মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে

মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে

মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে

বর্তমানে আমরা মহাবিশ্বকে যে রকম দেখছি, অনাদিকাল থেকেই কি মহা বিশ্বের অবস্থা এমন ছিল? এ প্রশ্ন বিবেকবান মানুষের মনকে কখনো যে নাড়া দেয়নি এমন নয়। যুগ যুগ ধরে মানুষ মহাবিশ্বের আদি অবস্থা নিয়ে ভেবে আসছে। সে ভাবনার আধুনিক ফসল বিগ ব্যাংগ বা মহা বিস্ফোরণ তত্ত্ব। এ তত্ত্বের ব্যাখ্যা হলো পরম শূন্য সময়ে মহাবিশ্বের কোথাও বস্তু ও সময় বলতে কোন কিছুই ছিল না।

তখন ছিল না ভর-শক্তির কোন অস্তিত্ব। এ অবস্থায় মহাবিশ্বের সর্বত্রই ছিল পরম শূন্যতা আর শূন্যতা। এমন শূন্য পরিবেশে সময়ের চাকা ছিল স্থির। অর্থাৎ তখন মহাবিশ্বের কোথাও গতির সূচনা হয়নি। তাই ছিল না তখন ক্ষয়-মৃত্যুর খেলা। ছিল না খাওয়া-দাওয়া পয়ঃনিষ্কাশনের তাড়া। 

এমন অজ্ঞাত সময়ে পরমস্থিতিশীল মহাবিশ্বের কোন এক অজ্ঞাত অতি সূক্ষ্ম বিন্দুতে বিপুল পরিমাণ শক্তির সমাবেশ ও ঘনায়ন ঘটে। সে সময়ের বিশ্বটা ছিল অতি সূক্ষ্ম বিন্দুর ন্যায় । যা কিনা প্রোটন কণার চেয়েও কোটি কোটি গুণ ছোট । কালক্রমে সেখানে ঘটে এক মহা বিস্ফোরণ।

এখন প্রশ্ন হলো 'যেখানে ভর-শক্তির কোন অস্তিত্বই ছিল না, সেখানে কোন উৎস থেকে বিপুল পরিমাণ শক্তির সমাবেশ ও ঘনায়ন ঘটল? যারা বিগ ব্যাংগ তত্ত্বের রূপকার তারা এর জবাবে বলে থাকেন “দৈবক্রমে ” ভর-শক্তির আবির্ভাবের কথা। মূলত তারা সৃষ্টির পিছনে স্রষ্টার হাত আছে, এ কথা মানতে রাজি নন। তাই আমি সৃষ্টির আদি সূচনা বিগ ব্যাংগ-এর মাধ্যমে হয়েছে এ কথা মেনে নিতে পারছি না। 

আমি সৃষ্টির সূচনার ক্ষেত্রে এমন এক বিবর্তন বিশ্বাস করি, যা হলো স্রষ্টার উদ্দেশ্যমুখী সাংগঠনিক বিবর্তন। পৃথিবীর সকল উদ্ভিদ ও জীবের ক্ষেত্রে যেমন সাংগঠনিক বিবর্তন ধারায় ধাপে ধাপে সেগুলো উন্নতর শিকড়ে পৌঁছেছে, তেমনি জগতের আদি সূচনা থেকে তার পূর্ণতা পর্যন্ত আসতে অনেক ধাপ পার হতে হয়েছে।

পরমশূন্যতা থেকে জগতের আবির্ভাব ঘটানো জাদুর বিষয় নয়। এটা সম্ভব হয়েছে সাংগঠনিক বৈজ্ঞানিক বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। নিম্নে স্রষ্টার সেই সাংগঠনিক বৈজ্ঞানিক বিবর্তন প্রক্রিয়াটি তুলে ধরা হলো। স্রষ্টা আদিতে ছিলেন পরমশূন্যতার মাঝে গুপ্ত। তখন মহাবিশ্বে ছিল পরম স্থিতি অবস্থা। ফলে তখন ভর-শক্তি সময়ের কোন অস্তিত্ব ছিল না। কারণ গতিহীন ভর-শক্তি সময়ের কোন অস্তিত্ব থাকে না।

