বারযাখ কি
বারযাখ কি
মৃত্যু থেকে
হাশর
পর্যন্ত
কিয়ামতের
পূর্বের আর একটি বিষয়
হল বারযাখ জীবন। বারযাখ জীবন বলতে আমরা
মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত
সংগঠিত হবার পর পূনরুত্থানের
পূর্বের জীবনকে বুঝি এটিকে পবিত্র
কুর'আন বারযাখ (পর্দা)
নামে আখ্যায়িত করেছেন।
বারযাখ শব্দের
অর্থ
কি
বারযাখ
শব্দটি আরবী। এর শাব্দিক অর্থ
অন্তরায়, পৃথককারী, আলাদা বস্তু। এ কারণেই মৃত্যুর
পর কিয়ামত ও হাশর পর্যন্ত
কালকে বারযাখ বলা হয়। কারণ,
এটা ইহকাল ও পরকালের জীবনের
মাঝখানে সীমা প্রাচীর। এখান
থেকে কেউ পৃথিবীতে ফিরে
আসে না এবং কিয়ামত
ও হাশর-নাশরের পুর্বে
পুনর্জীবনও পায় না। এটাই
বিধান।
বারযাখ কাকে
বলে
উল্লেখ্য,
মানুষ মৃতব্যক্তিকে দাফন করার কারণে
হাদীসে বারযাখের শান্তি বা শাস্তি কে
কবরই বলা হয়। এর
অর্থ এই নয় যে,
যাদেরকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয় কিংবা
পানিতে ডুবে মারা যায়,
তারা জীবিত থাকে না। মূলত
শান্তি ও শাস্তির সম্পর্ক
থাকে রূহের সাথে। এ কথা মনে
রাখতে হবে যে, আল্লাহ্
পাক জ্বালিয়ে দেয়া শরীরকে একত্র করে শাস্তি ও
পুরস্কার দেয়ার শক্তি রাখেন।
বারযাখ কি
কবর
মানুষ
স্বাভাবিকভাবে ইন্তিকাল করার পর ইসলামী
শরীয়াতে মৃতব্যক্তিকে কবরের ব্যবস্থা করে দাফন করার
জন্য নির্দেশ দিয়েছে কিন্তু যদি কেউ পানিতে
ডুবে, আগুনে পুড়ে কিংবা নভোমন্ডল বা ভূমন্ডলের এমন
কোন স্থানে এমনভাবে মারা যায়, যার
ফলে তাকে কবরস্ত করার
সুযোগ না থাকে, তবুও
তার পুনরুত্থান না হওয়া পর্যন্ত
সময়টা সম্পূর্ণই কবরের বসতির মধ্যে শামিল করা হয়।
“মানুষ
ধ্বংস হোক, সে কত
অকৃতজ্ঞ। তিনি তাকে কী
বস্তু থেকে সৃষ্টি করেছেন?
শুক্রাণু থেকে তাকে সৃষ্টি
করেছেন। এরপর তাকে সুপরিমিত
করেছেন, তৎপর তার পথ
সহজ করেছেন। এরপর মৃত্যু ঘটানো
ও কবরস্থ করেন। তৎপর যখনই
ইচ্ছা কবরে তাকে পুনরুজ্জীবিত
করবেন।'
এ
প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন: “নিশ্চয়ই
কবর বেহেশতের উদ্যান সমূহের একটি উদ্যান অথবা
দোযখের গর্তসমূহের একটি গর্তবিশেষ।
মৃত ব্যক্তির দাফনের নিয়ম
এ
প্রসঙ্গে হাদীসের এক বর্ণনায় এসেছে,
আলী রা. হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন: যখন লাশ কবর
পর্যন্ত পৌঁছে এবং সকল লোক
বসে যায়, তোমরা বসো না; বরং
কবরের নিকটে দাঁড়িয়ে থাক। যখন মৃত
ব্যক্তিকে কবরে রাখবে, তখন
বলো, “আল্লাহর নামে তাকে দাফন
করা হলো। তিনি রাসূলের
দলভূক্ত ছিলেন।”
রুহ কবজের পর
রূহের
উর্দ্ধেগমন
