আদম আঃ এর সন্তান কত জন
আদম আঃ এর সন্তান কত জন
ইমাম -আবু -জাফর -ইবন -জাবীর -তার -ইতিহাস -গ্রন্থে -কতিপয় -আহলে -কিতাবের -বরাতে -উল্লেখ -করেছেন -যে,-আদম (-আঃ) -ঔরসে -হাওয়া (-আঃ) -এর -২০ -গর্ভে -৪০টি -সন্তান -প্রসব -করেন। -তবে -কেউ -কেউ -বলেন -হাওয়া (-আঃ) -প্রতি -গর্ভে -একটি -পুত্র -ও -একটি -কন্যা -সন্তান -করে -১২০ -জোড়া -সন্তানের -জন্ম -দেন। -সুত্র: -আল -বিদায়া -ওয়ান -নিহায়া।
হযরত আদম আঃ ও হাওয়ার জন্ম রহস্য
আমরা যদি ক্রমান্ময়ে অতীতের দিকে ফিরে যেতে থাকি তখন দেখব মানুষের আদি উৎস আদি এককে (Singularity) গিয়ে ঠেকে। অপর দিকে মহা সৃষ্টির ক্ষেত্রে এক এক করে অতীতের দিকে ফিরে গেলে বিশ্বের আরম্ভ একটি সংকোচিত বিন্দুতে এসে থেমে যায়।
এরপরও যদি কিছু কল্পনা করার থাকে তখন হয়ত মিলবে শূন্যের অস্তিত্ব। মহাবিশ্ব যেমন আদি এক একক থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে অগণিত সৃষ্টিতে ভরে গেছে, তেমনি জীবজগৎ আদি এক একক থেকে সৃষ্টিশীল বিবর্তন ধারায় সম্প্রসারিত হয়ে অসংখ্য বন্য পশু-পাখি, উদ্ভিদ ও বন্য মানুষ সহ সভ্য মানুষের আবির্ভাব ঘটে।
এক্ষেত্রে জগৎ-মহাজগতে আদমের আবির্ভাব তিনটি ধাপে এসে পূর্ণতা লাভ করে। সে ধাপগুলো মহা পরিকল্পনাকারীর সৃষ্টিশীল সাংগঠনিক বিবর্তনের মাধ্যমে মাটির পৃথিবীতে এসে পূর্ণতায় পৌঁছে।
হযরত আদম আঃ আবির্ভাবের প্রথম ধাপ শুরু
আদমের আবির্ভাবের প্রথম ধাপ শুরু হয় আত্মিক পর্যায়ে। সে সময় জগৎ-মহাজগতে ধ্বনাত্মাক সত্তার কোন অস্তিত্ব ছিল না। অতঃপর Positive information bit বা “ধ্বনাত্মক তথ্য কণা” হিসেবে আদমের (আত্মিক পর্যায়ে) আবির্ভাব ঘটে। তারপর ঐ সত্তা থেকে উৎপত্তি হয় তার সঙ্গীনী Negative information bit বা “ঋণাত্মক তথ্যকণা” ও বজ্য তথ্যকণার (কৃষ্ণকায়া তরঙ্গ)।
“তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একটি অভিন্ন প্রাণ কিংবা একক জীবকোষ থেকে এবং ইহা হতেই সৃষ্টি করেছেন তার জোড়া।” (আল-কোরআন)
আত্মিক পর্যায়ে আদম (ধ্বনাত্মক সত্তা) ও হাওয়া (ঋণাত্মক সত্তা) এবং বর্জ্যকণা (শয়তান) সৃষ্টির পর তাদের উৎস থেকে সৃষ্টিশীল বিবর্তন ধারায় পয়দা হয় ভাল মন্দ সকল আত্মা। মূলত পরোক্ষভাবে আদমের উৎস থেকে সকল বস্তু কণা ও প্রাণ সত্তার উৎপত্তি ঘটে। তাই সকল বস্তু, উদ্ভিদ ও জীবদেহে রয়েছে তথ্যকণার সমাহার। বস্তু বা জীবদেহ থেকে যেমন
আলোক উজ্জ্বল শক্তি ও কৃষ্ণকায়া শক্তি
আলোক উজ্জ্বল শক্তি ও কৃষ্ণকায়া শক্তি বিকিরণ হয় তেমনি আদমের অস্তিত্ব থেকে খোদার নির্দেশে ভাল-মন্দ দু'রকমের সত্তার উৎপত্তি ঘটে।
তৎপর তিনি তাঁর বাম কাঁধে করাঘাত করলেন এবং কৃষ্ণকায়া সন্তান বের করলেন, যেন তারা কাল কয়লা। তৎপর তিনি তার ডান হাতের সন্তানদের সম্বন্ধে বললেন, ইহারা জান্নাতবাসী হবে আর ইহাতে কোন পরওয়া নাই। আর তার বাম হাতের তালুস্থিত সন্তানদের সম্বন্ধে বললেন, ইহারা জাহান্নামে যাবে। আর এই ব্যাপারে কোন পরওয়া নাই।” (হাদীসে কুদসী)
সৃষ্টির আদি এক একক সত্তা
সত্তার ন্যায় একটি জীবকোষ। এটাই পৃথিবীর আদি এককোষী প্রাণী। এ ধরনের অভিন্ন প্রাণ সত্তাকে জীবআত্মার আদি উৎস হিসেবেই মনে করতে হবে। এখানেও কোষ বিভাজনের মাধ্যমে আদি এককোষী প্রাণী থেকে তার সঙ্গীনীর উদ্ভব ঘটে।
অতঃপর তাদের থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে পৃথিবীর সকল বহুকোষী জীবের উৎপত্তি হয়। এমনকি পৃথিবীর আদি এককোষী প্রাণী বিবর্তনের বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে জীব মানুষে উন্নিত হয়।
আমি প্রতিটি জীবন্ত সত্তাকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছি
“আমি প্রতিটি জীবন্ত সত্তাকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছি।” (সূরা ২১: আয়াত ৩০)
“তিনি আল্লাহ যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি থেকে।” (সূরা ২৫: আয়াত ৫৪)