পরম স্থিতি শূন্য সময়
আল্লাহ
একক সত্তা

[পরম স্থিতির শূন্য সময়ে আল্লাহ জগতে ছিলেন গুপ্ত এবং তিনিই জগতের গুপ্তধন।]

কিন্তু এমন এক সময় ছিল যখন দার্শনিকগণ বস্তুর উপাদান ও গতিকে আদ্যান্তহীন মনে করত। ফলে তাদের বিশ্বাস ছিল বস্তুর উপাদান ও গতি আদিকাল থেকেই বিরাজ করছে। এখানে গতিহীন যেমন বস্তু হতে পারে না,তেমনি বস্তুহীন গতির কোন অস্তিত্ব থাকে না। আবার গতিহীন সময়েরও সূচনা হয় না। তাই বস্তু, গতি ও সময় সম্পর্কযুক্ত। আবার গতির ক্ষেত্রে শুরু ও শেষ বলে একটা নিয়ম আছে। এটা যখন প্রমাণ হলো তখন পূর্বের ধারণা পাল্টে যায়। 

অতঃপর তারা বিশ্বাস করতে লাগলো যে, বিশ্বের শুরুটা শূন্য থেকেই হয়েছে। মহা বিশ্বের পরম স্রষ্টা অনস্তিত্ব থেকেই এ বিশ্বের সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন। তাই তিনি বস্তুর উপাদানের যেমন স্রষ্টা তেমনি বস্তুরও স্রষ্টা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে বস্তুর অভ্যন্তর একেবারে শূন্য নয়। এদের অতিসূক্ষ্ম কণা পরমাণুর অভ্যন্তরের ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রনেরও রয়েছে অতি সূক্ষ্ম নির্যাস। এর নাম কোয়ার্ক। এই কোয়ার্ক-এর পরবর্তিত রূপ হলো ফোটন। 

এভাবে বিভাজন করতে করতে-এর শেষ অবস্থানটি হলো “তথ্যকণা”। জগতের সমুদয় বস্তু হলো তথ্যকণার আধার। অপরদিকে প্রাণীর দেহগুলো চলমান তথ্যের ভাণ্ডার। ইট দিয়ে যেমন দালান তৈরী করা হয়, তেমনি তথ্যের সারি সাজিয়ে জীবদেহ তৈরী করা হয়েছে। এ তথ্য কোত্থেকে এলো? এগুলোর কি আপনা আপনি উদ্ভব ঘটেছে?

বিগ ব্যাংগ

এর ধারণা পোষণকারীগণ মনে করেন আদি মহাবিস্ফোরণের পর বিশ্ব অত্যন্ত গরম ছিল। সে সময় আণবিক নিউক্লিয়াসও উন্মুক্ত বিচরণকারী ইলেকট্রন দিয়ে তখনকার বিশ্ব গঠিত ছিল। এসব বিক্ষিপ্ত রেডিয়েশন একটা অগ্নি-গোলক থেকে আকাশের বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। এগুলোই কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন। তারা আরও মনে করেন-মহাবিশ্ব যখন দ্রুত গতিতে ঠাণ্ডা হতে থাকে, তখন আণবিক নিউক্লিয়াস এবং মুক্ত ইলেকট্রন-এর মধ্যে টানা হেঁচড়া কমতে থাকে এবং অবশেষে আণবিক নিউক্লিয়াই মুক্ত ইলেকট্রনকে নিজ কক্ষ পথে স্থাপিত করে। 

তারপর কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন বা ফোটনগুলো মুক্ত ইলেকট্রনের মধ্যেই চিরস্থায়ীভাবে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বিগ ব্যাংগ এর ধারণা পোষণকারীগণ কিভাবে positive (ধ্বনাত্মক) ও Negative (ঋণাত্মক) চার্জ সৃষ্টি হলো সে ব্যাখ্যা দেননি।

