রূহ অর্থ কি

রূহ বা আত্মার পরিচয় কি? What is the identity of soul?

রূহ অর্থ কি

রুহ কি তার উত্তর পাওয়া খুব কঠিন। সহজ অর্থে রূহ বা আত্মা হলো জীবনী শক্তি। একে দেখা যায় না।

ছোঁয়া যায় না। তার রং রূপ গঠন কিছুই বর্ণনা দেয়ার মত নয়। রাসূলুল্লাহ (সা) কে যখন কাফেররা রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছিল তখন আল্লাহ তা'আলা রাসূলকে (সা) বললেন-'বলুন, রূহ আমার নির্দেশ। “আর লোকে আপনাকে আত্মা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করছে। আপনি বলুন, আত্মা আমার প্রভুর হুকুম।” (আল-কোরআন) 

রূহ এবং জড়দেহ দুই জগতের দুই সত্তা। পরম করুণাময় আল্লাহর নির্দেশে দুই জগতের দুই সত্তা দুনিয়ার মতো দ্বীপ রাজ্যে একত্রে বসবাস করে। রূহ চলে গেলে জড়দেহের অস্তিত্ববিলীন হয়ে যায়। কারণ রূহ চলে গেলে জড়দেহকে যতই খাবার-দাবার দেয়া হোক না কেন সেটি আর কোন কিছুই গ্রহণ করে না। 

দুনিয়ার সকল লোভ লালসা ত্যাগ করে সেটি চির নিদ্রায় চলে যায়। তাই দেহ এবং আত্মার মধ্যে আত্মাই হলো আসল সত্তা। এর ধ্বংস নেই, মৃত্যু নেই, একে ভাগ করা যায় না এবং পরিমাপ করা যায় না। আমরা জগতের সকল কিছুর পরিচয় জানলেও নিজ দেহের আসল সত্তার পরিচয় জানি না। কল্পনায়ও তার পরিচয় তালাশ করি না। 

তবে এ কথা সত্য যে, রূহের পরিচয় পাওয়া ও হৃদয়ঙ্গম করা খুব কঠিন। তাই এ ব্যাপারে শরিয়তে ব্যাপক জানার চেষ্টা করাও নিষেধ আছে। আত্মা ও জড়দেহ একত্রে বাস করলেও তাদের জন্ম স্থান দুই ভিন্ন রাজ্যে। 

আত্মা কত প্রকার

যেমন রূহ বা আত্মা রূহানী জগৎ বা আলমে আমরের সৃষ্টি আর জড়দেহ আলমে খালক-এর জগতের বস্তুর উপাদান দিয়ে গঠিত। আলমে খালক-এর জগতের বস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা আছে। একে ভাগ করা যায়, পরিমাপ করা যায়। কিন্তু আলমে আমরের সত্তাকে ভাগ করা যায় না। 

এর আকার নেই। এর বিনাশ বা ধ্বংস নেই। সে হিসেবে মানুষের রয়েছে দু'ধরনের আত্মা। যেমন একটি জীবাত্মা এবং অপরটি পরমাত্মা। জীবাত্মা পশুদের এবং আদমের আদি উৎস বলে আখ্যায়িত করা হয়।

আত্মার অমৃত উপলব্ধি করা যায় না কেন

এ ধরনের আত্মার স্রষ্টাকে চেনা-জানার মত শক্তি নেই। কিন্তু পরমাত্মা স্রষ্টাকে তালাশ করে এবং তার আনুগত্যশীল হয়। তবে যাদের পরমাত্মা দুনিয়ার মোহে অস্বচ্ছ হয়ে পড়ে তাদের দ্বারা স্রষ্টার আনুগত্যের কাজ হয় না। 

এ ক্ষেত্রে জীবাত্মাই তাদের দেহকে নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ তখন পরমাত্তা বন্দিশালায় বসে থেকে জীবাত্মার খায়েশ মত দেহকে পরিচালনা করে। এক্ষেত্রে পরমাত্মা প্রতিনিধির দায়িত্ব ভুলে যায়। “তা নয় বরং নিজ কর্মের দোষে তাদের আত্মার উপর মরিচা পড়েছে।” (আল কোরআন) এ পর্যায়ে এসে আবার প্রশ্ন দেখা দিয়েছে দুই জগতের দুই সত্তা একত্রে মিলিত হলো কি করে? 

