আদম হাওয়া জীবনী
মানুষের প্রাণবায়ু বের হয়ে গেলে আমরা বলি লোকটি মারা গেছে। সে আর দুনিয়াতে নেই। এ কথার অর্থ এই নয় যে, তার জড় দেহও দুনিয়াতে নেই। মূলত: জড় দেহের মাধ্যমেই মানুষের একমাত্র পরিচয় দেয়া হয় না। বাস্তব ক্ষেত্রে আসল মানুষ হলো তার রূহ বা আত্মা। আত্মা বা রূহ আসে রূহানী জগত থেকে।
আদম (আ) ও বিবি হাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের জড়দেহ দুনিয়ায় পয়দা করার পাশাপাশি রূহ সরাসরি না পাঠিয়ে একটি পরীক্ষার মাধ্যমে দুনিয়ার কর্মপদ্ধতি শিক্ষা দিয়ে পাঠানো হয়। এ পরীক্ষাটি শয়তান ও গন্ধম বৃক্ষের পরীক্ষা। এ পরীক্ষাটি নেয়া হয় বেহেশতে। যাকে দিয়ে আদম ও হাওয়ার সঠিক পরিচয় দেয়া যায়।
সে প্রাণ বায়ু চলে গেলে বলা হয় সে আর দুনিয়াতে নেই। এ পরীক্ষাটি নেয়া হয় সেই আত্মিক আদম ও হাওয়ার ক্ষেত্রে। আদম-এর সৃষ্টি প্রক্রিয়া শেষ করে আল্লাহ ফিরিশতাদেরকে বললেন, আদমকে সেজদা করার জন্য। সকল ফিরিশতা আদমকে সেজদা করলেও ইবলিস আদমকে সেজদা করেনি।
“আমরা তোমাদেরকে নির্মাণ করে ইহার ওপর আমরা তোমাদেরকে দিয়েছি গঠনাকৃতি। উহার পর আমরা ফিরিশতাদেরকে বলেছি সেজদা কর আদমকে। (সূরা ৭: ১১)
‘যখন আমি ফিরিশতাদেরকে বললাম, সেজদায় পতিত হও আদমের সম্মুখে। তখন সকলেই সেজদায় পতিত হলো ইবলীস ব্যতীত। সে আল্লাহর আদেশ অমান্য করল এবং অহংকার করল।' (সূরা বাকারা: ৩৪)
হযরত আদম আঃ
“শয়তান বলল, আমাকে কেয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দাও। আল্লাহ বললেন যে, তোমার জন্য অবকাশ। ইবলিশ বলল, তুমি যখন আমার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছ, তখন তোমার বান্দাদেরকে সিরাতুল মুসতাকিম হতে বিচ্যুত করবার জন্য ওঁৎ পেতে থাকব। তারপর সামনে হতে, পেছন হতে, ডান হতে, বাম হতে আক্রমন করব।
সুতরাং তুমি দেখবে তাদের অধিকাংশই অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়েছে। আল্লাহ ইবলিসকে বললেন, এখান হতে ঘৃণিত এবং বিতাড়িত হয়ে যা। যারা তোর অনুগত হবে তাদের সকলের দ্বারা আমি জাহান্নাম পূর্ণ করব।” (সূরা হিজর)
আর যখন আপনার প্রতিপালক বললেন ফিরিশতাগণকে, নিশ্চয়ই আমি পয়দা করব দুনিয়ার মধ্যে একজন প্রতিনিধি। (সূরা বাকারা, আয়াত-৩০)
আল্লাহ পৃথিবীতে আদমকে নিজের প্রতিনিধি করে পাঠাবেন। কিন্তু আদমের পিছনে যে শয়তান লেগে আছে সে কথা হয়ত তাঁদের জানা ছিল না। ইবলিস আদমকে সেজদা না করায় চির অভিশপ্ত হয়ে গেল। সে প্রতিজ্ঞা করেছিল, আদমকে সকল দিক থেকে আক্রমন করে জাহান্নামী বানাবে।
হযরত আদম আঃ এর জীবনী
যেহেতু আদমের এ বিষয়টি জানা ছিল না। সেজন্য আল্লাহ তা'আলা তাঁদেরকে পৃথিবীতে পাঠানোর আগেই অবগত করানোর ব্যবস্থা করলেন। শিক্ষার সে পদ্ধতিটি কানে কানে বলে না দিয়ে বাস্তবে শয়তানের মুখোমুখি করে বাস্তব জ্ঞান দিয়ে দিলেন।
‘আর আমি বললাম হে আদম! বসবাস করতে থাক তুমি ও তোমার স্ত্রী বেহেস্তে এবং উভয়ে খাও উহা হতে স্বাচ্ছন্দে যথা হতে ইচ্ছা এবং কাছেও যেও না এই বৃক্ষটির। অন্যথায় তোমরাও হয়ে যাবে জালেমদের শ্রেণীভুক্ত। অনন্তর পদঙ্খলিত করে দিল শয়তান তাদেরকে বৃক্ষের কারণে।
অনন্তর বের করে চাড়ল তাদেরকে সে সুখ-শান্তি হতে যাতে তারা ছিলেন। আর আমি বললাম, তোমরা বেহেস্ত হতে নেমে যাও। এই অবস্থায় যে তোমরা কতিপয় কতিপয়ের শত্রু।' (সূরা বাকারা: ৩৫)
আদম ও হাওয়ার জীবন কাহিনী
অনেকেই মনে করেন, আদম (আ) কে এই পরীক্ষায় ফেলে পৃথিবীতে পাঠানোর কি প্রয়োজন ছিল? এর অন্তর্নিহিত কারণ কি? মূলত এ পরীক্ষার মাধ্যমে একদিকে মানুষের ইচ্ছা শক্তির স্বাধীনতার কথা জানিয়ে দেয়া হলো। অপরদিকে শয়তান যে মানুষের পরম শত্রু সে শিক্ষা দিয়ে দেয়া হলো।
