আদিম মানুষের জীবনযাত্রা কেমন ছিল
আদিম মানুষের জীবনযাত্রা কেমন ছিল
আদমের পূর্বের প্রজাতির মানুষের ইতিহাস
আদম (আ) ও বিবি হাওয়া পৃথিবীর আদি খেলাফতধারী মানব-মানবী। তাঁদের আগে পৃথিবীতে মানব প্রজাতির নিম্ন ধাপের মানুষের অস্তিত্ব ছিল কি?
আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে প্রকৃতি থেকে আহরিত তথ্য ও বাস্তবতার নিরিখে বলা যায় মানব জাতির পূর্ণতা ও তাদের দৈহিক পরিগঠন স্রষ্টার সুদীর্ঘ সাংগঠনিক পরিকল্পনার অধীনে, সুদীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে, বিভিন্ন পরিবর্তন, রূপান্তর ও বিবর্তনের মাধ্যমে চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে। বিজ্ঞানীদের অদম্য চেষ্টায় আদমের আগেও মানুষের কোন প্রজাতি ছিল কিনা এ ব্যাপারে গবেষণা চলছে।
বিজ্ঞানের যে শাখায় এ ব্যাপারে গবেষণা হয় তার নাম নৃ-বিজ্ঞান বা জীবাশ্ম বিজ্ঞান। এ শাখায় গবেষণাকারীদের নাম নৃ-বিজ্ঞানী। তাদের গবেষণা ও অনুসন্ধান থেকে মানুষের আদি উৎস সম্পর্কে অনেক আশ্চর্যজনক তথ্য পাওয়া গিয়েছে। এসব তথ্য আমাদেরকে সৃষ্টিশীল বিবর্তন সম্পর্কে ভাবিয়ে তুলছে। আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছি পৃথিবীর আদি একক প্রাণ সত্তার (অ্যামিবা) সাথে আমাদের দেহ কোষের সাদৃশ্য ও অন্যান্য প্রাণীর কোষের সম্পর্কের ব্যাপারটি। এটি সৃষ্টিশীল বিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রমাণ।
আজকের আধুনিক মানুষের রূপান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এক সুদীর্ঘ সময় থেকে। নৃ-বিজ্ঞানীগণ অতি প্রাচীন কালের মানুষের হাড়ের টুকরার (ফসিলের) অংশ বিশেষ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রমাণ পেয়েছেন যে এখন থেকে প্রায় ৬/৭ কোটি বছর আগেও মানুষের চেয়ে ছোট ও কম বুদ্ধিমান এক ধরনের মানুষ পৃথিবীতে ছিল। এরা ছিল বানরের চেয়ে বড় ও বেশী বুদ্ধিমান।
এদেরকে প্রাইমেট নামে
আখ্যায়িত করা হয়। নৃ-বিজ্ঞানীদের চেষ্টা এখানে এসেই থেমে যায়নি। তারা এক এক করে অনুসন্ধান চালিয়ে আরও যে সব মানুষের ফসিল আবিষ্কার করেন, তাদের নাম দেয়া হয় পিকিং মানব, জাভা মানব, হোমো-হ্যাবিলাস এবং হোমো ইরেকটাস।
অত:পর ৪০ থেকে ৫০ হাজার বছরের কাছাকাছি সময়ের যে সব মানুষের ফসিল পাওয়া গেছে তাদের নাম দেওয়া হয়েছে হোমো-স্যাপিয়ানস। এরা বর্তমান প্রজাতির মানুষের একেবারে কাছাকাছি প্রজাতির মানুষ। এ হোমো স্যাপিয়ানস মানুষের উৎপত্তি ঘটেছে প্রাইমেট প্রজাতির মানুষ থেকেই।
পবিত্র কোরআনে মানুষের বিভিন্ন স্তর অষ্টালপিনথিসিস (লুসি)
৪৫ লক্ষ বছর আগে সূরা নূহ, আয়াত : ১৪
+
হোমো ইরেকটাস সূরা জ্বীন, আয়াত : ৪
+
পিকিং ম্যান
হাইডেলবার্গ ম্যান
