কবর জিয়ারতের দোয়া
কবর জিয়ারতের দোয়া
আছ্ছালামু আ’লাইকুম ইয়া~আহ’লাল কু’বুর; ইয়াগ্বফিরুল্লহু লানা~ওয়ালাকুম, আ’ঙতুম লানা~ ছালাফুনা ওয়া নাহ’নু বিল আ-ছর।
অর্থঃ হে কবরেরবাসীগণ! আপনাদের
উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহপাক আমাদের
এবং আপনাদের মাফ করুন, আপনারা আমাদের পূর্বে কবরে গিয়েছেন ও
আমরাজীবিতরা পরে আসছি। (সহিহ
তিরমিজি- শরীফ ১০৫৩)
কবর আজাব
সত্য
আমরা
কবরের নেয়ামত অথবা শাস্তি বলতে
বারযাখের নেয়ামত অথবা শাস্তি বুঝি।
সন্দেহ নেই যে বারযাখী
জীবনটা আল্লাহ্ তা'আলার শাস্তি
কিংবা নেয়ামতের মাধ্যমে প্রতিদান দানের একটা স্তর। এ
স্তরের প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষের দেহ পচে গেলে
তখন দেহ হতে রূহ
আলাদা হয়ে যায়। কবরের
নেয়ামত কিংবা আজাবের কথা পবিত্র কুরআন
ও সহীহ হাদীস দ্বারা
প্রামাণিত।
ইবনে কাসীর
ইবনে
কাসীর বলেন: এ আয়াতটি আহলে
সুন্নাত ওয়াল জামাতের বারযাখী জীবনে কবরের আজাব প্রমাণ করার
একটি বড় ভিত্তি। সেই
ভিত্তিটি হলো সকাল সন্ধা
তাদেরকে আগুনের সামনে পেশ করা হয়।
এ
প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা'আলা আরও
বলেন: “তাদেরকে ছেড়ে দিন সে দিন
পর্যন্ত যেদিন তাদের উপর বজ্রাঘাত পতিত
হবে। সেদিন তাদের চক্রান্ত তাদের কোন উপকারে আসবে
না এবং তারা সাহায্য
প্রাপ্তও হবে না। জালেমদের
জন্য এছাড়াও আরও আজাব রয়েছে
কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।”
শাস্তি ও
আজাব
দুনিয়াতেও
উপরোক্ত
আয়াত গুলোতে জালেমদের জন্য এছাড়াও আরও
আজাব রয়েছে কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানেনা। এই
বক্তব্যে বর্ণিত শাস্তি ও আজাব দুনিয়াতেও
হতে পারে। তাদেরকে হত্যা ইত্যাদির মাধ্যমে। আবার তা বারযাখেও
হতে পারে। তবে এ আজাব
বারযাখে হওয়াটাই যুক্তি সঙ্গত। কারণ তাদের অনেকেই
দুনিয়াতে কোন শাস্তি না
পেয়েই মারা যান। অথবা
আয়াতের তাৎপর্য এর চেয়েও সাধারণ
খারাপ মানুষ ও মুমিনের
অবস্থান
এ
আয়াত থেকে জানা যায়
যে, অপকর্মকারী
এবং
সৎকর্মশীল
মুমিনের
অবস্থান
কখনও সমান হতে পারে
না। তা জীবন কালেও
না মৃত্যুর পরবর্তী জীবনেও না এখানে ‘মামাত'
বলতে মৃত্যু পরবর্তী কাল বা বারযাখী
জীবনের কথা বুঝানো হয়েছে।
বারযাখী জীবনে যদি উভয়ে সমান
না হয় তাহলে অবশ্যই
অপকর্ম কারীরা শাস্তি বা আজাব ভোগ
করবে। আর সৎকর্মশীল মুমিন
না কবরে নেয়ামত ভোগ
করবে।"
কবরের আজাব
আর কবরের আজাব প্রসঙ্গে সহীহ হাদীস সংখ্যা অনেক। এখানে কয়েকটি উপস্থাপন করছি। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ সা. দুটি কবরের পাশ দিয়ে একবার যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন এ কবরের দুটি অধিবাসীদের উপর আজাব হচ্ছে। বড় কোন করণে আজাব হচ্ছে না। তাদের দুজনের একজন পেশাব করার পর সঠিকভাবে পবিত্রতা অর্জন করতো না।
আর অপরজন
চোগলখুরী
করে
বেড়াত।
অপর খেজুর গাছের কাচা ডাল নিয়ে
তা দুভাগে বিভক্ত করে অতঃপর প্রত্যেক
কবরের উপর একটাংশ গেড়ে
দিলেন। সাহাবারা বললেন হে আল্লাহর রাসূল!