সাথে সাথে শয়তানের ধোকায় পড়লে বেহেস্তে যে যাওয়া যাবে না তাও বুঝিয়ে দেয়া হলো এবং এর পরিণাম কি হবে তাও জানিয়ে দেয়া হলো। কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা অথবা কোন কাজ করার ক্ষেত্রে যার স্বাধীনতা নেই তাকে কাজের কর্মফল ভোগ করা বা তাকে শাস্তি দেয়া ন্যায়-নীতির খেলাফ।
আবার ঐ কাজের জন্য পুরস্কার দেয়াও অর্থহীন। বাস্তব ক্ষেত্রে শুধু নিজের ইচ্ছা প্রণোদিত কর্মের জন্যই শাস্তি কিংবা পুরস্কার পাওয়ার প্রশ্ন উঠতে পারে। সে জন্য আদম জাতের যে ইচ্ছা শক্তির স্বাধীনতা আছে তা জানানো অপরিহার্য ছিল।
মানুষ ইচ্ছা করলে আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান মানতে পারে। কিংবা নাও মানতে পারে। এখানে না মানলে কি হবে তাও জানানো অবশ্যক ছিল। আদম (আ) কে দুনিয়ায় আল্লাহ নিজের প্রতিনিধি করে পাঠাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে প্রতিনিধির কাজ বুঝিয়ে দেয়াও প্রয়োজন পড়ে।
অপর দিকে বর্তমানে নবী ও রাসূলগণের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তাঁর দেয়া প্রদত্ত জীবন বিধান মানুষকে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। এ কাজটি করেন এই অর্থে যে কাউকে শাস্তি কিংবা পুরস্কার দেয়ার আগে
প্রথমতঃ তাকে চলার স্বাধীনতা দিতে হয়।
দ্বিতীয়তঃ তাঁর জীবন বিধান সম্পর্কে তাকে অবহিত করতে হয়। তা না করে বিচারের ব্যবস্থা করলে ন্যায়-নীতির খেলাফ হয়ে যায়।
হযরত আদম আঃ এর জীবনী
কিন্তু আদম (আ) এবং বিবি হাওয়াই যেহেতু পৃথিবীর প্রথম খেলাফতধারী মানব- মানবী, সুতরাং তাদের শিক্ষা দেয়ার জন্য নবী রাসূল আনবেন কোত্থেকে? তাই দুনিয়ায় পাঠানোর আগেই তাদেরকে বিশেষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দুনিয়ার জীবন বিধান সম্পর্কে জানানো হলো। সে পরীক্ষাটি হলো আদম ও বিবি হাওয়ার গন্ধম বৃক্ষের পরীক্ষা।
মূলতঃ এই পরীক্ষাটির পিছনে ছিল মহৎ উদ্দেশ্য। এটি কোন তামাশা বা ফাঁদে ফেলার কৌশল নয়। যেহেতু দুনিয়াতে আদমের আগে আর কোন খেলাফতধারী মানুষ ছিল না, তাই এই পরীক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত জ্ঞান দিয়ে তাদেরকে দুনিয়ায় পাঠানো হলো।
বাহ্যিক দৃষ্টিতে মনে হয় শয়তান না থাকলে ভাল হতো। কিন্তু পুরস্কার দেয়ার বেলায় কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ও পরীক্ষার মুখোমুখী না করে পুরস্কার দেয়াও অর্থহীন।
সে কারণে সৃষ্টির সম্প্রসারণ ও সৃষ্টিকে মূলের দিকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য এবং মানুষকে পরীক্ষার মুখোমুখি করার জন্যই শয়তান থাকা একান্ত প্রয়োজন। তাই আদম (আ) কে দুনিয়ায় পাঠানোর আগে ফিরিশতাগণকে জানানো হলো এবং তাঁকে সেজদা করতে নির্দেশ দিয়েছিলো। অতঃপর আদম (আ) ও গন্ধম বৃক্ষের পরীক্ষাকে খেলাফতের প্রাথমিক শিক্ষাও বলা চলে৷
মানুষের শেষ পরিণতি ও মহাবিশ্ব
সুন্দর আকাশ, তারার মেলা, সবুজ শ্যামল পৃথিবী, অগণিত জীব-জন্তু আর পশু-পাখির নানা প্রজাতিতে ভরপুর আমাদের এই আবাসভূমি। এই সুন্দর পৃথিবীসহ মহাবিশ্বের শেষ পরিণতি কি হবে? পৃথিবীর বুকে বিচরণকারী উন্নতর জীব মানুষের গন্তব্যের শেষ ঠিকানা কোথায়?
এ ধরনের প্রশ্ন মানুষের স্বভাব সুলভ আচরণ থেকেই উৎপত্তি হয়। মানুষ ভাবে এই সুন্দর মহাবিশ্বে রাতের আকাশে তারার মেলা আর কতকাল বসবে? আমরা যে পৃথিবীর বাসিন্দা সেটা যেমন শূন্যে সন্তরণ করছে তেমনি গতির জগতের সকল ছায়াপথ ও গ্যালাক্সিসহ সকল গ্রহ, উপগ্রহ ও নক্ষত্রগুলো শূন্যেই সাঁতরাচ্ছে। এগুলো কি অনন্ত কাল পর্যন্ত সন্তরণ করতেই থাকবে? তাদের গতি কি কখনো থামবে না?
