আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন আযাবিল কবর
আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন আযাবিল কবর
আল্লাহুম্মা
ই’ন্নি আ’উজুবিকা মীন আ’জাবিল ক্ববরি
ওয়া আ’উজুবিকা মীন ফীত্নাতিল মাছিহিদ
দাজ্জাল ওয়া আ’উজুবিকা মীন
মাহ্ইয়া ওয়া ফীতনাতিল মামাতী;
আল্লাহুম্মা ইন্নী আ’উজুবিকা মিনাল মাছামি ওয়াল মাগ্বরামী।’
অর্থ: হে আল্লাহপাক! আমি তোমার নিকট কবরের আজাবসমূহ হতে, মসিহ দাজ্জালের ফেতনা হতে ও জীবন ও মৃত্যুর ফেতনা হতে করুণা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহপাক! গুনাহ ও ঋণ হতে তোমার নিকট করুণা চাই।’ একজন তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি ঋণের ব্যাপারে (আল্লাহপাক! এর নিকট) এত বেশি করুণা চান কেন? জবাবে নবিজী বললেন, ‘মানুষ যখন ঋণে জড়িয়ে পড়ে, তখন কথা বললে মিথ্যা কথা বলে আর ওয়াদা করলে তা ভেঙ্গে ফেলে।’ (সহিহ বুখারি)
উপরের দোয়াটি হচ্ছে কবরের আজাব থেকে বাচাঁর দোয়া। নিচে আমরা জানবো কবরের আজাব সম্পর্কিত বিভিন্ন আজাবের বর্ণনা কুরআন ও হাদীসের আলোকে।
কবরের আজাব
হাদীসের
অন্য এক বর্ণনা হতে
জানা যায় যে, মৃত
ব্যক্তি কবরে পৌঁছার পর
নির্ভয়ে ও নিশ্চিন্তে বসে
থাকে। তখন তাকে প্ৰশ্ন
করা হয়: তুমি কোন
ধর্মের অনুসারী? সে উত্তরা দেয়:
আমি ইসলামের অনুসারী ছিলাম। আবার প্রশ্ন করা
হয়: তোমার আকীদা মতে ইনি কে?
সে উত্তর দেয় ইনি রাসূলুল্লাহ্
সাঃ।
তুমি কি
আল্লাহপাক
কে দেখেছ
তিনি
আল্লাহপাকের পক্ষ হতে স্পষ্ট
মোজেযা নিয়ে আমাদের নিকট এসেছিলেন ও
আমরা তাকে সত্য বলে
স্বীকার করেছিলাম। তারপর তাকে প্রশ্ন করা
হয়: তুমি কি কখনো
আল্লাহপাক! কে দেখেছ? সে উত্তর দেয়
(দুনিয়াতে) কারও পক্ষেই আল্লাহ্
তা'আলাকে দেখা সম্ভব নয়।
আমি কী করে দেখব?
জাহান্নামের একটি
জানালা
খুলে
দেয়া
হয়
অতপর
তার দিকে জাহান্নামের একটি
জানালা খুলে দেয়া হয়।
সেই জানালা দিয়ে সে দেখতে পায়
জাহান্নামের জ্বলন্ত কয়লাগুলো একটি আরেকটিকে গ্রাস
করছে। তখন এই জাহান্নামের
ভয়াবহ দৃশ্য দেখার পর তাকে বলা
হবে, চিন্তা কর, আল্লাহ্ তা'আলা তোমাকে কত
বড় বিপদ হতে রক্ষা
করেছেন।
অতপর
জান্নাতের একটি জানালা তার
দিকে খুলে দেয়া হয়।
সেই জানালা দিয়ে সে জান্নাতের সৌন্দর্য
ও অন্যান্য নিয়ামতসমূহ দেখতে পায়। তখন তাকে বলা
হয়, এটা হল তোমার
ঠিকানা। দুনিয়াতে তুমি ঈমানদার ছিলে
ঈমানের
সাথে তুমি কিয়ামতের দিন
কবর হতে উঠবে।
নাফরমান অত্যন্ত
ভীত
হয়ে
তার
কবরে
উঠে
বসে
অতপর
রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেন: নাফরমান
ব্যক্তি অত্যন্ত ভীত শঙ্কিত হয়ে
তার কবরে উঠে বসে,
আর তখন তাকে জিজ্ঞেস
করা হয়: তুমি দুনিয়ায়
কোন ধর্মের উপর ছিলে? সে
উত্তরে বলে: আমার জানা
নেই। পুনরায় তাকে (রাসূলুল্লাহ্ সা. কে দেখিয়ে)
জিজ্ঞেস করা হয়: ঐ
ব্যক্তি কে?