জাভা ম্যান
রোডেশিয়ান ম্যান
↓
নিয়ানডারথাল ম্যান
সূরা বাকারা, আয়াত: ৩০
↓
ক্রো-ম্যাগনন ম্যান
সূরা দাহর/ইনসান, আয়াত: ২৮
+
আধুনিক মানুষ
সূরা আনআম, আয়াত: ১৩৩
ফসিল গবেষণায় নৃ-বিজ্ঞানীগণ নিশ্চিত হয়েছেন যে, মানব প্রজাতির মধ্যে সুদীর্ঘ রূপান্তর প্রক্রিয়া ঘটেছে। মানব প্রজাতির রূপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্যে এদের মস্তিষ্কের ক্রমবর্ধমান পরিবর্তন ছিল লক্ষণীয়। এতে দেখা গেছে মস্তিষ্কের আয়তন বিভিন্ন পর্যায়ে ধাপে ধাপে বৃদ্ধি হয়েছে। যেমন পর্যায়ক্রমে ৫০০ সিসি থেকে ৬০০ সিসি, ৭৫০ সিসি, ৮০০ সিসি, ৯০০ সিসি এবং ১২০০ সিসিতে উন্নিত হয়। এদের মধ্যে হোমো স্যাপিয়ানস মানুষের মস্তিষ্কের আয়তন প্রায় ১২০০ সিসি।
অপরদিকে বর্তমান আধুনিক মানুষের মস্তিষ্কের আয়তন
প্রায় ১২০০ সিসি থেকে ১৬০০ সিসি পর্যন্ত হয়। নৃ-বিজ্ঞানীগণ মনে করছেন হোমো-স্যাপিয়ানস মানুষের জেনেটিক রূপান্তরের মাধ্যমে তাদের মস্তিস্কের আকার পরিবর্তন হয়ে আধুনিক মানব প্রজাতির আবির্ভাব ঘটে। সে হিসেবে হোমো স্যাপিয়ানস প্রজাতির মানুষের অধস্তন অন্যান্য প্রজাতিগুলোর ক্ষেত্রেও একই ভাবে জিন রূপান্তর কাজ করেছে। তাই এদের ক্ষেত্রেও মস্তিষ্কের আয়তনের পর্যায়ক্রমে উন্নতি ঘটেছে।
Australopithecus (3-2 million yrs. ago)
Homo (sapiens) sapiens (100,000-40,000 yrs. ago)
Homo erectus (750,000 yrs. ago)
Homo sapiens) sapiens (40,000 yrs. ago to present)
হোমো স্যাপিয়ানস মানুষের ইতিহাস
এরা দলবদ্ধভাবে জীবন যাপন করত। তারা পাহাড়ের গুহায় বড় বড় গাছের আশ্রয়ে বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠিভুক্ত হয়ে যাযাবরের মতো বসবাস করত। এদের মাঝেও নিজ পরিবারের সদস্য যেমন মাতা-পিতা এবং সন্তান সন্ততিদের প্রতি প্রেম-ভালবাসা ছিল এবং এদের মাঝে মানব সুলভ গুণ থাকলেও তারা অন্য গোত্রের সদস্যদের হত্যা করে তাদের হাড় মাংস পশুর মত ভক্ষণ করত।
তাদের ছিল না ভাষা জ্ঞান এবং ছিলনা ইচ্ছা শক্তির স্বাধীনতা। তারা পরস্পরের সাথে অশান্তি ও রক্তারক্তিতে মেতে থাকত। যখনি তারা এমন করেছে, তখনই ফেরেশতাগণ তাদের ধর-পাকড় করেছে। সম্ভবত এভাবে অথবা জেনেটিক বিলুপ্তির মাধ্যমে তাদের প্রজাতির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।
মস্তিষ্কের আকার
আদিম যুগের মানুষের মস্তিষ্কের আকার পরিবর্তনের কারণ কি? এটা অবশ্যই জিজ্ঞাসার বিষয়। এর উত্তরে বলা যায় মস্তিষ্কের আকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জেনেটিক রূপান্তর মুখ্য ভূমিকা পালন করলেও এর সাথে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মানুষের বুদ্ধি শক্তি জড়িত ছিল। কারণ আদিম মানুষ আগুনের ব্যবহার জানত না বিধায় তারা পশুর গোশত কাঁচা চিবিয়ে ভক্ষণ করত। এর ফলে তাদের চোয়াল ছিল বড় এবং মাথা ছিল ছোট। মাথা ছোট থাকায় মস্তিষ্কের আয়তন ছিল ছোট। ফলে তাদের বুদ্ধি শক্তি ও ছিল কম।