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বস্তু গতি ও সময়ের উৎপত্তি একই সময়ে আরম্ভ হয়। অর্থাৎ অনাদিকাল থেকে এগুলো বিরাজ করেনি। সে অর্থে যার শুরু বা আরম্ভ আছে, তার গতির স্থিরতা থাকবে।
অর্থাৎ সেটি একদিন না একদিন থামবে এটাই নিয়ম। বিজ্ঞানে অনিশ্চিয়তাবাদ বলে একটা তথ্য আছে-সে তথ্যের মর্মার্থ হলো এ বিশ্ব ক্রমেই একটা সুশৃংখল অবস্থা থেকে বিশৃংখল অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে। অর্থাৎ আদি বিশ্বের অবস্থা ছিল সম্পূর্ণ রূপে সুশৃংখল।
পরমগতি এবং আপেক্ষিক গতি
তখন ছিল পরমস্থিতিকাল, কালক্রমে পরমগতি এবং আপেক্ষিক গতির সাথে সাথে বস্তু ও সময়ের সূচনা হলে বিশ্বের অবস্থা ক্রমেই বিশৃংখলতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই বিশৃংখল অবস্থা একদিন মহা বিশৃঙ্খল অবস্থায় পতিত হবে। তখন বিশ্বের ধ্বংস অনিবার্য। এই ধ্বংস হওয়াতেই কি বিশ্বের শেষ পরিণতি মিটে যাবে?
সকল কিছুর মৃত্যু ঘটবে
থার্মোডিনামিক্সের দ্বিতীয় সূত্র অনুসারে এই বিশ্বে ঠান্ডা ও তাপের ক্ষেত্রে যে বিনিময় চলছে, তাতে একদিন না একদিন তাপ সমতা দেখা দেবে। ফলে সকল জীবনী প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে। এ পর্যায়ে সকল কিছুর মৃত্যু ঘটবে। এমন কি সূর্যেরও মৃত্যু ঘটবে।
এতে গ্রহ, উপগ্রহ ও নক্ষত্রগুলো কক্ষচ্যূত হয়ে পরস্পরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়বে। এভাবে গতির জগতের সকল কিছু চুরমার হয়ে তুলার মতো হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে।
পাক কোরআনে আল্লাহ এরশাদ করেছেন- “যখন সূর্যকে সঙ্কুচিত করা হবে এবং নক্ষত্রপুঞ্জ নিষ্প্রভ হবে এবং যখন পর্বতমালা বিচলিত হবে।” (৮১: ১-৩)
“সে দিন আকাশ গলিত তামার মত হবে এবং পর্বতসমূহ ধুনা পশমের মত হবে।” (১০১: ৫)
“সেদিন আমি আকাশমণ্ডলীকে গুটিয়ে নেব যেভাবে কিতাবসমূহকে গুটিয়ে নেয়া হয়, যেরূপ আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম তদ্রূপ ইহার পরেও করব, ইহাই আমার ওয়াদা; নিশ্চয়ই আমি উহা সংঘটিত করব।” (২১: ১০৪)
“অনন্তর যখন নক্ষত্রপুঞ্জ নিষ্প্রভ হবে এবং যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে এবং যখন পর্বতসমূহ উৎক্ষিপ্ত হবে।” (৭৭: ৮-৯)
“এবং চন্দ্র অন্ধকারাচ্ছন্ন হবে, সূর্য ও চন্দ্রকে একত্রিত করা হবে।” (৭৫: ৮-৯)
মহাবিশ্বের মহাবিশৃঙ্খল অবস্থাটা কখন
এ প্রসঙ্গটি ব্যাখ্যার আগে আমাদেরকে বস্তু কি এবং তার থেকে কি উৎপন্ন হয় তা জানা প্রয়োজন। কারণ যে জিনিস ধ্বংস হবে তার গঠন ও প্রকৃতি সম্পর্কে অবহিত না হলে সে সম্পর্কে প্রকৃত ধারণা পাওয়া যাবে না । আমরা যেখানে বাস করি সেটা বস্তুর জগৎ। বস্তুর ভেতরে পর্যায়ক্রমে বাস করে অণু- পরমাণু-ইলেকট্রন; প্রোটন ও নিউট্রন।
তারপর ফোটন→কোয়ার্ক Information Bit বা তথ্যকণা। এ ধারণা থেকে জানা যায় মহাবিশ্বের একটি এককোষী প্রাণীর মধ্যেও যে তথ্যকণা রয়েছে তা দিয়ে ৫০০ পৃষ্ঠার ৮০টি পুস্তক পর্যন্ত লেখা সম্ভব। সে হিসেবে একটি পূর্ণ মানুষের দেহে যতগুলো তথ্যকণা আছে তা পৃথিবীর সমস্ত পুস্তকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথবা একটি লবনের সূক্ষ্ম কণায় যে পরিমাণ তথ্য মওজুদ থাকে তা ধারণ করতে প্রায় হাজারটি মস্তিষ্কের প্রয়োজন হবে।
আপেক্ষিক গতি কাকে বলে
সে অর্থে জগতের তাবৎ জিনিস তথ্য কণার সারিবদ্ধ ভাণ্ডার। এখানে তথ্য কণার অন্তর্নিহিত রূপ হলো- তরঙ্গগতি+তথ্য = তথ্যকণা বা তথ্যতরঙ্গ অথবা তথ্য কাঠামো। আমরা লেখার সময় কলম দিয়ে কাগজে লিখে যে কোন তথ্য পুরে দেই। চিঠির বিভিন্ন অংশ আলাদা করলে আমরা পাব কাগজ+কালি+তথ্য। অপর দিকে লেখার সময় কলমটি গতিশীল করেই লেখার কাজ সম্পূর্ণ করতে হয়।