মানুষের রূহ দেহ থেকে বের হবার পর প্রথমে ফেরেশতারা তাকে আসমানের দিকে নিয়ে যায়। যখনই কোন ফেরেশতাদলের সাক্ষাত লাভ করে তখন তারা বলে (যদি রূহটি মুমিনের হয়) এই পবিত্র রূহ কার? তখন ফেরেশতারা জবাবে বলেন: অমুকের ছেলে অমুকের।
দুনিয়ায়
রাখা সর্বোত্তম নাম ধরেই একথা
বলা হয়। তখন তার
জন্য আসমানের দরজা খুলে দিতে
বলা হয়। তখন খুলে
দেয়া হয়। অতঃপর তার
খবর প্রতি আসমানে প্রচার করা হয় পরিশেষে
তার রূহ সপ্তম আসমান
পর্যন্ত পৌঁছে।
তখন
আল্লাহ্ তা'আলা বলেন:
আমার বান্দার নাম ইল্লিঈনে (সর্বোত্তম
স্তরে) লিখে দাও। আর
তাকে পৃথিবীতে তার দেহে পৌঁছিয়ে
দাও।
(সূরা
আবাসা, ১৭-২২; তিরমিযী,
আস-সুনান, ৪খ., পৃ. ৬৩৯,
হাদীস নং- ২৪৬০)
বারযাখের জীবন
আর
যদি রূহটি কোন কাফেরের হয়,
তখন ফেরেশতারা তাকে নিয়ে উর্দ্ধজগতে
যেতে থাকে যখনই কোন
ফেরেশতাদলের পাশ দিয়ে যায়
তখন তারা বলে এ
মন্দ রূহটি কার? তখন বলা
হয় অমুকের ছেলে অমুকের। দুনিয়ায়
রাখা তার সর্ব নিকৃষ্ট
নামে একথা বলা হয়।
তারপর
তার জন্য আসমানের দরজা
খোলার আহ্বান জানানো হয়। তখন দরজা
খোলা হয়না। অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা বলেন:
তার নাম ভুগর্ভের সর্ব
নিম্নস্তর সিজ্জিনে লিখে রাখ। অতঃপর
তার রূহ জোরে নিক্ষেপ
করা হয়। তখন তা
তার দেহে ফিরে আসে।
উপরোক্ত
হাদীস থেকে বুঝা যায়
যে রূহ কবরেই তার
দেহে ফিরে আসে। আর
তখনই সে শাওয়াল জবাবের
সম্মুখীন হয়। পরে এ
প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা আসবে।
যাঁদেরকে কবরে
প্রশ্ন
করা
হবে
না
সহীহ
হাদীসের বর্ণনানুযায়ী অনেক মৃত ব্যক্তির
কবরে আযাব হবে না।
যেমন: ঐ সকল লোক
যারা জিহাদে শহীদ হয়েছে, যাদের
মৃত্যুর সময় কঠোরতা প্রদর্শন
করা হয়েছে, যারা এমন দিনে
মারা গেছে যেদিন আযাব
ও প্রশ্নোত্তর হয় না। যেমন:
জুমুআর দিন ও রাত।
কবরের সওয়াল জবাব
সহীহ
হাদীস থেকে প্রমাণিত যে
যখন কোন জ্ঞানবান বালেগ
মানুষের মৃত্যু হয়, আর তাকে
কবরে রাখ হয় তখন
তার কাছে দুজন ফেরেশতা
আসেন, এসেই তারা জিজ্ঞেস
করেন তার রব দ্বীন
ও মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে।
আবু
হুরাইরা হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন, যখন
কোন মৃত মানুষকে কবরে
রাখা হয় তখন তার
কাছে কালো বর্ণের নীল
চোখা দু'জন ফেরেশতা
আসেন। তাদের একজনকে বলা হয় 'মুনকার'
আর অপর জনকে বলা
হয় 'নকীর’।
কবরের তিনটি প্রশ্ন ও উত্তর
বারা
ইবনে আযেব হতে বর্ণিত,
তিনি রাসূলুল্লাহ্ সা. হতে বর্ণনা
করে বলেন: তার (মৃত কবরবাসী)
কাছে দুজন ফেরেশতা আসেন,
