শাহাদাত নামের অর্থ কি
শাহাদাত নামের অর্থ কি
আরবি শব্দ ’শাহাদাত’ নামের অর্থ হচ্ছে সাক্ষ্য দেওয়া। তাছাড়া এ নামের আরও অর্থগুলোর মধ্যে রয়েছে আল্লাহপাকের একত্ববাদ ও নবীজির ওপর শপথ নেওয়াকেও বুঝিয়ে থাকে। তাই শাহাদাত নামটি ইসলাম নাম হিসেবে আপনার সন্তানের জন্য আপনি রাখতে পারেন। শাহাদাত নামের অর্থ কি তা জানার পর আমরা জানবো যে জান্নাতের প্রতি সাহাবীগণের আকাংখা কেমন ছিলো তা জানার জন্য।
গনীমতের লোভ নয় মুমিন জিহাদ করে শাহাদাতের লোভে
হযরত শাদ্দাদ ইবনে আল হাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “এক বেদুঈন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে তাঁর হাতে ঈমান আনেন এবং বলেন, 'আমি আমার ঘরদোর ছেড়ে এখানে মদীনায় এসে আপনার কাছে থাকবো।'
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বিষয়ে সাহাবাদের কিছু হেদায়াত দান করেন। তারপর যখন জিহাদ হলো ও গনীমতের মাল পাওয়া গেল, তার মধ্য থেকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওই বেদুঈনের জন্য কিছু গনীমতের মাল রেখে সাহাবীদের বললেন, ‘সে যখন আসবে তখন তাকে দিয়ো।” গনীমতের মাল বন্টনের সময় বেদুঈন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।
মুজাহিদরা যখন উট চরাতে নিয়ে গেলেন তখন তিনি ফিরে এলে সকলে তাঁর অংশ তাঁকে
দিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘এসব কি?' সবাই বললেন, 'হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তোমাকে এগুলো দান করেছেন।' তখন তিনি আপন অংশ নিয়ে হুজুর
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন, 'হুজুর, এসব কি?'
তিনি বললেন, ‘এ তোমার অংশ, যা আমি তোমাকে দান করেছি।'
তিনি বললেন, 'আমি তো এ মালের জন্য আপনার সঙ্গী হইনি। আমি তো এ আশায় আপনার আনুগত্য স্বীকার করেছি যে, শত্রুর কোন তীর আমার গলায় এসে বিদ্ধ হোক আর আমি শহীদ হয়ে যাই ও জান্নাতে প্রবেশ করি।'
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'যদি তোমার নিয়ত সহি হয়
তাহলে আল্লাহ তোমার এ ইচ্ছা অবশ্যই পূরণ করবেন।' তার কিছু দিন পর শত্রুদের
বিরুদ্ধে
জিহাদ
করার জন্য আবারও ময়দানে নেমে আসেন মুসলমানগণ।
তিনিও ওদের সঙ্গী হন এবং জিহাদে অংশ গ্রহণ করেন । তারপর তার মৃত্যুদেহ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আনা হয়। তার গলায় শত্রুর এক তীর বিদ্ধ হয়েছিল, যার ফলে তার মৃত্যু হয়। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করেন, ‘এই কি সে ব্যক্তি, যে শাহাদাতের আকাঙ্খা করছিল?' সবাই বললেন, 'হ্যাঁ, এই সে ব্যক্তি।' তিনি বললেন,
‘এর নিয়ত সহি ছিল আর আল্লাহ তার আকাঙ্খা পূরণ করে দিয়েছেন।' তারপর তিনি
নিজের পবিত্র জুব্বা খুলে তা দিয়ে তার কাফন করেন। তারপর জানাযা পড়ে তার জন্য
এই ভাষায় দোয়া করেন: “হে আল্লাহ, এ আপনারই বান্দা। এ আপনারই রাস্তায় হিজরত
করেছে এবং আপনারই রাস্তায় শাহাদাত লাভ করেছে, আমি এর সাক্ষী।” (নাসাঈ)
জান্নাতের দরজা তলোয়ারের ছায়ার নীচে
হযরত আবু মুসা আশ'আরী রাদিয়াল্লাহু আনহুর পুত্র আবু বকর বর্ণনা করেছেন, “আমি যুদ্ধক্ষেত্রে আমার পিতাকে একথা বলতে শুনেছি, 'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি 'ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'জান্নাতের দরজা তলোয়ারের ছায়ার নীচে।'