পূর্বেই বলেছি, এখনও বলছি, আস্তিক হিসেবে আমি “মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে সৃষ্টির সূচনা হয়েছে একথা মনে করি না। বরং এ ক্ষেত্রে কোরআন হাদীসের ব্যাখ্যাই অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য বলে মনে করি। আমরা যদি কোরআন হাদীসের ব্যাখ্যাকে বৈজ্ঞানিকভাবে বিশ্লেষণ করি তাহলে শূন্য থেকে জগৎ ও প্রাণীর উদ্ভব প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়ে যাব। এর জন্য দৈবের কোন আশ্রয় নিতে হবে না। তবে পরম স্রষ্টাকে জগতের আদি গুপ্তধন মেনে নিতে হবে।

পরম স্রষ্টা 

অসীম শূন্যতা ও পরম স্থিতিশীল বিশ্বে অনাদিকাল থেকে ছিলেন গুপ্ত অবস্থায়। কালক্রমে তিনি নিজেকে প্রকাশ করতে চাইলেন। স্ৰষ্টা নিজকে পরিচিত করার পরম ব্যগ্রতা প্রকাশ করলেন। মানুষের ইচ্ছাশক্তি যেমন তরঙ্গের আকারে মস্তিষ্ক হয়ে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি স্রষ্টার ইচ্ছাশক্তির ব্যগ্রতা মহাবিশ্বের পরম স্থিরতাকে প্রাথমিক পর্যায়ে তরঙ্গায়িত করে। 

এর ফলে জগৎ পরম গতি লাভ করে। আমার মতে সৃষ্টির আদি মুহূর্তে স্রষ্টার ইচ্ছা শক্তি প্রকাশের ব্যগ্রতায় পরম স্থিতির জগৎ-এ যে “মহাস্পন্দন” শুরু হয়, বিগব্যাংগ-এর ধারণা পোষণকারীদের দৃষ্টিতে এটাই মহা বিস্ফোরণ।

পরম স্থিতির জগতের গুপ্ত অবস্থা
'পরম গতি (তরঙ্গ গতি)
আল্লাহ

এ সময় আল্লাহ ব্যতীত জগতে আর কোন কিছুর অস্তিত্ব ছিল না। তখন জগতে ছিল পরমস্থিতি। তাই জন-মানব, পদার্থ ও সময়ের অস্তিত্বহীন পরিবেশে স্রষ্টা ছিলেন গুপ্ত ও একাকি।

[এ পর্যায়ে স্রষ্টার মহামনের “মহাস্পন্দন” জগতকে করে পরমগতিশীল। অর্থাৎ‍ জগৎ পরমস্থিরতা থেকে তরঙ্গ গতি লাভ করে এবং শূন্য মাধ্যম ফিরে পায় তরঙ্গ ধারণ করার ক্ষমতা। সে সময়ের তরঙ্গগতির জগতকে আমরা ব্রাকগ্রাউন্ড মাইক্রোওয়েভের জগত ও বলতে পারি ।

হাদীসে কুদসীতে রয়েছে “আমি ছিলাম একটি গুপ্তধন। আমি প্রকাশ হতে চাইলাম, তাই সৃষ্টি করলাম এই সৃষ্টিকে। ইচ্ছা আমি পরিচিত হই।” (আল-হাদীস

কোরআন মাজীদে আল্লাহ এরশাদ করেন- “তিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবীর আদি স্রষ্টা” (সূরা শূরা-১১)

“তিনি আদি ও তিনিই অন্ত; তিনি ব্যক্ত ও তিনিই গুপ্ত।” (সূরা হাদীদ-৩)

“আমি যে জিনিসের এরাদা করি সেজন্য শুধু এতটুকু বলতে হয় “হয়ে যাও” তাহলেই তা হয়ে যায়।” (সূরা আন নাহল আয়াত-৪০)

