পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির রহস্য
“আল্লাহ
মানুষকে পানি থেকে সৃষ্টি
করেন- পরে তিনি বংশগত
সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেন।” (সূরা ২৫: আয়াত
৫৪)
“আল্লাহ সমস্ত প্রকারের প্রাণীকে সৃষ্টি করেছেন পানি থেকে ৷” (সূরা ২৪: আয়াত - ৪৫)
“(মানুষ)
কি সেই সামান্যতম শুক্র
ছিল না! যা সজোরে
নির্গত হয়েছিল।।” (সূরা ৭৪: আয়াত
৩৭-৩৮)
“অত:পর আল্লাহ তৈরী
করেছেন তার (মানুষের) বংশধারা
তুচ্ছ তরল পদার্থের সার
নির্যাস থেকে। (সূরা ৩২: ৮)
“নিশ্চয়
আমরা মানুষকে গঠন করেছি সামান্য
পরিমাণ সংমিশ্রিত তরল পদার্থ থেকে।”
(সূরা ৭৬: আয়াত ২)
“তোমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে।” (সূরা ৮৬ : আয়াত ৭)
মানুষ সৃষ্টিতে যে সব পানির কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হলো শুধু পানি, তুচ্ছ পানি, সবেগে স্খলিত পানি। আল-কোরআনের ২৫ (৫৪) আয়াতে মানুষকে সরাসরি শুধু পানি থেকে সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। অপর দিকে ২১ (৩০), ২৪ (৪৫) আয়াতে সমস্ত জীবন্ত জিনিসকে পানি থেকে সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে।
এখানে
২৫ (৫৪), ২৪ : ৪৫
ও ২১ : ৩০ আয়াতে
যে পানির কথা বলা হয়েছে
সে পানি সমুদ্র, নদীনালা,
খালবিলের পানির সাথে সম্পর্কিত। এর
অন্য কোন বিশেষণ নেই।
এ পানি শুক্র মিশ্রিত
বীর্যের ন্যায় বিশেষণযুক্ত পানি নয়। এসব
(২৫ : ৫৪, ২১ : ৩০,
ও ২৪ : ৪৫)
আয়াতের
ব্যাখায় অনেক তফসিরবিদগণ পানিকে
জীবনের কারণ ও জীবনের
উৎস হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। আবার অনেক তাফসিরবিদগণ
এ বিশেষণহীন পানিকে পুরুষের বীর্য মিশ্রিত পানি হিসেবে ধরে
নিয়ে আয়াতের সঠিক অর্থকে তালগোল
পাকিয়ে ফেলেছেন। তারা শুধু পানি
এবং বীর্য (শুক্র) মিশ্রিত পানি যে এক
নয় তা তলিয়ে দেখেননি।
মানুষ সৃষ্টির ইতিহাস
অর্থাৎ
শুধু পানিতে থাকে অক্সিজেন এবং
হাইড্রোজেন নামের দু'টি মৌলিক
পদার্থ। এগুলো একত্রে মিলিত হয়ে পানি নামের
যৌগিক পদার্থ গঠিত করেছে।
আর পুরুষের বীর্য (শুক্র) মিশ্রিত পানি হলো অন্ডকোষ (Testis ) ও Prostate (প্রোস্টেট) গ্রন্থির (Glands) নিঃসরণ। এতে থাকে শুক্রাণু। এ ছাড়াও রয়েছে অন্যান্য glands-এর নিঃসরণ। সব মিলে এ তরল পদার্থ খুব পিচ্ছিল ও আঠালো থাকে, এর ফলে শুক্রাণুগুলো সহজে তার মধ্যে ভেসে বেড়াতে ও দ্রুত নির্গত হতে পারে।
পর্যালোচনা করলে দেখা যায় সমুদ্র, নদী-নালা, খালবিলের পানি আর পুরুষের বীর্য (শুক্র) মিশ্ৰিত পানির মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ। যেমন আমরা যদি সারা সমুদ্রের পানি খুঁজি তাহলে একটি শুক্রাণু পাব কিনা সন্দেহ। অপর দিকে পুরুষের একবার সঙ্গমে যে বীর্য নিঃসৃত হয় তাতে কোটি কোটি শুক্রাণু থাকে।
তাই বিশেষণধর্মী (তুচ্ছ
পানি ও সবেগে স্খলিত
পানি) পানির সাথে বিশেষণহীন পানি
এক করে দেখা উচিত
