নবীজির জীবনী কাহিনী
নবীজির জীবনী
কাহিনী
দানশীল হওয়ার
জন্য
প্রেরণা
দান
হযরত
আবু মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু
আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বলেন, “যখন কোন ভিক্ষা
প্রার্থী কিছু অভাবগ্রস্ত লোক
তাঁর কাছে আসতো তখন
তিনি বলতেন, 'এর পক্ষে যদি
তোমরা সুপারিশ করো তাহলে তোমরা
প্রতিদান ও সাওয়াব পাবে,
এবং আল্লাহ যা চান তা
তাঁর নবীর মুখ দিয়ে
সিদ্ধান্ত করিয়ে দেন।' (বোখারী ও মুসলিম)
- ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসের তাৎপর্য হলো, যখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কোন ব্যক্তি চাইতে আসতো তখন তিনি সবাইকে এ হিদায়াত করতেন, এর সম্পর্কে ভাল কথা বলো। একে অপরকে সাহায্য করতে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করো। এটা পুরস্কার ও সাওয়াবের কাজ। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা দেবার দিয়ে দিতেন।
রাসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি
ওয়াসাল্লাম
কেমন
হাসতেন
হযরত
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর তালু দেখা
যাবে এমন ভাবে কখনও
হাসতে দেখিনি’ তিনি কেবল মুচকি
হাসি হাসতেন।” (অর্থাৎ উচ্চস্বরে হাসতেন না।) (বোখারী ও মুসলিম)
পুরুষের জন্য
হলুদ
রঙের
পরিধেয়
বস্ত্র
অপছন্দ
করতেন
নবীজী
হযরত
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
“মন খুব নরম হওয়ার
কারণে নবীজী কাউকে তাঁর অপছন্দনীয় কাজের
জন্যে সরাসরি আঘাত করতেন না।
একদিন হলুদ কাপড় পরা
এক ব্যক্তি তাঁর কাছে উপস্থিত
হয়। যখন সবাই খাবার
জন্যে উঠে দাঁড়ায় তখন
নবীজী সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, 'যদি
ও হলুদ কাপড় পরিবর্তন
করে নিতো বা কাপড়
থেকে হলুদ ভাবটি দূর
করে দিতো তাহলে কতই
না ভালো হতো।” (আল-আদাবুল মুফরাদ)
নবীজী শান-শওকত
পছন্দ
করতেন
না
হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেছেন, “একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু
আনহুর ঘরে যান কিন্তু
তাঁর সঙ্গে দেখা না করে
দরজা থেকেই ফিরে আসেন। কারণটি
ছিল, তিনি দরজায় রঙিন
চিত্রিত পর্দা টাঙানো দেখতে পান। সাধারণতঃ তিনি
কোন সফর থেকে ফিরে
এলে প্রথমেই ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহুমার সঙ্গে দেখা করতেন।
হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু
বলেন, 'হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু
ঘরে এসে দেখেন ফাতেমা
রাদিয়াল্লাহুর মন খারাপ এবং
বিচলিত। তিনি এর কারণ
জিজ্ঞেস করেন। হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু
আনহুমা বললেন, 'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এখানে এসেছিলেন এবং দরজা থেকেই
ফিরে গেছেন। আমার কাছে আসেন
নি।'
এ কথা শুনে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন, 'হে আল্লাহর রাসূল। আপনি আমাদের ওখানে গিয়াছিলেন কিন্তু ফাতিমার সঙ্গে দেখা করেননি, এতে সে খুবই দুঃখ পেয়েছে।' তখন তিনি বললেন, দুনিয়ার প্রতি আমার কি আকর্ষণ? আমার রঙ্গিন নক্সা করা পর্দার কি দরকার।'
বর্ণনাকারী বলেন, 'হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহুমার কাছে ফিরে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন তা তাঁকে জানান। ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, 'আপনি যান এবংরাসূলের
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করুন, পর্দার বিষয়ে তিনি আমাকে কি
হুকুম দিচ্ছেন?'