উপরোল্লিখিত হাদীস ও কোরআনের বাণী থেকে আমরা পরমশূন্য পরিবেশে স্রষ্টার অবস্থান, তাঁর প্রকাশ হওয়ার ইচ্ছার ব্যগ্রতা সম্পর্কে অবহিত হলাম। তিনি নিজেকে পরিচিত বা প্রকাশ করার জন্যই এ জগৎ সৃষ্টি করেছেন। তাই এ জগৎ তাঁর প্রকাশের আবরণ। আল্লাহ ‘হয়ে যাও” বললেই সব হয়ে যায়। এখানে “হয়ে যাও” বলার সাথে বস্তুর উপাদানের সম্পর্ক রয়েছে। 

স্রষ্টা কখনো মানুষের মতো মুখে শব্দ করে কথা বলেন না ৷ এক্ষেত্রে তথ্যকণা প্রেরণ করে “কমান্ড-আদেশ”-এর মাধ্যমে মূল সিস্টেমটিকে কার্যক্রম করলেই বস্তু বা ঘটনাটি সৃষ্টি হয়ে যায়। বস্তুর মূল সত্তা হলো তথ্যকণা। সুতরাং “হয়ে যাও” বলা মানে তথ্য তরঙ্গ বা তথ্যকণা প্রেরণ । এখানে তথ্যটা হলো এরাদার বিষয়।

অর্থাৎ স্রষ্টা কি বানাতে চাচ্ছেন তা সংবাদ বা তথ্য। অতঃপর সে তথ্যটা যার কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হলো সেটি হলো একটা তরঙ্গ বা ঢেউ । এ দু'টিকে একসাথে তথ্যতরঙ্গ বা তথ্যকণা বলা যায়। অতঃপর এক সময় “তথ্য-তরঙ্গ” “তথ্য কাঠামো” লাভ করে।

আমরা বস্তুর সূক্ষ 

উপাদানের মাঝে কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাই। যেমন প্রোটন ধ্বনাত্মক চার্জ বহন করে এবং ইলেকট্রন ঋণাত্মক চার্জ বহন করে। আর নিউট্রন থাকে চার্জ নিরপেক্ষ। অপর দিকে নিউট্রিনো অন্যান্য

কণাগুলোকে নিজের দিকে টানে। এদের মাধ্যমেই পরমাণু সৃষ্টি হয়। আবার অসংখ্য পরমাণুর সমন্বয়ে অণু গঠিত হয়। এসব দিয়ে গঠিত প্রাণীদেহ লিঙ্গান্তরের বেলায় পুরুষ ও মহিলা রূপ ধারণ করে । মহাবিশ্বের সূচনার প্রাথমিক পর্যায়ে জগৎ-মহাজগৎ পরম গতি লাভ করলেও, সে সময় positive ও Negative চার্জ সৃষ্টি হয়নি। 

জগৎ-মহাজগতের রয়েছে দু'টি স্তর। একটি হলো আত্মিক জগৎ এবং অপরটি হলো বস্তু জগৎ । প্রাথমিক পর্যায়ে লিঙ্গান্তর শুরু হয় আত্মিক জগৎ থেকে। তারপর তা পর্যায়ক্রমে বস্তু জগতেও চলতে থাকে।

আমরা লিঙ্গান্তরের প্রাথমিক পর্যায়ে ধরে নিতে পারি সুপার প্রোটন বা ধ্বনাত্মক তথ্য তরঙ্গ (positive information bit) এর কথা। এটি স্রষ্টার প্রত্যক্ষ (positive) অভিব্যক্তির বর্হিপ্রকাশ। ইংরেজীতে positive শব্দের একটি অর্থ হলো প্রত্যক্ষ। এ ধরনের প্রত্যক্ষ বা ধ্বনাত্মক তথ্য তরঙ্গে যে সব তথ্য ছিল সেগুলো হলো-চিন্তা, অনুভব ও স্মৃতি শক্তি। 