নয়। বরং এ ক্ষেত্রে
উচিত হবে কিভাবে শুধু
পানি থেকে মানুষ সৃষ্টি
হতে পারে তা আমাদের
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা ৷
মানুষ সৃষ্টির উপাদান
বর্তমানে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে আদিকালে কোন এক সময় প্রোটোপ্লাজম নামের এককোষী জীব পানিতেই সৃষ্টি হয়েছিল। এটি একটি জীবন্ত জীবকোষ। এ প্রোটোপ্লাজমের বংশগতির ধারা বিবর্তনের মাধ্যমে উন্নতর জীব মানুষে উন্নিত হয়েছে।
মানুষের দেহ কোষে রয়েছে
জীব কোষের সমাহার। এসব জীব কোষগুলো
ইটের সারির মতো দেহে সাজানো
থাকে। এদের কর্ম চাঞ্চল্যই
বহুকোষী প্রাণীকে জীবন সংগ্রামে টিকিয়ে
রাখে।
এ
পর্যায়ে একটি উদাহরণ দিয়ে
বিষয়টি পরিষ্কার করা যায়। ঢাকায়
একটি ২০ তলা দালান
আছে। এটি কোথাকার, কি
উপাদান দিয়ে তৈরী করা হয়েছে,
প্রশ্ন করা হলো। উত্তর
দিতে গিয়ে বলা হলো নারায়ণগঞ্জের
পানি দিয়ে। তারপর আবার অন্যত্র বলা
হলো মাটি ও সিমেন্ট
এবং বালির কথা ৷ এই
উত্তরগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে
এক সময় নারায়ণগঞ্জের
শুধু পানিই ছিল। পানি থেকেই বিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে মাটি। এই মাটি আর পানি মিশিয়ে পুড়িয়ে তৈরী করা হলো ইট। আর সিলেট থেকে আনা হলো সিমেন্ট আর বালি।
এবার ইট, সিমেন্ট, বালি পানি মিশিয়ে পরিকল্পনা মোতাবেক প্রক্রিয়াগতভাবে দালানটি তৈরী করা হলো। এটি তৈরী করতে শ্রমিক, সময়, পরিকল্পনা, পরিকল্পনাকারীর উদ্দেশ্য একত্রে কাজ করেছে।
এবার যদি দালানটি তৈরীর ক্ষেত্রে ভেঙ্গে ভেঙ্গে জবাব দেয়া হয় এটি তৈরী হয়েছে পানি থেকে। আবার কখনো যদি বলা হয় মাটি, সিমেন্ট থেকে, কিংবা ইট দিয়ে। তাহলে আশ্চর্য হওয়ার কি নেই। মূলত এক সময় পৃথিবীতে শুধু পানিই ছিল।
তারপর সৃষ্টি
হয়েছে মাটি, বালি, পাথর (সিমেন্ট তৈরীর উপাদান) ইত্যাদি। তাই পানি থেকে
দালানের সূচনার কথা বলা হলে
আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কিংবা
চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে মাটি, বালি, সিমেন্টের কথা বলা হলেও
তাতে কোন অবাস্তবতা বা
অসত্য কিছু থাকবে না।
মানুষ
সৃষ্টির প্রক্রিয়াতে পানি ও মাটির
কথা এসেছে। মানুষের দৈহিক কাঠামোতে রয়েছে পানি ও বিশুদ্ধ
কাদা মাটির সারভাগ।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব সারাংশ
অর্থাৎ মানুষের দেহে পানি ও মাটির সকল উপাদান মওজুদ রয়েছে। তবে মানুষের দেহ যে ইট (জীবকোষ) দিয়ে তৈরী তা পানিতেই সৃষ্টি হয়েছে। পানির এই আদি প্রাণ সত্তা স্রষ্টার উদ্দেশ্যমুখী সাংগঠনিক বিবর্তন ধারায় যখন স্থলের জীব হিসেবে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে, তখন এতে কাদা মাটির সার অংশও যোগ হয়েছে।
তাই সূচনার ক্ষেত্রে
শুধু পানির কথা এসেছে। এ
ধরনের সৃষ্টিতে যৌন মিলনের প্রয়োজন
হয়নি। কিন্তু বিশেষণধর্মী পানির মাধ্যমে সৃষ্টির ক্ষেত্রে যৌন মিলনের প্রয়োজন