আপনি এরূপ কেন করলেন?
তখন তিনি বললেন আশা
করা যায় যতক্ষণ পর্যন্ত
ডাল দুটি শুকাবেনা ততক্ষণ
পর্যন্ত তাদের শাস্তি কম হবে।
আয়েশা
(রা.) থেকে বর্ণিত এক
ইহুদী মহিলা তার কাছে এসে
বলল: আল্লাহ আপনাকে কবরের আজাব থেকে মুক্ত
রাখুন। তখন আয়শা (রা.)
রাসূলুল্লাহ্ সা. কে কবরের
আজাব সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলেন। তখন মহানবী (সা.)
বললেন হ্যাঁ, কবরের আজাব সত্য।
কবরের আজাব
থেকে
আল্লাহর
কাছে পানাহ চাইতেন
আয়েশা (রা.) বললেন এর পর আমি মহা নবী (সা.) কে কোন সালাত আদায় করার পর কবরের আজাব থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ না চাইতে দেখিনি ৷ আবু দাউদ, হাদীস নং- ১৯, ইবনে মাজাহ, হাদীস নং- ৩৪১; দারিমী, হাদীস নং- ৭৩২।
রূহ ইল্লিঈনে
(উর্ধ্ব
জগৎ)
বা
সিজ্জিনে
থাকে
এ
জাতীয় হাদীসের সংখ্যা অনেক। মৃত ব্যক্তি তার
বারযাখী জীবনে কবরে থাক বা
অন্য কোথাও, তার রূহ ইল্লিঈনে
(উর্ধ্ব জগৎ) থাক বা
সিজ্জিনে (নিম্নজগতে) থাক সে হয়তবা
নেয়ামত লাভ করবে। অথবা
আজাবের সম্মুখীন হবে। আর কিয়ামতের
পর পুনরুত্থান না হওয়া পর্যন্ত
মৃত মানুষের কবরের সাথে তার রূহের
একটা সম্পর্ক থাকবে।
মানুষের
শরীর হতে রুহ বা
আত্মাকে যখন ছিনিয়ে নেয়া
হয় তখন সে রহমতের
ফেরেশতা কিংবা আজাবের ফেরেশতা দ্বারা সুখভোগ বা শাস্তি ভোগ
করতে থাকে। কুরআন এবং হাদীসে এ
কথা বলা হয়েছে।
কবরের আজাব
সম্পর্কে
ঘটনা
এ
শাস্তি কাফেরদেরকে তাদের রূহ কবজ করার
সময় ফেরেশতারা দিয়ে থাকেন। আর মুত্তাকী মুমিনদের
রূহ কবজ করার সময়
কি অবস্থা হয় এ প্রসঙ্গে
রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেন:
যখন মুমিন বান্দা দুনিয়া ছেড়ে আখিরাতের দিকে এগিয়ে যান তখন তার প্রতি আসমান থেকে শ্বেত মুখমণ্ডল বিশিষ্ট কিছু ফেরেশতা অবতীর্ণ হন। যাদের মুখমণ্ডল যেন জ্বলন্ত সূর্য। তাদের সাথে থাকে জান্নাতী কাফন। এবং জান্নাতী সুগন্ধ দ্রব্য।
অবশেষে তার চোখে যতটুকু
দেখা যায় এতটুকুর মধ্যেই
বসে যায়। তখন মালিকুল মাউত
আসেন। এসেই তার মাথার
পাশে বসে যান।
তারপর
বলেন: হে পবিত্র রূহ!