এর ফলে তার মাঝে ছিল অভাববোধ (সঙ্গিনী পাওয়ার ব্যাকুলতা) ও ইচ্ছাশক্তি প্রকাশের sensory ব্যবস্থাপনা (তথ্য আদান ও প্রদান করার গুণ)। Genatic code (জিন) যেমন তথ্য বহন করে, তেমনি ধ্বনাত্মক তথ্য তরঙ্গ এ সব তথ্য বহন করছিল।

জগৎ-মহাজগৎ 

পরম শূন্যতার পর ফিরে পায় পরম তরঙ্গ গতি। তারপর সেখানে সৃষ্টি হলো আ’রশ ও ফেরেশতার জগৎ। অতঃপর কালের চাকা ঘুরে সেখানে উদয় হলো ধ্বনাত্মক তথ্য তরঙ্গের মতো এক পরমসত্তা । যা স্রষ্টার প্রত্যক্ষ অভিব্যক্তির বহি:প্রকাশ। এ সত্তা নি:সঙ্গ, নির্জন পরিবেশে বাস করতে থাকলে তার মাঝে উদয় হয় সঙ্গিনী পাওয়ার ব্যাকুলতা। 

এ ব্যাকুলতা বা সঙ্গিনী পাওয়ার অভাব বোধের তরঙ্গবার্তা যখন sensory ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্রষ্টার কাছে পৌঁছল, তখন স্রষ্টা ঐ ধ্বণাত্মক তথ্য তরঙ্গকে Command information bit (নির্দেশক তথ্য তরঙ্গ) দিয়ে আঘাত করান। এতে ”ধ্বনাত্মক তথ্য তরঙ্গের” অস্তিত্ব থেকে পরোক্ষভাবে “ঋণাত্মক তথ্য তরঙ্গের উৎপত্তি ঘটে।

“তোমরা ভয় কর সেই প্রভুকে যিনি তোমাদেরকে এক আত্মা থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার সহধর্মিনীকে এবং সেই দুইজন (আদম এবং হাওয়া) থেকে তিনি সকল পুরুষ ও নারীকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন।” (সূরা আন নিসা আয়াত-১)

নিউক্লিয়ার ফিসন বিক্রিয়ায় 

যেমন পরমানুর নিউট্রন দিয়ে প্রোটনকে আঘাত করা হয় তখন মূল পরমাণুটি বিভক্ত হয়ে যায় এবং উত্তরোত্তর তার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এ সময় তার থেকে কিছু শক্তির বিচ্যুতিও ঘটে। আদম থেকে হাওয়ার পয়দা এবং তার থেকে শয়তানের (কৃষ্ণকায়া বিকীর্ণ শক্তি) সৃষ্টি হওয়ার প্রক্রিয়াটি অনেকটা এমনি একটা কৌশল। যখন ধ্বনাত্মক তথ্য তরঙ্গকে কমান্ড আদেশ ( নিদের্শক তথ্য তরঙ্গ) দিয়ে আঘাত করা হয়, তখন ঋণাত্মক তথ্য তরঙ্গের উৎপত্তির পাশাপাশি কিছু ‘বর্জ্য তথ্য তরঙ্গের' (শয়তানী সত্তার) উৎপত্তি ঘটে। 

এখানে ‘ধ্বনাত্মক তথ্য তরঙ্গ', ঋণাত্মক তথ্য তরঙ্গ, নির্দেশক তথ্য তরঙ্গ (কমান্ড-আদেশ) ও ‘বর্জ্য তথ্য তরঙ্গ' ইত্যাদির সাথে আদম (ধ্বনাত্মক সত্তা) হাওয়া (ঋণাত্মক সত্তা ফেরেশতা (চার্জ নিরপেক্ষ সত্তা) ও শয়তানের সম্পর্ক রয়েছে। মূলত শয়তানের উৎপত্তি আদমের অস্তিত্ব থেকেই। পরবর্তী পর্যায়ে যখন ধ্বনাত্মক তরঙ্গ (+), ঋণাত্মক তথ্য তরঙ্গ (−) নির্দেশক তথ্য তরঙ্গ ও বর্জ্য তথ্য তরঙ্গ একই বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তখন বর্জ্য তথ্য তরঙ্গের গা জ্বলে জ্বলে ফোটন বা কোয়ান্টার উৎপত্তি ঘটে। 