জান্নাতের দিক
হতে
তার
সামনে
জানালা
খুলে
দেয়া
হয়
সে
উত্তর দেয়: তার সম্পর্কে অন্যান্য
লোক যা বলেছে, আমিও
তাই বলেছি। অতপর জান্নাতের দিক
হতে তার সামনে একটি
জানালা খুলে দেয়া হয়।
ফলে উক্ত জানালা দিয়ে
সে জান্নাতের সুন্দর সুন্দর ও নয়নাভিরাম দৃশ্যসমূহ
দেখতে পায়। তখন তাকে বলা
হয়: চিন্তা করো, তুমি আল্লাহপাক!
র নাফরমানি করার কারণে আল্লাহতা'আলা তোমাকে কেমন
নিয়ামত হতে বঞ্চিত করেছেন।
জাহান্নামের দিক
হতে
জানালা
খুলে
দেয়া
হয়
এরপর
তার সামনে জাহান্নামের দিক হতে একটি
জানালা খুলে দেয়া হয়,
আর সে দেখতে পায়
যে, জাহান্নামের জ্বলন্ত অঙ্গারগুলো কীভাবে একে অপরকে গ্রাস
করছে। অতপর তাকে বলা
হয়, এটাই হলো তোমার
ঠিকানা। দুনিয়াতে থাকার সময় তুমি পরকালের
প্রতি সন্দেহ নিয়ে জীবিত ছিলে, সন্দেহ অবস্থায়ই তোমার মৃত্যু হয়েছে, আর কিয়ামতের দিন
সেই সন্দেহ নিয়েই তুমি কবর হতে
উঠবে।”
মুর্দাকে কবরে
রাখার
পর
আজাব-গযব
শুরু
এ
প্রসঙ্গে মুহাম্মদ ইব্ন সুবহ
(রা.) বলেন: আমরা এক হাদীসে
পেয়েছি: মুর্দাকে কবরে রাখার পর
যদি তার উপর আজাবসমূহ
ও গযব শুরু হয়,
তাহলে তার প্রতিবেশী মুর্দারা
বলে: হে ব্যক্তি আমরা
যারা তোমার প্রতিবেশী ছিলাম, তোমার আগেই বিদায় হয়ে
এসেছি। আমাদের এ বিদায়ের মাঝে
তোমার জন্য চিন্তা ভাবনা
বা শিক্ষা গ্রহণের কি কিছু ছিল
না?
আজ তোমার
এ
অবস্থা
হতো
না
তুমি
কি দেখনি আমাদের সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে
গেছে। তোমার অগ্রবর্তীরা যেসব ভুল করেছিল,
কেন তুমি সে সব
ভুল হতে মুক্ত হওয়ার
বিন্দুমাত্র চেষ্টা করলে না? তাহলে
তো আজ তোমার এ
অবস্থা হতো না। এমনকি
জগতের প্রত্যেক মাটি খণ্ড তাকে
বলবে: হে দুনিয়ার বাহ্যিক
রূপে বিভ্রান্ত ব্যক্তি! কেন তুমি তোমার
ঐসব আপনজনদেরকে দেখে শিক্ষাগ্রহণ করলে
না?
