নবীজির সুন্নত সমূহ
নবীজির সুন্নত সমূহ
মাথার চুল
বড়
রাখা
এবং
টাখনুর
নিচে
কাপড়
পরা
হযরত
ইবনুল খানযালিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'খুরায়ম উসায়দী খুবই ভাল লোক,
যদি তাঁর মাথার চুল
বড় না হতো এবং
তার ইজার টাখনুর নিচে
না থাকতো।' যখন খুরায়ম হুজুর
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই কথা জানতে
পারেন তখন তিনি খুর
দিয়ে নিজের বড় বড় চুলকে
কান পর্যন্ত কেটে দেন এবং
ইজার পায়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত উঠিয়ে নেন।’
নির্দোষ আনন্দ
উপভোগে
বাধা
নেই
আবু
বাকর বিন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
“নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণ (আনন্দের সময় খুশীতে) একে
অন্যের উপর তরমুজের ছাল
ছুঁড়ে মারতেন। কিন্তু যখন ইসলামের প্রতিরক্ষার
সময় এসে যেতো তখন
তাঁরা খুব গম্ভীর হয়ে
যেতেন।” (আল আদাবুল মুফরাদ)
- ব্যাখ্যা: এর অর্থ হলো, সাহাবাগণ সাধারণ মানুষের মতই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতেন এবং পরস্পরের মধ্যে হাসি-তামাশাও করতেন। কিন্তু যখন দ্বীনের সংকট দেখা দিত, তখন তার মোকাবেলায় তাঁরা পরিপূর্ণ দায়িত্বশীলতার সাথে দাঁড়িয়ে যেতেন। তাঁদের সমগ্র মনোযোগ এদিকে কেন্দ্রীভূত হয়ে যেতো বলে তাঁদের খুব গম্ভীর দেখাতো। এই গম্ভীরতার মধ্য দিয়ে তাঁদের দৃঢ়তা ও বাহাদুরীই প্রকাশ পেতো।
দ্বীন পালন
করতে
হবে
রাসূলের
সুন্নাত
অনুযায়ী
কুফাবাসীগণ
হযরত ওমর বিন খাত্তাব
রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে হযরত সাদ
বিন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু
আনহুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তখন তিনি তাঁর
স্থানে হযরত আম্মার বিন
ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু আনহুকে গভর্নর মনোনীত করে পাঠান। কুফাবাসীগণ
তাঁর বিরুদ্ধেও অভিযোগ করে এবং বলে
যে, “তিনি যথাযথভাবে নামায
পড়েন না।' হযরত ওমর
রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে বললেন,
'হে আবু ইসহাক! (আম্মার
রাদিয়াল্লাহু আনহুর কুনিয়াত) এরা বলছে, তুমি
যথাযথভাবে নামায পড়ো না।
হযরত
আম্মার রা. জবাব দেন,
'আল্লাহর কসম, আমি তাদের
ঠিক সেই ভাবে নামায
পড়াই, যেভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়াতেন। আমি এশা ও
মাগরিবের নামাযের প্রথম দুই রাকাত খুব
ধীরে ধীরে পড়ি এবং
এশার তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাত
হালকাভাবে পড়ি। তখন হযরত ওমর
রাদিয়াল্লাহু বললেন, 'হে আবু ইসহাক,
তোমার সম্পর্কে প্রথম থেকেই আমার ধারণা ছিল,
তুমি সুন্নাত অনুযায়ী নামায পড়ো।'
তারপর
তিনি আম্মার রাদিয়াল্লাহু আনহুর ব্যাপারে কুফাবাসীদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্যে আম্মার
রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে কিছু লোককে পাঠিয়ে
দেন। তাঁরা সেখানে প্রত্যেক মসজিদে গিয়ে অনুসন্ধান করেন এবং সমস্ত
মানুষকে হযরত আম্মার রাদিয়াল্লাহু
আনহুর প্রশংসা করতে দেখেন।”
দানের অভ্যাস
তৈরী
করা
মুসলমানের
বৈশিষ্ট্য
হযরত
জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
“একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী আমর ইবনে
আওফ গোত্রের মহল্লায় উপস্থিত হন। সেদিন বুধবার
ছিল। সেখানে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “হে আনসার দল!”
সবাই বলল, 'হে আল্লাহর রাসূল!