আগুনের ব্যবহার
যখন তারা আগুনের ব্যবহার শিখল তখন থেকে তারা পশুর গোশত আগুনে সিদ্ধ করে খেতে লাগল। এর ফলে তারা আগের চেয়ে বেশী প্রোটিন হজম করতে পারল। কারণ কাঁচা গোশত চিবিয়ে খাওয়াতে তাদের আহার করা গোশত বেশী হজম হতো না। এর ফলে প্রোটিনের অভাবে তাদের বুদ্ধি শক্তিও ছিল কম। আগুনের ব্যবহার শেখায় তাদের জীবনযাত্রা পাল্টে যায়।
তারা রান্না করে খেতে শেখে। এতে চোয়ালের উপর অতিরিক্ত চাপ কমে যায়। ফলে ধীরে ধীরে চোয়াল ছোট হতে থাকে এবং মাথা বড় হয়। এভাবে দিনে দিনে মস্তিষ্কের কুটুরী বড় হতে থাকে। ফলে মগজ ধরার জাগা বৃদ্ধি পায় এবং মানুষের বুদ্ধিশক্তিও বৃদ্ধি হতে থাকে। সাথে সাথে আদিম কাঠামোর মানুষের ধাপে ধাপে বিলুপ্তিও ঘটতে থাকে।
মানব প্রজাতির বিভিন্ন ধাপের মধ্যে অনেকেই ধারণা করেন এখনও প্রস্তর যুগের মানুষের অস্তিত্ব টিকে আছে। তাদের ধারণা মধ্য এশিয়ার মঙ্গোলিয়া ও ককেশাস পার্বত্য অঞ্চলে ‘আলমা' নামের এক ধরনের প্রস্তর যুগের মানুষ রয়েছে। ‘আলমা' এদের স্থানীয় ডাকনাম। আমাদের মত আধুনিক মানুষ ‘আলমা’ এক মেয়ের সাথে ঘর সংসার করেছে এমন প্রমাণও পাওয়া যায় ৷
১৮৬০ সালে রুশ ককেশাস অঞ্চলের জর্দান
১৮৬০ সালে রুশ ককেশাস অঞ্চলের জর্দান পার্বত্য এলাকার স্থানীয় এক শিকারীর হাতে কৃষ্ণগাত্রবর্ণ বাদামীচুল উচুকণ্ঠাহাড় ও উঁচু চোয়াল বিশিষ্ট এক মেয়ে 'আলমা' ধরা পড়ে। এই মেয়ে ‘আলমা' পরবর্তী জীবন ঐ গ্রামেই কাটায়। সে কথা বলতে শেখেনি কিন্তু মানুষের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যের সাথেই জীবনযাপন করেছে। তার গর্ভে ৫টি সন্তানও হয় ৷ কিন্তু সন্তানগুলো কথা বলতে পারে। (তথ্য দৈনিক সংগ্রাম; ৯ই এপ্রিল ১৯৯৭)
১৮৮৯'র দশকের কোন এক সময় ঐ ‘আলমা' মেয়েটি মারা যায়। এসব তথ্যের সূত্র থেকে অনেকেই মনে করেন যে, এ ধরনের আলমা গোত্রের মানুষ এখনও ঐ এলাকায় গভীর অরণ্যে টিকে আছে।
আমাদের দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পার্বত্য এলাকায়
আমাদের দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় এখনও কিছু মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা উলঙ্গ হয়ে যাযাবরের মতো গহীন অরণ্যে বসবাস করে। এরা নিজেদের বৃদ্ধ পুর্বপুরুষদের হত্যা করে তাদের গোশত পর্যন্ত ভক্ষণ করে। এরা অসভ্য প্রকৃতির মানুষ হলেও এদের গঠন আকৃতি সভ্য মানুষের মতোই।