জীব মানুষের চূড়ান্ত ধাপ উন্নয়নের শিকড়ে পৌঁছতে তার আগেও অনেক নিম্ন শ্রেণীর মানুষ প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটেছে। আল্লাহ তা'আলা পৃথিবীতে পরম আত্মার আদমকে পাঠানোর আগে তার জড়দেহ সৃষ্টির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে ফেরেশতাদেরকে অবহিত করলেন।
পৃথিবীতে তখন জীব মানুষের (বন্য মানুষের) চূড়ান্ত ধাপ হোমো স্যাপিয়ানস গোত্রের মানুষই বসবাস করত। এদেরকে সরিয়ে দিয়ে এক ব্যতিক্রমধর্মী পন্থায় আদম ও হাওয়াকে
জীব আত্মা ও পরম আত্মায় পূর্ণতা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠান। এ সময় আদমের সন্তানদেরকে আবার তার মাঝে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
আল-কোরআন ও হাদীসে কুদসীতে
এ সম্পর্কে আল-কোরআন ও হাদীসে কুদসীতে উল্লেখ রয়েছে- “তিনি (আল্লাহ) চাইলে তোমাদেরকে বিলুপ্ত করতে পারেন এবং তিনি যাদেরকে চাইবেন, উত্তরাধিকারী হিসাবে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করতে পারেন। ঠিক যেভাবে অন্য মানুষের বংশধর হতে তোমাদের উদ্ভব ঘটিয়েছেন।” (সূরা আনআম: আয়াত ১৩৩)
নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা যে দিন আদমকে সৃষ্টি করলেন
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা যে দিন আদমকে সৃষ্টি করলেন, সেদিন তিনি তার পিঠ থেকে এক মুষ্টি গ্রহণ করলেন। সমস্ত ভাল (পবিত্র) তাঁর ডান হাতে পড়ল এবং সমস্ত মন্দ (অপবিত্র) তাঁর অপর হাতে পড়ল। তখন তিনি বললেন, ইহারা ডান হাতের অধিকারী আর আমি ইহার বিপরীত করব না। আর ইহারা বাম হাতের অধিকারী আর আমি ইহার বিপরীত করব না।
অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে আদমের পিঠে ফিরিয়ে দিলেন। আর সে অনুসারেই আজ পর্যন্ত তার বংশানুক্রমে সৃষ্টি চলছে।” (হাদীসে কুদসী) আদমের জীবদেহ তৈরী ও পরম আত্মার মহা মিলন এবং দুনিয়ায় আবির্ভাব নিয়ে ধর্মীয় পরিসরে যেমন রয়েছে রূপকথার কাহিনী তেমনি রয়েছে প্রকৃতি বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকমের বৈজ্ঞানিক তথ্য।
ফলে কোন কোন ক্ষেত্রে ধর্ম ও বিজ্ঞানে ব্যাপক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। এতে আদমের জন্ম রহস্য বিভ্রান্তির বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। এর কারণ হলো কোরআন, হাদীসে এ বিষয়টির খুব সূক্ষ্ম ব্যাখ্যা থাকায় অনেকেই তার সঠিক তথ্য অনুধাবণ করতে পারেনি।
পৃথিবীতে মানুষের দেহ কাঠামো তৈরী
বর্তমানে পৃথিবীতে মানুষের দেহ কাঠামো তৈরী হয় মাতৃগর্ভে আর রূহ বা পরম আত্মা আসে রূহানী জগৎ থেকে। পিতা-মাতার মিলনে মাতার ডিম্বাণূ পিতার শুক্রকীটের মাধ্যমে নিষিক্ত হয়ে সেটি যখন মাতার জরায়ুতে প্রতিস্থাপিত হয়, তখন সেখানে পর্যায়ক্রমে সন্তানের আকৃতি গঠন হতে থাকে। এখানে পিতা মাতার ডি. এন. এ. কোড যে তথ্য নিয়ে আসে সেভাবেই সন্তান গঠিত হয়। এটা হলো যৌন মিলনের মাধ্যমে প্ৰজনন পদ্ধতি। এ ক্ষেত্রে মাতা-পিতা উভয়ের প্রয়োজন হয়।
অ্যামিবার জন্ম হয়
সৃষ্টির সূচনার দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় পিতা-মাতা ছাড়া সাগরের লোনা পানিতে পৃথিবীর আদি এককোষী জীব অ্যামিবার জন্ম হয়। এক্ষেত্রে পিতা-মাতা কারও প্রয়োজন পড়েনি।
এখানে পানি আর পানিতে মিশ্রিত উপাদানের মাধ্যমে একক প্রাণসত্তা গঠিত হলেও সেটিতে ডি. এন. এ. এর অতিক্ষুদ্র কণা ‘জিন' যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বহন করে তার কোন উৎস পানিতে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
এটির তথ্য পৃথিবীর বাইরের থেকে সৃষ্টির মহাপরিকল্পনাকারী যে প্রেরণ করেছেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। এই এককোষী প্রাণীটি কোষ বিভাজনের মাধ্যমে একটা ভিন্ন অবস্থার দ্বৈত রূপ লাভ করে। এখান থেকেই প্রাণী ও উদ্ভিদের ক্রমবিকাশ শুরু হয়। তাই মানুষ তথা আদমের (জীবদেহ) উৎস এখান থেকে।
