জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কি
মানব ক্লোনিং
এর ক্ষেত্রে ভ্রুণ তৈরীর জন্য পিতার প্রয়োজন হয় না। অর্থাৎ শুক্রকীট ছাড়াই মানব ভ্রুণ তৈরী করা সম্ভব। মাতার একটি ডিম্বানু কোষই বিভাজিত হয়ে একটি ভ্রুণে পরিণত হতে সক্ষম। এ পদ্ধতির নাম প্যাথেনোজেনোসিস প্রজনন প্রক্রিয়া। এরকম প্রজনন প্রক্রিয়া সাধারণত কীট-পতঙ্গের মধ্যে সংঘটিত হয়। কিন্তু অন্যান্য জীব-জন্তুর ক্ষেত্রে এ রকম প্রজনন রীতি লক্ষ্য করা যায় না।
স্বাভাবিক প্রজনন রীতিতে একটি শুক্রকীট একটি ডিম্বানুতে প্রবেশ করে নিষিক্ত (Fertilization) হলে একটি ভ্রুণ তৈরী হয়। কিন্তু ক্লোনিং প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞানীগণ ভ্রুণ তৈরী করতে শুক্রকীট ব্যবহার করেনি। অর্থাৎ ক্লোনিং-এর ক্ষেত্রে ভ্রুণ তৈরীর জন্য পিতার প্রয়োজন হয় না।
এ পদ্ধতিতে বিজ্ঞানীগণ একটি মানবীর (মাতার) ডিম্বানু সংগ্রহ করেন। তারপর ডিম্বানুর নিউক্লিয়াসটি বের করে নিয়ে আসেন। এ ধরনের নিউক্লিয়াসহীন ডিম্বানুর পাশাপাশি রাখা হয় মানুষের চামড়া থেকে সংগ্রহ করা একটি কোষ। এরপর ডিম্বানু ও কোষের উপর প্রয়োগ করা হয় জোরালো বিদ্যুৎ প্রবাহ। এর ফলে নিউক্লিয়াসটি ডিম্বানুর ভেতরে প্রবেশ করে।
এতে সেটি (ডিম্বানুটি) কর্মক্ষম হয়ে ওঠে। তারপর এই ডিম্বানুটি একটি সুরক্ষিত পাত্রে রাখা হয়। সেখানে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে একটি স্থিতিশীল ভ্রুণ তৈরী হয়। এটি একটি ষ্টেম সেল (কোষের ক্ষুদ্র অংশ)।
অতঃপর এ ষ্টেম সেল এর মাধ্যমে যার শরীরে চামড়া ব্যবহার করা হয়েছিল তার প্রয়োজনে শরীরে যে কোন অংশের কোষ তৈরী করা সম্ভব হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিটি রোগীদের জন্য আশানুরূপ সুখের হলেও বর্তমানে এ ক্লোনিং পদ্ধতি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীগণ পূর্ণাঙ্গ মানুষ তৈরীর চেষ্টা করছেন। এ পদ্ধতিতে ষ্টেম সেলটি
টেস্ট টিউব বেবী
জন্ম দেয়ার পদ্ধতির ন্যায় তা প্রতিস্থাপন করা হয় কোন না কোন সক্ষম মাতার মাতৃথলিতে। অতঃপর সেখানেই দিনে দিনে পূর্ণাঙ্গ মানুষটি সৃষ্টি হয়ে থাকে।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং
এর সফলতায় পিতা ছাড়াও যে সন্তান হতে পারে সে সত্য বৈজ্ঞানিকগণ প্রমাণ করেছেন।
অতীতে এমন এক সময় ছিল (বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার পূর্বে) যখন মানুষ পিতা ছাড়া সন্তান হতে পারে তা কল্পনাও করতে পারেনি। তাই তাদের কাছে বিষয়টি ছিল রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক। ফলে বিবি মরিয়মের গর্ভে যখন পিতার সংস্পর্শ ছাড়াই সন্তান হয়েছিল তখন সে সময়ের মানুষ তা বিশ্বাস করতে পারেনি। বরং বিবি মরিয়মও বিস্মিত হয়েছিলেন। কারণ বিবি মরিয়মের গর্ভে সন্তান এসেছিল পিতার সংস্পর্শ ছাড়াই।
আজ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং
এর সফলতায় মানব ক্লোনিং-এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীগণ সৃষ্টির সূচনা করতে সক্ষম। এদিক থেকে স্রষ্টা পুনঃসৃষ্টি, জীব প্রজাতির রূপান্তর, সৃষ্টির সূচনা, বস্তু ও বস্তুর উপাদানের উদ্ভবসহ প্রাণের উৎপত্তি ঘটাতে সক্ষম। বরং বলা যায় আল্লাহর পক্ষে অসম্ভব বলতে কিছু নেই ! তিনি (আল্লাহ) আদম ও বিবি হাওয়াকে ঈসা (আ)-এর ন্যায় অনুরূপ পদ্ধতিতেই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।