হয়। এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ের দরকার আছে। আল-কোরআনের
৭৪ (৩৭ : ৩৮), ৩২
(৮), ৭৬ (২), ৮৬
(৭) ইত্যাদি আয়াতে যে পানির কথা
বলা হয়েছে, তাহলো বিশেষণধর্মী পানি। পুরুষের বীর্যকে সাধারণত এ পানি হিসেবে
উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমানে
পৃথিবীতে যে পদ্ধতিতে মানুষ
জন্ম হয় সেখানে এ
ধরনের বিশেষণধর্মী পানির প্রয়োজন। এর মাধ্যমে বংশগতির
ধারা বৃদ্ধি পায়।
কিন্তু
এখানে লক্ষণীয় যে, শুধু পানি
(বিশেষণহীন) এবং কাদা মাটির
সারভাগ দিয়ে মানুষ সৃষ্টির কথা বলায় আমাদেরকে
বুঝতে হবে যে পৃথিবীতে
জন্ম পদ্ধতি একটি মাত্র প্রচলিত
পদ্ধতিতেই সম্পন্ন হয়নি। মূলত মানুষ সৃষ্টির
চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছতে তিন
ধরনের জন্ম পদ্ধতি কাজ
করেছে।
যেমন প্রথমতঃ মাতা-পিতা ছাড়া জন্ম হওয়া (একক প্রাণ সত্তা হিসেবে পৃথিবীতে আবির্ভাব), দ্বিতীয়তঃ পিতা-মাতার যৌন মিলনে জন্ম হওয়া (বর্তমান জন্ম পদ্ধতি), তৃতীয়তঃ পিতার সাথে যৌন মিলনহীন পদ্ধতি (বিবি মরিয়মের গর্ভ থেকে ঈসা (আ) জন্ম হওয়ার ন্যায়)।
এ অধ্যায়ে যে দু'ধরনের পানির কথা বলা হয়েছে
তাতে ১ম ও ২য় পদ্ধতিতে মানুষের জন্মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ১ম পদ্ধতিতে প্রাথমিক পর্যায়েই পূর্ণাঙ্গ মানুষ সৃষ্টি না হলেও মানুষ সৃষ্টির মূল ভিত্তি সৃষ্টি হয়। অপরদিকে ২য় পদ্ধতির জন্ম তরিকা এখনও চালু আছে।
এ সম্পর্কে আমরা অবহিত আছি। কিন্তু কাদা মাটির সারভাগ দিয়ে মানুষ সৃষ্টির কথাতে পিতার সাথে যৌন মিলনহীন পদ্ধতির অতি গোপন রহস্য বিদ্যমান রয়েছে। এ পদ্ধতির মাধ্যমে স্রষ্টার উদ্দেশ্যমুখী সাংগঠনিক বিবর্তনের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত খুঁজে পাওয়া যায়। মূলত এ পদ্ধতিতে মানুষের জন্ম হওয়া খুবই রহস্যময় ও জটিল।
উপসংহারে বলা যায় আমরা যদি যৌন সঙ্গমহীন কাদা মাটির সারভাগ দিয়ে মানুষ সৃষ্টির পদ্ধতিটি সম্পর্কে অবহিত হতে পারি তবেই আদমের দুনিয়ায় আবির্ভাব সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাব। মানুষ সৃষ্টিতে মাটির গুরুত্ব “তিনিই (আল্লাহ) তোমাদের উদ্ভব ঘটিয়েছেন মাটি থেকে। (সূরা ১১ : আয়াত ৬১)
মানুষ সৃষ্টি নিয়ে কোরআনের আয়াত
“আমরা
তোদেরকে গঠন করেছি বা
সৌষ্ঠব দান করেছি মাটি
থেকে।” (সূরা ২২: আয়াত
৫)
“(আল্লাহ) মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন মাটি থেকে।” (সূরা ৩২: আয়াত ৭) “আমরা তাদেরকে গঠন করেছি আঠালো মাটি থেকে।” (সূরা ৩৭: আয়াত ১১) “আমরা গঠন করেছি মানুষকে কাদামাটির বিশুদ্ধ সারভাগ থেকে।” (সূরা ২৩ : আয়াত ১২)
পরম প্রতিপালক রাব্বুল
আলামীন মানুষকে পানি থেকে (২৫
: আয়াত ৫৪), তারপর তুচ্ছ
তরল পদার্থের সার নির্যাস (৩২
: ৮) বা বীর্য (শুক্র)
থেকে সৃষ্টি করার কথা বলে
শেষ করে দেননি।
উপরোল্লিখিত
আয়াতগুলোতে মানুষ সৃষ্টিতে মাটি এবং কাদামাটির