তোমার পূর্বে আমার অনুরূপ ধোঁকার শিকার হয়ে কবরের পেটে
যারা
তোমার পূর্বে আমার অনুরূপ ধোঁকার
শিকার হয়ে অবশেষে কবরের
পেটে সোপর্দ হয়েছে? তুমি স্বচক্ষে দেখছিলে,
বন্ধু-বান্ধবরা তাকে খাটে তুলে
এমন এক ঠিকানার দিকে
নিয়ে চলছে, যেখানে যাওয়া একান্ত অবধারিত ছিল।
হে আল্লাহ্ আমি তোমার নিকট কবরের আজাব হতে আশ্রয় চাচ্ছি
হাদীসের
অপর এক বর্ণনায় এসেছে,
বাররা ইব্ন আযিক্
রা. হতে বর্ণিত, তিনি
বলেছেন: একদা আমরা রাসূলুল্লাহ্
সাঃ এর সাথে জনৈক আনসারীর
জানাযায় শরীক হয়েছিলাম। রাসূলুল্লাহ্
সা. মাথা ঝুকিয়ে তার
কবরের পাশে বসে পড়েন।
অতপর তিনি তিন বার
বললেন: “হে আল্লাহ্! আমি
তোমার নিকট কবরের আজাবসমূহ
হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
এ
দীর্ঘ হাদীসের শেষাংশে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সা.
বলেছেন: যখন কাফির, মুশরিক
ও নাফরমানদের দুনিয়া ছেড়ে পরকালের দিকে যাত্রা করার
সময় হয়, তখন তার
নিকট একদল কঠিন প্রাণ,
কঠোর আচরণকারী ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়।
তাদের সাথে
থাকে
আগুন
ও
গন্ধকের
পোশাক
তাদের
সাথে থাকে আগুন ও
গন্ধকের পোশাক। তাকে তারা ঘিরে
ফেলে। যখন তার রূহ
বের হয়ে যায়, তখন
আসমান জমিনের সকল ফেরেশতা তার
উপর লানত করতে থাকে
ও আসমানের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া
হয়। প্রতিটি দরজাই কামনা করে, যেন এ
রূহকে সে দিক দিয়ে
ঢুকানো না হয়।
তার
রূহ নিয়ে যখন উর্ধ্বে গমন
করা হয় তখন তা
ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়।
ফেরেশতাদের পক্ষ হতে বলা
হয়: হে আল্লাহ্! তোমার
অমুক বান্দাকে কোন আসমান, কোন
জমীনই গ্রহণ করল না। তখন
আল্লাহ্ পাক বলবেন: তাকে
নিয়ে দেখাও আমি তার জন্য
কী কী আজাবের ব্যবস্থা
করে রেখেছি।
মাটি হতেই
তোমাদের
সৃষ্টি
করেছি
কারণ,
আমি তাকে ওয়াদা দিয়েছি,
এ মাটি হতেই তোমাদের
সৃষ্টি করেছি। পুনরায় এ মাটিতেই তোমাদেরকে
নিয়ে যাব। যখন তাকে
কবরস্থ করা হয়, তখন
সে প্রত্যাবর্তনকারীদের পদধ্বনি শুনতে পায়। এমতাবস্থায়ই খুবই ভীষণ বীভৎস
চেহারা বিশিষ্ট দু'জন ফেরেশতা
এসে তাকে প্রশ্ন করে
হে ব্যক্তি! তোমার রব কে? তোমার
দ্বীন কী? তোমার নবী
কে? তখন জবাবে সে
বলবে: লা আদরি; লা আদরি “আমি তো কিছুই
জানি না। তখন
নাফরমান বান্দা,
যন্ত্রণাদায়ক
চিরস্থায়ী
আজাবের
সুসংবাদ
গ্রহণ
করো
তাকে
বলা হবে: তোমার জানার
