আখিরাত শব্দের অর্থ কি
আখিরাত শব্দের অর্থ কি
আরবী
শব্দ আখিরাত অর্থ হলো মৃত্যুর
পরের জীবন। মানুষের মৃত্যুর পরে যে জীবন শুরু
হয় তাকেই মূলত আখিরাত বলে।
আখিরাত কাকে
বলে
বা
পরকালীন
জীবন
কি?
আখিরাত
কাকে বলে আমরা পরকাল বিশ্বাস বলতে বুঝাতে চাই
এ জীবন এবং মহাবিশ্ব
পুরোপুরী ধ্বংস হয়ে যাবার পর
প্রাণি জগতের আবার পুনরুত্থান হবে।
সেই পুনরুত্থানের পরের জীবনকেই আমরা
পরকালীন জীবন বা আখিরাত বলি।
আখিরাত কাকে
বলে
বিশ্বাস
আখিরাত
মানে সেই পুনরুত্থানের পরের
জীবন এবং সে জীবনে
সংঘটিত হওয়া সব কিছু। ইসলাম
যে তিন জিনিসের বিশ্বাসের
প্রতি স্ব বিশেষ গুরুত্ব
দিয়ে থাকেন সেই তিনটি বিষয়ের
তৃতীয় বিষয়টি হল পরকাল বিশ্বাস।
বিষয় তিনটি হল তাওহীদ, রিসালাত
ও আখিরাত।
অর্থাৎ
আল্লাহ তা'আলা এ
মহাবিশ্বের সব কিছু ধ্বংস
করে দেয়ার পর প্রাণি জগতকে
পুনরায় তাদের কবর তথা বরযাখী
জীবন থেকে জীবিত করে
তুলবেন। সেই জীবনটি বস্তুগত
জীবন। তাদেরকে পুনরুত্থানের পর সকলকে একস্থানে
উপস্থিত করানো হবে।
হাশরের শেষ
বা হাশর
এ
এক স্থানে উপস্থিত করানোকে বলা হয় হাশর।
অতপর সেখানে দুনিয়ার জীবনের সব কিছুর হিসাব
নিকাশ করা হবে। তাদের
পার্থিব জীবনে কৃত সমস্ত কর্মের
ওজন করা হবে। অতপর
তাদেরকে জান্নাতে প্রেরণ করা হবে কিংবা
জাহান্নামে। জান্নাতীরা জান্নাতে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করবেন।
আখিরাত বিশ্বাস
আর জাহান্নামীদের
মধ্যে
যারা
মুমিন
ছিল
তাদেরকে
তাদের
অপরাধ
অনুযায়ী
শাস্তি
দানের
পর
ধীরে
ধীরে
মুক্তি
দিয়ে
জান্নাতে
প্রেরণ
করা
হবে।
এসবের প্রতি বিশ্বাসকেই পরকাল বিশ্বাস বলা হয়। আর
এ বিশ্বাস মুমিনদের জন্য একান্ত জরুরী।
আখিরাতে বিশ্বাস
করা
অপরিহার্য
কেন
এ
বিশ্বাস ছাড়া কেউ মুমিন হতে
পারবে না। কারণ এ
বিশ্বাস ইসলামী আকীদার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসের চেয়ে এ বিশ্বাস কম
গুরুত্বপূর্ণ নয়। এ কারণেই
আল্লাহ তা'আলা পবিত্র
কুরআনে তার অস্তিত্বে বিশ্বাসের
কথা বলার সাথে সাথে
পরকাল বিশ্বাসের কথাও আলোচনা করেছেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেন:
“পূর্ব
ও পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ
ফিরানোতে কোন কল্যাণ বা
পুণ্য নেই। কিন্তু পুণ্য
আছে কেউ আল্লাহ, পরকাল
ফেরেশ্তাগণ, সমস্ত কিতাব এবং নবীগণের প্রতি
ঈমান আনয়ন করলে।” (৮২ সূরা বাকারা:
১৭৭)
পরকাল বিশ্বাস
ছাড়া
ঈমান
পরিপূর্ণ হতে পারে না
সুতরাং
পরকাল বিশ্বাস ছাড়া কারো ঈমান পরিপূর্ণ
হতে পারে না বরং
পরকাল বিশ্বাস হলো আল্লাহ, তাওহীদ
ও রিসালাতে বিশ্বাসের পর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়। একারণেই যারা পরকালে বিশ্বাসী
নয় তারা বিভ্রান্ত ও
গোমরাহ। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
“হে
ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূল,
তিনি যে কিতাব তার
রাসূলের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন তাতে এবং যে
কিতাব তিনি পূর্বে অবতীর্ণ
করেছেন তাতে ঈমান আন। এবং কেউ
ফেরেশতা এবং পরকাল অস্বীকার
করলে সে ভীষণ ভাবে
ভ্রষ্ট হয়ে পড়বে।"
পরকাল অস্বীকার
যখন
পরকাল বিশ্বাস আবশ্যক ও ওয়াজিব প্রমাণিত
হল, একথাও জানা গেল যে,
আল কুরআন এবং প্রতি বিশেষের
গুরুত্ব আরোপ করেছে এবং
বহু স্থানে সে প্রসঙ্গে আলোচনা
করেছে তার থেকে একথা
প্রমাণিত হল যে, পরকাল
অস্বীকার সুস্পষ্ট কুফরী। এ কারণেই পরকাল
অস্বীকার করার জন্য আল্লাহ
তা'আলা কঠোর শাস্তির
ব্যবস্থা রেখেছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
“যে
আল্লাহ তার ফিরশতা, তার
রাসূলগণ এবং পরকাল অস্বীকার
করে সে বিরাট বিভ্ৰান্ত
৷ আল্লাহ তা'আলা আরও