মূলত এ ফোটন 

বা কোয়ান্টাই বস্তু জগতের মূল উপাদান। এর মাধ্যমেই পরমাণু গঠিত হয়। এখানেও রয়েছে ধ্বনাত্মক চার্জ (প্রোটন), ঋণাত্মক চার্জ (ইলেকট্রন), চার্জ নিরপেক্ষ সত্তা ও বর্জ্য তরঙ্গ। অতঃপর এদের মাধ্যমে পদার্থ, ছায়াপথ, গ্যালাক্সি, সৌরজগৎ এবং এভাবে পৃথিবীসহ সকল কিছুর উদ্ভব ঘটে ।

মূলত এ সবই সৃষ্টি হয়েছে স্রষ্টার উদ্দেশ্যমুখী বিবর্তন ধারায় ধাপে ধাপে। অতঃপর পৃথিবীতে এককোষী প্রাণীর আবির্ভাব। এখান থেকেই জীব জগতের রূপান্তর শুরু হয়। জীব জগতের রূপান্তরের প্রধান সত্তা হলো ক্রোমোজমের জিনগুলো। মূলত জেনেটিক রূপান্তরের মাধ্যমেই পৃথিবীতে আদমের আবির্ভাব। কিন্তু আত্মিক পর্যায়ে আদমের উদ্ভব হয়েছে সৃষ্টির সূচনা থেকেই। অর্থাৎ আদমের আত্মিক উৎস থেকে বস্তু জগতের সকল উপাদানের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে।

 [পরম তরঙ্গগতির জগতে সৃষ্টি হয় আ'রশ বা মহা মস্তিষ্ক । অতঃপর তথ্য আদান-প্রদান করার মত গুণসম্পূর্ণ যে সত্তার উদ্ভব ঘটে সেটিই positive information bit । এ সত্তা ধ্বনাত্মক (+) চার্জ বহন করে। পুনরায় এ সত্তা থেকে বৈজ্ঞানিক পন্থায় অন্যান্য চার্জগুলোর উদ্ভব ঘটানো হয়]

আপেক্ষিকতা ও কোয়ান্টাম 

পদার্থ বিদ্যার জগতে সময়েরও মাত্রা আছে। আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুসারে দেশ-কাল ও সময় চিরন্তন নয় বরং আপেক্ষিক । অপর দিকে নিউটন চিন্তা করেছিলেন স্থান-কাল চিরন্তন। স্থান-কাল-চিরন্তন হলে একে বদলানো যেমন সম্ভব নয় তেমনি বলতে হয় পদার্থের আদি সত্তাও চিরন্তন। কিন্তু আপেক্ষিক তত্ত্বের ধারণা থেকে বলা যায় পদার্থের আদি সত্তা ও সময়ের উৎপত্তি একই সময়ে হয়েছিল। 

এমন এক সময় ছিল যখন পদার্থের আদি সত্তা বলতে কিছুই ছিল না। তখন সময়েরও কোন অস্তিত্ব ছিল না। অতঃপর সৃষ্টির সূচনায় পরমগতি ও সময়ের সূচনা হয়, তখন জগৎটা ভরে যায় কোয়ান্টা ও ব্রাকগ্রাউন্ড মাইক্রোওয়েভে। তাই বিজ্ঞানীগণ ফিরে যাচ্ছেন কোয়ান্টাম জগতের দিকে। তারা পদার্থের অভ্যন্তরে খুঁজে পেয়েছেন গতিশীল কোয়ান্টার অস্তিত্ব। 