এ বিষয়টি বুঝানোর জন্য জীব দেহকে একটি রিমোর্ট কন্ট্রোল গাড়ীর সাথে তুলনা করে একটি রূপক উদাহরণ দেয়া হল। যেমন, একটি রিমোর্ট কন্ট্রোল গাড়ী মালিকের নির্দেশে শ্রমিকরা কারখানায় তৈরী করল। কিন্তু ঐ গাড়ীর রিমোর্ট কন্ট্রোল ট্রান্সমিটারটি মালিকের হাতে। 

নির্মাণ ব্যবস্থাপনা যখন পরিপূর্ণ করা হলো তখন গাড়ীটি রাস্তায় চলার জন্য রিমোর্ট কন্ট্রোল ট্রান্সমিটারের সুইচ-এ চাপ দেয়া হলো। এতে রাস্তায় গাড়িটি চলতে লাগল। তুলনামূলকভাবে আমাদের দেহ গাড়ী (জড়দেহ) মাতৃথলিতে পরিপূর্ণভাবে নির্মাণ হলে, এটিকে জ্ঞান ও শক্তিতে পূর্ণ করে সচল করার জন্য সৃষ্টিকর্তা কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূর থেকে রিমোর্ট কন্ট্রোল ট্রান্সমিটারের সুইচ চাপলেন। 

সাথে সাথে দেহ গাড়ী সচল হয়ে চলতে শুরু করে। এবারও প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে রিমোর্ট কন্ট্রোল ট্রান্সমিটারের সুইচে চাপ দেয়ার পর গাড়ীটি চলল যে শক্তির সাহায্যে, তা কি জিনিস? মূলত: রিমোর্ট কন্ট্রোল ট্রান্সমিটার থেকে যে সংকেত (নির্দেশ) বের হয়, তা আমাদের চোখের সম্মুখে দিয়ে আসলেও আমরা তাকে দেখতে পারি না। 

কার্যতঃ ঐ যন্ত্রটি থেকে যে নির্দেশটি যায় বিজ্ঞানের ভাষায় তা হলো “তরিৎ চুম্বক তরঙ্গ” বা ইলেস্ট্রো-ম্যাগনেটিড ওয়েভ। অপর দিকে মূল গাড়ীতে এ ধরনের সংকেত ধারণ করার ব্যবস্থা আছে। অর্থাৎ সেখানে থাকে রিমোর্ট কন্ট্রোল রিসিভার। এটি ঐ সংকেত বা নির্দেশটি ধারণ করে। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এ ধরনের তড়িত-চুম্বক তরঙ্গ।

আত্মার পরিচর্যা

রিমোর্ট কন্ট্রোল গাড়ীর জীবনী শক্তি। যার হাতে ঐ গাড়ীর ট্রান্সমিটারটি থাকে তিনি ইচ্ছা করলে সুইচ অফ করে তা অচল করে দিতে পারেন। অথবা যখন গাড়ীর যন্ত্রাংশসহ তৈল, মবিল কমে যায় তখন যদি সেটি অচল হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় তখনও ট্রান্সমিটারের সুইচ অফ করে তা বন্ধ করে দেয়া যেতে পারে। 

এ ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলার বিশ্ব ব্যবস্থাপনার সুনিয়ন্ত্রিত কৌশলের মাধ্যমে রিমোর্ট কন্ট্রোল ট্রান্সমিটার"-এর সুইচ অফ করে মানুষের দেহ গাড়ী অচল করে দিয়ে থাকেন। এ পর্যায়ে এসে বুঝতে হবে যে, রূহ বা আত্মা হলো আল্লাহর নির্দেশ। 