আল্লাহ সমস্ত প্রাণীকে সৃষ্টি করেছেন পানি হতে
“আল্লাহ সমস্ত প্রকারের প্রাণীকে সৃষ্টি করেছেন পানি হতে ।” (সূরা নূর: ৪৫)
অতঃপর সন্তান জন্ম হওয়ার তিন নম্বর রীতিটি হলো পিতা ছাড়া শুধু মাতৃগর্ভ থেকে সন্তান হওয়া। এক্ষেত্রে যৌন মিলনের প্রয়োজন হয় না। হযরত ঈসা (আ) বিবি মরিয়মের গর্ভ থেকে পিতার সংস্পর্শ ছাড়াই জন্ম হয়েছিলেন। এই তিন নম্বর পদ্ধতিটিও সৃষ্টির সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় চালু ছিল। এর মধ্যে যৌন মিলনে সন্তান হওয়া স্বাভাবিক পদ্ধতি।
এ ছাড়া অন্য দু'টি পদ্ধতি বিশেষ মুহুর্তে কার্যকরী ছিল। এ দু'টি পদ্ধতির ক্ষেত্রে মানুষের কোন ভূমিকা নেই। মূলত এ দু'টি পদ্ধতিতে সৃষ্টির বিকাশ ঘটানো মহাপরিকল্পনাকারীর বিশেষ কর্মপদ্ধতির অংশ বিশেষ। সৃষ্টির সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে যে স্রষ্টার সাংগঠনিক প্রক্রিয়া চালু ছিল।
তা নিম্নের আয়াত থেকেই বুঝা যায় ৷ “আমরা (আল্লাহ) মানুষকে গঠন করেছি সর্বোত্তম সাংগঠনিক পরিকল্পনা অনুসারে। (সূরা তীন : আয়াত ৪)
“(আল্লাহ) সেই একক সত্তা যিনি মানুষকে পানি থেকে গঠন করেছেন এবং প্রতিষ্ঠিত করেছেন বংশধারা (পুরুষের মাধ্যমে) এবং আত্মীয়তার ধারা নারীদের মাধ্যমে। (সূরা ফোরকান: আয়াত ৫৪)
প্রতিটি জীবন্ত প্রাণী ও উদ্ভিদের উৎপত্তি হয়েছে পানি থেকে। সে হিসেবে মানুষ সৃষ্টির সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ পানি থেকেই শুরু হয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে এক অভিন্ন একক প্রাণ সত্তা
আগেও বলেছি প্রাথমিক পর্যায়ে এক অভিন্ন একক প্রাণ সত্তা (জীবকোষ থেকে তার জোড়া সৃষ্টি হয়। তারপর যুগ যুগ ধরে চলতে থাকে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও রূপান্তর প্রক্রিয়া।
এখানে লক্ষণীয় যে, মহাবিশ্বের সকল কিছুর জোড়া সৃষ্টি হয় একক প্রাণ সত্তা থেকে। সেটা পানির একক প্রাণসত্তা (অনুজীব) ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য তেমনি আদমের ক্ষেত্রেও। নিম্নের আয়াতটি এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ।
তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে
“(আল্লাহ) সেই একক সত্তা যিনি গঠন করেছেন তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে এবং তার থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রী। (সূরা ৪: আয়াত ১)
পানি থেকে যেমন মানুষের সৃষ্টির কথা বলা আছে তেমনি অন্যত্র বলা হয়েছে মাটির কথা। পানি ও মাটি উভয়ের মাধ্যমে মানুষের সৃষ্টির কথায় প্রতিয়মান হয় যে, মানুষ সৃষ্টির সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ শুরু হয় পানি থেকেই। তারপর মাটির ভুবনে এসে মাটির সার অংশের মাধ্যমেই মানুষ সৃষ্টির প্রক্রিয়া পূর্ণতা লাভ করে। মাতৃগর্ভে সন্তান পূর্ণতা লাভ করে ২৮০ দিনে।
এই দিনের মধ্যেই শুক্র ও ডিম্বাণুর যৌথ সত্তা (ভ্রূণ) ক্ৰমে ক্রমে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও রূপান্তরের মাধ্যমে পূর্ণতা পায়।শুক্র ও ডিম্বাণু খুব সূক্ষ্ম জিনিস। এগুলো খালি চোখে দেখা যায় না। নারীর ডিম্বাণু যখন পুরুষের শুক্রের মাধ্যমে নিষিক্ত হয়ে জরায়ুতে প্রোথিত হয় তখন থেকেই তার বিকাশ শুরু হয়। অপর দিকে জীব মানুষের পূর্ণতা আসতে চলে যায় কোটি কোটি বছর।
শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে
শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে যেমন সময়ের প্রয়োজন তেমনি সৃষ্টির পূর্ণতার জন্য প্রাণীর সাংগঠনিক বিবর্তন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে সময় ও পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল। তাই পানির এক কোষী জীব থেকে কাদা মাটির মানুষ সৃষ্টিতে কোটি কোটি বছর লেগেছে। মূলত পানির এককোষী জীব থেকে যে মানুষের উদ্ভব হয় সে মানুষ হলো আত্মার মানুষ বা বন্য মানুষ। এদের থেকেই বিশেষ ব্যবস্থাপনায় আদম ও হাওয়ার উদ্ভব হয়।