অর্থাৎ কলম স্থির রেখে লেখার কাজ সম্পূর্ণ করা সম্ভব নয়। সে হিসেবে বস্তুর ভেতর থেকে যদি গতি আলাদা করা বা গতিকে যদি স্থির করে ফেলা হয় তবে সেখানে চলমান তরঙ্গের কোন অস্তিত্ব থাকবে না। অতঃপর স্থিতি অবস্থায় তথ্যেরও কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।
মূলতঃ বস্তুর মূল অবস্থা বা কাঠামো টিকে থাকার সহায়ক মাধ্যম হলো “গতি”। তাই মহাপ্রলয় বা কিয়ামতের সূচনা হবে মহাবিশ্ব স্থির হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে। এর ফলে মুহূর্তে গ্রহ, নক্ষত্রের কক্ষচ্যুতির ফলে পরস্পরের সাথে সংঘর্ষের সৃষ্টি হবে।
একটা চলন্ত গাড়ী হঠাৎ স্থির হয়ে গেলে গাড়ীর যাত্রীরা যেমন ধাক্কা অনুভব করে তেমনি জগৎময় মহাপ্রলয়ের মহুর্তে ধাক্কা বা ঝাঁকুনি অনুভব করবে।
আল্লাহ বলেন- “যেদিন ভূমিকম্পের ধাক্কা বা ঝাঁকুনি দেবে এবং তারপর আসবে আর একটি ধাক্কা। কতক হৃদয় সেদিন ভয়ে কাঁপতে থাকবে। দৃষ্টি হবে তাদের ভীত-বিহ্বল।” (সূরা আন নাযিয়াত: আয়াত ৬-৯)
মহাবিশ্বের রয়েছে কয়েকটি স্তর
সে হিসেবে মহাবিশ্বের রয়েছে কয়েকটি স্তর। যেমন পরম স্থিতি জগৎ, পরম গতির জগৎ, আপেক্ষিক গতির জগৎ এবং স্থিতি জগৎ। আপেক্ষিক গতির জগতের বিকীর্ণ সত্তার মাধ্যমে স্থিতি জগৎ ক্রমেই সম্প্রসারণ হচ্ছে। মূলতঃ কিয়ামত বা মহা প্রলয়ের মাধ্যমে আপেক্ষিক গতির জগতের বিনাশ ঘটবে।
- মানুষের বিকীর্ণ শক্তির রূপ
- আপেক্ষিক গতির জগৎ
- পৃথিবী ও মানুষ
- বিকীর্ণ শক্তি
- কৃষ্ণকায়া বিকীর্ণ শক্তি
- আলোক উজ্জ্বল বিকীর্ণ শক্তি
“(তাদেরকে সে দিনের ভয় দেখাও) যে দিন জমীন আসমানকে পরিবর্তন করে অন্যরূপ করে দেয়া হবে। তারপর সকলেই মহাপরাক্রমশালী এক আল্লাহর সামনে হাতে পায়ে শিকল পরা এবং আরামহীন অবস্থায় হাজির হয়ে যাবে। সেদিন তোমরা পাপীদেরকে দেখবে আলকাতরার পোষাক পরিধান করে আছে। আর আগুনের লেলিহান শিখা তাদের মুখমণ্ডলের ওপর ছড়িয়ে থাকবে।
এটা এজন্য হবে যে, আল্লাহ প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের বদলা দেবেন। আল্লাহর হিসাব নিতে বিলম্ব হয় না।”(সূরা ইবরাহীম : ৪৮-৫১) “সেদিন মানুষ সব কিছুই দেখবে যা তার দু'টি হাত আগেই পাঠিয়ে দিয়েছে এবং কাফের বলে উঠবে, হায়! আমি যদি মাটি হতাম।” (সূরা নাবা: ৩৯,৪0)
আপেক্ষিক গতির জগৎ
আপেক্ষিক গতির জগৎ-এর গতি থেমে যাওয়ার সাথে সাথে প্রথম ধাক্কা অনুভব হওয়া বা শুরু হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্ররাজিসহ আকাশ রাজ্যের সকল দৃশ্য, অদৃশ্য বস্তুর মধ্যে শুরু হবে চরম সংঘর্ষ। এভাবে সংঘর্ষের শেষ পর্যায়ে সবকিছু ধুনা ধুনা হয়ে যাবে। এ পর্যায়েও চরম স্থিরতা আসবে না। তবু আবারও একটা ধাক্কা অনুভব হবে।
অতঃপর বস্তু জগতের চরম বিলুপ্তির জন্য তরঙ্গগতি (অ্যান্টি কোয়ার্ক পর্যায়ের প্রতিবস্তুর কণা) ধেয়ে আসবে। অর্থাৎ বস্তুর মূল সত্তা কোয়ার্ক ও অ্যান্টি কোয়ার্ক-এর সংঘর্ষে তরঙ্গের ব্যতিচার ক্রিয়ায় শক্তি পুনঃবন্টন হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন-
“আর যখন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তখন পৃথিবী ও আকাশ সমূহে যা কিছু আছে সব মরে পড়ে যাবে; তবে কেবলমাত্র তারাই জীবিত থাকবে যাদের আল্লাহ (জীবিত রাখতে) চাইবেন। তারপর দ্বিতীয়বার ফুঁক দেয়া হবে, তখন তারা সবাই আবার হঠাৎ উঠে দেখতে থাকবে।” (সূরা যুমার, আয়াত-৬৮)