এসে তারা তাকে বসান।
অতঃপর তারা তাকে বলেন:
তোমার প্রভু কে? তখন তিনি
বলেন আমার প্রভু আল্লাহ।
অতঃপর
তারা তাকে বলেন তোমার
দ্বীন কি? তখন সে
বলে আমি আল্লাহর কিতাব
পড়ে ছিলাম। তার প্রতি ঈমান
এনেছিলাম। এবং তা বিশ্বাস
করেছিলাম এটাই বলা হয়েছে।
আল্লাহর বাণী: “যারা ঈমান আনে তাদেরকে আল্লাহ সঠিক জবাব দানে তাওফীক দান করে স্থির রাখেন। তিনি বলেন তখন আসমান থেকে এক আহ্বানকারী আহ্বান করে বলেন আমার বান্দা সদুত্তর দিয়েছে। অতএব তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও।
এবং জান্নাতের
পোশাক পরিয়ে দাও। এবং তার
জন্য জান্নাতের দিকে একটা দরজা
খুলে দাও। তখন তা
খুলে দেয়া হয়। তখন তার
কাছে জান্নাতের বাতাস সুগন্ধ আসতে থাকে। এবং
তার কবর যতটুকু দৃষ্টি
যায় ততটুকু প্রসস্ত করে দেয়া হয়।
আর
কাফেরদের মৃত্যুর কথা আলোচনা করতে
গিয়ে বলেন: তার রূহ তার
দেহে ফিরিয়ে দেয়া হয়। অতঃপর তার
কাছে দুজন ফেরেশতা আসেন
তারা তাকে বসান। অতঃপর
তারা প্রশ্ন করেন তোমার প্রভু
কে? তখন সে বলে
হায় হায়! আমি জানিনা।
অতঃপর
তারা তাকে প্রশ্ন করে:
তোমাদের মধ্যে যে লোকটিকে প্রেরণ
করা হয়েছিল তিনি কে? তখন
সে উত্তরে বলে হাই হাই
জানিনা। তখন আসমান থেকে
এক আহ্বানকারী আহ্বান করে বলে, সে
মিথ্যা বলেছে।
কবরের সওয়াল জবাব কখন হয়
অতএব
তাকে তার জন্য জাহান্নামের
বিছানা বিছিয়ে দাও। তাকে জাহান্নামের
পোশাক পরিয়ে দাও। আর তার
জন্য জাহান্নামের দিকে একটা দরজা
খুলে দাও। তিনি বলেন:
অতঃপর তার কাছে জাহান্নামের
দিকে উত্তাপ এবং বিষবাষ্প আসতে
থাকে। তিনি বলেন তার
কবর
তার উপর সংকীর্ণ করে
দেয়া হয়। ফলে সেখানে
তার পাজর পরিবর্তন হয়ে
যায়।
অতঃপর
তার জন্য নিয়োগ দেওয়
হয় অন্ধ, বহরা, ফেরেশতা, তার সাথে থাকে
লোহার হাতুড়ি। তা দ্বারা পাহাড়ের
উপর আঘাত করা হলে
তা মাটি ধুলা হয়ে
যাবে।
তখন
সে ঐ হাতুড়ি দিয়ে
এমন এক মার দেন
যার ফলে সে এমন
এক চিৎকার দেয় যা পূর্ব
পশ্চিমের মানুষ ও জ্বিন জাতি
ছাড়া সকলেই শুনতে পান। ফলে সে
ধুলায় পরিণত হয়। অতঃপর তার
মধ্যে আবার রূহ ফিরিয়ে
দেয়া হয়।
উপরোক্ত
হাদীসে যে সাওয়াল জবাবের
কথা বলা হয়েছে নিঃসন্দেহে
তা বারযাখ জীবনেই সংগঠিত হবে। যা মৃত্যু
ও পুনরুত্থানের মধ্যেই ঘটবে।
তা
কবরেও হতে পারে, আবার
অন্য কোথাও হতে পারে। কবরে
হবে বলে এ কারনেই
বলা হয়েছে যে সাধারণ প্রায়সব
মৃত মানুষকে কবর দেওয়া হয়।
(সূরা ইবরাহীম; আহমদ, হাদীস নং-১১৮২৩; আবু দাউদ,
হাদীস নং-৪১২৬)
সংগৃহীতঃ মৃত্যুর পরে অনন্ত জীবন
লেখকঃ মুহাম্মদ ইকবাল কীলানী
পোস্ট ট্যাগঃ