মানুষ তৈরী করতে যাচ্ছি কাদা থেকে
আল্লাহ বলেন- “যখন তোমার প্রভু প্রতিপালক ফিরিশতাদেরকে বললেন, আমি একটি মানুষ তৈরী করতে যাচ্ছি কাদা থেকে। নকশাকাটা নরম মাটি থেকে অতঃপর যখন আমি সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে তার গঠন পুরাপুরি সমাপ্ত করব এবং তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দেব। তখন তোমরা তার সামনে সিজদান হয়ে যাবে।” (সূরা হিজর: আয়াত ২৮-২৯)
আল্লাহ মহাবিশ্বের পরম সত্তা
আল্লাহ মহাবিশ্বের পরম সত্তা। তিনি অবিনশ্বর, অনাদি, একক, মহাবিশ্বের পরম প্রতিপালক, বিশ্বের পরম আত্মা। স্রষ্টা জীব আত্মার আদমের গঠন (জীবদেহ) পরিপূর্ণ করে তাতে নিজের রূহ ফুঁকে দিলেন। এখানে “আমার (স্রষ্টার) রূহ” বলতে “পরম আত্মা” বুঝতে হবে যা অবিনশ্বর।
স্রষ্টার নিজের রূহ ফুৎকার করে দিয়ে দেননি। বরং স্রষ্টা আদমের কলবে এমন এক আত্মা ফুঁকে দিলেন যা স্রষ্টার ন্যায় অবিনশ্বর ইচ্ছাশক্তির স্বাধীন, সম্পূর্ণ ইত্যাদি গুণে গুণান্বিত।
রিমোট কন্ট্রোল ট্রান্সমিটার
আত্মা ফুঁকে দেয়ার দৃষ্টান্ত হলো রিমোট কন্ট্রোল টেলিভিশনের ন্যায়। জীব আত্মার আদমের দেহটি একটি টেলিভিশনের ন্যায় তথ্য প্রেরণ ও গ্রহণ করার মতো মাধ্যম। উল্লেখ্য টেলিভিশন কখনো নিজে থেকে কোন তথ্য দিতে পারে না। এ ক্ষেত্রে কমপিউটারের জ্ঞান দেয়া হলে এটি নিজে থেকে উত্তর দিতে পারে। মানুষের পরম আত্মার গুণাগুণ অনেকটা তেমনি।
রিমোট কন্ট্রোল ট্রান্সমিটার টিলিভিশনের বা রোবোটের দিকে তাক করে একটা নির্দিষ্ট সুইচে চাপ দিলে সেটা থেকে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিভ ওয়েভ বেরিয়ে আসলে সেটা টেলিভিশনের বা রোবোটের রিমোট কন্ট্রোল রিসিভার গ্রহণ করে সক্রিয় হয়ে ওঠে। আত্মা ফুঁকে দেয়া অনেকটা এ রকম।
আদমের জড়দেহটা হলো রিমোট কন্ট্রোলের রিসিভারের ন্যায়। স্রষ্টা (আত্মা মানে পরমাত্মা) রিমোট কন্ট্রোল ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে যেভাবে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিভ ওয়েভ প্রেরণ করা হয় তেমনি ভাবে পরমআত্মা প্রেরণ করেন বা ফুঁকে দেন।
জীবকোষ
জীব মানুষের দেহে রয়েছে পানির আদি এককোষী জীবের ন্যায় অভিন্ন সত্তা। এগুলোকেই বলা হয় জীবকোষ। প্রতিটি জীব কোষের রয়েছে অভিন্ন প্রাণকেন্দ্র৷ এক কোষী জীবের বংশবৃদ্ধি হয় কোষ বিভাজনের মাধ্যমে, তেমনি জীবকোষের বিকাশ ঘটে কোষ বিভাজনের মাধ্যমে।
মানুষ বহুকোষী জীব
মানুষ বহুকোষী জীব। জীব মানুষের প্রজাতি পূর্ণতার শিখরে পৌঁছতে যতগুলো ধাপ পার হতে হয়েছে সৃষ্টি প্রক্রিয়ার পূর্ণতা বুঝাতে গিয়ে সবগুলো ধাপই উল্লেখ করা হয়েছে। তাই সূচনার বেলায় পানির নাম এসেছে এবং পূর্ণতার বেলায় মাটির উল্লেখের সাথে সাথে পরম আত্মা ফুঁকে দেয়ার কথা এসেছে।
তারপর বংশগতির ধারা প্রবর্তন করতে গিয়ে যৌন মিলনের মাধ্যমে প্রজননের কথা এসেছে। এখানে বিশেষণযুক্ত সবেগে স্খলিত পানির (বীর্যের) মাধ্যমে বর্তমানে যে ভাবে বংশবৃদ্ধি হয় সেটার কথাই উল্লেখ করা হয়েছে।
“মানুষ কি সেই সামান্যতম শুক্র ছিল না যা সজোরে নিক্ষিপ্ত, নির্গত হয়েছিল?” (সূরা ৭৫: আয়াত ৩৭-৩৮)
আদম ও বিবি হাওয়ার জড়দেহ তৈরী
এভাবে বংশবৃদ্ধির ক্ষেত্রে পিতা-মাতা উভয়ের দরকার হয়। আদম ও বিবি হাওয়ার জড়দেহ তৈরী হতে সবেগে নির্গত পানি (বীর্য) লেগেছিল কি? যদি তাদের ক্ষেত্রে সবেগে নির্গত পানি (বীর্য) প্রয়োজন হতো তবে তাদেরও পিতার পরিচয় পাওয়া যেত।
এক্ষেত্রে তাদেরকে পৃথিবীর আদি মানব মানবী বলা হতো না। সুতরাং সৃষ্টির সাংগঠনিক বিবর্তন প্রক্রিয়ার ক্রমবিকাশ ধারায় আদম এবং হাওয়ার সৃষ্টিতে সাধারণ পানির অবদান অবশ্যই আছে। কিন্তু তাদের জন্মের ক্ষেত্রে সবেগে নির্গত (বীর্য) পানি অবশ্যই লাগেনি। তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে, তাদের জড়দেহ তৈরী হলো কি প্রক্রিয়ায়?