আল কোরআনের অনেক উপমা, উদাহরণ রূপক অর্থের মাধ্যমে পেশ করে, তার ভাবার্থ বুঝে নিতে হবে। এখানে শিংগার ফুঁক তরঙ্গগতির সাথে সম্পর্কিত। মানব দেহের ক্ষেত্রে মনের নির্দেশে যেমন মস্তিষ্ক থেকে তরঙ্গগতি (Impulse) বা কমাণ্ড আদেশ (তথ্য তরঙ্গ) বের হয়ে অংগের কাজ (গতিশীলতা) কে নিবৃত্ত করে তেমনি স্রষ্টার আদেশে আরশের রজ্জু বেয়ে নির্ধারিত ফিরিশতা বা দূত [ইসরাফিল (আ)]-এর মাধ্যমে বস্তুর ক্ষুদ্রতম কণাকেও ভাঙ্গাবার জন্য প্রতিবস্তুর পর্যায়ের অ্যান্টি কোয়ার্ক বা তরঙ্গগতি নিঃসৃত হবে।
অ্যান্টি কোয়ার্ক তরঙ্গগতি
এই অ্যান্টি কোয়ার্ক তরঙ্গগতি বস্তুর ক্ষুদ্রতম কণার সাথে ব্যতিচার ক্রিয়ায় শক্তির পুনঃবন্টনের মাধ্যমে বস্তু জগতের চূড়ান্ত বিলুপ্তি ঘটাবে। তারপর দ্বিতীয় ফুঁক বা তরঙ্গগতির মাধ্যমে নতুন বিশ্বব্যবস্থা প্রবর্তন হবে।
কিন্তু ইতিমধ্যে মহাবিশ্বের বস্তুজগতের গর্ভ থেকে যে সব “তথ্য কণা” বের হয়ে আকাশে ছড়িয়ে ছিল তাদের কি হবে? দুনিয়ার কর্মজীবনে মানুষের দেহকোষ থেকে প্রতিবস্তুর কণা বা তথ্যকণা যেমন বের হয় তেমনি অন্যান্য বস্তু থেকেও প্রতিবস্তুর কণা অহরহ সৃষ্টি হয়ে মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে।
প্রতিবস্তুর জগৎ
এসব প্রতিবস্তুর কণার মাধ্যমেই গড়ে উঠছে অ্যান্টি ম্যাটারের জগৎ (Anti Matter) বা প্রতিবস্তুর জগৎ। সে জগৎকে স্থির প্রতিক্রিয়ার জগৎত্ত বলা চলে। এ অবস্থাটি কখন হবে? এর উত্তর নবী, রাসূল (সা)গণ যেমন
সরাসরি বলেননি, তেমনি আল কোরআনেও নির্ধারিত কোন তারিখের উল্লেখ নেই। তাই অন্য মানুষের পক্ষে নির্ধারিত তারিখ বলা কোন কালেও সম্ভব হবে না। তবে আমরা বিশ্বের প্রাকৃতিক নিয়ম-নীতি, বস্তুর গঠন ও তার ধ্বংস লীলা ব্যাখ্যার মাধ্যমে কিয়ামতের একটা সম্ভাব্য ধারণা নিতে পারি। কিন্তু এ ধারণাটাকে চূড়ান্ত হিসেবে মনে করাও ঠিক নয়। বরং এটা একটা উপমা নির্ভর যুক্তি। নিম্নে সে উপমাটি তুলে ধরা হলো।
কেয়ামত কবে হবে
বস্তু জগতের চারটি মৌলিক কণা পরস্পরকে ধরে রেখেছে চারটি মৌলিক বলের মাধ্যমে। সেগুলো হলো-
- মধ্যাকর্ষণ বল,
- ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক বল,
- সবল নিউক্লিয়ার ফোর্স (১০১৩) ও
- দুর্বল নিউক্লিয়ার ফোর্স (১০-১৬) বা মরণ ফোর্স
অপরদিকে কণাগুলো হলো- প্রোটন, নিউট্রন, ইলেকট্রন ও নিউট্রিনো।
এখানে চারটি কণা তাদের ভর (Mass)-এর আনুপাতিক বলের দ্বারা পরস্পরকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণ বলের নাম মধ্যাকর্ষণ বল।
অপরদিকে প্রোটন, ইলেকট্রনকে যে বল দ্বারা আকর্ষণ করে সেটি হলো ইকেট্রো-ম্যাগনেটিক বল।
আবার প্রোটন ও নিউট্রন সবল নিউক্লিয়ার চার্জ বহন করে। এগুলো যখন ১০ সেঃ মিঃ দূরত্বের কাছাকাছি আসে তখন তারা পরস্পরকে এই সবল নিউক্লিয়ার ফোর্স দ্বারা আকর্ষণ করে।
অপরদিকে চারটি কণা যখন পরস্পর থেকে ১০-১৬ সেঃ মিঃ-এর কম দূরত্বে অবস্থান করে তখন দুর্বল নিউক্লিয়ার ফোর্স উৎপন্ন হয়। এই বলকে মরণ ফোর্সও বলা হয়।
কারণ কণাগুলো যখন ১০ সেঃ মিঃ-এর কম দূরত্বে অবস্থান করে তখন তারা একে অপরকে ধ্বংস করতে থাকে। এর ফলে বিটা রেডিয়েশনের উদ্ভব ঘটে। এক্ষেত্রে দেখা যায় বস্তু ও প্রতিবস্তুর কণা একে অপরের সাথে দেখা হলেই তারা পরস্পরকে ধ্বংস করে।
কেয়ামতের আলামত সম্পর্কে বয়ান
এই মহাবিশ্বের আপেক্ষিক গতির জগতের (বস্তুজগতের) ধ্বংস বা প্রলয়কে বলা হয় কেয়ামত। এটি কখন অনুষ্ঠিত হবে, এ সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন। আমরা উপরের আলোচনার বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে কেয়ামতের একটা সম্ভাব্য সময়ের ধারণা নিতে পারি।