বিশুদ্ধ সারভাগের কথাও এসেছে। আগের
অধ্যায়ে শুধু পানি ও
তুচ্ছ তরল পদার্থের সার
নির্যাসের মাধ্যমে কিভাবে মানুষ সৃষ্টি হতে পারে তা
উল্লেখ করেছি। এখানে কাদামাটির বিশুদ্ধ সারভাগ থেকে মানুষ সৃষ্টির
প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করছি।
মাটির পৃথিবীতে মাটির মানুষের বসবাস। এ মাটিতে রয়েছে- ক্যালসিয়াম, আয়রণ, ফসফরাস, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ক্লোরিন, সালফার ইত্যাদি। মাটির এসব উপাদান রয়েছে মানুষের দেহ কোষেও।
মা বাবার যৌন মিলনের পর
প্রচলিত প্রজনন রীতিতে মার গর্ভে সন্তানের আবয়ব (জড়দেহ) তৈরী হয় মাটির এসব উপাদানের মাধ্যমে। মা খাদ্য থেকে এসব উপাদান আহরণ করে। এভাবে ২৮০ দিন বা ৪০ সপ্তাহ পূর্ণ হলে মাতৃগর্ভ থেকে পূর্ণাঙ্গ মানব শিশুর জন্ম হয়। তারপর এসব শিশুরাই দিনে দিনে বড় হয়ে বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন মানবে পরিণত হয়।
তাদের মধ্যে ছেলে কিংবা মেয়ে উভয়েই হতে পারে। এক সময় বড় হলে তাদের মাঝে যৌবনের সাড়া পড়ে। তখন' তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এভাবে তাদের থেকেও সন্তান-সন্ততি হয়। এর মাধ্যমে বংশধারা ও আত্মীয়তার ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়।
এটা হলো
যৌন প্রক্রিয়ায় বংশ বিস্তার রীতি।
কিন্তু ৩২ (৭) আয়াতে
কাদা থেকে মানুষ সৃষ্টির
সূচনা করার যে উল্লেখ
রয়েছে তা কিভাবে? সেটা
কি কাদামাটির মূর্তি (হিন্দুদের মূর্তি ন্যায়) তৈরী করে সৃষ্টি
করা হয়েছে?
এর
উত্তরে বলা যায়, এভাবে
সৃষ্টির উদ্ভব ঘটানো আল্লাহ তা'য়ালার সৃষ্টি
প্রক্রিয়ার রীতি বিরুদ্ধ।
মানুষ সৃষ্টি নিয়ে কোরআনের আয়াত
“(আল্লাহ)
গঠন করেছেন মানুষকে কাদা থেকে মৃৎশিল্পের
মত করে। (সূরা ৫৫: আয়াত
১৪) “আমরা মানুষকে গঠন
করেছি কাদা হতে, নকশা
কাটা নরম মাটি থেকে।”
(সূরা ১৫: আয়াত ২৬)
মৃৎ শিল্পীগণ যে জিনিস তৈরী করেন তার জন্য আগেই একটি “ডাইস” বানিয়ে নেন। তারপর কাদামাটি ঐ ডাইসে নিয়ে জিনিসটি তৈরী করেন, সেটা হাড়ি-পাতিল কিংবা কলসি ইত্যাদি অনেক কিছুই হতে পারে।
পরম প্রতিপালক আল্লাহ
মানুষ সৃষ্টির (খেলাফতধারী মানুষ) আগেই পৃথিবীতে মানুষের
আকৃতি বা নমুনা তৈরী
করার জন্য মৃৎশিল্পীর চেয়েও
উন্নতর মানে “ডাইস” বানিয়ে নিয়েছিলেন। সেই ডাইস কাঠের
তৈরী কোন ফর্মা নয়।
এটি হলো এখনকার মায়েদের
মাতৃথলির ন্যায় জীব মানবীর মাতৃথলি।
জীব মানুষের ক্রমবর্ধমান রূপান্তর ও বিবর্তন প্রক্রিয়ায় প্রতিবারই তার কাছাকাছি কোন মানব প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটানোর আগে নতুন মানব প্রজাতির আগমনের ক্ষেত্রে তার পূর্বতন মানব প্রজাতির মানবীর মাতৃথলি “ডাইস” হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
এসব
ঘটনা ঘটেছে মহান স্রষ্টার মহতী
ইচ্ছায়। এক্ষেত্রে নতুন প্রজাতির উদ্ভব
ঘটানো হয় যৌনমিলন বহির্ভূত
প্রক্রিয়ায়'। একে আমি