এ ব্যাপারে অতীতে যেসব রূপক গল্প চালু আছে সেই ভাবেই কি আদম, হাওয়ার জড়দেহ তৈরীর মূল প্রক্রিয়া? এর উত্তরে বলতে হয় রূপক গল্পগুলো পৌরাণিক কাহিনী ছাড়া এর কোন কোরআন, হাদীসের ভিত্তি বা বৈজ্ঞানিক যৌক্তিকতা নেই।
তাহলে কি আদম, হাওয়ার জড়দেহ আকাশ থেকে রকেটের মাধ্যমে নামানো হয়েছিল? এর উত্তর দেওয়া খুবই কঠিন কারণ, সহজ অর্থে “আদমের জন্ম রহস্য” তুলে ধরলে কেউ যেমন মানবে না তেমনি গবেষক ছাড়া কারও পক্ষে বুঝাও কঠিন।
পৃথিবীর আদি মানব মানবী
আমি পূর্বেও উল্লেখ করেছি আদম, হাওয়ার জড়দেহ বিভিন্ন দেশের মাটি দিয়ে খামির বানিয়ে তৈরী করা হয়নি। সৃষ্টির সাংগঠনিক বিবর্তন ধারার একটা বিশেষ ব্যবস্থাপনায় তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়। আদম ও হাওয়া মানুষ প্রজাতির চূড়ান্ত ধাপের প্রথম মানব-মানবী।
তাদের আগে পৃথিবীতে খেলাফতধারী আর কোন মানব-মানবী ছিল না। তবে নিম্ন ধাপের বন্য ও বর্বর মানুষের প্রজাতি ছিল। যাদের প্রজাতি পৃথিবী থেকে আদম, হাওয়ার আবির্ভাবের সাথে সাথে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।
মহাবিশ্বে আদম, হাওয়ার আবির্ভাব তিনটি ধাপে এসে পূর্ণতা পায়। প্ৰথমে তাদের আবির্ভাব ঘটে positive Information bit ও Negative Information bit হিসেবে। তারপর পানির একক প্রাণ সত্তা বা জীবকোষের মাধ্যমে জড় অস্তিত্বের সূচনা ঘটে। সেখান থেকেই বিবর্তিত হয়ে জীব মানুষে (বন্য) উন্নিত হলে এদের মাধ্যমেই তাদের আবির্ভাব ঘটে।
আদম ও হাওয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ের পূর্ণতাসহ পৃথিবীতে আবির্ভাবের ক্ষেত্রে জন্ম পদ্ধতির তিনটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দু'টি বাদ দেয়া যায়। যেমন মাতা-পিতা ব্যতীত পয়দা হওয়া। এটি বাদ দেয়া যায় এই অর্থে যে, এভাবে শুধু এককোষী জীবই সৃষ্টি হয়েছে।
তারপর পিতা-মাতার মিলনে পয়দা হওয়া বাদ দেয়া যায় এই অর্থে যে, আদম ও হাওয়ার ক্ষেত্রে যৌন মিলনে মাতৃগর্ভ থেকে পয়দা হওয়ার মতো কোন প্রমাণ দেয়া যাবে না, তবে তৃতীয় আর একটি পদ্ধতি আছে যে পদ্ধতির মাধ্যমে দুনিয়ায় মানুষ পয়দা হওয়ার মতো দৃষ্টান্ত রয়েছে। সে পদ্ধতিটি হলো পিতার সংস্পর্শ ছাড়াই মাতৃগর্ভ থেকে সন্তান হওয়া।
আদম ও হাওয়ার জন্ম পদ্ধতির
আদম ও হাওয়ার জন্ম পদ্ধতির ক্ষেত্রে উপরের দৃষ্টান্তটির কোরআন ও বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রমাণ তুলে ধরা সম্ভব । তবে এ তথ্যটি একেবারে নতুন ও গবেষণালব্ধ ধারণা। এর সাথে প্রচলিত ব্যাখ্যার কোন মিল নেই। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে অনেকের মনে ঝড় ও বিদ্রোহের সৃষ্টি হতে পারে। এর জন্য নিরপেক্ষ মন নিয়ে জাহিলিয়াতকে ভুলে যেতে হবে। তবেই সত্যের সন্ধান মিলবে।
দুনিয়ায় হযরত ঈসা (আ)-এর জন্ম
দুনিয়ায় হযরত ঈসা (আ)-এর জন্ম স্বাভাবিক প্রজনন পদ্ধতিতে হয়নি। তিনি বিবি-মরিয়মের গর্ভে পিতার সংস্পর্শ ছাড়াই পয়দা হয়েছিলেন। এ জন্য এই পদ্ধতিতে জন্ম হওয়ার ব্যবস্থাপনাটি আশ্চর্যজনক বলা চলে। এটি স্রষ্টার সৃষ্টি প্রক্রিয়ার বিশেষ ব্যবস্থাপনা।
অতীতে এভাবে জন্ম হওয়ার আদমের পদ্ধতিটি আশ্চর্য হলেও বর্তমানের জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং ও মানব ক্লোনিং-এর যুগে এটি মোটেও বিস্ময়ের বিষয় নয়। এখন মানুষের প্রযুক্তিতেই পিতার সংস্পর্শ ছাড়াই মাতৃগর্ভে (যৌন মিলন বহির্ভূত পন্থায় শুক্রকীট ছাড়াও) সন্তান জন্ম দেয়া সম্ভব প্রায়।
“সে বলেছিল (মরিয়ম). হে আমার প্রতিপালক! কিভাবে আমার পুত্র হবে কোন মানুষ (পুরুষ) তো আমাকে স্পর্শ করে নাই! তিনি বললেন, এভাবেই; আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। যখন তিনি কোন কার্যের মনস্থ করেন তখন তিনি “হও” ব্যতীত বলেন না, ফলতঃ তাতেই হয়ে যায়।” (সূরা আলে ইমরান: আয়াত ৪৭)