আমরা জানি এ মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল। মহাবিশ্বে অহরহ প্রতিবস্তুর জগতের সম্প্রসারণ হচ্ছে। কারণ বস্তু জগতের মানুষ ও অন্যন্য উপাদানের বিকীর্ণ শক্তিই হলো প্রতিবস্তুর কণা। এই কণার মাধ্যমেই প্রতিবস্তুর জগৎ সৃষ্টি হচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে দুনিয়ার আল মেহেদীর (বস্তু জগতের আমার দেহ) সাথে যদি প্রতিবস্তুর জগতের আল মেহেদীর দেখা হতো তাহলে তারা দু'জনেই দেহ যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পরস্পরকে ধ্বংস করত। এটা বস্তু ও প্রতিবস্তুর কণার ধর্ম। এর সাথে মহাবিশ্বের আপেক্ষিক গতির জগতের ধ্বংস বা প্রলয়ের সম্পর্ক রয়েছে।
মৃত্যু ফোর্স
এক্ষেত্রে ধারণা করা হচ্ছে প্রতিবস্তুর জগৎ ডিমের মতো বৃদ্ধি হতে হতে যখন পরমগতির জগতের সীমানার কাছাকাছি চলে আসবে। তখন দুর্বল নিউক্লিয়ার ফোর্স-এর ন্যায় বস্তুর মরণ ফোর্স (Matter Killing Force) নামের এক ধরনের বস্তুকণা ধ্বংসকারী বলের উদ্ভব ঘটবে।
এই বল বস্তুজগতের সকল জ্যোতিষ্কসহ বস্তুর ক্ষুদ্রতম কণারও ধ্বংস ঘটিয়ে ভর ও শক্তির পুনঃবন্টন করে ভিন্ন চরিত্রে রূপান্তর করবে। সাথে সাথে আপেক্ষিক গতির জগতেরও মৃত্যু ঘটবে। অর্থাৎ তখন গতিশীল তথ্য তরঙ্গ (বস্তুর মূল উপাদান) স্থির তথ্য কণায় রূপ নিবে।
বিশ্বের এ অবস্থাটার নামই কিয়ামত। কেয়ামত অবস্থায় বস্তুসত্তার সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটবে। অতঃপর বিশ্বের প্রাকৃতিক নিয়ম ও ভর শক্তি কিছুকাল স্থির (সুপ্ত) থেকে পুনরায় ভিন্ন রূপে জগৎ ও জীবের আবির্ভাব ঘটবে।
একদিন তোমরা মৃত্যুবরণ করবে
আল্লাহ বলেন- “এরপর একদিন তোমরা মৃত্যুবরণ করবে এবং আবার কিয়ামতের দিন অবশ্যই তোমরা পুনরুত্থিত হবে।” (২০: ১৫-১৬) “আমিই তোমাদের জন্য মৃত্যু নির্ধারিত করেছি এবং আমি তাতে অসমর্থ নই যে, আমি তোমাদেরকে তোমাদের গঠন পরিবর্তিত করে দেব এবং তোমাদেরকে এমনভাবে গঠন করব যা তোমরা অবগত নও।” (৫৬: ৬০, ৬১) এ পর্যায়ে গতির জগতের বর্জ্য সত্তা ও আলোক উজ্জ্বল সত্তার জগৎ আলাদা হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
অর্থাৎ জগৎ ও মানুষের কর্মের বিকীর্ণ শক্তির মধ্যে কৃষ্ণকায়া বিকীর্ণ শক্তি ও আলোক উজ্জ্বল বিকীর্ণ শক্তি দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে। দুনিয়াতে যে সব মানুষের কর্মের বিকীর্ণ সত্তার মধ্যে (প্রতিবস্তুর তথ্যকণা) আলোক উজ্জ্বল বিকীর্ণ স্বভাবের সত্তা বেশী থাকবে তারা পাবে উজ্জ্বল সুখময় জগৎ। সে জগতের সুখ হবে অনন্ত অসীম।
তথায় যখন যা চাওয়া হবে সেখানের বাসিন্দারা সাথে সাথে তাই পাবে। সেখানে কষ্টের লেশ মাত্র থাকবে না। অপরদিকে যাদের কর্মের বিকীর্ণ সত্তার মধ্যে কৃষ্ণকায়া বিকীর্ণ শক্তি (কালো ধোঁয়ার ন্যায় সত্তা) বেশী থাকবে তারা হবে বর্জ্যসত্তার জগতের বাসিন্দা।
সে জগৎ হবে কালো আলকাতরার ন্যায় অন্ধকারাচ্ছন্ন ও যন্ত্রণাময়। সেখানে থাকবে অ্যান্টি ভাইরাস ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়ার মতো জীবাণু। মানুষের গঠন হবে টিউমার সেলের কাঠামোর ন্যায়। সে কারণে মানব দেহের বৃদ্ধি ক্রমান্নয়ে পাহাড়ের মতো হয়ে যেতে থাকবে। তাই ক্রমান্নয়ে যন্ত্রণাও বাড়তে থাকবে। এক সময় পাহাড়ের মতো দেহটা বৃদ্ধি হতে হতে বিষ্ফোরিত হয়ে যাবে।
তারপর আবার নতুন দেহ সৃষ্টি হয়ে পুনরায় ছোট থেকে বৃদ্ধি হয়ে বড় হতে থাকবে। এভাবেই জাহান্নামের মৃত্যুহীন যন্ত্রণাময় জীব চক্র চলতে থাকবে। এটাই হলো মানুষ ও মহাবিশ্বের শেষ পরিণতি।