এসব তথ্যের উপর ভিত্তি করে আদমের আগেও যে মানুষের ন্যায় অনেক প্রজাতি ছিল তা নিশ্চিত করে বলা যায়। নৃ-বিজ্ঞানীগণ মাটির নীচের চাপা পড়া অতি প্রাচীনকালের মানুষের হাড়ের টুকরার উপর গবেষণা চালিয়ে আদমের আগের বিভিন্ন ধাপের মানুষের ন্যায় জীবের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছেন।
আদমের আগের মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি (খলিফা) ছিলনা। তারা পশু শ্রেণীর মানুষ। এদের শরীরের বাড়তি লোম দ্বারা তাদের লজ্জা স্থান ঢেকে রাখত। আর শীত নিবারণের জন্য ব্যবহার করত পশুর চামড়া ও গাছের ছাল। তারা একদল অন্য দলের সাথে রক্তারক্তি করত। উলঙ্গ হয়ে চলাফেরা করতে তাদের কোন সংকোচবোধ ছিলনা।
আজকের আধুনিক মানুষ
আজকের আধুনিক মানুষ সেই পশু শ্রেণীর মানুষ থেকে উদ্ভব হয়েছে বিধায় তারাও পরস্পরের সাথে রক্তারক্তি করে। কিছু কিছু মানুষের মাঝে লজ্জাস্থান ঢেকে রাখার প্রবণতা উঠে যাচ্ছে। বর্তমান মানুষের এ ধরনের আচরণ পূর্ববর্তী মানুষের জেনেটিক সূত্র থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া।
লেজবিহীন বানর
লেজ বিহীন বানর দেখতে অনেকটা মানুষের মতো। স্রষ্টার উদ্দেশ্য মুখী বিবর্তনের এরা জ্বলন্ত সাক্ষী।
(ক) প্রাচীন প্রস্তর যুগের কাল্পনিক মানুষ
(খ) নব্য প্রস্তর যুগের কাল্পনিক মানুষ।
আধুনিক বিবর্তনবাদ
আধুনিক বিবর্তনবাদ পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ দিনে দিনে পাল্টে যাচ্ছে। যেখানে একদিন নদী, নালা, বিল ছিল, সেখানে এখন গড়ে উঠেছে জনপদ, দালান কোঠা ইত্যাদি। এটা প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এ পরিবর্তনের ছোঁয়া উদ্ভিদ জগতে যেমন পড়েছে তেমনি জীব জগতেও লেগেছে।
এ হিসেবে পৃথিবীতে যখন মানুষ প্রজাতির আবির্ভাব হয় তখন থেকেই তারা বুদ্ধিমান মানুষ হিসেবে আবির্ভূত হয়নি। মানব জাতির বিবর্তনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধাপ পার হয়েছে। তারমধ্যে বন্য ও বর্বর মানুষেরা পাথরের তৈরী হাতিয়ার দিয়ে তাদের কলা কৌশলের যাত্রা শুরু করে। সে যুগটা ছিল প্রস্তর যুগ। এ প্রস্তর যুগকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন প্রাচীন প্রস্তর যুগ, মধ্য প্রস্তর যুগ ও নব্য প্রস্তর যুগ।
শেষ পর্যন্ত নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ থেকে সভ্য মানুষের আবির্ভাব ঘটে। মানব প্রজাতির এই যে বিবর্তন, এটার পদ্ধতি কি ছিল? বিজ্ঞানীগণ মনে করেন প্রত্যেকটি প্রাণী ও উদ্ভিদ তার পূর্ববর্তী নিম্ন শ্রেণীর জীব বা উদ্ভিদ থেকে ক্রমবিকাশের (ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে) মাধ্যমে উদ্ভব হয়েছে।
ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন পদ্ধতি