ঈসা (আ) কে পুরুষ মানুষের স্পর্শ ছাড়াই
ঈসা (আ) কে পুরুষ মানুষের স্পর্শ ছাড়াই আল্লাহ বিবি মরিয়মের গর্ভে জন্ম দিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে ঈসা (আ)-এর জন্মের বেলায় পুরুষ মানুষের শুক্রকীট না লাগলেও স্রষ্টা বিশেষ ব্যবস্থাপনায় মাটির সারভাগ দিয়ে শুক্র তৈরী করে তাঁকে পয়দা করেছিলেন। নিন্মের আয়াতে এ ধরনের ইঙ্গিতই পাওয়া যায়।
“নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের অনুরূপ। তিনি তাকে মৃত্তিকা দ্বারা সৃষ্টি করলেন। তৎপর বললেন 'হও' ফলতঃ তাতেই হয়ে গেল। (সূরা আলে ইমরান: আয়াত ৫৯)
উপরোল্লিখিত আয়াতে ঈসার (আ) জন্ম দৃষ্টান্ত আদমের অনুরূপ। এ কথা উল্লেখ থাকায় আমরা আদমের ক্ষেত্রেও পিতার সংস্পর্শ ছাড়াই কোন না কোন মাতার জরায়ুতে তাঁর (আদমের) জন্ম হয়েছিল এরূপ চিন্তা করতে পারি।
মানুষ সৃষ্টির ইতিহাস
এখন প্রশ্ন হলো সেই মা কোন শ্রেণীর মানুষ ছিল? এর উত্তরে বলা যায় কোটি কোটি বছর যাবৎ প্রাণীর ক্ষেত্রে যে সাংগঠনিক বিবর্তন ধারা চলে আসছিল, সে প্রক্রিয়ার সবচেয়ে উন্নততর জীব মানুষের (বন্য ও বর্বর মানুষের) কোন এক কুমারী মাতার জরায়ুতে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় আজকের মানুষের আদি পিতা ও মাতার জন্ম হয়।
এক্ষেত্রে আদম ও হাওয়ার জন্ম হতে কোন জীব মানুষের (বন্য পুরুষ মানুষের) পিতার শুক্র কীটের দরকার হয়নি। বরং এক্ষেত্রে আল্লাহ সম্পূর্ণ ভিন্ন পন্থায় মাটি-পানির সংমিশ্রিত উপাদানের সারভাগ দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় শুক্রকীটের মতো একক প্ৰাণ সত্তা (আদি এক কোষী জীব সৃষ্টির পদ্ধতিতে পয়দা করে) সৃষ্টি করে তা হোমো স্যাপিয়ানস গোত্রের জীব মানুষের (বন্য মানুষের) কোন এক কুমারী মাতার গর্ভে (জরায়ুতে) প্রতিস্থাপন করেন।
শুক্রকীটের মতো একক প্ৰাণ সত্তা
ফলে একক প্রাণ সত্তা (Gemate) নারীর ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করলে সেটি (সেখানের একক প্ৰাণ সত্তা) থেকে ‘দু'টি ভ্রুণ' সৃষ্টি হয়। অতঃপর এ ভ্রুণ দু'টি সুরক্ষিত নিরাপদ স্থানে (জরায়ুতে) দিনে দিনে বিকশিত হয়ে পূর্ণাঙ্গ দু'টি মানুষে রূপ নিয়ে দুনিয়ায় ভূমিষ্ঠ হয়।
এদের মধ্যে একজন নারী আর একজন হলো পুরুষ। তাঁরাই পৃথিবীর প্রথম খেলাফতধারী মানব-মানবী। এখানে আদম-হাওয়া একই মার গর্ভ থেকে জন্ম হয়। কারণ হাওয়ার আবির্ভাব ঘটে একক প্ৰাণ সত্তা (আদম) থেকেই। বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় একটি শুক্রকীট মাতার একটি ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করার পর বিভাজিত হয়ে দু'টি মানুষে পরিণত হয়, সে প্রক্রিয়াটি অনেকটা তারই অনুরূপ ।
“তোমরা ভয় কর সেই প্রভুকে যিনি এক আত্মা সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার সহধর্মিনীকে এবং সেই দুইজন (আদম এবং হাওয়া) হতে তিনি সকল পুরুষ ও নারীকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন।” (সূরা নিসা: আয়াত ১)
মাটি হতে মানুষ সৃষ্টির প্রক্রিয়া
মাটি হতে মানুষ সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় প্রথমে অতি ক্ষুদ্র জীবাণু বা শুক্রকীট তৈরী করা হয়। সেটিই কোন সুরক্ষিত (জরায়ুতে) নিরাপদ স্থানে প্রতিস্থাপন করে সেখান থেকেই খেলাফধারী মানুষের আবির্ভাব ঘটানো হয়। নিম্নের আয়াত থেকে সে রকমেরই একটি ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
“মাটি হতে আমরা মানুষকে পয়দা করেছি। প্রথমে একটি অতি ক্ষুদ্র জীবাণু গড়েছি এবং তাকে নিরাপদ স্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছি। তারপর সেই জীবাণুকে ক্রমে একটি রক্তের গুটিকায়: পরে একটি গোশত খন্ডে পরিণত করেছি।