আমরা সকলেই উপস্থিত, বলুন কি বলবেন।
তিনি তাদেরকে বললেন, 'জাহেলিয়াতের যুগে যখন তোমরা আল্লাহর উপাসনা করতে না, তখন তোমরা দুর্বল ও সহায় সম্বলহীন মানুষের বোঝা তুলি দিতে, নিজের ধন-দৌলত গরীবকে দান করতে, মুসাফিরকে সাহায্য করতে; কিন্তু এখন যখন আল্লাহতায়ালা তোমাদের ইসলাম ও নবীর ওপর ঈমান আনার
তওফিক দান করেছেন এবং
তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন তখন তোমরা বাগানকে
রক্ষা করার জন্যে তার
চারদিকে পাঁচিল দিয়ে দিচ্ছো। দেখো, যদি মানুষ তোমাদের
বাগানের ফল খায় তাহলে
তোমরা প্রতিদান পাবার অধিকারী হবে।' হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহ
বলেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ কথা শুনে
সকলে নিজ নিজ খেজুর
বাগানের দরজা ভেঙ্গে ফেলে।
সেদিনই ত্রিশটি দরজা ভেঙ্গে ফেলা
হয়েছিল।” (তারগীব ও তারহীব);
অযাচিত প্রাপ্তি
ফিরিয়ে
দেয়া
উচিত
নয়
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “যখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কোন কিছু দান করতেন তখন আমি বলতাম, ‘যে আমার থেকে অধিক অভাবী তাকে দিন।' হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, 'এগুলো তুমি গ্রহণ করো। যখন তোমার
কাছে কোন মাল আসে এবং তা অযাচিতভাবেই আসে, তুমি তা পাবার আশাও করোনি, তখন তা গ্রহণ করো এবং তা নিজের সঞ্চয়ে রাখো। যদি তোমার প্রয়োজন থাকে তাহলে তা ব্যবহার করো আর যদি মন চায় তাহলে তা থেকে দান করো। কিন্তু যে মাল তুমি পাওনি তার জন্য কখনো লোভ করো না।' হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহুর
পুত্র হযরত সালিম রাদিয়াল্লাহু
বর্ণনা করেছেন, ‘এই কারণে আব্বা
কারো কাছে কিছু চাইতেন
না এবং অযাচিতভাবে যদি
কেউ কিছু দিত তাহলে
তিনি তা ফিরিয়েও দিতেন
না।” (বোখারী ও মুসলিম)
- ব্যাখ্যা: এই হাদীস থেকে জানা গেল, যদি অযাচিতভাবে কোন মাল কারো কাছে এসেই যায় তাহলে তা নিতে অস্বীকার করা উচিত নয়। কিন্তু মনে কারো কাছ থেকে কিছু পাবার প্রত্যাশা জাগলে যদি সে তা দেয়ও তাহলেও তা গ্রহণ করা উচিত নয়।
ছোটদের সালাম
করার
রীতি
হযরত
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন ছোটদের
কাছ দিয়ে যেতেন তখন তাদের সালাম
দিতেন এবং বলতেন, “নবী
করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোটদের সালাম করতেন।” (বোখারী ও মুসলিম)
সাহাবাগণ যেভাবে
রাসূলের
অনুসরণ
করতেন
হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু
আনহু সম্পর্কে বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন, “যখন তিনি মক্কা
ও মদীনার মাঝখানে এক গাছের কাছে
উপস্থিত হতেন তখন তার
নিচে আরাম করতেন এবং
সবাইকে বলতেন, 'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রকম করতেন।”
(তারগীব, মুসনাদে বাযযার)
- ব্যাখ্যা: এমন কথা নয় যে, কেবল দিনে যখন সেখানে উপস্থিত হতেন তখন আরাম করতেন। বরং রাত বা দিন যখনি সেই গাছের কাছে উপস্থিত হতেন তখনি সেখানে কিছু সময়ের জন্য তার নিচে বসে আরাম করতেন। একথাও নয় যে, তিনি অনুসরণ ও আনগত্যের অর্থ জানতেন না। বরং তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালবাসার কারণে এ রকম করতেন।
সাহাবাগণ কর্তৃক
নবীজীর
অনুসরণের
নমুনা
প্রখ্যাত
তাবেয়ী হযরত মুজাহিদ রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেছেন, “এক সফরে আমরা
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে ছিলাম। আমরা এক স্থানে
পৌঁছলে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু
আনহু একদিকে চলে যান।
তাঁকে
জিজ্ঞেস করা হলো, 'আপনি
এ রকম করলেন কেন?'
তিনি বললেন, 'আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ রকম করতে
দেখেছি, এ জন্যে আমিও
এরকম করেছি।” মুসনাদে আহমাদ।
পোস্ট ট্যাগঃ