আল্লাহর পক্ষে নতুন কোন প্রজাতির উদ্ভব ঘটানো এবং পিতার সংস্পর্শ ছাড়াই মাতৃগর্ভ থেকে সন্তান পয়দা করা মানুষের মতো ব্যাপক কারিগরি যন্ত্রপাতি নিয়ে কর্মব্যস্ত থাকার প্রয়োজন হয় না। আল্লাহ এরাদা করার পর 'হও' বললেই সবকিছু হয়ে যায়। এখানে এরাদা + 'হও' = সৃষ্টির উদ্ভব। অর্থাৎ তথ্য (এরাদা) + তরঙ্গ (হও) = তথ্য তরঙ্গ বা তথ্য কণা কিংবা তথ্য কাঠামো।
মূলতঃ জগতের সকল কিছুই তথ্যের জমাটবদ্ধ রূপ। একজন মানুষের একটি কোষ একটি তথ্যের লাইব্রেরী। সে হিসেবে একটি পূর্ণাঙ্গ মানুষের দেহ অসংখ্য লাইব্রেরীর সমান। স্রষ্টার ‘এরাদা’ ও ‘হও' বলা থেকেই তথ্যের উৎপত্তি।
আল্লাহ বলেন, “সে বলেছিল (মরিয়ম), হে আমার প্রতিপালক, কিভাবে আমার পুত্র হবে? কোন মানুষ (পুরুষ) তো আমাকে স্পর্শ করে নাই। তিনি বললেন, এভাবেই; আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, যখন তিনি কোন কার্যের মনস্থ করেন তখন তিনি “হও” ব্যতীত বলেন না; ফলতঃ তাতেই হয়ে যায়।” (সূরা আলে ইমরান-৪৭)
“ওরা কি লক্ষ্য করে না কিভাবে আল্লাহ সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করেন এবং পুনরায় সৃষ্টি করেন।” (সূরা আনকাবুত-১৯)
আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নতর জীব, আদম (আ) ও বিবি হাওয়ার বংশধর। মানবজাতি সৃষ্টির এ পর্যায়ে আসতে অনেক ধাপ পার হতে হয়েছে। কারণ সকল জীবের আদি উৎস হলো পানি। এ ক্ষেত্রে মানুষকে পানি ও কাদামাটির বিশুদ্ধ সারভাগ থেকে সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে।
আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ সমস্ত প্রকারের প্রাণীকে সৃষ্টি করেছেন পানি থেকে।” (সূরা আন নূর-৪৫)
“আমরা গঠন করেছি মানুষকে কাদামাটির বিশুদ্ধ সারভাগ থেকে।” (সূরা মুমেনুন-১২)
উপরোল্লিখিত দু'টি আয়াতে মানুষ সৃষ্টির ব্যাপারে বিশুদ্ধ পানি ও মাটির কথা এসেছে। এর মাধ্যমে বুঝা যায় যে, পৃথিবীর সমস্ত জীব পানির এক কোষী জীবন থেকে উদ্ভব হয়েছে। যা দীর্ঘ দিনের জেনেটিক রূপান্তরের মাধ্যমেই সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তা সফল জেনেটিক মহাবিজ্ঞানী।
স্রষ্টার উদ্দেশ্যমুখী সাংগঠনিক জেনেটিকস
পদ্ধতির চূড়ান্ত ধাপ পৃথিবীর ক্ষেত্রে আমাদের মাধ্যমে সফলতা পেলেও এখানেই তা থেমে থাকবে না। জীবনের সফলতা ও বিফলতা নির্ধারণ হলে, নতুন রূপে ও নতুন গঠনে, পূর্ণতার মাধ্যমে বিবর্তন থেমে যাবে। প্রকৃতির রাজ্য দিনে দিনে চরম বিশৃংখলার দিকে চলে যাচ্ছে।
এটাই বড় প্রমাণ যে প্রকৃতির রাজ্যের জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং-এর কাজ থেমে যায়নি। সামনে আরও রূপান্তর হবে। সে রূপান্তরের প্রবর্তক হলেন স্রষ্টা নিজেই। বর্তমানের জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং ও মানব ক্লোনিং-এর সফলতা প্রকৃতির রাজ্যের জীব প্রজাতির রূপান্তরের বড় ধরনের দৃষ্টান্ত।
যেভাবে ক্লোনিং হয়
- পুরুষ বা মহিলা যার ক্রোন তৈরি হবে তার দেহের
- যে কোনো অঙ্গের (যেমন ত্বক) একটি কোষ নেওয়া হয়
- নিষিক্ত না হওয়া একটি ডিম্বাণু নেওয়া হয়
- নিউক্লিয়াস সরিয়ে নেওয়া হয়
- দাতার কোষের নিউক্লিয়াস ডিম্বাণুর সঙ্গে সংযোজন করা হয়:
- ডিম্বাণুর জেলেকে কোড এবং নিউক্লিয়াসের ডিএনএ সরিয়ে ফেলা হয়
- ডিম্বাণুতে দাতার জেনেটিক কোড দেওয়া হয়
- ভ্রূপে পরিণত হওয়ার আগ পর্যন্ত কোষটি গবেষণাগারে বেড়ে ওঠে,
- জরায়ুতে ভ্রুণ স্থাপন করা হয়
- ক্লোন হয়
- কোষদানকারীর মতোই হবছ আরেকজনের সৃষ্টি হবে
বিবর্তনবাদ (Theory of Evaluation)
প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে এক প্রজাতির জীব থেকে অন্য প্রজাতির জীবের কিভাবে উদ্ভব ঘটে তার ব্যাখ্যা প্রদান করে। চার্লস ডারউইন ছিলেন বিবর্তনবাদের সফল উপস্থাপক। তার সময়ে মেণ্ডেলাও এ বিষয়ে গবেষণা করেছেন।
ডারউইনের
মতে সব প্রজাতির বা প্রকৃতির সাথে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতে পারে না। যাদের যোগ্যতা বেশী তারাই শুধু টিকে থাকে। যোগ্যতার লড়াইয়ে জয়ী হয়ে পরবর্তী প্রজন্মের ধারাবাহিকতা টিকে থাকাই হলো প্রাকৃতিক নির্বাচন (Natunal Selection)।
অপর দিকে জেনেটিক রূপান্তরের মাধ্যমে সব জীব একটি মাত্র জীব থেকে উদ্ভব হয়েছে। এর মূলে কাজ করে প্রাণীর ক্রোমোজোমের সূক্ষ্ম কণা DNA-এ জিনগুলো।
জিন DNA
এর মাধ্যমে পূর্ব পুরুষের উত্তরাধিকারধারা নতুন বংশগতির সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে যায়।
আবার এই জিনের রূপান্তরের ফলে নতুন নতুন প্রজাতির উদ্ভব হয়। তিনি চিন্তা করে ছিলেন জীবের আঙ্গিক পরিবর্তন জীবন সংগ্রামে লিপ্ত থাকার অভিব্যক্তির প্রকাশ মাত্র। ডারউইন এখানেই ভুল করেছেন। কারণ আঙ্গিক পরিবর্তন জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার উপরই শুধু নির্ভরশীল নয়। এর মূলে আল্লাহর ইচ্ছা ও অভিব্যক্তিই প্রধান।
আল্লাহ বলেন- “আল্লাহই প্রত্যেক জিনিসকে আকার ও প্রকৃতি দান করেছেন।” (সূরা ত্বহা-৫০)
“আমরা (আল্লাহ) মানুষকে গঠন করেছি সর্বোত্তম সাংগঠনিক পরিকল্পনা অনুসারে।” (সূরা তীন-৪)
“(আল্লাহ) সেই একক সত্তা যিনি মানুষকে পানি থেকে গঠন করেছেন এবং প্রতিষ্ঠিত করেছেন বংশধারা (পুরুষের মাধ্যমে) এবং আত্মীয়তার ধারা নারীদের মাধ্যমে।” (সূরা আল ফুরকান-৫৪)
“আমরা তোমাদেরকে গঠন করেছি মাটি থেকে।” (সূরা হজ্ব-৫)
পানি থেকে, আবার মাটির সারভাগ থেকে সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। এ বর্ণনার মাধ্যমে অনুধাবন করা যায় যে, জীব জগতে ও উদ্ভিদ জগতে অতীতে একটা সুনির্দিষ্ট সাংগঠনিক বিবর্তন সংগঠিত হয়েছে। কিন্তু আঙ্গিক পরিবর্তন পরিবেশের সাথে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার চেষ্টা থেকে আকস্মিকভাবে ঘটেনি। এটি ঘটেছে স্রষ্টার ইঙ্গিতে জিন রূপান্তরের মাধ্যমে।
আরও পড়ুন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কি
জীব ও উদ্ভিদের
দেহের মৌলিক উপাদান হলো জীবকোষ। পৃথিবীর আদি এককোষী প্রাণীর কোষ উপাদানের গঠন ও বহুকোষী প্রাণীর কোষের মধ্যে রয়েছে প্রচুর মিল। এটিই প্রমাণ করে যে এক কোষী প্রাণী থেকে বহুকোষী প্রাণীর উদ্ভব ঘটেছে।
“পৃথিবীর আদি প্রাণী ফাইলা শ্রেণীভুক্ত। এদেরকে প্রোটোজেন্স বলা যায়। এই এক কোষী জীবেরা একটা পর্যায়ে এসে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং বহুকোষী জীব সৃষ্টি করে। এই ধারার এটাই হচ্ছে জীব জগতের বিবর্তনের প্রথম দৃষ্টান্ত।” (তথ্যঃ মানুষের আদি উৎস)