তারপর তাতে অস্থিসমূহ সৃষ্টি করে গোশত ও পেশী দ্বারা আবৃত করেছি। তারপর তাকে একটি স্বতন্ত্র মানুষে পরিণত করেছি। এরপর একদিন অবশ্যই তোমাদের মৃত্যু আসবে এবং মহাবিচারের দিন তোমাদেরকে পুনরায় উত্থিত করা হবে।” (সূরা মুমিনুন: আয়াত ১-৯)
মাটির ভূবনে আদম ও হাওয়া
মাটির ভূবনে আদম ও হাওয়া বড় হয়ে ঐশী জ্ঞানের আলোকে পরস্পরকে খুঁজতে থাকেন। এক সময় তাদের দু'জনের দেখা হয়। এরপর থেকে উভয়ই পরস্পরকে নিয়ে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। এদিকে জীব মানুষের (বন্য ও বর্বর মানুষের) প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটে।
এখানে উল্লেখ্য যে, জীবআত্মার আদম ও হাওয়ার জড় দেহ উল্লেখিত প্রক্রিয়ায় পূর্ণাঙ্গ মানুষে পরিণত হলে পরম আত্মা (রূহ) রূহানী জগত থেকে পাঠিয়ে (ফুঁকে দিয়ে তাঁদেরকে পরিপূর্ণ সভ্য মানুষে রূপ দেয়া হয়।
স্রষ্টার উদ্দেশ্যমুখী সাংগঠনিক বিবর্তন প্রক্রিয়া
স্রষ্টার উদ্দেশ্যমুখী সাংগঠনিক বিবর্তন প্রক্রিয়ায় আদমের আবির্ভাবের ক্ষেত্রে জীব মানুষের প্রজাতির ক্ষেত্রে জেনেটিক রূপান্তর ও জেনেটিক বিলুপ্তির ন্যায় দু'টি ঘটনাই এক সাথে ঘটতে থাকে। এর ফলে বন্য মানুষের বিলুপ্তি ঘটে। এই কারণে হোমো স্যাপিয়ানস গোত্রের বন্য মানুষের (কঙ্কাল ছাড়া) কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে জেনেটিক রূপান্তরের মাধ্যমে জীব মানুষ থেকে আদম ও হাওয়ার আবির্ভাব ঘটে।
যৌন সঙ্গমের মাধ্যমে প্রজনন ক্ষমতা
অপর দিকে জীব মানুষের (বন্য ও বর্বর মানুষের) ক্ষেত্রে জেনেটিক বিলুপ্তি (drift) চলতে থাকায় যৌন সঙ্গমের মাধ্যমে প্রজনন ক্ষমতা তারা হারিয়ে ফেলে, ফলে তাদের প্রজাতির ক্রমান্বয়ে বিলুপ্তি ঘটে। এটি ঘটে জীব মানুষের পিতার শুক্রকীট থেকে Fertilization এ সাহায্যকারী জিন উধাও হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে।
কি প্রক্রিয়ায় জিনের রূপান্তর ও বিলুপ্তি ঘটে তা পূর্বের অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং ও মানব ক্লোনিং-এর সফলতার যুগে এ বিষয়টি বুঝতে আমাদের কষ্ট হওয়ার কথা নয়।
আদম ও বিবি হাওয়া
আদম ও বিবি হাওয়া যে মাতৃজরায়ু (সুরক্ষিত নিরাপদ স্থান) থেকে জন্ম নিয়েছেন সেই মা হোমো স্যাপিয়ানস গোত্রের জীব মানুষের বংশধর। আল-কোরআনের সূরা আনআম-১৩৩ ও সূরা দাহর-২৮-তে সে ধরনের মানুষের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
এদের প্রজাতি ক্রমেই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। হোমো-স্যাপিয়ানস গোত্রের জীব মানুষের কোন কুমারী নারী বিবি মরিয়মের মতো কোন পুরুষ মানুষের সংস্পর্শ ছাড়াই গর্ভবতী হয়।
হোমো স্যাপিয়ানস
আগেও বলেছি আল্লাহ তা'আলার পরম নির্দেশে মাটি ও পানির সারভাগ দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় তৈরী শুক্রকীট দিয়ে হোমো স্যাপিয়ানস গোত্রের কুমারী নারী গর্ভবতী হয়। এ শুক্রকীট কোন হোমো স্যাপিয়ানস পিতার দেহে তৈরী হয়নি।
এই গোত্রের মানুষ থেকে আদম ও হাওয়ার আবির্ভাব ঘটাতে শুধু মাতৃ জরায়ুই ব্যবহার করা হয়েছে। এ ঘটনাটি যখন ঘটেছিল তখন পৃথিবীতে বুদ্ধিমান কোন মানুষের অস্তিত্ব ছিলনা। তাই মানুষের মাধ্যমেই ঐ ঘটনাটি ভিডিও করে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।
কিন্তু স্রষ্টা ইতিহাস থেকে ঐ ঘটনাটি আড়াল করেননি। বরং সে প্রক্রিয়ায় ঈসা (আ) কে পয়দা করে আদমের অনুরূপ দৃষ্টান্ত রেখে দিয়েছেন। পাশাপাশি আল-কোরআনে সূরা আনআমের ১৩৩ নং আয়াতে তা ব্যাখ্যা করেছেন। হোমো-স্যাপিয়ানস গোত্রের মানুষ সৃষ্টির সাংগঠনিক বিবর্তন ধারার চূড়ান্ত ধাপের একেবারে কাছাকাছির প্রজাতির মানুষ। এরা পশু শ্রেণীর মানব গোষ্ঠী।
মানুষের মাঝে পশুত্ব