বলেন: “বরং তারা পরকাল
অস্বীকার করে আর যারা
পরকাল (কিয়ামত) অস্বীকার করে তাদের জন্য
আমরা জাহান্নাম প্রস্তুত রেখেছি।”
আখিরাত জীবনের
গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়গুলো
কি
কি
আল্লাহ
তা'আলা আরো বলেন:
“কাফেররা মনে করা তাদের
পুনরুত্থান করা হবে না।
হাঁ, তোমার রবের নামে শপথ
তাদের অবশ্যই পুনরুত্থান করা হবে। অতপর
তোমরা যা করেছো সে
সম্পর্কে অবগত করা হবে।
তা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ
ব্যপার।
আখিরাতের স্তর
কয়টি
আখেরাতের
স্তরগুলো সংক্ষেপে নিচে দেওয়া হলোঃ
- কবর
- পুনরুত্থান
- কেয়ামত
- হাশর
- মীযান
- পুলসিরাত
- শাফায়াত
আগুনের শিখা
বৃদ্ধি
যখনই
তা স্তিমিত হবে আমি তাদের
জন্য আগুনের শিখা বৃদ্ধি করে
দিব। এটা তাদের প্রতিদান
স্বরূপ। কারণ তারা আমার
নিদর্শন সমূহ অস্বীকার করেছে,
আর বলেছে যখন আমরা অস্থিতে
পরিণত হয়ে চুর্ন বিচুর্ন
হয়ে যাব আমরা কি
আবার নব সৃষ্টি হিসেবে
পুনরোত্থিত হবো।” (৮৬ সূরা তাগাবুন,
৭, ৮৭ সূরা নাবা,
৩, ৮৮ সূরা বনী ঈসরাঈল,
৯৬-৯৭)
আরও পড়ুনঃ কবরের আজাব থেকে মুক্তির দোয়া
পুনরুত্থান কি
আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি যে দ্বিতীয় বারের মত শিংগায় ফুৎকার দেয়ার পর দ্বিতীয় বার সমস্ত প্রাণি জগত জীবন লাভ করবে। অর্থাৎ সমস্ত প্রাণি জাতি তাদের দেহ ও আত্মা পুনরায় ফিরে পাবে এবং কবর থেকে সকলের পুনরুত্থান হবে।
এবং এ পুনরুত্থানটি
হবে মানবাঙ্গের “আজবুয্য যানব” নামক একটা অস্তি
থেকে, যা আল্লাহর হুকুমে
বাকি থাকবে। তা আধুনিক বৈজ্ঞানিকদের
কথা মত ডি. এন.
এ-ও হতে পারে।
মৃত্যুর পর
পুনরুত্থানে
বিশ্বাস
এ
প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন: মানুষের
সবকিছু বিলীন হয়ে যাবে। তবে
তার আজবুয যানব নামক জিনিসটি
বিলীন হবে না। সেখান
থেকেই সৃষ্টি জাতির পুনরুত্থান হবে।”
আবু
ইয়ালা ও হাকেমের এক
বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ্ সাঃ
কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘আজবুয
যাবন' জিনিটি কি? তিনি বললেন:
সেটা শর্ষে পরিমাণের একটা জিনিস।
পুনরুত্থান অর্থ
এ
জিনিস থেকেই সমস্ত মানব জাতিকে পুনরুত্থান
করা হবে। যেমন পুর্বোক্ত
হাদীসে আছে। এ প্রসঙ্গে
ইবনে আকীল বলেন: এতে
আল্লাহ্ তা'আলা একটা
গোপন রহস্য রয়েছে। সে রহস্যের বলেন:
এতে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন
না। কারণ যিনি অনস্তিত্ত্ব
থেকে অস্তিত্ত্ব দান করতে পারেন
তিনি কোন কিছু থেকে
পুনরুত্থান করার প্রয়োজন পড়ে
না।”
সকলের প্রত্যাবর্তন
আমারই
দিকে
দ্বিতীয় বার বস্তুগত জীবন লাভের দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ্ তা'আলা বলেন: “যে দিন তারা সত্য সত্যি বিকট শব্দ শুনতে পাবে সেদিনটি হবে (কবর হতে) বের হবার দিন। আমি জীবন দান করি মৃত্যু সেটাই এবং সকলের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে।
যেদিন পৃথিবী বিদীর্ণ হবে এবং মানুষ
বের হয়ে আসবে এস্ত
ব্যাস্ত হয়ে এই সমবেত
সমাবেশ করণ আমার জন্য
সহজ।' (বুখারী, হাদীস নং- ৪880; মুসলিম,
হাদীস নং- ৫২৫৩; হাকেম,
ও আবু ইয়ালা; ১১ ইবনে
হাজর আসকালানী, ফাতহুল বারী, খ. ৮, পৃ:
৫৫২)
আরও বলেন:
আল্লাহ্
তা'আলা
“মানুষরা
কি মনে করে আমরা
তাদের অস্থিসমূহ একত্রিত করতে পারব না?
হা আমি তাদের অস্থিসমূহের
অগ্রভাগ পর্যন্ত পূর্ণ বিন্যস্ত করতে সক্ষম।'
সূরা কাফ: ৪২-৪8
আল্লাহ্ তা'আলা
আরও
বলেন:
“বল
তিনিই পৃথিবীতে তোমাদেরকে ছড়াইয়ে দিয়েছেন। এবং তার নিকট
তোমাদেরকে সমবেত করা হবে। আল্লাহ্
তা'আলা আরও বলেন:
“অতপর তোমরা কিয়ামত দিবসে পুনরোত্থিত হবে।”
মৃত্যুর পরে অনন্ত জীবন
মুহাম্মদ ইকবাল কীলানী
পোস্ট ট্যাগঃ