জীবজগতের বিভিন্ন প্রজাতি একটি মূল প্রজাতি থেকে উদ্ভব হয়েছে। তবে দৈহিক গঠন-কাঠামোর আওতায় থেকেও এইসব প্রজাতি সময়ের অগ্রগতির সাথে সাথে ভিন্ন ভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে।” (তথ্যঃ মানুষের আদি উৎস)
জীব প্রজাতির পরিবেশগত কারণে তাদের দৈহিক ও চাহিদা বদলে যেতে পারে। আবার ভিন্ন অভ্যাসের জন্য কোন কোন অঙ্গ অধিক ব্যবহারে তার দৃঢ়তা বাড়তে পারে। আবার কোন অঙ্গ দীর্ঘ দিন অব্যবহৃত থাকতে থাকতে সঙ্কুচিত হয়ে যেতে পারে। কিংবা সেটির বিলুপ্তিও ঘটতে পারে। এটাই বিবর্তনবাদের মূল কথা।
আরবের মরু জাহাজ হিসেবে খ্যাত উটের গঠন আকৃতিতে পরিবেশের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। মরুভূমিতে পানির খুব অভাব। সেখানে ধূলিঝড় হয়। উটের দেহে পানি মওজুদ রাখার জন্য রয়েছে আলাদা থলে।
প্রয়োজন অনুযায়ী সে থলে থেকে তারা পানি ব্যবহার করে। আবার তাদের দেহে রয়েছে অক্সিজেন মওজুদ রাখারও ব্যবস্থা।
যখন মরুভূমিতে ধূলিঝড়
হয় তখন এমনও হয় যে, ধূলি স্তূপের মধ্যে উটগুলো ডুবে যায়। এমতাবস্থায় মওজুদকৃত অক্সিজেন দিয়ে উটের জীবন রক্ষা হয়। এখানে অক্সিজেন গঠনের ক্ষেত্রে পরিবেশের প্রভাব অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু পরিবেশের অনুকুল প্রজাতির উদ্ভব হওয়া প্রাণীর নিজস্ব অনুভূতি ও চেষ্টার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়নি।
এর পেছনে মহা পরিকল্পনাকারীর সাংগঠনিক বিবর্তন নীতিই কাজ করেছে। সেই পরিকল্পনাকারীর ইঙ্গিতে সারা পৃথিবীর মানুষের রং, আকার (লম্বা, খাটো) ভাষার ভিন্নতা থাকলেও দৈহিক গঠন কাঠামো একই। এর দ্বারা প্রমাণ হয় যে, মানুষ এক আদমেরই সন্তান। তবে মানুষ প্রজাতির সাংগঠনিক উদ্দেশ্যমুখী বিবর্তনের চূড়ান্ত ধাপ হলো আদমের প্রজাতি- এটা কোরআন, বিজ্ঞান ও দর্শনের অন্তর্নিহিত তথ্য।
সে সত্য উৎঘাটনে আমাদেরকে নিরপেক্ষ মন নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। প্রাকৃতিক নির্বাচন ও উদ্দেশ্যমুখী সাংগঠনিক বিবর্তন পৃথিবীর আদি এককোষী জীব ‘প্রোটোজোয়া” কি করে বহুকোষী জীবে রূপান্তরিত হলো তার ব্যাখ্যা করা খুবই কঠিন ব্যাপার। কিন্তু মানব মনের স্বভাবজাত ধর্ম হলো-অজানা কোন রহস্য তালাশ করা।
এমন স্বভাব প্রকৃতিগতভাবে মানুষের মধ্যে না থাকলে তারা কখনো কঠিন কঠিন জিনিস আবিষ্কার করতে পারত না। তাই প্রশ্ন যত কঠিনই হোক না কেন তবু মানব মন বসে, থাকে না। যে কোন প্রশ্নের উত্তর ভুল কিংবা সত্য যাই হোক, সত্য অনুসন্ধিৎসু মানুষ তা বের করেই থাকে। প্রসঙ্গত একবার যদি ভুলও হয় তবে অন্য সময় হলেও সত্যের সন্ধান মেলে। সে জন্য মানুষের চেষ্টা থেমে থাকে না।
বিজ্ঞানীগণ জীবের উদ্ভব ও রূপান্তরকে বিবর্তনের খেলা মনে করেন। এ ক্ষেত্রে চার্লস ডারউইন জীবের রূপান্তরের জন্য প্রাকৃতিক নির্বাচন নীতির কথা উল্লেখ করেছেন। তার মতে পৃথিবীর সকল জীব প্রাকৃতিকভাবে টিকে থাকা এবং তাদের বংশ বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে উপযুক্ত হওয়ার সমান যোগ্যতা রাখে না। যাদের যোগ্যতা বেশী তারাই প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে টিকে থাকে।
অপরদিকে জীবের শারীরিক কাঠামোর পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও রূপান্তরও ঘটেছে ঐ একই প্রক্রিয়ায়। অর্থাৎ প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করতে করতে জীবগুলো স্ব-স্ব ক্ষেত্রে বিশেষ নির্বাচনী অনুকুল-অংগ, রং ইত্যাদি লাভ করে।