এ গোত্রের মানুষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় আদম (আ) ও বিবি হাওয়ার জন্ম হওয়ায় আদমের প্রজাতিতেও পশুর স্বভাবের বংশগতির ধারা চলে আসছে। সাধারণত প্রতিটি প্রাণীর 'জিন' বংশগতির ধারা নতুন প্রজন্মের কাছে বহন করে নিয়ে আসে। অর্থাৎ জিন এর মাধ্যমে পূর্ব পুরুষের গঠন ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নতুন প্রজন্মের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে চলে আসতে থাকে।
তাই আদম (আ) কে খেলাফত দিয়ে নবী হিসেবে পাঠানোর পরও যুগে যুগে নবী, রাসূল পাঠাতে হয়েছে।সত্যিকারঅর্থে আদম (আ) ও বিবি হাওয়া যদি পশু শ্রেণীর মানুষ থেকে জন্ম না নিতেন তাহলে 'জিন' প্রক্রিয়ায় কখনো আদম (আ)-এর বংশধর থেকে পশুর স্বভাবের মানুষ জন্ম নিত না। অর্থাৎ মানুষের মাঝে পশুত্বই থাকত না।
আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) এর গন্দম ফল ভক্ষণ
আমরা জানি আদম (আ) ও বিবি হাওয়া থেকে শয়তানের প্ররোচনায় গন্দম খেয়ে পৃথিবীতে এসেছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে এ কথার সাথে আমার গবেষণা তথ্যের কিছুটা দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে। কিন্তু এরও সঠিক ব্যাখ্যা রয়েছে। মানব দেহে রয়েছে জীব আত্মা ও পরম আত্মা।
জীব আত্মার আদমের ও হাওয়ার জড়দেহের উদ্ভব ঘটে হোমা-স্যাপিয়ানস গোত্রের একই নারীর গর্ভে। আর পরম আত্মা (রূহ) বা রূহানী আদম ও হাওয়া বেহেশত থেকে নেমে এসে মর্তের জীব আত্মার দেহে প্রতিস্থাপিত হয়ে পূর্ণতা লাভ করে।
বর্তমান প্রজনন রীতিতে মাতৃগর্ভে ৪/৫ মাস পর রূহ বা পরম আত্মা গর্ভের সন্তানের কলবে প্রতিস্থাপিত হয়। একই রীতিতে আদম ও হাওয়ার “পরম আত্মা” জড়দেহের সাথে মিলিত হয়। এক্ষেত্রে জড়দেহের মৃত্যু আছে। কিন্তু পরম আত্মা অবিনশ্বর।
অনেকে বলেন, আদম ও হাওয়াযদি গন্দম না খেতেন তবে আমাদেরকে পৃথিবীতে আসতে হতো না। আবার অনেকে বলেন, শয়তান দিয়ে পরীক্ষায় ফেলে অভিশপ্ত করে কেন আদম ও হাওয়াকে পৃথিবীতে পাঠানো হলো।
আল্লাহ তা'আলা আদমকে সৃষ্টি করেছেন
মূলত আল্লাহ তা'আলা আদমকে সৃষ্টিই করেছেন পৃথিবীতে পাঠানোর জন্য। তবে এ পরীক্ষা নেয়ার উদ্দেশ্য হলো শয়তান সম্পর্কে আদম ও হাওয়ার মেমোরীতে জ্ঞান দিয়ে দেয়া। একটা বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে বিষয়টি মঞ্চায়ন করে আদম ও হাওয়ার মেমোরীতে জ্ঞানটি ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল।
আল্লাহর পরীক্ষা উদাহরণস্বরূপ বলা যায়
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় একজন মিস্ত্রী একটি নৌকা সুরক্ষিত নিরাপদ স্থানে তৈরী করে চালক ব্যতিত বন্দরে নোঙ্গর করে রাখলেন। সবকিছু সম্পন্ন করে ভিন্ন এক অচেনা দেশ থেকে একজন সূদক্ষ চালক পাঠিয়ে দিলেন। চালকের সাথের মাল্লারা সব এদেশের। নতুন চালক নৌকা বেয়ে চলছে।
কিন্তু তাকে বন্দরে পাঠানোর আগে একটি শিক্ষামূলক ঘটনা মঞ্চায়ন করে দেখিয়ে দিলেন। এ ঘটনাটির মাধ্যমে তিনি জানতে পারলেন কে তার প্রকৃত শত্রু। কোন পথে চলার মধ্যে তার কল্যাণ নিহীত। যখন তার ডাক পড়বে তখন নৌকা এ দেশে রেখেই চলে যেতে হবে।
এ চলার পথে সে যদি কিছু উপার্জন করে থাকে এটাই তার সম্বল। সে যাওয়ার সময় সাথে কিছুই নিয়ে যেতে পারবে না। পথ চলার সাথে সাথে ভাল কর্মের মাধ্যমে ভাল সত্তা এবং খারাপ কর্মের মাধ্যমে মন্দ সত্তা উপার্জন হয়। যা তার অজান্তেই তার জন্যে জমা হতে থাকে।
এগুলো আলোক উজ্জ্বল বিকীর্ণ শক্তি (ভাল তথ্য কণা) এবং কৃষ্ণকায়া বিকীর্ণ শক্তি (মন্দ তথ্য কণা)। অতঃপর কিছুকাল বাণিজ্য করার পর ঐ অদৃশ্য চালক চলে গেলে দুনিয়ার বাহন পচে গলে প্রকৃতির সাথে মিশে যাবে। তাই খেলাফতধারী মানুষের জড়দেহটি তার আসল পরিচয় বহন করে না।