সৃষ্টি প্রক্রিয়ার তিন নম্বর রীতি
হিসেবে ব্যাখ্যা করেছি। আমি আগেও উল্লেখ
করেছি, এ রীতিতে ঈসা
(আ)-এর জন্ম হয়েছিল।
পাশাপাশি হযরত আদম (আ)-এর জন্মও এ
রীতিতে হয়েছিল (আল্লাহ ভাল জানেন)।
মানুষ সৃষ্টি হলো কিভাবে
মানুষের
দৈহিক গঠন বর্তমান পর্যায়ে
আসতে পর্যায়ক্রমে অনেক রূপান্তর সাধিত
হয়েছে। সে রূপান্তর সুনির্দিষ্ট
পদ্ধতিতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় স্রষ্টার ইচ্ছায় ঘটেছে। সূরা আনআমের ১৩৩
আয়াতে ও সূরা দাহরের
২৮ আয়াতে তার উল্লেখ রয়েছে।
তাই বলা যায় বর্তমান উন্নততর মানুষের উদ্ভব ঘটানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই পশু শ্রেণীর মানুষের মাতৃথলি “ডাইস” হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সৃষ্টি প্রক্রিয়ার তিন নম্বর রীতি ব্যবহার করা হয়। এখানে শুক্রকীট পিতার মাধ্যমে মাতৃথলিতে প্রোথিত হয়নি।
বরং এখানে স্রষ্টার
অসীম ক্ষমতায় মাটি পানির মাধ্যমে
একক প্ৰাণ সত্তা বা শুক্রকীট সৃষ্টি
হয়ে তা মাতৃথলিতে (জরায়ুতে)
প্রোথিত হয় এবং সেই
মাতৃথলি থেকেই আধুনিক মানুষের আদি মাতা-পিতার
জন্ম হয়।
আল্লাহ বলেন- “মাটি থেকে আমরা মানুষকে পয়দা করেছি। প্রথমে একটি অতি ক্ষুদ্র জীবাণু গড়েছি এবং তাকে নিরাপদ স্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছি। তারপর সেই জীবাণুকে ক্রমে একটি রক্তের গুটিকায়, পরে একটি গোশত খণ্ডে পরিণত করেছি। তারপর তাতে অস্থিসমূহ সৃষ্টি করে গোশত ও পেশী দ্বারা আবৃত করেছি।
তারপর
তাকে একটি স্বতন্ত্র মানুষে
পরিণত করেছি। এরপর একদিন অবশ্যই
তোমাদের মৃত্যূ আসবে এবং মহা
বিচারের দিন তোমাদেরকে পুনরায়
উত্থিত করা হবে।” (সূরা
মুমিনুন: আয়াত-১-৯)
আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন কেন
মাটির সারভাগ দিয়ে তৈরী একক জীবকোষটি (অতি ক্ষুদ্র জীবাণু) অবশ্য রাখা হয়েছিল কোন না কোন মাতার মাতৃথলি বা জরায়ুতে (নিরাপদ স্থানে)। কারণ সন্তান জন্ম হওয়ার ক্ষেত্রে জরায়ুর চেয়ে নিরাপদ স্থান আর কোনটিই নেই।
তাছাড়া অন্যত্র রাখলে সেটি থেকে স্বতন্ত্র মানুষ জন্ম হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এ ক্ষেত্রে আধুনিক মানুষ পয়দা করার জন্য বর্তমান মানুষের কাছাকাছি কোন প্রজাতির মায়েদের জরায়ুতেই মাটির তৈরী অতি ক্ষুদ্র জীবাণুটি রাখা হয়েছিল।
ঐ
মাতৃথলিটি মৃৎশিল্পীর ডাইসের ন্যায় কাজ করেছে। এ
ধরনের জন্ম প্রক্রিয়া স্রষ্টার
উদ্দেশ্যমুখী সাংগঠনিক বিবর্তন পদ্ধতি। তাই মানুষের সৃষ্টিতে
শুধু পানির যেমন ভূমিকা রয়েছে
তেমনি মাটির গুরুত্বও অপরিসীম। ফলে মানুষের জীবকোষে
রয়েছে পানি ও মাটির
সকল উপাদান।
মানুষ
(আদম) পয়দা করতে যেহেতু নিরাপদ
স্থানের (জরায়ুর) প্রয়োজন হয়েছিল তাই পৃথিবীতে আদমের
আগেও যে নিম্নধাপের মানুষের
অস্তিত্ব ছিল, তার প্রমাণ
মেলে। নৃ-বিজ্ঞানীগণ সে
সব বিলুপ্ত হওয়া মানুষের অস্তিত্ব খুঁজে বের করছেন?