এ প্রসঙ্গে বলা যায় পৃথিবীর এককোষী জীব
থেকে যেহেতু সমস্ত জীবের উদ্ভব হয়েছে তাই সৃষ্টির আদিতে প্রতিটি জীবই (পরিবেশের অনুকুল জীব) ভিন্ন ভিন্ন অনেক জীবের বাচ্চা প্রসব করে। এ ক্ষেত্রে জীবের জেনেটিক রূপান্তর অথবা একটি জিন আকস্মিক উধাও হয়েও তা ঘটতে পারে। এ ব্যবস্থাটি দীর্ঘকাল ধরে ধীরে ধীরে ঘটেছে। কিন্তু এখন আর প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে শারীরিক কাঠামোর পরিবর্তন ঘটছে না৷
তাই এখানে এসে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তাহলে কি জীবের জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার প্রচেষ্টা একেবারেই থেমে গেছে? মূলত কোন জীবেরই জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার প্রচেষ্টা থেমে যায়নি। এর ফলেও যেহেতু কোন প্রজাতির নতুন করে আঙ্গিক পরিবর্তন ঘটছে না, তাই জীবের ক্রমবিকাশ রূপান্তর ও আঙ্গিক পরিবর্তন সম্পর্কে নতুন করে চিন্তা করা শুরু হয়েছে। সে প্রচেষ্টারই নতুন সংযোজন উদ্দেশ্যমুখী সাংগঠনিক বিবর্তন।
এ শ্রেণীর বিবর্তনের বেলায় জীবের জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার প্রচেষ্টা থেকে তার আঙ্গিক পরিবর্তন ঘটেনি। বরং এক্ষেত্রে বিশ্বাস করা হয় একজন মহা পরিকল্পনাকারীর সৃষ্টির সম্প্রসারণের ব্যর্থতা এখানে কাজ করেছে। এ সম্প্রসারণ প্রক্রিয়াতেও বিবর্তন ছিল, তবে সে বিবর্তন ডারউইনী বিবর্তন নয়। এ ক্ষেত্রে জীবের আঙ্গিক পরিবর্তন স্রষ্টার উদ্দেশমুখী সাংগঠনিক বিবর্তন নীতির মাধ্যমে ঘটেছে।
“আল্লাহই প্রত্যেক জিনিসকে এর আকার ও প্রকৃতি দান করেছেন।” (সূরা ত্বহা-৫০)
পৃথিবীর সকল জীব থেকে নতুন প্রজন্ম সৃষ্টি হওয়ার যে সব নিয়ম নীতি রয়েছে তার মধ্যে
- একটি হলো এককোষী জীবের কোষ বিভাজন পদ্ধতি (প্রোটাজোয়ার বংশ বৃদ্ধির প্রদ্ধতি)।
- দ্বিতীয় নিয়মটি হলো, প্রজনন পদ্ধতি (এটি যৌন সঙ্গমের মাধ্যমে ঘটে)।
- তৃতীয়টি হলো যৌন সঙ্গম বহির্ভূত মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম হওয়ার পদ্ধতি। এক্ষেত্রে পুরুষ সঙ্গীর সাথে স্ত্রী সঙ্গীর মিলনের প্রয়োজন হয় না।
আজকাল বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার যুগে দেখা যাচ্ছে জেনেটিক ইন্জিয়ারিং-এর মাধ্যমে জীব ও উদ্ভিদের জেনেটিক সংকেতের উদ্দেশ্য প্রণোদিত রূপান্তর ঘটানো হচ্ছে। অর্থাৎ এর মাধ্যমে একটি জীব থেকে একটি জিনকে বিচ্ছিন্ন করে তা অন্য একটি জীবের কোষে প্রবিষ্ট করিয়ে নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটানো হয়েছে।
এটি এমন একটি কৌশল যার মাধ্যমে পুনরায় নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটানো সম্ভব। এটি যৌন সঙ্গম বহির্ভূত পদ্ধতি। কিন্তু এর মাধ্যমে সৃষ্টির সূচনা করা সম্ভব নয়। অপর দিকে পরোক্ষভাবে আড়-পরাগায়ণ পদ্ধতিতেও উদ্ভিদের রূপান্তর ঘটানো সম্ভব হয়েছে।
প্রাকৃতিক নির্বাচনের (Natural Selection)
ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে পরিবেশের কোন মিউটেজেনিক এজেন্ট (Mutagenic agent ) DNA কে প্ররোচিত বা আয়োজিত করে পুনঃগঠনে বাধা অথবা বিলুপ্তির মাধ্যমে নতুন প্রজাতির সৃষ্টি করে। এ ক্ষেত্রে মিউটেজেনিক এজেন্ট হিসেবে ধরা হয় বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক রাসায়নিক দ্রব্যাদিকে। এগুলো হলো- আয়ন সৃষ্টিকারী বিকিরণ; অতি বেগুনী রশ্মি অথবা অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যাদি।