সাধারণ পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি উঠে আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করেন, 'আপনি কি সত্যিই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে এ কথা শুনেছেন?' তিনি বলেন, 'হ্যাঁ।' তখন তিনি আপন সঙ্গীদের কাছে গিয়ে বললেন, 'তোমরা আমার শেষ সালাম গ্রহণ করো।'
তারপর তিনি নিজের তলোয়ারের খাপ ভেঙ্গে দূরে নিক্ষেপ করেন এবং উন্মুক্ত তলোয়ার নিয়ে শত্রুদের দিকে এগিয়ে যান। অনেক শত্রুকে নিধন করে শেষ পর্যন্ত তিনি শহীদ হয়ে যান। (মুসলিম ও তিরমিযী)
আখেরাতের চিন্তা এবং জান্নাতের আকাঙ্খা
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “আফ্রিকার কোন এক
ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে
বলেন, 'ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আপনাকে নবুয়ত দান
করা
হয়েছে এবং আল্লাহতায়ালা আপনাকে সুন্দর চেহারা ও বর্ণ দান করেছেন। আমাদের মধ্যে কোন নবী আসেননি এবং আমরা কালো রঙের মানুষ। আমাকে বলুন, যদি আমি ঈমান আনি ও ঈমান অনুযায়ী আমল করি তাহলে কি আপনার সঙ্গে জান্নাতে থাকতে পারবো?' তিনি বললেন,
'সেই সব লোক, যারা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলবে এবং এর ওপর ঈমান রাখবে তাদের সবাইকে আল্লাহতায়ালা জান্নাতে আমার সঙ্গে রাখবেন। তিনি আপন কিতাবে এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।' (আন-নিসা: ৬৯-৭০) আর যে ব্যক্তি 'সুবহানাল্লাহ' বলে এ ঘোষণা দেবে তার আমলনামায় এক লক্ষ নেকী লেখা হবে।
তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেন, 'হে আল্লাহর রাসূল, এরপর আমরা কিভাবে জাহান্নামে যাবো?” তিনি বললেন, 'যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর কসম, কিয়ামতের দিন মানুষ এত নেকী নিয়ে যাবে যে, যদি তা কোন পাহাড়ের উপর রাখা হয় তাহলে পাহাড় তা বহন করতে পারবে না।
কিন্তু যখন আল্লাহর কোন নিয়ামতের সঙ্গে এসব নেক আমলের তুলনা করা হবে, তখন সে নিয়ামত তার সমস্ত আমল অপেক্ষা ভারী হবে। তাই নেক আমলের জন্য কারো অহংকার করা উচিত নয়। আল্লাহর রহমত ও দয়ার ফলেই জান্নাত পাওয়া যাবে।'
তারপর তিনি সূরা দাহর প্রথম আয়াত থেকে মূলকান কবীরা পর্যন্ত পড়েন, যাতে
অকৃতজ্ঞদের মন্দ পরিমাণ ও জান্নাতবাসীদের পুরস্কারের কথা উল্লেখ করা
হয়েছে।
এ কথা শুনে হাবসী ব্যক্তিটি জিজ্ঞেস করেন, 'হে রাসূলুল্লাহ! আপনি যেভাবে জান্নাতের নিয়ামতকে দেখেছেন, যেভাবে এই সূরার মধ্যে সেসব নিয়ামতের উল্লেখ করা হয়েছে, আমার চোখ তা কি জান্নাতে দেখতে পাবে?' তিনি বললেন, 'হ্যাঁ।' এ কথা শুনে হাবসী ব্যক্তিটি কাঁদতে শুরু করে দেন এবং এমনকি শেষ পর্যন্ত কাঁদতে কাঁদতেই তার মৃত্যু হয়ে যায়।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, 'আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তাকে কবরে নামাতে।”
(তারগীব ও তারহীব, তাবরানী)
আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তিনি তাঁর উপদেষ্টা হন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন আল্লাহ কোন
বান্দাকে খুব বেশী মঙ্গল দান করার সিদ্ধান্ত করেন, তখন তিনি তাঁর অন্তরকে তাঁর
উপদেষ্টা বানিয়ে দেন। তারপর তাঁর আর অন্য কোন উপদেষ্টার প্রয়োজন হয় না। তার
অন্তর এত সজাগ থাকে যে, তাকে ভুল পথে ঠেলে দেয়ার কোন সুযোগ শয়তান পায় না।”
(মুসনাদে ফেরদৌস)
সংগৃহীতঃ যাদে রাহ পথের সম্বল
আল্লামা জলীল আহসান নদভী
পোস্ট ট্যাগঃ