আল্লাহর মাগফিরাত/ক্ষমার এবং সন্তুষ্টির দিকে
বের হয়ে আসুন। তিনি
বলেন: তখন রূহ বের
হয়ে আসে যেমন করে
কলসির মুখ হতে পানির
ফোটা বের হয়ে আসেন
তেমনি।
আহলে সুন্নাত
ওয়াল
জামাআতের
আকীদা
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদানুযায়ী কবরের আজাব সত্য। বিভিন্ন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, নেককার মুমিনগণ যেমন কবরের মধ্যে কিয়ামত পর্যন্ত আরাম-আয়েশে থাকবে, তেমনি কাফির, মুনাফিক ও বদকাররা কবরের মধ্যে আজাব ভোগ করতে থাকবে।
বুখারী-১২৮৩; মুসলিম, হাদীস নং- ১৫০৬। সূরা
আল মুমেনুন: ৫০ 'আহমদ, হাদীস
নং- ১৭৮০৩; আল ফাতহুর রব্বানী,
খ: ৭, পৃ-৭৪।
একবার
আয়েশা রা. -এর নিকট
এক ইহুদী মহিলা আসল। মহিলাটি তার
সামনে কবরের আজাবের আলোচনা করে বলল: ‘আল্লাহ্
আপনাকে কবরের আজাব থেকে হিফাজত
করুন। আয়েশা রা. রাসূলুল্লাহ্ সা.-
কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস
করলে তিনি বলেন:
'হ্যাঁ
কবরের আজাব সত্য অতপর আয়েশা
সিদ্দীকা রা. বলেন: যখনই
রাসূলুল্লাহ্ সা. নামায আদায়
করেছেন, তখনই কবরের আজাব
থেকে মুক্তির দু'আ করেছেন।
খলিফাতুল মুসলিমীন
উসমান
রাঃ
এর যুগের ঘটনা
খলিফাতুল
মুসলিমীন উসমান রা. যখন কোন
কবরের নিকট দাঁড়াতেন তখন
এত অধিক পরিমাণ কাঁদতেন
যে, চোখের পানিতে তার দাড়ি ভিজে
যেত। এ সম্পর্কে তাকে
জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে,
আপনি জান্নাত-জাহান্নামের আলোচনায় এত অধিক পরিমাণে
কাঁদেন না, কিন্তু কবরের
দেখে আপনার এত বেশি কান্নাকাটি
করার কারণ কী?
উসমান
রা. উত্তরে বললেন: রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন: নিশ্চয়ই
কবর আখিরাতের প্রথম ঘাটি। যদি এ ঘাটি
থেকে নাজাত পাও, তাহলে অবশিষ্ট
ঘাটিগুলো পার হওয়া আরও
বেশি সহজ। আর যদি
এ ঘাটি থেকে বাঁচতে
না পার, তাহলে অবশিষ্ট
ঘাটিগুলো অতিক্রম করা আরও কঠিন
হয়ে যাবে।
কবরের আজাব
কত
কঠিন
অপর এক হাদীসের বর্ণনায় এসেছে, আবূ সাঈদ আল-খুদুরী রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন: অবশ্যই কবরের মধ্যে কাফিরের জন্য নিরানব্বইটা অজগর সাপ নিয়োজিত করে দেয়া হবে। আর সেগুলো কিয়ামত পর্যন্ত তাকে অবিরতভাবে দংশন করতে থাকবে।
এ অজগর এত
বিষাক্ত যে, যদি একটি
অজগর পৃথিবীতে শ্বাস ফেলে, তাহলে যমিনে শাক-সবজি উৎপন্ন
হবে না। অর্থাৎ সাপগুলোর
বিষক্রিয়া এত মারাত্মক হবে
যে, সেখান থেকে একটি অজগরও
যদি পৃথিবীতে একবার শ্বাস ফেলে তাহলে তার
বিষক্রিয়ায়, জমিনের একটি ঘাসও আর
উৎপাদন করার যোগ্যতা থাকবে
না।
মৃত্যুর পর
কবরের
আজাব
এ প্রসঙ্গে অপর এক হাদীসের বর্ণনায় এসেছে, বাররা ইব্ন আযিব রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন: মুনকার ও নাকীর ফেরেশতার প্রশ্নের জওয়াবে কাফির ও পাপীরা যখন উত্তর দেয়, হায়! হায়! আমি জানি না, তখন আসমান থেকে একজন ঘোষণাকারী আওয়াজ দিয়ে বলেন: এ ব্যক্তি মিথ্যা বলছে। তার পায়ের নীচে আগুন জ্বালিয়ে দাও।