কিন্তু DNA কে প্ররোচিত করার ব্যাপারে যে সব দ্রব্যাদির কথা বলা হয়েছে, তা কিন্তু প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। বর্তমানে এগুলোর উপস্থিতির ফলেও যেহেতু জীবের আঙ্গিক রূপান্তর ঘটে না, সে কারণেই প্রাকৃতিক নির্বাচন পদ্ধতির মাধ্যমে জীব জগতের রূপান্তর ঘটেছে, এ কথা এখন আর কেউ বিশ্বাস করে না।
অপরদিকে উদ্দেশ্যমুখী সাংগঠনিক বিবর্তন পদ্ধতির মাধ্যমে জীবের আঙ্গিক রূপান্তর, সৃষ্টির আদি সূচনা, বংশের পুনরাবৃত্তি, বিলুপ্তি, আকার-আকৃতি, নতুন প্রজাতি উদ্ভব, সবগুলোই সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করা যায়।
আল্লাহ বলেন, “যা-তা খোলার জন্য নয়-একটা মহৎ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে।” (সূরা দুখান-৩৮, ৩৯)
আল্লাহ কোন কিছুর সূচনা করতে যেয়ে বলে থাকেন ‘হও' আর অমনি তা হয়ে যায়। এর মাধ্যমে সৃষ্টির আদি সূচনা ও নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটে থাকে।
আল-কোরআনে এরশাদ হচ্ছে- “আল্লাহ যা খুশি তাই সৃষ্টি করতে পারেন; যখন তিনি কোন কিছু ঘটাতে চান; তখন তাকে বলেন, ‘হও' আর এমনি তা হয়ে যায়।” (সূরা আলে ইমরান-৪৬)
“আমি যে জিনিসের এরাদা করি সেজন্য শুধু এতটুকু বলতে হয় ‘হয়ে যাও' তাহলেই তা হয়ে যায়।” (সূরা নাহল-৪০)
জীব জগতের আদি পুরুষ
বা প্রথম প্রজাতির প্রথম জীবটির সূচনা হয়েছে পানি থেকে। এখানে পানি এবং পানির সাথে মিশ্রিত অন্যান্য জৈব রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমে আদি জীব প্রোটোজোয়ার সৃষ্টি হয়। এখন যদি পানি এবং পানির সাথে মিশ্রিত (অথাৎ প্রোটোজোয়াতে যা থাকে) ঐ পদার্থ গুলোকে এক সাথে রেখে দেয়া যায় তবু এগুলো থেকে একটি প্রোটোজোয়ার জন্ম হবে না। তাই একে আমরা প্রাকৃতিক নির্বাচন বলতে পারি না।
সৃষ্টির সূচনা আল্লাহ যে পদ্ধতিতে করেছেন সেখানে মা বাবার যৌন মিলনের প্রথা চালু নেই। এখানে শুধু পানি ও পানিতে মিশ্ৰিত জৈব রাসায়নিক উপাদানগুলোর পরিণাম ও অনুপাত এক করে আল্লাহ “কুন ফাইয়া কুন”-এর মাধ্যমে সৃষ্টির সূচনা করেছেন। এখানে “কুন ফাইয়া কুন” হলো স্রষ্টার কমাণ্ড আদেশ বা Information bit. এ তথ্যটি জীব কোষের ক্রোমোজমের জিন-এ মওজুদ থাকে।
মূলত এককোষী জীব
থেকে নিয়ে জীব প্রজাতির উন্নতর ধাপ মানুষের দেহ কোষে রয়েছে তথ্য কণার সমাহার। এ তথ্য কণা প্রাণীর অভিব্যক্তি থেকে সৃষ্টি হলে এখনও জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার প্রয়োজনে নতুন তথ্য কণা সৃষ্টি হয়ে জীবের আঙ্গিক পরিবর্তন দেখা দিত।
যেহেতু এমন আর হচ্ছে না, তাই বলা যায় যিনি সৃষ্টির সম্প্রসারণের জন্য তথ্য কণা বা Information bit পাঠিয়েছেন তিনিই আল্লাহ। তিনি জগতের স্রষ্টা। তাঁর ইচ্ছাতেই জগতের সমুদয় প্রাণীর উদ্ভব ঘটেছে। সেজন্য জীব প্রজাতির ক্রমবিকাশ স্রষ্টার উদ্দেশ্যমুখী সাংগঠনিক বিবর্তন পদ্ধতি বলা চলে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাই ঘোষণা করেছেনI
