আল কোরআনে বন্য মানুষ বিলুপ্তির ইতিহাস
আল কুরআনের আলোকে মানব সৃষ্টির ইতিহাস
আদম (আ) ও বিবি হাওয়া পৃথিবীর প্রথম মানব-মানবী। তাঁদের আগে পৃথিবীতে আর কেউ খেলাফত নিয়ে আসেননি। আল্লাহ যখন আদমকে খেলাফত দিয়ে পৃথিবীতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন তখন ফেরেশতাগণকে আদমের আনুগত্য করার জন্য ডেকে জানিয়ে দিলেন।
“-আপনার- -প্রতিপালক- -ফেরেশতাদেরকে- -বললেন-, -নিশ্চয়- -আমি- -পয়দা- -করব- -দুনিয়ার- -মধ্যে- -একজন- -প্রতিনিধি।- -ফেরেশতারা- -বলল-, -আপনি- -কি- -পয়দা- -করবেন- -এমন- -লোক- -যারা- -সেখানে- -অশান্তি- -সৃষ্টি- -করবে- -এবং- -রক্তপাত- -করবে।-” (-সূরা- -বাকারা-: -৩০-)
ফেরেশতাগণ পূর্ব অভিজ্ঞতার বাইরে
ফেরেশতাগণ পূর্ব অভিজ্ঞতার বাইরে কোন উত্তর দিতে পারে না। প্রতিনিধি হিসেবে আদমকে দুনিয়ায় পাঠানোর আগে সেখানে হয়ত এমন এক জাতি বাস করত যারা অশান্তি ও রক্তপাত ঘটিয়ে ছিল। ফলে ফেরেশতাগণ পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে আল্লাহর প্রতিনিধি পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানানোর সময় নিজেরা জানার জন্য পূর্বতন মানুষের কার্যকলাপ তুলে ধরেন। সে হিসেবে আমরা মানুষ জাতিকে দু'ভাগে ভাগ করতে পারি।
যেমন, বন্য ও বর্বর মানুষ বা পশু শ্রেণীর মানুষ এবং খেলাফতধারী মানুষ। একই গঠনের দুই শ্রেণীর মানুষের মধ্যে তফাৎ ছিল খুবই নগণ্য।
এ ক্ষেত্রে উভয়ের মস্তিষ্কের আয়তনের মাঝে কিছুটা ভিন্নতা ছিল। এটা ছিল দৈহিক গঠনের ক্ষেত্রে পার্থক্য। অপর দিকে বন্য মানুষেরা খেলাফতধারী ছিল না। তাই তাদের জবাবদিহীতা ও কর্মের স্বাধীনতা ছিল না এবং তাদের ছিল না ভাষাজ্ঞান ৷
তারা স্বাধীনভাবে চিন্তা ও কর্ম করার অধিকার পায়নি। কিন্তু খেলাফতধারী মানুষের ছিল ভাষাজ্ঞান এবং স্বাধীনভাবে চিন্তা ও কর্ম করার অধিকার। এ কারণে তাদের কর্মের জবাবদিহিতা ছিল।
বন্য মানুষরা কখনো স্রষ্টার
বন্য মানুষরা কখনো স্রষ্টার আনুগত্যের বিরোধিতা করতে পারত না। এ অধিকার তাদেরকে দেয়া হয়নি। ফলে যখনি তারা স্রষ্টার আনুগত্যের বিরোধীতা করেছে তখনি ফেরেশতাগণ তাদের কর্মে বাধা দিয়েছেন। তাদেরকে শাস্তির জন্য সাথে সাথে ধরপাকড় করে আযাব-গজব দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছেন।
কারণ বন্য মানুষের সকল কাজের আনুগত্য করার অধিকার ফেরেশতাগণকে আল্লাহ দেয়নি। এবার যাকে খেলাফত দিয়ে আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠাতে চাচ্ছেন তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হলো তার সকল কাজের আনুগত্য করার অধিকার ফেরেশতাদেরকে দিয়ে দেয়া খেলাফতধারী মানুষের ভাল-মন্দ কোন কাজেই ফেরেশতাগণ যেন পূর্বের ন্যায় বাধা না দেয়, সেজন্য প্রতিনিধি পাঠানোর আগেই তার আনুগত্য করার জন্য ডেকে অবহিত করলেন।
আদম আঃ এর জীবনী
আল্লাহ আদমকে পয়দা করে ফেরেশতাগণের সামনে আদমের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে তাকে সেজদাহ করতে বললেন। আমরা নামাজে যেভাবে সেজদাহ করি মূলত ফেরেশতাদের সেজদাহ এমন কিছু নয়। এ সেজদাহ হলো আদমের সকল কাজের (ভাল/মন্দ) আনুগত্য করা।
আল্লাহ বলেন- “আর আল্লাহ আদমকে
আল্লাহ বলেন- “আর আল্লাহ আদমকে (সৃষ্টি করে) শিখালেন যাবতীয় বস্তুর নাম (বৈশিষ্ট্য ও গুণাগুণ)।