যা তড়িৎ চুম্বক-তরঙ্গের ন্যায় এক ধরনের জীবনী শক্তি। এ শক্তি “ রিমোর্ট কন্ট্রোল ট্রান্সমিটার” (বিজ্ঞানের ভাষায়) থেকে তড়িৎ চুম্বক-তরঙ্গের ন্যায় শূন্য মাধ্যম দিয়ে উড়ে এসে মানুষের কলব”-বা রিমোর্ট কন্ট্রোল রিসিভারকে সচল করে। 

রুহ কিসের তৈরি

এ ধরনের জীবনী শক্তি বা রূহ হলো-“চুম্বক তথ্য তরঙ্গ”। তবে এ সত্তাতে বিশেষ বিশেষ কিছু গুণ সংযোগ করে দেয়া হয়েছে। জড়দেহের ডি, এন, এ. কোড যেমন পূর্ব পুরুষের দৈহিক ও চারিত্রিক গুণাগুণ নুতন প্রজন্মে নিয়ে আসে, তেমনি লাইফ কোডে বা “চুম্বক তথ্য তরঙ্গ” 

বিশেষ কিছু গুণ স্রষ্টার পক্ষ থেকেই সংযোগ করে দেয়া হয়েছে। মূলতঃ গুণ বা চরিত্র অভিজ্ঞতা থেকে অর্জিত হয়। তাই আদম ও হাওয়াকে (আত্মিক পর্যায়ে) শয়তান সম্পর্কে অবহিত করতে একটি মহড়ার আয়োজন করা হয়েছিল। বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে রূহ সম্পর্কে বুঝতে কষ্ট না হওয়ারই কথা। কারণ তড়িৎ চুম্বক-তরঙ্গ সম্পর্কে বিজ্ঞানমনা সকল মানুষের কিছু না কিছু অভিজ্ঞতা আছে।

মানুষ চৌমাত্রিক জগতে বাস করে বলে মাত্র জ্ঞানের বাইরের কোন অদৃশ্য বস্তু যে এতো ক্ষমতা রাখতে পারে সে আন্দাজ করতে পারে না। তবে তড়িৎ চুম্বক-তরঙ্গ যে রূহ তা নয়, এটি সমপর্যায়ের একটি উদাহরণ মাত্র। এ জগতের সকল বস্তুই তরঙ্গের আধার। 

আমরা যা কিছু খাই, যার উপর দিয়ে চলি, সকল কিছুই তরঙ্গ আর তরঙ্গ। বস্তুর সার নির্যাস হলো কোয়ান্টা বা তরঙ্গ ঝক। অর্থাৎ তরঙ্গ বা শক্তির ঘণীভূত অবস্থাই পদার্থ। আবারপদার্থসহ সকল কিছুই তথ্য কণার জমাট বদ্ধ রূপ। 

সে অর্থে রূহ হলো “আদেশ তথ্য কাটামো” (Command Information bit)। সব মিলে পৃথিবীর কোন বস্তুর অভ্যন্তর খালি বা শূন্য থাকে না। কারণ শক্তির পাশাপাশি থাকে বিভিন্ন ধরনের বল। অপর দিকে কোন কণাই পরস্পরের সঙ্গে লেগে থাকে না। তাদের মধ্যে থাকে আন্ত-আণবিক ফাক। 

একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দেহের আন্ত-আণবিক ফাক বন্ধ করতে পারলে একটা বৃহৎ মানুষ একটা বিন্দুতে পরিণত হয়ে যাবে। তখন রূহ ও একটা জড় মানুষের মধ্যে খুব একটা বড় তফাৎ থাকবে না। এ আলোচনা থেকে আমরা ধারণা নিতে পারি যে, রূহ হলো অবিনশ্বর জীবনী শক্তি। যা কোন দূর অতীতের অজানা জগৎ থেকে মানুষের দেহ রাজ্যে প্রবেশ করে সেটিকে সচল রাখে। 