এ ধারণাটা সঠিক হলেও ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন পদ্ধতি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তাই বিবর্তন সম্পর্কে নতুন ভাবে চিন্তা করা শুরু হয়েছে, এটাই আধুনিক বিবর্তনবাদ। বর্তমানে আধুনিক বিবর্তনবাদকে জীবনের সাংগঠনিক পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অথবা একে সৃষ্টিশীল বিবর্তনবাদও বলা চলে। এ পদ্ধতির বিবর্তনের ক্ষেত্রে নির্ধারিত পরিকল্পনার কথা স্বীকার করা হয়। যা একজন মহাপরিকল্পনাকারীর পরিকল্পনা অনুসারে সংগঠিত হয়েছে।
আধুনিক যুগের মানুষ ক্রস-ব্রিডিং
আধুনিক যুগের মানুষ ক্রস-ব্রিডিং পদ্ধতি ব্যবহার করে উন্নততর জাতের পশু পাখির উদ্ভব ঘটাচ্ছে। এ হিসেবে মানব প্রজাতির বিকাশের ক্ষেত্রে কি প্রাকৃতিক ক্রস-ব্রিডিং পদ্ধতি বিরাজমান ছিল? সেটা কি স্বত:স্ফূর্ত, নাকি কারও পরিকল্পনাধীন ঘটেছে?
যারা স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করেনা তারা মনে করে প্রাকৃতিক ক্রস-ব্রিডিং পদ্ধতি স্বতঃস্ফূর্ত। কিন্তু যারা স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসী তাদের ধারণা প্রাকৃতিক ক্রস-ব্রিডিং পদ্ধতি স্রষ্টার সার্বিক তত্ত্বাবধানে সংগঠিত হয়েছে। যখন বন্য ও বর্বর মানুষ-প্রজাতির বুদ্ধির বিকাশ ঘটেছে তখনি প্রকৃতি রাজ্যের সাংগঠনিক বিবর্তন ধারায় তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ ও জেনেটিক রূপান্তর ঘটেছে।
এভাবে হাজার হাজার বছর ধরে, মানুষের বংশানুক্রমিক প্রজনন ধারার মাঝে পরিবর্তন ও রূপান্তর ঘটে। যখন রূপান্তর সংঘটিত হওয়ার মতো উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তখনি স্রষ্টার পরিকল্পনাতে সৃষ্টি প্রক্রিয়ার তিন নম্বর পদ্ধতি অনুসারে নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছে। এভাবে জীব মানুষের (বন্য ও বর্বর) শেষ ধাপ হোমো স্যাপিয়ানস মানুষে এসে টেকে।
এ শ্রেণীর মানুষের মাঝে কিছুটা সভ্য স্বভাবের উদ্ভব ঘটেছিল। এরা আগুন জ্বালাতে শিখেছিল। তারা খাদ্যদ্রব্য আগুনে সিদ্ধ করে খেত। এ ধরনের জীব মানুষ আল্লাহ তা'য়ালার খেলাফতকারী মানুষ ছিল না। এদের থেকে কোন প্রকার পরিকল্পনা ছাড়াই আদমের আবির্ভাব ঘটেনি।
বরং সৃষ্টিকর্তার কালজয়ী এক বিস্ময়কর ইতিহাসের ধারা ও জবাবদিহিতামূলক পরীক্ষার সূত্রপাতের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ভিন্ন ও ব্যতিক্রমধর্মী রীতি প্রবর্তন করে আদমকে পয়দা করেছিলেন।
আল-কোরআন ও নৃ-বিজ্ঞান
আল-কোরআন ও নৃ-বিজ্ঞানের আলোকে আমরা জানতে পেরেছি পৃথিবীতে আদমের আগেও জীব মানুষ (বন্য ও বর্বর) ছিল। এ ধরনের মানুষ থেকেই আদমের আবির্ভাব। এখানে এসে প্রশ্ন দাঁড়ায় আদমের জন্ম যে জীব মানুষ থেকে হয়েছে, বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে তার প্রমাণ কি?