“ওরা কি লক্ষ্য করে না কিভাবে আল্লাহ সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করেন; অতঃপর তা পুনরায় সৃষ্টি করেন?” (সূরা আনকাবুত-১৯)
“সব জীবকে আল্লাহ পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন; এদের কোনটি হামাগুড়ি দিয়ে চলে, কোনটি চলে দু'পায়ে, আর কোনটি চলে চার পায়ে।” (সূরা আন নূর-৪৫)
এ আয়াত থেকে বুঝা যায়—জীব ও উদ্ভিদের ক্রমবিকাশ শুরু হয় পানির সরলতম জীব- প্রোটোজোয়া থেকেই। পরবর্তী পর্যায়ে জীবের স্বতন্ত্র অঙ্গগুলো পরিবেশের অনুকূল করে স্রষ্টাই সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদীগণ জীবের স্বতন্ত্র অংগগুলোকে জীবের জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার হাতিয়ার মনে করেন; যা এখন পর্যন্ত সত্য বলে প্রমাণিত হয়নি।
আল-কোরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন- “আল্লাহ সৃষ্টিধারা প্রবর্তন করেন, তারপর পুনরাবৃত্তি করেন।” (সূরা রূম-২৭)
“সব কিছু সৃষ্টি করা হয়েছে ঠিক পরিমাণ ও অনুপাতে।” (সূরা ক্বামার-৪৯)
পৃথিবীর সমস্ত জীব
যেমন একটি মাত্র এককোষী জীব থেকে উদ্ভব ঘটেছে তেমনি পৃথিবীর সকল মানুষ এক নর (পুরুষ) থেকে সৃষ্টি হয়েছে। এখানেও ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রে স্রষ্টার পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্যমুখী সাংগঠনিক বিবর্তন পদ্ধতির ছোঁয়া ছাড়া কিছুই হয়নি।
এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক কোরআনে ঘোষণা করেছেন- “তোমরা ভয় কর সেই প্রভূকে যিনি এক আত্বা সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তা হতে সৃষ্টি করেছেন তার সহধর্মীনীকে এবং সেই দু'জন (আদম ও হাওয়া) হতে তিনি সকল পুরুষ ও নারীকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন।” (সূরা নিসা আয়াত-১)
এখানে এক আত্মা থেকে তার সহধর্মিনী সৃষ্টি করা অনেকটা কোষ বিভাজন, যা নিউক্লিয়ার ফিসন বিক্রিয়ার মতো বিভাজন পদ্ধতি। এ পদ্ধতির ক্ষেত্রে এক আত্মা থেকে তার সহধর্মিনী সৃষ্টি হওয়ার ক্ষেত্রে ঐ আত্মার মাঝে তার সহধর্মিনী পাওয়ার ব্যগ্রতা ছিল।
তারপর স্রষ্টার “কমাণ্ড-আদেশ”-এর উদ্দীপনায় ঐ আত্মা থেকে সৃষ্টি হয় তার সঙ্গিনী। এখানে এক আত্মা হলো Positive Imformation Bit এবং তার সঙ্গীনি হলো Negative Information Bit. এ ক্ষেত্রে তার সঙ্গিনী সৃষ্টির জন্য যৌন মিলনের প্রয়োজন হয়নি। তারপর দু'জনের মাধ্যমে সারা দুনিয়ায় পুরুষ ও নারী সৃষ্টি করে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এখানে
যৌন মিলন পদ্ধতি
কার্যকরী ছিল। কিন্তু আমি এখানে যে বিষয়টি উল্লেখ করতে চাচ্ছি তা হলো যৌন মিলন পদ্ধতি ছাড়াও মাতৃগর্ভ থেকে সন্তান হওয়ার মতো যে পদ্ধতিটি রয়েছে । সেখানে পিতার সংশ্রব ছাড়াই মাতৃগর্ভ থেকে সন্তান হয়। এখানেও স্রষ্টার “কুন ফাইয়া কুন” নির্দেশ কাজ করে ।
এক্ষেত্রে পানি ও মাটি সারভাগের মাধ্যমে প্রথম সৃষ্টির বেলায় যেভাবে আদি এককোষী জীব সৃষ্টি করা হয়, সে প্রক্রিয়াতে শুক্রকীট তৈরী করে স্রষ্টা “কুন ফাইয়া কুন” নির্দেশের মাধ্যমে তা প্রোথিত করেন কোন এক মাতৃথলিতে (জরায়ু বা সন্তান উৎপাদনের ডাইসে)। সেখানেই সন্তানের বিকাশ ঘটে। এ পদ্ধতিতে বিবি মরিয়মের গর্ভ থেকে ঈসার (আ) জন্ম হয়েছিল।
