রোজা ভাঙার কারণ
মাহে
রমজানের রোজা কি কি
কারনে ভেঙ্গে যায় তা যদি
সঠিকভাবে না জানা যায়
তাহলে আমাদের অতি কষ্ট করে
না খেয়ে থেকে রোজা
রাখার কোনো মানে হয়
না। তাই আজকের পোস্টে
আমরা জানবো যে রোজা ভাঙার
কারণ গুলো কি কি,
কি কারণে রোজা ভাঙে না,
কোন সময়ে রোজা রাখা
নিষেধ ইত্যাদি। নিচে বিস্তারিত আলোচনা
করা হলো।
রোজা ভাঙার কারণ
- ক) ইচ্ছাকৃতভাবে কোন কিছু খাওয়া বা পান করা। মনের অজান্তে কোনোকিছূ খেয়ে ফেললে সেক্ষেত্রে রোজা ভাঙ্গে না।
- খ) নাক বা মুখ দিয়ে কোন কিছু শরীরে প্রবেশ করানো; ধুমপান ও নাক দিয়ে নস্যি বা অন্য কোন ধরনের গুড়া জাতীয় দ্রব্য টেনে নেয়াও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
- গ) স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌন সম্পর্ক স্থাপন।
যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না
- রোজা থাকা অবস্থায় জরুরী প্রয়োজনে মাংসপেশীর মধ্যে ইনজেকশন নেয়া যাবে।
- তবে পুষ্টি বা শক্তি বৃদ্ধিকারক ইনজেকশন নেয়া যাবে না।
- ভুলবশতঃ কিছু খেয়ে ফেললে বা পান করলে রোজা ভঙ্গ হয় না।
- তেমনি উযূ, গোসল ও চোখে ওষুধ দেয়ার কারণেও রোজা ভঙ্গ হয় না।
- রোজার অবস্থায় একজন মুসলমানের জন্য সকল প্রকার খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়।
- মিথ্যা বলা, ওয়াদা ভঙ্গ করা বা যে কোন ধরনের প্রতারণামূলক কাজ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
- রোজার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে একজন মুসলমানকে তার কামনা-বাসনার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করা যাতে সে একজন ভাল মানুষে পরিণত হয় যার চিন্তা, কথা ও কাজ সবই হবে উত্তম।
- ক্রোধের মত সাধারণ মানবিক দূর্বলতাও রোজার সাহায্যে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
রমজান মাসের ফরয রোজা ছাড়াও একজন মুসলমান বছরের অন্যান্য সময় রোজা পালন করতে পারে। এ ধরনের রোজা সুন্নাত বা নফল রোজা বলে গণ্য হবে।
- মহিলাদের জন্য হায়েয (ঋতুস্রাব) ও সন্তান প্রসবের পরবর্তী রক্তপাত (নেফাছ) চলাকালে রোজা পালন নিষিদ্ধ।
- এ সময়ে তারা যে কটি রোজা পালন করতে পারবে না সেগুলো অন্য সময় পালন করতে হবে।
নীচে উল্লেখকৃত দিনগুলোতে যে কোন ধরনের রোজা পালন নিষিদ্ধ:
কোন কোন দিন রোজা রাখা ভালো
নিম্নোক্ত দিনগুলো ছাড়া বছরের সব দিনই রোজা রাখা ভালো।
- ক) ঈদুল ফিতরের দিন
- খ) ঈদুল আযহা ও কুরবানীর দিন
লাইলাতুল কদর
কুর'আন মাজীদ সর্ব প্রথম রমজান মাসে নাযিল হয়। এ মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা “হাজার মাসের চেয়ে উত্তম” (সূরাহ আল্-কদর ৩) এ রাতটিকে লাইলাতুল ক্বদর (শক্তির রজনী বা মর্যাদার রজনী) বলা হয়।
হাদীস অনুযায়ী রমজান মাসের শেষ দশ দিনের মধ্যে কোন এক রাত হচ্ছে লাইলাতুল কদর। (যথাসম্ভব কোন বেজোড় রাত্রি)। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাত। এ রাতে আমাদের পক্ষে যত বেশী সম্ভব ইবাদাত করা উচিত।
রোজা সম্পর্কে আলোচনা
পবিত্র মাহে রমজান সম্পর্কে আলোচনা করে আসলে শেষ করা যাবে না। তবে রোজা
(ছাওম) ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ। রোজা একটি বাধ্যতামূলক
বা ফরয 'ইবাদত। এ বিষয়ে সংক্ষিপ্তভাবে নিচে আলোচিত হলো।
রোজার ইতিহাস
ইসলামী
বর্ষপঞ্জীর নবম মাস হচ্ছে
রমজান; এ মাসের দিনগুলোতে
প্রত্যূষের (ছুবহে সাদেক) শুরু থেকে সূর্যাস্ত
পর্যন্ত রোজা পালন করা
প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য
ফরয। রোজা মানে ঐ
সময় পানাহার ও স্বামী-স্ত্রীর
যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত থাকা।
মুসাফির ও অসুস্থ লোকেরা
রমজান মাসে রোজা পালন
করতে না পারলে বছরের
অন্য সময় তাদেরকে তা
পালন করতে হবে।
রোজা
আমাদের মধ্যে আত্মসংযম সৃষ্টি করে এবং আমাদেরকে
স্বার্থপরতা, লোভ-লালসা, আলসেমী
ও অন্যান্য ত্রুটি থেকে মুক্ত হতে
সাহায্য করে। আমাদের স্রষ্টা
ও পালনকর্তা আল্লাহ্ তা'আলার নির্ধারিত
দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের জন্য রোজা আমাদের
চেতনাকে সতেজ করে। রোজা
আমাদের জন্য একটি বার্ষিক
প্রশিক্ষণ কর্মসূচী।
রোজা কাকে
বলে
রোজা আমাদেরকে ক্ষুধা-তৃষ্ণার কষ্ট অনুভব করতে সাহায্য করে। না খেয়ে থাকার কষ্ট কি রকম তা আমরা রোজার মাধ্যমে বুঝতে পারি। ফলে বিশ্বে প্রতিদিন যে কোটি কোটি দরিদ্র ও হতভাগ্য মানুষ না খেয়ে থাকে তাদের কষ্ট ও যাতনা আমরা বুঝতে পারি এবং তাদের প্রতি দায়িত্ব পালনে আমরা উদ্বুদ্ধ হই।
রোজা আমাদের মধ্যে সংযম তৈরী করে এবং আমাদেরকে শুধু আরাম-আয়েশের চিন্তায় ডুবে না থাকার শিক্ষা দেয়। তাছাড়া রোজা আমাদেরকে যৌন কামনা চরিতার্থ করা থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে।
বস্তুতঃ আমাদের
অনিয়ন্ত্রিত পানাহারের প্রতি আগ্রহ, আরাম-আয়েশপ্রিয়তা ও
যৌন কামনা- বাসনা ইত্যাদি আমাদেরকে আল্লাহ্ তা'আলার খাঁটি
বান্দাহ্ হিসেবে জীবন যাপন করতে
বাধা সৃষ্টি করে। তাই অবশ্যই
এসব মানবীয় দুর্বলতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরী। রোজা
আমাদেরকে আল্লাহ্ তা'আলার আদেশ-নিষেধের প্রতি আন্তরিকভাবে অনুগত থাকতে সাহায্য করে। একারণেই কুরআন
মজীদে এরশাদ হয়েছে:
“হে
ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা বাধ্যতামূলক
করা হল। ঠিক যেভাবে
তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য বাধ্যতামূলক করা
হয়েছিল যাতে তোমরা তাকওয়ার
অধিকারী হতে পার”।
(সূরাহ আল্-বাকারাহ্-১৮৩)
(কুরআনের আয়াতের বাংলা অর্থ)।
একজন খাঁটি ও নিষ্ঠাবান মুসলমানকে মুত্তাকী (তাকওয়ার অধিকারী) বলা হয়। আর রোজার মাধ্যমে গড়ে ওঠা-আল্লাহর প্রকৃত আনুগত্য বা খোদাভীতিকেই-ইসলামে তাকওয়া বলা হয়। তাকওয়া একজন মুসলমানকে গুনাহের কাজ থেকে দূরে রাখে।
রমজান মাস হচ্ছে আল্লাহ্
তা'আলার নিকট থেকে
মাগফিরাত, রহমত ও বরকত
লাভের এবং জাহান্নামের আযাব
থেকে বাঁচার অন্যতম মাধ্যম।
রোজা কেবল আল্লাহ্ তা'আলার সন্তুষ্টির জন্যেই পালন করা হয়। মহান আল্লাহ্ আমাদের জন্য পরকালীন জীবনে রোজার বিনিময়ে অত্যন্ত আনন্দ- জনক ও চমৎকার পুরস্কার রেখেছেন।
তারাবির নামাজ
সুন্নত
নাকি
নফল
রমজান মাসে ছালাতুল 'ইশার পরে একটি অতিরিক্ত নামাজ আদায় করতে হয়। একে ছালাতুত তারাবীহ্ বলা হয়। ছালাতুত তারাবীহ্ ২০ রাকা'আত। এটি হচ্ছে সুন্নাত নামাজ (namaz)। ছালাতুত তারাবী হতে সমগ্র কুর'আন খতম করার চেষ্টা করা হয় বা যত বেশি অংশ সম্ভব পড়া হয়।
ছালাতুত তারাবীহ্ সাধারণত
মসজিদে জামা'আতে আদায়
করা হয়। যারা জামা'আতে আদায় করতে
পারে না তাদের বাড়ীতে আদায় করা উচিত। রমজান মাসে
ছুবহে ছাদিকের পূর্বে খানাপিনা করা সুন্নাত। একে
সাহরি বলা হয়।
ঈদুল ফিতর ২০২৪
রমজান শেষ হবার পর শাওয়াল মাসের প্রথম দিনে মুসলমানরা ‘ঈদুলফিতর উদযাপন করে। এ দিনটি হচ্ছে আনন্দ-উৎসব ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের দিন। ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসবসমূহের অন্যতম।
এ দিন মুসলমানরা জামা'আতে ‘ঈদের নামাজ আদায় করে এবং আল্লাহ্ তা'আলার নিকট তাঁর দয়া ও রহমতের জন্য শুকরিয়া জানায়।
পোস্ট ট্যাগঃ