এর জবাবে বলা যায় ডি, এন, এ টেপ বা জিন প্রতিস্থাপনের কথা। বর্তমান যুগের মানুষ আদমের বংশধর। এদের স্বভাব ও দৈহিক গঠনে রয়েছে জীব মানুষের ডি. এন. এ. টেপ। যার জন্য এদেরকে শত ঐশী বাণী শোনানোর পরও তাদের স্বভাব প্রকৃতি বার বারই মূলের দিকে ধাবিত হয়।
খুব শক্ত ধরনের আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই জীব মানুষের স্বভাব প্রকৃতিকে সুস্থ মানবিক (সভ্য) বিকাশের অনুকূলে আনা যায়। তাছাড়া আহার-নিদ্রা, পয়ঃনিষ্কাশন এবং প্রজনন রীতি ইত্যাদি সবই জীব মানুষের মতই চলে।
কেউ যদি এ কথাটি মানতে রাজি না হন, তবে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন থাকবে কেনইবা বার বার আদম জাতি পশুর স্তরে নেমে আসে? বর্তমান পৃথিবীর মানুষের মাঝে কি পশুর স্বভাব নেই? আমার মনে হয় এর কোন সদোত্তর পাওয়া যাবে না।
আধুনিক বিবর্তনবাদেরও ধারণা মানুষের সাংগঠনিক পরিকল্পনার ধারার প্রথম ধাপ শুরু হয় পানির এককোষী জীব থেকে এবং জীবের আঙ্গিক পরিবর্তন ঘটে স্রষ্টার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অধীনে।
ডারউইন চিন্তা করেছিল জীবের পরিবর্তন
কিন্তু ডারউইন চিন্তা করেছিল জীবের আঙ্গিক পরিবর্তন ঘটে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে। যখন পানির জীব ডাঙ্গায় পড়ে খাবি খাচ্ছিল তখন তার হাত-পা গজিয়ে গিয়েছিল। এখানেই আধুনিক সৃষ্টিশীল বিবর্তনবাদের সাথে ডারউইনের বিবর্তনবাদের তফাৎ।
বিবর্তনের মাধ্যমে যে জীব ও উদ্ভিদ জগতের বিকাশ ঘটেছে এটা একশত ভাগ সত্য। এমনটি না হলে মানুষ কোন হালাল জীব ও উদ্ভিদ খেয়ে হজম করতে পারত না। অপর দিকে মানুষ যদি পৃথিবীর সৃষ্টিকুলের সাংগঠনিক পরিকল্পনার বাইরের কোন জীব হতো তাহলে পৃথিবীর জীব ও উদ্ভিদের সাথে তার কোষ-কলার কোন মিল থাকত না।
দর্শনের দৃষ্টিতে বিচার করলে দেখা যায় তৃণলতা সহজে তৃণলতা, পশুরা সহজে পশু আর মানুষ প্রাণপণ চেষ্টায় মানুষ। এ ক্ষেত্রে মানুষ (সভ্য) যদি বন্য ও বর্বর মানুষ থেকে উদ্ভব না হতো তাহলে তার চেষ্টার কোন প্রয়োজন ছিল না। মানুষ হিসেবে আমাদের জানার কৌতুহল ব্যাপক আমরা সব সময় চিন্তা করি তার আগে কে বা কি ছিল।
আদম পৃথিবীর প্রথম সভ্য মানব। তিনি কখনো শূন্য থেকে পৃথিবীতে আবির্ভূত হননি। কিংবা মাটির আদম কখনো আকাশ থেকে লাফিয়ে পৃথিবীতে পড়েননি। তিনি নিশ্চয়ই কোন জীব মানুষের উৎস থেকে আবির্ভূত হয়েছেন।