নবী
করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী রাদিয়াল্লাহুকে
বললেন, 'যাও, ফাতেমাকে গিয়ে
বলো যেন সে ওই
পর্দা অমুকের ঘরে পাঠিয়ে দেয়
(যাতে তার মেয়েরা জামা
তৈরী করতে পারে। সম্ভবত
তাদের প্রয়োজন ছিল।)
(মুসনাদে
আহমদ, ইবনে হাম্বল)
- ব্যাখ্যাঃ দরজায় রঙ্গিন পর্দা লাগানো শরীয়ত অনুযায়ী কোন গুনাহ নয়। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের সময়ের মোমিন পুরুষ ও মহিলাকে কিয়ামত পর্যন্ত আগত মোমিন পুরুষ ও মহিলাদের জন্যে আদর্শ ও নমুনা তৈরী করতে চাইতেন। এ জন্যে তিনি যে এটা অপছন্দ করেন তা প্রকাশ করেন। বস্তুত তিনি নিজের জন্য এবং নিজ কন্যার জন্য শান-শওকত পছন্দ করতেন না।
রাসূলে মকবুলের
খাওয়া-দাওয়া
নবী
করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন খাবার জিনিসের
ব্যাপারে কখনো কোন অভিযোগ
করেননি এবং কখনো তার
মধ্যে দোষ ধরেননি। যদি
তাঁর খেতে মন চাইতো
তাহলে খেতেন আর যদি মন
না চাইতো তাহলে খেতেন না।” (বোখারী ও মুসলিম)
- ব্যাখ্যাঃ এখানে খাবারের অর্থ হলো ঘরে যে খাবার রান্না হতো তা এবং কোন নিমন্ত্রণে তাঁর খাবার জন্যে যা দেয়া হতো তাও।
রাসূলে মকবুল
খাওয়ার
পর
যে
দোয়া
পাঠ
করতেন
হযরত
আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
“হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খাওয়া শেষ
করতেন এবং দস্তরখান তুলে
ফেলা হতো তখন তিনি
বলতেন, 'সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। অনেক বেশী, উত্তম
এবং বরকতপূর্ণ প্রশংসা। এমন প্রশংসা যা
আমরা নিজেরাই করি। এমন প্রশংসা,
যা আমরা কখনোই ছাড়ি
না। এমন প্রশংসা যে
বিষয়ে আমরা কখনো বেপরোয়া
নই। এমন প্রশংসা, যার
পরিপূর্ণ মালিক আমাদের প্রভু।” (বোখারী, আবু দাউদ)
মহানবীর দুটো
আদর্শ
গুণ
হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল
আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
“নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে হেলান দিয়ে খানা খেতে (যেমন
বাদশা ও অনেক বড়লোক
খেয়ে থাকেন) কেউ কখনো দেখেনি।
আর কেউ কখনো এও
দেখেনি যে, তিনি যাচ্ছেন
আর তাঁর পিছনে দু'জন রক্ষী ছুটছেন
তার সাথে সাথে।”
- ব্যাখ্যা: নিজের সঙ্গে রক্ষী রাখা রাজা বাদশাদের রীতি, যারা সরে যাও, সরে যাও বলে চিৎকার করতে থাকে। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন রীতির প্রবর্তন করেননি। কুদামা ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “আমি কোরবানীর দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ধূসর রং-এর উটনীতে চড়ে শয়তানকে পাথর টুকরো মারতে দেখেছি। সেখানে না ছিল সিপাহীদের দৌড়াদৌড়ি, না ছিল 'হটে যাও' 'সরে যাও' আওয়াজ। (তারগীব ও তারহীব, ইবনে খোষায়মাহ)
- ব্যাখ্যা: এটা হলো শেষ হজ্জ্বের ঘটনা যখন সমগ্র আরব ভূগন্ড তাঁর অধীনস্ত ছিল।
অসুস্থ ব্যক্তিকে
দেখতে
যাওয়া
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “আমরা রাসূলুল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসে ছিলাম এমন সময় এক আনসার সেখানে উপস্থিত হয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিলেন । যখন তিনি ফিরে যেতে উদ্যত হলেন তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করেন, 'ভাই সা'আদ ইবনে উবাদার অবস্থা কি?' (তিনি অসুস্থ ছিলেন) আনসার জবাব দেন, “তিনি ভালো আছেন।' রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে কে সা'আদকে দেখতে চাও?
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে দাঁড়ান এবং আমরাও তাঁর সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়াই। আমরা দশ জনের অধিক ছিলাম। আমাদের পায়ে জুতো ছিল না, এমনকি চামড়ার মোজাও ছিল না। ছিল না মাথায় কোন টুপি আর গায়ে কোন জামা। এ অবস্থায় আমরা কঠিন পথে চলতে থাকি ও সা'আদ ইবনে উবাদার কাছে পৌঁছাই। তাঁর কাছ থেকে তার পরিবারের লোকজন সরে যায় এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গে যারা গিয়েছিল সবাই তাঁর কাছে যান এবং অসুস্থতার কথা বলেন এবং তাকে দেখেন।
পোস্ট ট্যাগঃ