, যার অন্তরকে আল্লাহ ইসলামের আলোয় আলোকিত করে রেখেছেন।
আজ একে এ অবস্থায় দেখছি। অথচ ইসলাম কবুল করার পূর্বে তাকে তার পিতা-মাতা খুবই ভাল খাদ্য খাওয়াতো। তার শরীরে থাকতো দু'শ দিরহামের ঝলমলে পোশাক। কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ভালবাসা তাকে আজ এ অবস্থায় নিয়ে এসেছে।
কিন্তু ইসলামের সম্পদ পেয়েই সে আজ খুশী।
অতীতের আরামের জীবনের কথা সে কখনো
মনেও করে না। যদিও
নবীজীর সাহাবীগণ তার এ করুণ
অবস্থা দেখে কেঁদে ফেলতেন।”
(তারগীব ও তারহীব, তাবরানী)
যখন সচ্ছলতার
চাইতে
অসচ্ছলতা
উত্তম
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “শীতের এক সকালে আমি ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘর থেকে বের হই। শীত আমাকে কাবু করে ফেলছিল। আমার ঘরে একটা পশমী কাপড় ছিল, সেটাকে আমি গলায় জড়িয়ে গরম পাবার আশায় বুকের সঙ্গে বেঁধে নিই।
আল্লাহর কসম,
আমার ঘরে সেদিন কোন
রকম খাবার জিনিসই ছিল না। আমি
জানতাম, যদি হুজুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরে খাবার কিছু
থাকতো তাহলে তিনি অতি অবশ্যই
তা আমাকে পাঠিয়ে দিতেন।
এ হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, 'এমন অবস্থায় আমি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে মসজিদে উপস্থিত হই। সেখানে সাহাবাদের একটি দল আগে থেকেই বসে ছিল। এমন সময় মুস'আব ইবনে উমায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু সেখানে উপস্থিত হন।
তিনি একটি চাদর
গায়ে দিয়ে ছিলেন যাতে চামড়ার তালি
লাগানো ছিল। ইসলাম কবুল
করার আগে তিনি মক্কার
এক অতি অবস্থাপন্ন যুবক
ছিলেন। তিনি আরাম ও উপভোগের
জীবন অতিবাহিত করতেন।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এই অবস্থায় দেখলেন। তখন তাঁর ইসলাম কবুল করার পূর্বের অবস্থা মনে পড়ে গেল। সে কথা মনে হতেই নবীজীর চোখ দিয়ে অশ্রু বেরিয়ে এলো। তারপর তিনি সবাইকে জিজ্ঞেস করেন, 'তোমরা আজ উত্তম অবস্থায় আছো নাকি সেই সময় উত্তম অবস্থায় থাকবে যখন সকাল-সন্ধ্যায় তোমাদের সামনে থালা ভর্তি রুটি ও মাংস হাজির করা হবে?
সকালে তোমরা এক পোশাকে থাকবে আর সন্ধ্যায় আর এক পোশাকে? যখন তোমাদের ঘরেও সেই রকম পর্দা ঝুলবে যেমন দামী পর্দা খানায়ে কাবায় ঝুলতে থাকে তখন আমরা তাঁর প্রশ্নের জবাবে বলি, 'আমরা তো সচ্ছল অবস্থাতেই উত্তম থাকবো।'
তিনি বললেন, “না,
বরং তোমরা এই অনাহার ও
উপবাসের সময়ই উত্তম অবস্থায় আছো। (কারণ সচ্ছল অবস্থায়
থাকলে মানুষ আল্লাহ ও তাঁর দ্বীনকে
ভুলে যায়। দুনিয়াদারীর রোগ তাদের ঘিরে
ফেলে এবং আখেরাতের সঙ্গে
তাদের জীবনের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়।” (তারগীব
ও তারহীব)
দোয়া করার
ফজিলত
ও
বদর
যুদ্ধ
হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে
আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
“বদর যুদ্ধের সময় নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৩১৮ জন লোক
নিয়ে মদীনা থেকে বের হন
এবং এই দোয়া করেন,
‘হে আল্লাহ! এরা পায়ে হেঁটে
যাচ্ছে, এদের বাহন দাও।
হে আল্লাহ! এদের শরীরে কাপড়
নেই, এদের পোশাক দাও।
হে আল্লাহ! এরা ক্ষুধার্ত, এদের
তৃপ্ত করে দাও।'
সুতরাং
আল্লাহ বদর যুদ্ধে মুসলমানদের