সূরা আলে ইমরানে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন- “সে বলেছিল (মরিয়ম), হে আমার প্রতিপালক কিরূপে আমার পুত্র হবে? কোন মানুষ (পুরুষ) তো আমাকে স্পর্শ করেনি। তিনি বললেন, এই রূপেই, আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন; যখন তিনি কোন কাজের মনস্থ করেন তখন তিনি “হও" ব্যতীত বলেন না; ফলতঃ তাতেই হয়ে যায়।” (আলে ইমরান-৪৭)
উপরোল্লিখিত পদ্ধতিতে যেমন পিতা ছাড়া সন্তান হওয়া সম্ভব তেমনি এক প্রজাতির জীবকে বিলুপ্ত করে শুধু মাতৃ গর্ভ থেকে অন্য প্রজাতির উদ্ভব ঘটানো বিচিত্র কিছু নয়। এটা স্রষ্টার উদ্দেশ্যমুখী সাংগঠনিক বিবর্তন ধারার সফল পদ্ধতি। আমার বিশ্বাস প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নতুন অঙ্গ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির উদ্ভব হয়নি বরং স্রষ্টার নির্দেশে উপরের পদ্ধতিতে পৃথিবীতে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছে।
এ ক্ষেত্রে জনন কোষের DNA
থেকে তথ্য কণার বিলুপ্তি বা সংযোজন ঘটিয়েই নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। স্রষ্টার ‘কুন ফাইয়া কুন' হলো কমাণ্ড আদেশ বা Information bit । এর মাধ্যমে তথ্য তরঙ্গের বিলুপ্তি ও সংযোজন উভয়টি ঘটতে পারে।
স্রষ্টার উদ্দেশ্যমুখী সাংগঠনিক বিবর্তন ধারার সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া যতদিন চালু ছিল, ততদিন যে কোন জীব ৪০ থেকেই ভিন্ন ভিন্ন অনেক জীবের বাচ্চা প্রসব হত। কিন্তু এখন আর সেই পদ্ধতি চালু নেই বলে নতুন কোন জীব প্রজাতির উদ্ভব ঘটছে না। আল্লাহ এ পদ্ধতিতে জগতে অনেক প্রজাতির যেমন বিলুপ্তি ঘটিয়েছেন, তেমনি নতুন নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটিয়েছেন।
আল্লাহ বলেন- “তিনি (আল্লাহ) চাইলে তোমাদেরকে বিলুপ্ত করতে পারেন এবং তিনি যাদেরকে চাইবেন উত্তরাধিকারী হিসাবে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করতে পারেন, ঠিক যেভাবে অন্য মানুষের বংশধর হতে তোমাদের উদ্ভব ঘটিয়েছেন।” (সূরা ৬: আয়াত ১৩৩)
পৃথিবীতে
কিভাবে এক প্রজাতির বিলুপ্তি এবং নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছে তা ক্রোমোজম, জিন, জেনেটিক রূপান্তর এবং জেনেটিক বিলুপ্তি অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখানে বলতে চাচ্ছি যে পৃথিবীর সমস্ত জীবের দৈহিক রূপান্তর ঘটেছে স্রষ্টার ইচ্ছায়, সৃষ্টির বিকাশের তিন নম্বর পদ্ধতির মাধ্যমে।
এ তিন নম্বর পদ্ধতিটি হলো পিতা ছাড়া কোন নরকোল মাতৃথলি থেকে নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটানো। এখানে সরাসরি পিতা না থাকায় পিতার বৈশিষ্ট্য নতুন হিসেবে আবির্ভূত হয়। আর যার বৈশিষ্ট্য পূর্বের মতো নতুন প্রজন্ম সংক্রামিত হয়ে থাকে ।
আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে বিজ্ঞানীগণ
এ পদ্ধতিতে এক প্রজাতি থেকেও অন্য প্রজাতির উদ্ভব ঘটাতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস হয় । ডারউইনের বিবর্তনবাদের কোন তথ্যই বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় সঠিক বলে প্রমাণিত হয়নি। এ ক্ষেত্রে স্রষ্টার উদ্দেশ্যমুখী সাংগঠনিক বিবর্তনবাদ পরীক্ষিতভাবে সফলতার দ্বার প্রান্তে এসে পৌঁছেছে। তাই জগৎ ও স্রষ্টার সম্পর্কে আস্তিকদের মাঝে আরও মহৎ ধারণার উদয় হচ্ছে।
সংগৃহীতঃ আদমের আদি উৎস
আল মেহদী