বর্তমান আকাশে কত গ্রহ, নক্ষত্র, ছায়াপথ ও গ্যালাক্সি রয়েছে তার হিসেব বলা কঠিন। আকাশ রাজ্যে কত বিচিত্র কাণ্ড যে ঘটছে তার ইয়ত্তা নেই। কোথাও গড়ে উঠছে সুশভিত জগৎ। আবার কোথাও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বিশাল বিশাল দ্বীপরাজ্য। এদের মধ্যে রয়েছে মানুষের কর্মের বিকীর্ণ সত্তার জগৎ।
মানুষের পাপ কর্মের মাধ্যমে
মানুষের পাপ কর্মের মাধ্যমে যে সব বিকীর্ণ সত্তার জগৎ গড়ে উঠে কখনো যদি কোন ব্যক্তি নিজ কর্মের জন্য অনুশোচনা করে আল্লাহর কাছে তওবা করে তবে তার পাপ সত্তাকে আল্লাহ ধ্বংস করে শক্তির পুণ:বন্টন করে দেন। এ প্রক্রিয়াটি ঘটে তরঙ্গের ব্যতিচার ক্রিয়ার মাধ্যমে।
আবার কেউ যদি প্রাথমিক জীবনে ভাল কাজ করতে করতে পুণ্য জগৎ ভরপুর করে তোলে কিন্তু শেষ জীবনে ঈমানহারা হয়ে পাপ কাজে ডুবে যায় এবং এভাবেই মৃত্যু হয় তবে তার পুণ্য জগৎত্ত ধ্বংস হয়ে যাবে। এভাবেই চলছে আকাশ রাজ্যে ধ্বংস আর সৃষ্টির খেলা।
মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ যে দিন পরম গতির জগতের (স্রষ্টার নির্ধারিত সীমানার) কাছাকাছি চলে আসবে, তখন বিটা রেডিয়েশনের ন্যায় এক ধরনের বল ও রেডিয়েশনের উদ্ভব ঘটবে। এ ধরনের বল ও রেডিয়েশন বস্তুর ক্ষুদ্রতম কণাকেও ধ্বংস করে দেবে। এই রেডিয়েশন “তথ্য তরঙ্গ”।
শিঙ্গার শব্দ যেমন তরঙ্গের আকারে চলে তদ্রূপ এই রেডিয়েশনও তরঙ্গের আকারে চলে। তাই বলা যায় ইসরাফিল (আ) শিঙ্গার শব্দ এমনি (সম্ভবত) এক রেডিয়েশন পর্যায়ের বল। এই বলের মাধ্যমেই বস্তু জগতের সমাপ্তি ঘটবে। আবার নতুন (দ্বিতীয়) শব্দের মাধ্যমে নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার নিয়ম চালু হবে। সে জগত প্রতিবস্তুর জগৎ। সেটাই হবে মানুষের কর্মের বিকীর্ণ সত্তার জগৎ।
উপসংহার
মানুষ একেবারেই সসীম জীব। চারমাত্রিক ধারণার মধ্যেই তার জ্ঞান সীমাবদ্ধ। তাই জগৎ, মহাজগতের আদি উৎস তথা পৃথিবীতে আদমের আবির্ভাব সম্পর্কে মানুষের পক্ষ থেকে একশত ভাগ সঠিক ধারণা পাওয়া সহজ লভ্য নয়। তাই মানুষের বিশ্বাসে জগৎ ও আদমের আবির্ভাব সম্পর্কে রয়েছে বিচিত্র রকমের ধারণা। তার মধ্যে রয়েছে আদিকালের পৌরাণিক কাহিনী এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের ঘাড়েও চেপে রয়েছে কুসংস্কার।
ডারউইনের বিবর্তনবাদ
অপর দিকে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে রয়েছে ডারউইনের বিবর্তনবাদ। কিন্তু ডারউইনের বিবর্তনবাদ সত্য হলে সকল মানুষের মধ্যেই থাকত শুধু পশুর স্বভাব। তারা পশুদের মতো উলঙ্গ হয়ে চলত। লজ্জা শরমের লেশমাত্র তাদের মধ্যে থাকত না। তাদের মধ্য থেকে পরিবার প্রথার বিলুপ্তি ঘটত।
তবে এ ধরনের স্বভাব যে মানুষের মধ্যে নেই এমন নয়। আধুনিক মানুষ পশু শ্রেণীর মানুষ থেকে আবির্ভাব হয়েছে বলে তাদের মধ্যে এ ধরনের স্বভাব আছে বটে, কিন্তু সব মানুষই এমন নয়।
যাদের পশু প্রবৃত্তি শয়তানের প্রভাবে খোদায়ী ইলমকে বিলুপ্তির পথে নিয়ে গেছে, তারাই শুধু এ ধরনের স্বভাবের হয়ে থাকে।
যা হউক আধুনিক মানুষ পশুর শ্রেণীর মানুষ থেকে উদ্ভব হলেও আদি মানব-মানবী ডারউইনের বিবর্তনবাদকে অনুসরণ করে উদ্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে আদমের আবির্ভাব হয়েছে স্রষ্টার উদ্দেশ্যমুখী সাংগঠনিক বিবর্তন ধারায়, যা পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে পূর্ণতায় এসেছে।
সৃষ্টির আদিতে স্রষ্টার প্রত্যক্ষ সৃষ্টি
সৃষ্টির আদিতে স্রষ্টার প্রত্যক্ষ সৃষ্টি হলো “ধ্বনাত্মক তথ্য কণার (positive Information bit), অতঃপর তার থেকে “ঋণাত্মক তথ্য কণা” (Negative Information bit) সহ অন্যান্য তথ্য কণার উৎপত্তি ঘটে। অপর দিকে আত্মিক জগতের উৎস থেকে পর্যায়ক্রমে বস্তু জগতের সূক্ষ্ম উপাদানের উৎপত্তি হয়।