রূহ একটি অবিনশ্বর আধ্যাত্মিক সত্তা

একে ধরা যায় না, দেখা যায় না, কিন্তু তার অস্তিত্ব অনুভব করা যায়। রিমোর্ট কন্ট্রোল ট্রান্সমিটারের প্রেরিত "তড়িৎ-চুম্বক তরঙ্গ” যেমন রিমোর্ট কন্ট্রোল রিসিভার ধারণ করে যন্ত্রটিকে সক্রিয় করে তেমনি স্রষ্টার Command Information bit মানবদেহকে জ্ঞানে ও শক্তিতে শক্তিশালী করে সতেজ রাখে। তাই আল্লাহ রাসূলকে (সা) বলেছেন, বলুন, “আত্মা আমার প্রভুর হুকুম।"(আল কোরআন) 

আল্লাহ মানব আত্মার মধ্যে কিছু জ্ঞান বা তথ্য দিয়ে দিয়েছেন। দুনিয়াতে এসে অনেকেই দুনিয়ার মোহে সে তথ্যের খবর ভুলে যায়। ফলে তারা পরকালে নাজাতের পথ হারিয়ে ফেলে। “যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট নিষ্কলঙ্ক আত্মা নিয়ে আসবে সে ছাড়া অন্য কেউই নাজাত পাবে না” (আল- কোরআন)। মানুষ কখনও নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে না। 

তাই আত্মার অস্তিত্ব সুষ্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত। মানব দেহের মূল সত্তা হলো আত্মা। পরকালে আত্মারই বিচার হবে। তবে আত্মার বাহন বা প্রকাশ আবরণ ‘জড়দেহ' বিচারের বাইরে থাকবে না। আত্মাকে তার বাহনে চড়িয়ে শাস্তি দেয়া হবে।

রূহ স্বভাব প্রকৃতি কত ধরণের হয়ে থাকে

মূলত চার ধরনের হয়ে থাকে। যেমন-

  • ১। পশুর স্বভাব 
  • ২। কুকুরের স্বভাব 
  • ৩। শয়তানের স্বভাব 
  • ৪। ফেরেশতার স্বভাব

যারা ফিরিশতার স্বভাবকে মানবিক মর্যাদায় উন্নিত করে অন্যান্য দোষগুলো বিসর্জন দিতে পারবে তারাই আখেরাতে ফিরিশতার রাজ্যে গমন করতে পারবে। তাই আদমের সন্তানগণ কিছু হবে জান্নাতী এবং কিছু হবে জাহান্নামী। নিচের হাদীসে কুদসীর বর্ণনাতেও এর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়। 

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা আদমের সন্তান-সন্ততিকে তার পিঠ হতে বের করলেন, তারপর তাদেরকেই তাদের নিজের ব্যাপারে সাক্ষী করে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই?” তারা বলল, “হ্যা” । 

তারপর তিনি তাদেরকে তার দুই হাতের তালুতে সঞ্চালিত করলেন এবং বললেন, “এরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর এরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তারপর জান্নাতবাসীদের জন্য তাদের আমল সহজ করে দেয়া হবে।” (হাদীসে কুদসী) 

রুহ সৃষ্টির ইতিহাস

রূহ সম্পর্কে এটাই শেষ কথা নয়। মহান আল্লাহর অদৃশ্য সৃষ্টিগুণগুলোর মধ্যে রূহ হলো অনুভবের জিনিস। তাই মানুষের পক্ষে রূহ সম্পর্কে বিশদ জানা ও ব্যাখ্যা করা তার সাধ্যের বাইরে। 

মহান আল্লাহই জানেন রূহের গঠন, রূপ, চরিত্র সম্পর্কে। আমরা শুধু অনুমানের উপর ভর করে আল্লাহর কুদরতের অসীম দরিয়ায় সারানোর চেষ্টা করছি।

অনলাইন থেকে সংগৃহীত

পোস্ট ট্যাগঃ

রূহ অর্থ কি
রূঢ় অর্থ
রূহ কি
অহম
ঈর্ষা কি
রূহ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url