কবর জিয়ারতের দোয়া বাংলা উচ্চারণ
কবর জিয়ারতের দোয়া বাংলা উচ্চারণ
বাংলা উচ্চারণঃ ‘‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর,, ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আছার।’’
কবর জিয়ারতের দোয়া আজকের এই পোস্টের ছবিতেই পরিস্কার ভাবে দেওয়া আছে দেখে নিন এবং আরবীতে সঠিকভাবে উচ্চারণ করে দোয়াটি পড়তে থাকুন। আল্লাহ নেক আমল করার তৌফিক দিন।
নিচে কবরের জীবনের বিষয়ে কিছু সংক্ষিপ্ত হাদীস উল্লেখ করা হলো। যা পড়লে আপনার ইসলামিক জ্ঞান বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
কবর হচ্ছে পরকালীন জীবনের প্রথম ধাপ
হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে, 'যখন তিনি কোন কবরের কাছে দাঁড়াতেন তখন এতো কাঁদতেন যে, তাঁর দাড়ি ভিজে যেতো। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘জান্নাত ও জাহান্নামের কথা উল্লেখে আপনি কাঁদেন না, কিন্তু কবর দেখে কাঁদতে থাকেন, এর কারণটা কি?'
তিনি জবাব দেন, 'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'কবর হলো আখিরাতের অধ্যায় সমূহের প্রথম অধ্যায়। এখানে যদি কেউ পরিত্রাণ পেয়ে যায় তাহলে পরবর্তী অধ্যায় সমূহ তার জন্য সব সহজ হয়ে যাবে।
আর যদি এখানে পরিত্রাণ
না পায় তাহলে পরবর্তী
অধ্যায় সমূহ তার জন্য
আরো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।'
তারপর তিনি আরো একটা
হাদীস শোনান, 'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কবরের দৃশ্য অপেক্ষা অধিক ভয়াবহ দৃশ্য
আর নেই।” (তিরমিযী)
কবরের কথা
স্মরণ
করে
সাহাবীরা
কাঁদতেন
হযরত
আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা (হযরত আবুবকর রাদিয়াল্লাহু
আনহুর কন্যা) বর্ণনা করেছেন, “একদিন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ভাষণ দান
করেন, যার মধ্যে কবরের
শাস্তির কথা উল্লেখ করেন।
তখন মুসলামানগণ ডুকরে ডুকরে কাদতে থাকেন।’’
- ব্যাখ্যা: তাঁরা এ জন্যে কাঁদতে থাকেন যে, কবর হলো আখিরাতের প্রথম ধাপ। এ ধাপ তাঁরা অতিক্রম করতে পারবেন কিনা এই চিন্তা খেলা করছিল তাঁদের অন্তরে। তাঁদের জানা ছিল না, কবরে ফেরেশতারা যে তিনটি পরীক্ষামূলক প্রশ্ন করবেন, সময় মতো তার যথাযথ জবাব তারা দিতে পারবেন কিনা। এ জন্যই নিজেদের মুক্তির প্রার্থনা জানিয়ে তাঁরা আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করতেন।
ঝড় হচ্ছে
কিয়ামতের
বার্তাবাহক
হযরত নাযর বর্ণনা করেছেন, “হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর সময় একবার এক প্রচণ্ড ঝড় আসে। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করি, 'হে আবু হামযা! এ রকম ঝড় কি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়েও আসতো?' তিনি বললেন, 'আল্লাহই আমাদের উদ্ধারকর্তা।
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় যদি সামান্য
জোরে বাতাস বইতে শুরু করতো
তাহলে আমরা কিয়ামত এসে
গেছে মনে করে মসজিদের
দিকে দৌড়ে যেতাম।” (আবু দাউদ)
তোমরা কম
হাসো
এবং
বেশী
কাঁদো
- ব্যাখ্যা: অশোভনীয় কথার অর্থ গুনাহর কাজ নয়, বরং তা হলো এমন, যা তিনি আপন সাথীদের জন্যে শোভনীয় মনে করতেন না। উদাহরণ স্বরূপ বেপরোয়া হাসাহাসি বা অট্টহাসি। যাদেরকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরবর্তীকালের মানুষদের জন্য নুমনা হিসাবে পেশ করবেন, যারা হবেন সভ্যতা ও মানবতার শিক্ষক ও অভিভাবক তাদের এ ধরনের আচরণ তিনি কিভাবে পছন্দ করতে পারেন?