তবে পরম আত্মার আদম দুনিয়ার বাইরের কোন শান্তির উদ্যান থেকে নেমে এসে পৃথিবীর জীব আত্মার আদমের সাথে পরম বন্ধু হিসেবে একাকার হয়েছেন। তাই আদম জাতের রয়েছে জীব আত্মা ও পরম আত্মা। মূলত পরম আত্মার আদম জীব মানুষের দেহে প্রতি স্থাপন হওয়ার পর তার জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক ও স্রষ্টার আনুগত্য করার প্রবণতার বিকাশ ঘটে।
জীব আত্মার মানুষের উৎপত্তি ঘটেছে হোমো স্যাপিয়ানস গোত্রের মানুষ থেকে
জীব আত্মার মানুষের উৎপত্তি ঘটেছে হোমো স্যাপিয়ানস গোত্রের (বন্য ও বর্বর) মানুষ থেকে। তাই তার চরিত্রে রয়েছে জীব মানুষের (বন্য ও বর্বর) জেনেটিক তথ্য।
পক্ষান্তরে পরম আত্মা বহন করে ঐশী গুণাবলী। এগুণ মানবতাবোধ ও সৃষ্টার অনুগত্যের তথ্য বহন করে। তবে জীব আত্মা ও পরম আত্মার মধ্যে কর্মক্ষেত্রে যেটি জয়ী হয় সেটির চরিত্রই প্ৰাধান্য পায়। এখানে এসে জিজ্ঞাসার উদয় হয় যে, জীব আত্মা ও পরম আত্মার সমন্বয় হলো কিভাবে?
এ প্রশ্নটি খুবই জটিল। কারণ যখন থেকে এ বংশানুক্রমিক রীতি প্রবর্তিত হয়, তখন যে ঘটনার মাধ্যমে রূপান্তর প্রক্রিয়াটি সাধিত হয়েছিল, তার কোন আলামত এখন আর পৃথিবীতে নেই। সুতরাং যিনি এই রূপান্তর প্রক্রিয়াটি ঘটিয়েছেন, তাঁর বাণী অনুসরণ করেই আমাদেরকে এর মূল রহস্য জানার চেষ্টা করতে হবে।
আধুনিক সভ্য মানুষের উদ্ভব
আধুনিক সভ্য মানুষের উদ্ভব যে জীব মানুষের (বন্য ও বর্বর) উৎস থেকে হয়েছে তার একটি উদাহরণ এখানে আনা হলো; যেমন হোমো-স্যাপিয়ানস গোত্রের মানুষসহ তার পূর্ব প্রজাতির মানুষগুলো উলঙ্গ থাকত বলে তাদের লজ্জাস্থান আবৃত রাখার জন্য তাদের যৌনাঙ্গের চারদিকে ছিল বিশেষ ধরনের চুল। এ চুলগুলোর প্রধান কাজ হলো যৌনাঙ্গ ঢেকে রাখা।
এগুলোর আরও কোন কাজ ছিল বলে প্রমাণ মেলে না। এখনও যেহেতু আমাদের বংশধরের মাঝে ঐ শ্রেণীর মানুষের ডি.এন.এ জিন রয়েছে, তাই আমাদের লজ্জাস্থানের চারদিকে এখনও সে ধরনের চুল গজায়। জীব আত্মার আদম যে হোমো স্যাপিয়ানস গোত্রের বংশগতির তথ্য বহন করছে এটিও একটি বড় দৃষ্টান্ত। আধুনিক বিবর্তনবাদ জীবের আঙ্গিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জেনেটিক রূপান্তর-এর বিষয়টিই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে।
সংগৃহীতঃ আদমের আদি উৎস
আল মেহেদী
পোস্ট ট্যাগঃ