দরকারও নেই। অতপর কাল-কুৎসিৎ চেহারা বিশিষ্ট, দুর্গন্ধময় দেহবিশিষ্ট ও বিশ্রী পোশাক
পরিহিত জনৈক আগন্তুক এসে
বলবে: হে আল্লাহর নাফরমান
বান্দা, তুমি যন্ত্রণাদায়ক চিরস্থায়ী
আজাবের সুসংবাদ গ্রহণ করো।
আল্লাহ্ তা'আলার
অবাধ্যতায়
তুমি
ছিলে
দ্রুতগামী
কাফির, মুশরিক, নাফরমান ব্যক্তি বলবে: আল্লাহ্পাক যেন তোমাকেই আজাবসমূহ ও গযবের সুসংবাদ দান করেন। অতপর নাফরমান ব্যক্তি তাকে প্রশ্ন করবে: আচ্চা বল দেখি তুমি কে? সে বলবে: আমিই তোমার বদ আমল। আল্লাহপাক! পাকের কসম, আল্লাহ্ তা'আলার অবাধ্যতায় তুমি ছিলে দ্রুতগামী আর আনুগত্যে ছিলে শ্লথগতি সম্পন্ন।
অতএব আল্লাহ্ পাক যেন তোমাক
জঘন্যতম বদলা দান করেন।
অতপর তার জন্য এমন
এক ফেরেশতা নিযুক্ত করা হবে, যে
হবে অন্ধ, বধির, বোবা। তার হাতে থাকবে
একটি লোহার গদা। সমগ্র জিন-
ইনসান মিলেও যদি সে গদাটি
উঠাতে চেষ্টা করে তাহলেও তা
উঠানো তাদের জন্য সম্ভব হবে
না। এর দ্বারা যদি
কোন পাহাড়ের উপর আঘাত করা
হয়, তাহলে পাহাড়ের মাটি ধুলা হয়ে
যাবে।
লোহার গদা
দিয়ে
নাফরমান
ব্যক্তিকে
মারা
হবে
সেই
গাদা দিয়ে উক্ত ব্যক্তিকে মারা
হলে এত জোরে আওয়াজ
করবে, যার আওয়াজ জিন-ইনসান ব্যতীত সবাই শুনতে পাবে।
অতপর জনৈকি ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে ওর জন্য
দু'টি আগুনের তক্তা
বিছিয়ে দাও। দোযখের দিকে
একটি দরজা খুলে দাও।
ফলে
আগুনের দু'টি তক্তা
বিছিয়ে দোযখের দিকে একটি দরজা
খুলে দেয়া হবে।' আবূ হুরাইরা রা.
হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল
সা. বলেছেন: তোমরা কি জান, এ
আয়াত কোন বিষয়ের প্রতি
অবতীর্ণ হয়েছে? জবাবে সাহাবীগণ আরজ করলেন: এ
ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ ও
তার রাসূলুল্লাহ্ সা. ই অধিক
জ্ঞাত।
কাফিরদের কবরের
আজাব
সম্পর্কে
তখন রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেন: এ আয়াত কাফিরদের কবরের আজাবসমূহ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। কাফিরদের উপর ৯৯ টি বিষধর সাপ লেলিয়ে দেয়া হবে। তোমরা কি বলতে পারো কি রকম হবে সে বিষধর সাপগুলো? জেনে রাখ, প্রতিটি সাপ হবে সাত মাথা বিশিষ্ট।
এ ধরনের ৯৯ টি সাপ কিয়ামত পর্যন্ত তাকে দংশন করে ক্ষত-বিক্ষত করতে থাকবে। তার দেহের ভিতর বিষাক্ত ও জ্বালাময় নিঃশ্বাস ছাড়তে থাকবে। আল্লাপাক আমাদেরকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করুন আমীন।
সংগৃহীতঃ মৃত্যুর পরে অনন্ত জীবন
লেখকঃ মুহাম্মদ ইকবাল কীলানী
পোস্ট ট্যাগঃ