তাকে আগুনের
পোশাক পরিয়ে দাও এবং তার
জন্য জাহান্নামের একটি দরজা খুলে
দাও। তখন জাহান্নামের তাপ
ও লু হাওয়া তার
কবরে আসতে থাকে। তার
কবরকে এমন সংকীর্ণ করে
দেয়া হয় যে, তার
এক পাশ্বের পাঁজর অপর পার্শ্বে চলে
যায়।
অতপর তাকে আজাব দেয়ার জন্য এমন একজন ফেরেশতাকে নিযুক্ত করা হয়, যে চোখে দেখে না, কানে শোনে না। তার নিকট লোহার গদা থাকবে। সেই গদা দিয়ে পাহাড়ে আঘাত করা হলে পাহাড় মাটির সাথে মিশে যাবে। যখন একবার গদা মারা হয়, তখন মানুষ ও জ্বিন ব্যতীত পৃথিবীর সকল প্রাণি সেই আওয়াজ শুনতে পায়। কেবল এক বারের আঘাতেই সে মাটিতে পরিণত হয়ে যায়।
পুনরায় তার শরীরে রূহ
ফিরিয়ে দেয়া হয়। এরপর পুনরায়
তাকে আঘাত করা হয়।
এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত তার কবরে এরকম
কঠিন ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি
দেয়া হবে। (বুখারী, সহীহ, ১খ., পৃ. ৩৫৬,
হাদীস নং-১০০২; মুসলিম, আস-সহীহ, তখ., পৃ. ৩০,
হাদীস নং-২১৩৬। তিরমিযী,
আস-সুনান, ৫খ., পৃ. ৫৮৬,
হাদীস নং-৩৬১৪। ৬৩.
ইব্ ন মাজাহ, আস-সুনান, ২খ., পৃ. ১৪৩৭,
হাদীস নং-৪৩০০)
নারীদের কবরের
আজাব
অপর
এক হাদীসের বর্ণনায় এসেছে, গদার আঘাতের কারণে
মৃত ব্যক্তি এমন জোরে চিৎকার
দিবে যে, মানুষ ও
জ্বিন ব্যতীত আশে-পাশের সকল
কিছুই সে চিৎকার শুনতে
পায় ৷ এ প্রসঙ্গে
আল্লামা আশিক ইলাহী বুলন্দ
শাহরী রহ. বলেন: মানুষকে
কবরের আজাব না দেখানো
এবং মুর্দারের চিৎকার না শুনানোর অনেকগুলো
কারণ বিদ্যমান।
যেমন: প্রথম
কারণ
হলো,
এমনটা
করা
হলে
গায়েবের
প্রতি
ঈমান আনার
বিষয়টির
কোন
মূল্য
থাকে
না।
এগুলো
দেখার
পর
সকলেই
মেনে
নেবে
এবং
ঈমানদার
হয়ে
যাবে
কিন্তু
আল্লাহর
নিকট
চোখে
দেখা
বিষয়ের
প্রতি
ঈমান
আনা
গ্রহণযোগ্য
নয়।
এ
কারণেই
মৃত্যুর
সময়
ঈমান
আনা
গ্রহণযোগ্য
নয়।
দ্বিতীয় কারণ
হলোঃ
মানুষ তা সহ্য করতে
পারবে না। যদি তারা
কবরের আজাবের অবস্থা নিজেদের কানে শুনতে পায়
কিংবা চোখে দেখতে পায়,
তাহলে সহ্য করতে না
পেরে বেহুঁশ হয়ে পড়বে।
অপর
এক বর্ণনায় এসেছে, আবূ সাঈদ আল-খুদুরী রা. হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন: লোকেরা
যখন নাফরমান মুর্দাকে নিয়ে কবরের দিকে রওয়ানা হয়,
তখন মুর্দা বলতে থাকে, হায়
আমার সর্বনাশ! তোমরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? মুর্দারের সেই বিলাপধ্বনি মানুষ
ছাড়া সকলেই শুনতে পায়। মানুষ যদি সেই আওয়াজ
শুনতে পেত, তাহলে বেহুঁশ
হয়ে যেত ৷ (আহমাদ, আবূ
দাউদ ইবন মাজাহ)
বারযাখের বিভিন্ন
অবস্থা
কিন্তু
আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর
রসূল মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বারযাখের বিভিন্ন অবস্থা জানানোর সাথে সাথে দেখিয়েও
দিয়েছেন। কেননা, তার মাঝে তা
বরদাশত করার মতো ক্ষমতা
বিদ্যমান ছিল।
জাহান্নামের ভয়াবহ
দৃশ্য
অবলোকন
তাই