কিন্তু কোন ভাবে যদি কোয়ান্টার গতিকে থামিয়ে দেয়া যায় তবে জগৎ হবে পরম স্থির ও শূন্য সময়ের। অর্থাৎ জগতে তখন আল্লাহ ছাড়া আর কোন কিছুরই অস্তিত্ব থাকবে না। তাই বলা যায় আল্লাহ শূন্য থেকেই জগতের সকল কিছুর উৎপত্তি ঘটিয়েছেন। মূলতঃ মহাবিশ্বের আদি অবস্থা এমনই ছিল। আজ বৈজ্ঞানিকগণ সে সত্য উৎঘাটনের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌছেছেন।

বিজ্ঞানী নিউটন 

থেকে নিয়ে অনেকেই আলোক শক্তিকে কণা হিসেবে বিবেচনা করতেন। পরে আলোক শক্তিকে ধরা হয়েছে দ্বৈত প্রকৃতি হিসেবে। যেমন আলোক কণা হিসেবেও থাকতে পারে আবার তরঙ্গ বা কোয়ান্টা হিসেবেও থাকতে পারে। 

মহাবিশ্বের সৃষ্টি মুহূর্তকে যদি ইলেকট্রনের মতো সূক্ষ্ম মনে করা হয় তাহলে জগতের আদি অবস্থাটি ছিল কোয়ান্টাম অবস্থা। আবার জগতের সকল পদার্থের মূলে রয়েছে কোয়ান্টাম বা ফোটন। সে হিসেবে আত্মা কোয়ান্টা বা ফোটন পর্যায়ের চেয়েও সূক্ষ্ম কোন পরম সত্তা। যা ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিভ ওয়েভ-এর ন্যায়।

এ সত্তা ফোটন চুম্বক 

তরঙ্গ ধরনের কোন কিছু। এতে রয়েছে ডি. এন. এ. কোডের মতো তথ্য ভান্ডার। এ ধরনের একমাত্র তথ্যকণা থেকেই জগতের সমুদয় আত্মা ও বস্তুর উপাদানের উৎপত্তি। নিম্নে সে চিত্রটি তুলে ধরা হলো।

অতঃপর উক্ত তথ্য কণাগুলো পরম তরঙ্গগতির জগতে মুক্তভাবে বিচরণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে চারটি তথ্য কণাই পরস্পরের খুব কাছাকাছাছি এসে একটি বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এর ফলে বর্জ্য তরঙ্গের গা জ্বলে জ্বলে উৎপন্ন হতে থাকে ফোটন বা কোয়ান্টা। 

এ ব্যবস্থাটি অনেকটা বৈদ্যুতিক বাল্বের মতো। এদের মাধ্যমে উৎপন্ন সূক্ষ্ম সত্তা বা তথ্য তরঙ্গের আধার পরম জাগতিক মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলো থেকেই বস্তুর সূক্ষ্ম কাঠামো গড়ে ওঠে।

চার্জ নিরপেক্ষ নির্দেশক তথ্য কণা
+
বর্জ্য তথ্য তরঙ্গ
ফোটন বা কোয়ান্টা

[উক্ত চারটি তথ্য তরঙ্গের আধার থেকে যে ফোটন বা কোয়ান্টার উদ্ভব হয় সেগুলোর মাঝেও ধ্বনাত্মক, ঋণাত্মক, চার্জ নিরপেক্ষ ও বর্জ্য সত্তার গুণাগুণ বিদ্যমান থাকে । তবে পরিমাণ বা অনুপাতের কম-বেশী হতে পারে ।]

পৃথিবীতে দেখা যায় জীবন রক্ষার উপযোগী সত্তা ও জীবন নাশক সত্তা একত্রে মিলে জীবন রক্ষাকারী উপাদান তৈরী করে। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে লবনের কথা বলা যায় । লবন হলো সোডিয়াম ও ক্লোরিন গ্যাসের মিলিত যৌগিক উপাদান। 