মানুষ
সৃষ্টিতে শুধু পানি এবং
কাদামাটির উভয়ের কথা থাকায় এটা
উপলব্ধি করা যায় যে,
পানির এককোষী জীব স্রষ্টার উদ্দেশ্যমুখী
সাংগঠনিক বিবর্তন প্রক্রিয়ায় ধাপে ধাপে বহুকোষী
জীবে রূপান্তরিত হয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে
খেলাফতধারী মানুষে পরিণত হয়েছে। এ রূপান্তর প্রাকৃতিক
নির্বাচনের মাধ্যমে ঘটেনি। বরং তা ঘটেছে
আল্লাহ তা'আলার পরম
ইচ্ছায়। এটাই আমাদের মূল
বিশ্বাস।
আল্লাহ কিভাবে মানুষ সৃষ্টি করেছেন
কিন্তু আমাদের মাঝে অনেক অতি বুদ্ধিমান লোক আছেন যারা মানুষকে কাদামাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে শুনেই ধারণা করে বসেছেন, মানুষকে (আদমকে) পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের মাটি একত্র করে মূর্তি বানিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে।
এ
ধরনের ব্যাখ্যাটি গবেষণাহীন পৌরাণিক কাহিনী থেকে আমাদের ধর্মীয়
ব্যাখ্যা হিসেবে মানুষের বিশ্বাসমূলে শিকড় গেড়ে বসেছে। এটি একটি বড়
ধরনের কুসংস্কার?
বর্তমান
মানুষের চূড়ান্ত ধাপ উন্নতির শিখরে
পৌঁছতে বিভিন্ন রূপান্তর ও পরিবর্তনের স্তর
ডিঙ্গিয়ে এখানে আসতে হয়েছে। এটা
জীবের জেনেটিক রূপান্তরের (Mutation) এর মাধ্যমেই ঘটেছে।
“(আল্লাহ)
গঠন করেছেন তোমাদেরকে উন্নতির নানা মাত্রায় (পর্যাক্রমে-বিভিন্ন পর্যায়ে ধাপে ধাপে)।”
(সূরা নূহ: আয়াত ১৪)
“আমরা
মানুষকে গঠন করেছি সর্বোত্তম
সাংগঠনিক পরিকল্পনা অনুসারে।” (সূরা তীন: আয়াত
৪)
মানুষ প্রজাতির উন্নতির শেষ প্রান্তে আসতে তাই তার আগের অনেক প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটেছে। জীব প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটানো একমাত্র আল্লাহর পক্ষেই সম্ভব।
অতএব বুঝা যায়
আদমের আগেও মানুষ প্রজাতির
অনেক নিম্নধাপ পৃথিবীতে ছিল। জেনেটিক বিলুপ্তির
(Genetic drift) মাধ্যমেই
এদের বিলুপ্তি ঘটেছে।
“নিশ্চয় আমরা তাদেরকে সৃষ্টি করেছি এবং তাদের সবাইকে করেছি শক্তি সম্পন্ন (বা তাদের গঠনকে মজবুত করেছি) এবং যখন আমরা ইচ্ছা করেছি তাদেরকে সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে দিয়ে (অথবা বদলিয়ে দিয়ে) তদস্থলে অনুরূপ ধরনের মানুষকে স্থলাভিষিক্ত করেছি।” (সূরা দাহর: আয়াত ২৮)