- দায়িত্বশীলতার মানেই তো হচ্ছে, তিনি সমাজকে নিয়ে ভাববেন, সভ্যতার অগ্রগতির বিষয়ে চিন্তা করবেন। এই হাদীসে কেবল জান্নাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী বাক্য দ্বারা বোঝা যায় সম্ভবত জাহান্নামও দেখানো হয়েছিল। এই কম হাসার ও অধিক কাঁদার উল্লেখ থেকে এই ইঙ্গিতই পাওয়া যায়।
তিনটি সময়
কেউ
কারো
কাজে
আসবে
না
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা সম্পর্কে বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন, “যখন তাঁর জাহান্নামের কথা স্মরণ হতো তখন তিনি কাঁদতে থাকতেন।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করেন, 'কোন জিনিস তোমাকে কাঁদাতে থাকে।
তিনি বলেন, 'জাহান্নামের
কথা মনে পড়লেই আমি
কেঁদে ফেলি। আপনি কি কিয়ামতের
দিন আপন স্ত্রীদের কথা
স্মরণ করবেন?' তিনি বললেন, 'তিনটি
সময় হলো এমন, যখন
কেউ কাউকে স্মরণ করবে না (বা
করতে পারবে না)।
- প্রথম সময়টি হলো তখন, যখন আমলের ওজন করা হবে। তখন পাল্লা হালকা হবে কি ভারী হবে এই চিন্তাতেই পেরেশান থাকবে প্রত্যেকে (অন্য কোন দিকে নজর দেয়ার কথা তার মনেই থাকবে না)।
- দ্বিতীয় সময়টি হলো, যখন তার হাতে ‘আমলনামা' দেয়া হবে। এই আমলনামা ডান হাতে আসবে নাকি পিছন দিক দিয়ে বাম হাতে আসবে এই পেরেশানীতেই অস্থির থাকবে প্রতিটি হৃদয়।
- তৃতীয় সময়টি হলো, পুলসিরাত পার হবার সময়। তখন তা জাহান্নামের উপর রাখা থাকবে আর মানুষ তার উপর দিয়ে পার হয়ে যাবে।” (আবু দাউদ)
মানুষ প্রশংসা
করলে
গর্ব
না
করে
অনুতপ্ত
হওয়া
হযরত
আদী রা. বর্ণনা করেছেন,
“নবী করীম সা. এর
সঙ্গীদের অবস্থা এই ছিল, কেউ
যখন কারো সামনে তাঁর
প্রশংসা করতো তখন তিনি
বলতেন, 'হে আল্লাহ, এরা
যা বলছে তার ভিত্তিতে
আমাকে পাকড়াও করো না। আর
আমার মাঝে যে সব
দোষ আছে, এরা জানে
না, তা ক্ষমা করে
দাও।” (আল আদাবুল মুফরাদ)
সাহাবায়ে কিরামের
আখিরাত
ভীতির
নমুনা
হযরত
আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেছেন, “যখন এই আয়াত
অবতীর্ণ হয়: যেসব লোক
ঈমান এনেছে আর তাদের ঈমানকে
জুলুমের সাথে মিশ্রিত করেনি,
তারা আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে।
এরাই হেদায়াত প্রাপ্ত লোক। (সুরা আনয়াম-৮২)
তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ ভীত হয়ে বললেন, 'আমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে, নিজের উপর অন্যায় করেনি?' (অর্থাৎ তাঁর দ্বারা গুনাহ হয়নি)! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এই আয়াতের অর্থ তা নয় যা তোমরা মনে করছো।
এখানে 'জুলুম' এর অর্থ হলো
শিরক। যেমন সূরা লুকমানে
বলা হয়েছে, অবশ্যই শিরক হলো বিরাট
জুলুম।' (মুসনাদে আহমদ)
- ব্যাখা: এই হাদীসে সূরা আনআম-এর যে আয়াতের কথা বলা হয়েছে তার অনুবাদ হল- যে সব লোক ঈমান এনেছে আর ঈমানকে ‘জুলুম' এর সঙ্গে মিশ্রিত করেনি তারা আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে, এরাই হিদায়াত প্রাপ্ত লোক।' এ হাদীস থেকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গীদের আখেরাত-ভীতির অবস্থা বুঝা যায়।
সাহাবায়ে কিরামের
নির্লোভ
চরিত্র
উম্মে দারদা তাঁর স্বামী আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন, “যেমন ওমুক ওমুক ব্যক্তি অর্থ উপার্জনের জন্যে চেষ্টা করে আপনি তেমন করেন না কেন?' তিনি বললেন, 'আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, 'হে আখেরাতের পথের মুসাফিরগণ, তোমাদের সামনে একটি খুব উঁচু পাহাড় আছে, যা অতিক্রম করা খুবই কষ্টসাধ্য।
ভারী
মুসাফির, যার সঙ্গে বেশী
মালপত্র আছে সে তা
অতিক্রম করতে পারবে না।'
আমাকেও সে পাহাড় অতিক্রম
করতে হবে। যাতে আমি
সহজে সেই পাহাড় অতিক্রম
করতে পারি সে জন্য
আমি এ দুনিয়া থেকে
হালকা হয়ে যেতে চাই।”
(তারগীব ও তারহীব, তাবরানী)
- ব্যাখ্যা: এর অর্থ হলো, আমরা এ দুনিয়াতে মুসাফির হিসেবে আছি। আমাদের গন্তব্যস্থল হলো আখেরাত, যেখানে আমাদের যেতে হবে। মুসাফির নিজের সঙ্গে হালকা মালপত্র রেখে থাকে। তাই দুনিয়ায় অধিক মালপত্র সংগ্রহ করে কি হবে? তা তো কেবল বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। আর যখন সব কিছুর হিসাব দিতে হবে তা বড়ই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
পোস্ট ট্যাগঃ