বিজয় দান করেন এবং
যখন তারা মদীনায় ফিরে
আসে তাদের প্রত্যেকের কাছে একটা অথবা
দুটো উট ছিল এবং
প্রত্যেকে খাবার ও কাপড় পেয়েছিল।”
(আবু দাউদ)
- ব্যাখ্যা: তারা আল্লাহর দাসত্ব করার যে প্রতিশ্রুতি আল্লাহকে দিয়েছিলেন তা পূর্ণ করেছিলেন। অসামান্য সবর ও সন্তুষ্টির সঙ্গে দীর্ঘ তের চৌদ্দ বছর ধরে সব রকমের কোরবানী দিয়েছিলেন। যখন আল্লাহ দেখলেন, তাঁরা তাঁদের জীবন ও সম্পদকে আল্লাহর কাছে যথাযথভাবে বিক্রি করেছেন তখন তিনি তাদের জন্য সাহায্যের দরজা খুলে দিলেন।
- ফলে বদরে তাঁরা পার্থিব পুরস্কারের প্রথম কিস্তি লাভ করে এবং ক্রমাগত লাভ করতে থাকে। আখেরাতে তাঁরা যে পুরস্কার পাবেন এ দুনিয়াতে তার আন্দাজ কিভাবে যেতে পারে? তাবুকের কঠিন পরীক্ষার উত্তীর্ণ হবার পর তাদের প্রভু বলেন, 'নিঃসন্দেহে আল্লাহ মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জীবন ও তাদের সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিলেন।
- (কারণ এরা নিজেদের বেচা কেনায় সাচ্চা প্রমাণিত হয়েছে ও প্রত্যেক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে)। দেখো, জীবন অপেক্ষা প্রিয়তর আর কিছু হয় না। আর এরা বহু বছর ধরে জীবন হাতে নিয়ে শত্রুর সঙ্গে লড়াই করে আসছে।
- তাঁরা শত্রুদের নিহত করছে এবং নিজেরাও শহীদ হচ্ছে কিন্তু পিছু হটে আসেনি। তাদের প্রতি জান্নাতের পাকা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আল্লাহ তা পূরণ করার দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়েছেন। তাওরাত, ইনজিল এবং কোরআনে এই প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
- আর প্রতিশ্রুতি পালনে আল্লাহ অপেক্ষা অধিকতর সাচ্চা আর কে হতে পারে? সুতরাং হে ঈমানদাগণ! নিজেদের জীবন ও সম্পদের এই বেচা-কেনায় সন্তুষ্ট হয়ে যাও, কেননা ক্রেতা জান্নাতের বিনিময়ে তা ক্রয় করে নিয়েছেন, এখন বেচা-কেনা পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।
(সূরা
তাওবার ১১১ নং আয়াতের
ব্যাখ্যামূলক অনুবাদ। উপরে যে প্রতিশ্রুতির
উল্লেখ করা হয়েছে তা
২৮ পারায় সুরা সাফ-এর
দ্বিতীয় রুকূতে পড়ুন।)
অভাব অনটনের
পরেই
আসে
সমৃদ্ধি
হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেছেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত খায়বারে জয়লাভ না করি ততক্ষণ
পর্যন্ত আমরা পেট ভরে
খেজুর খেতে পেতাম না।
” (বোখারী)
- ব্যাখ্যা: এর কারণ হলো, তখনও পরীক্ষা চলছিল। ইসলামের সংরক্ষণ ও বিজয়ের জন্যে মুসলমানরা নিজেদের সব কিছু বিসর্জন দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। এমতাবস্থায় সম্পদ ও অর্থের চিন্তা কেমন করে করা যাবে? পেট ভরে খাবার কিভাবে পাওয়া যাবে? তারা তো
- মূলতঃ খেজুর বাগানে পানি দেয়া ও সার দেয়ার কাজে লিপ্ত ছিল। খায়বরের বিজয়ের পর ইহুদীরা শক্তিহীন হয়ে পড়ে। মক্কার মুশরিকরাও চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। তাদের সামরিক বিপর্যয় এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে, তাদের আক্রমণ করার শক্তি বিলুপ্ত হয়ে যায়। তারপর ক্ষমতা গ্রহণের পালা আসে মুসলমানদের। অভাব অনটনের দুর্দিন কেটে গিয়ে জাতীয় জীবনে সুদিন ও সমৃদ্ধির সূচনা হয়।