পরবর্তি পর্যায়ে পানি থেকে একক প্রাণসত্তা বা এককোষী জীবের উদ্ভব ঘটে। সেই এক কোষী জীবের ডি.এন.এ. কোষে রয়েছে তথ্য কণার সমাহার। তারপর আদি এককোষী প্রাণীর ক্ষেত্রেও কোষ বিভাজনের মাধ্যমে তার সত্তার থেকেই তার সঙ্গীনির উদ্ভব হয়।
অতঃপর তাদের থেকে স্রষ্টার উদ্দেশ্যমুখী সাংগঠনিক বিবর্তন ধারায় পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে পশু শ্রেণীর মানুষের উদ্ভব হয়।
চূড়ান্ত পর্যায়ে তাদের থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় আদম ও হাওয়ার আবির্ভাব ঘটে। এ বিষয়ে আদম ও হাওয়ার জন্ম রহস্য অধ্যায়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।
মানুষ হিসেবে আমাদের জ্ঞান আপেক্ষিক
মানুষ হিসেবে আমাদের জ্ঞান আপেক্ষিক। অদৃশ্যে যা ঘটে সে সম্পর্কে আমাদের কোন জ্ঞান নেই। সে হিসেবে আদমের আদি উৎস সম্পর্কে আমাদের সকল যুক্তি, তথ্য আপেক্ষিক। আল্লাহ মহাজ্ঞানী। তিনি ছাড়া গায়েবের খবর বলা কারও সাধ্য নেই।
কিন্তু আমাদের যুক্তি, তথ্য যদি কোরআন হাদীসের সাথে সম্পৃক্ত হয়, তাহলে বিশ্বাস করতে বাধা থাকার কথা নয়। তাই আসুন আমরা আদমের আদি উৎস সম্পর্ক পৌরাণিক কাহিনী ও ধর্মের ভেতরের কুসংস্কারপূর্ণ তথ্যের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে কোরআন ও হাদীসের গবেষণালব্ধ তথ্য গ্রহণ করি।
পরিশেষে আল-কোরআনের একটি সূরা থেকে নিম্নের দু'টি আয়াত উল্লেখ করে উপসংহারের ইতি টানা হলো। শেষ পর্যায়ে বলতে চাই সকল বিষয়েই আল্লাহই ভাল জানেন।
“বরং আল্লাহ তোমদেরকে উদ্ভূত করেছেন ভূমি হতে-উদ্ভিদের ন্যায়। অতঃপর তিনি উহাতে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেবেন এবং তিনি তোমাদেরকে সেখান থেকে বের করবেন এক (নতুন) জাত হিসাবে। ” (৭১: ১৭-১৮)
সাংগঠনিক বিবর্তন
ঘটিয়েছেন। সে পরিকল্পনা ও প্রক্রিয়ার নাম সাংগঠনিক বিবর্তন। সেই বিবর্তন প্রক্রিয়ার সকল ব্যবস্থাপনাই আশ্চর্যজনক ও রহস্যময়। তবু সেটি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের অযোগ্য কিছু নয়। আধুনিক বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ আবিস্কার আমাদেরকে কোরআন বুঝা সহজ করেছে বিধায় আদমের দুনিয়ায় আবির্ভাব সম্পর্কে আমরা নতুন করে চিন্তা করতে পারছি।
আল্লাহই একমাত্র সত্তা, যিনি প্রথম সৃষ্টির ক্ষমতা রাখেন। আবার পুনরায় সৃষ্টির ধারা চালু রাখেন। আমরা একদিন তাঁর কাছেই ফিরে যাব।
“নভোমণ্ডল-ভূমণ্ডল (মহাবিশ্বে) যা কিছু আছে তা তাঁহারই। সকলেই তাঁর আজ্ঞাবহ। তিনি সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনয়ন করেন। অতঃপর তিনি ইহাকে সৃষ্টি করবেন পুনরায়। ইহা তাঁর জন্য অতি সহজ। নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে সর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই এবং তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।” (৩০: ২৬-২৭)
“(আল্লাহ) সেই একক সত্তা যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন৷ তোমাকে গঠন করেছেন সঠিক ও সুসম মাত্রায়। তোমাকে ভারসাম্যপূর্ণ করেছেন সেই সুরত বা আকৃতিতে- যা তিনি ইচ্ছা করেছেন এবং তিনি তোমাকে সুসম্পন্ন করেছেন বিভিন্ন উপাদানে।” (৮২: ৭-৮)
“(আল্লাহ) সেই একক সত্তা যিনি গঠন করেছেন তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে এবং তা হতে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রী।” (৪: ১)
সংগৃহীতঃ আদমের আদি উৎস
লেখকঃ আল মেহেদী
পোস্ট ট্যাগঃ