এরপর উহাদেরকে (বস্তুসমূহকে) ফেরেশতাদের সামনে রেখে বললেন, তোমরা আমাকে বল এ সমস্ত বস্তুর নাম (বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ কোন বস্তু কোন কাজে লাগে) যদি তোমরা সত্যবাদী হও। ফেরেশতারা বলল, আপনি মহান পবিত্র আমাদের জ্ঞান নাই কেবল উহা ব্যতীত-যা আপনি আমাদেরকে শিখিয়েছেন। নিশ্চয়ই আপনি মহাজ্ঞানী হেকমত ওয়ালা)।” (সূরা বাকারা: ৩২)
“আমিই তোমাদের বানিয়েছি; আমিই তোমাদেরকে দিয়েছি গঠনাকৃতি। তারপর আমি ফিরিশতাদেরকে বলেছি সিজদা কর আদমকে।” (সূরা আ'রাফ আয়াত-১১)
বন্য (পশু শ্রেণীর) মানুষের কর্মের স্বাধীনতা
বন্য (পশু শ্রেণীর) মানুষের কর্মের স্বাধীনতা না থাকায় তাদেরকে ফেরেশতাগণ সেজদা বা আনুগত্য করেনি এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে সেজদাহ করতে বলাও হয়নি। বন্য মানুষের চেয়ে খেলাফতধারী মানুষের মধ্যে একটা বিশেষ গুণ বেশী ছিল। যার জন্য ফেরেশতাগণ বাধ্য হয়েছিল আদমের আনুগত্য বা সেজদা করতে। সে গুণটি হলো ইচ্ছাশক্তির স্বাধীনতা।
কিন্তু বন্য মানুষের এ গুণটি ছিল না বলে দুনিয়ায় অশান্তি ও রক্তারক্তি করে টিকে থাকতে পারেনি। কিন্তু খেলাফতধারী মানুষ একটি মাত্র বৈশিষ্ট্যের জন্য মারামারি-কাটাকাটি, চুরি-ডাকাতি সহ শত রকমের অপরাধ করেও দুনিয়ায় টিকে আছে।
অথচ বন্য ও বর্বর মানুষেরা দুনিয়া থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। দুনিয়া থেকে যে এ ধরনের মানুষের বিলুপ্তি ঘটেছে তা আল-কোরআনেই উল্লেখ রয়েছে।
“তিনি (আল্লাহ) চাইলে তোমাদেরকে বিলুপ্ত করতে পারেন এবং তিনি যাদেরকে চাইবেন উত্তরাধিকারী হিসেবে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করতে পারেন ঠিক সেভাবে যেভাবে অন্য সম্প্রদায়ের বংশধর হতে তোমাদের উদ্ভব ঘটিয়েছেন।” (সূরা আনআম : ১৩৩)
আল কোরআনের উপরোল্লিখিত আয়াত
আল কোরআনের উপরোল্লিখিত আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, আদমের আগেও পৃথিবীতে পশু (বন্য) শ্রেণীর মানুষ ছিল। সভ্য মানুষ সৃষ্টির চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছতে তার আগে আরও অনেক ধাপ বিলুপ্ত হয়েছে। বর্তমানে নৃ-বিজ্ঞানীগণ মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে সেসব মানুষের ফসিল আবিষ্কার করছেন।
মানব প্রজাতির বিকাশের ক্ষেত্রে স্রষ্টার সাংগঠনিক পরিকল্পনার বর্হিপ্রকাশ ঘটেছে। সৃষ্টির বিকাশ দৈবক্রমে তাড়াহুড়া করে ঘটেনি। এটি ঘটেছে পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে। নিম্নের আয়াতে আল্লাহর সে ক্রমবিকাশ নীতির কথা উল্লেখ রয়েছে। “(আল্লাহ) গঠন করেছেন তোমাদেরকে উন্নতির নানা মাত্রায় (পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে)। (সূরা নূহ : ১৪)
আদমের আগে বন্য ও বর্বর শ্রেণীর মানুষ ছিল
আদমের আগেও যে বন্য ও বর্বর শ্রেণীর মানুষ ছিল সেটার বড় প্রমাণ আমরা নিজেরাই। আমাদের মাঝে রয়েছে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্য 'জিন'। যা পূর্বতন প্রজাতির বৈশিষ্ট্য বহন করে নিয়ে আসে। আমাদের মাঝে এমন লোক আছে যারা বন্য ও বর্বর শ্রেণীর মানুষের মতো অশান্তি ও রক্তারক্তি করে। আমাদের পূর্ব পুরুষ (আদি পিতা-মাতা) যদি বন্য মানুষের সূত্র ধরে দুনিয়ায় না আসত তা হলে আমাদের মাঝে কোন অবস্থাতে পশুর স্বভাব থাকত না।