এখানে ক্লোরিন জীবননাশক উপাদান আর সোডিয়াম জীবন রক্ষাকারী উপযোগী সত্তা। এ দু'টি সত্তা একত্রে মিলিত হয়ে জীবন রক্ষাকারী উপাদানে তৈরী হয়। তেমনি চারটি তথ্য কণার আধার একত্রে মিলিত হয়ে বস্তুর মূল উপাদান সৃষ্টি করে। এর নামই পরমাণু।

বর্তমানে পৃথিবীতেও আমাদের দেহকোষ থেকে এবং অন্যান্য বস্তু থেকেও আলোক উজ্জ্বল চুম্বক তরঙ্গ এবং কৃষ্ণকায়া শক্তি বিকিরণ হয়। কৃষ্ণকায়া বিকীর্ণ সত্তা হলো বর্জ্য সত্তা। এগুলো জাহান্নামের উপাদান। আর আলোক উজ্জ্বল চুম্বক তরঙ্গ জান্নাতের উপাদান। 

আগেও যেমন positive information bit থেকে Negative information bit ও বর্জ্য তরঙ্গ বের হয়েছিল ঠিক তেমনি দুনিয়াতেও আদম এবং তার প্রজন্মের সকল মানুষের দেহ সত্তা থেকে আলোক উজ্জ্বল চুম্বক তরঙ্গ এবং কৃষ্ণকায়া শক্তি বিকিরণ হয়।

হাদীসে কুদসীতে 

উল্লেখ রয়েছে, “আল্লাহ তা'আলা আদমকে (আ) পয়দা করলেন, তাঁকে পয়দা করে তাঁর ডান কাঁধে করাঘাত করলেন, তারপর তাঁর সন্তানদেরকে বের করলেন, এরা এরূপ শুভ্র যেন মুক্তার মত উজ্জ্বল দুগ্ধ । তৎপর তিনি তার বাম কাঁধে করাঘাত করলেন এবং কৃষ্ণকায়া সন্তান বের করলেন, যেন তারা কাল কয়লা। 

তারপর তিনি তাঁর ডান হাতের সন্তানগণ সম্বন্ধে বললেন, এরা জান্নাতবাসী হবে আর তাতে কোন পরওয়া নেই। আর তাঁর বাম হাতের তালুস্থিত সন্তানগণ সম্বন্ধে বলিলেন, এরা জাহান্নামে যাবে, আর এ ব্যাপারে কোন পরওয়া নাই।” [আহমদ ও ইবনু-আসাকির ইহা আবু দারদা (রা) হতে বর্ণনা করেছেন]।

আত্মিক পর্যায়ে আদমের আবির্ভাব নিয়ে বিজ্ঞান ও ধর্মের ক্ষেত্রে তেমন কোন দ্বন্দ্ব নেই। মূলতঃ বিজ্ঞানীগণ আত্মিক পর্যায়ে আদমের সূচনা নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নয়। তাদের মাথা-ব্যথা হলো দুনিয়ায় আদমের আবির্ভাব নিয়ে। তাই আমাদেরকে দুনিয়ায় আদমের আদি উৎসের সন্ধান পেতে হলে ক্রোমোজম ও জেনেটিক রূপান্তর সম্পর্কে জানতে হবে।

সংগৃহীতঃ আদমের আদি উৎস
আল মাহদী

পোস্ট ট্যাগঃ

মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে
মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে
মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে 
মহাবিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ কি করতেন
মহাবিশ্ব সৃষ্টি
কিভাবে সৃষ্টি হয়
মহাবিশ্বে কি কি আছে
পৃথিবীর সৃষ্টি কিভাবে হয়েছে
মহাবিশ্ব সম্পর্কে জানতে চাই
মহাবিশ্বের সৃষ্টি
পৃথিবী কিভাবে তৈরি হয়েছে

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url