দেখা যায়, জাহান্নামের ভয়াবহ দৃশ্য অবলোকন করার পর তার
হাসি-কান্না, কথা-বার্তা, সাহাবীদের
সাথে ওঠা-বসা পানাহারে
কোন পার্থক্য প্রকাশ পায়নি৷ কবরের আজাব সম্পর্কিত আরেকটি
হাদীসের মাধ্যমে জানা যায় যে,
যায়িদ ইব্ন সাবিত
রা. হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন:
একবার নবী করীম সা. খচ্চরে চড়ে বনু নাজ্জার গোত্রের বাগিচার দিকে যাচ্ছিলেন। আমরাও তখন তার সাথে ছিলাম। হঠাৎ খচ্চরটি এমনভাবে চমকে উঠল যে, রাসূলুল্লাহ্ সা. খচ্চরের পিঠ থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলেন। সেখানে পাঁচটি কিংবা ছয়টি কবর ছিল।
রাসূলুল্লাহ্ সা. জিজ্ঞেস করলেন: এ কবরবাসীদের পরিচয় কারও কি জানা আছে? এক ব্যক্তি বলল: আমি জানি হে আল্লাহর রাসূল! তিনি জিজ্ঞেস করলেন: তারা কবে মারা গেছে? সে বলল: জাহিলী যুগে মারা গেছে। তখন রাসূলুল্লাহ্ সা. বললেন: মানুষকে কবরে আজাব দেয়া হচ্ছে।
আমার যদি এ
আশঙ্কা না হতো যে,
তোমরা মৃতদেহ দাফন করা পরিত্যাগ
করবে, তাহলে আমি অবশ্যই আল্লাহর
নিকট দু'আ করতাম,
যেন আমার ন্যায় তোমাদেরকেও
কবরের কিছু আজাব শোনানো
হয়।
অপর
এক বর্ণনা মতে জানা যায়
যে, আব্দুল্লাহ্ ইব্ন আব্বাস
রা. হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন: একবার নবী সা. দু'টি কবরের পাশ
দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন: এ
কবরের দু'টিতে আজাব
হচ্ছে। তবে বড় কোন
অপরাধের কারণে তাদের আজাব দেয়া হচ্ছে
না। বরং এমন সাধারণ
বিষয়ের জন্য আজাব হচ্ছে,
যা থেকে তারা একটু
চেষ্টা করলেই বাঁচতে পারতো।
অতপর
রাসূলুল্লাহ্ সা. উভয়ের গুনাহের
বিবরণ দিয়ে বললেন: তাদের একজন পেশাব করার
সময়
পর্দা
করতো না। (অন্য বর্ণনায়
এসেছে, সে পেশাবের ব্যাপারে
সতর্কতা অবলম্বন করতো না।)
আর দ্বিতীয়জন চোগলখুরী করতো। অর্থাৎ একের কথা অপরের কাছে বলে বেড়াতো। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সা. একটি তাজা ডাল চেয়ে নিলেন। ডালটির মাঝখানে চিরে দু'টুকরো করে দুই কবরে গেড়ে দিলেন।
সাহাবাগণ আরজ করলেন: হে
আল্লাহর রাসূল! আপনি এমন কেন
করলেন? রাসূলুল্লাহ্ সা. বললেন: হয়তো
ডাল শুকিয়ে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাদের আজাব হালকা করা
হবে। (বুখারী, মুসলিম)
কবরের আজাব
থেকে
মুক্তির
দোয়া
হাদীসের
অপর এক বর্ণনায় এসেছে,
আবূ হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন: মৃতব্যক্তিকে
কবরে রাখার পর তার কাছে
কালো বর্ণের ও নীল চোখ
বিশিষ্ট দুইজন ফেরেশতা আসেন। তাদের একজনকে মুনকার ও অপরজনকে নকীর
বলা হয়।
তোমার রব
কে?
তোমার
দ্বীন
কী?
তোমার
নবী
কে?
তারা মৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করে: তোমার রব কে? তোমার দ্বীন কী? তোমার নবী কে? অথবা রাসূলুল্লাহ্ সা.-কে দেখিয়ে বলা হবে এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার ধারণা কী? মৃত ব্যক্তি মু'মিন হলে সঠিক উত্তর দিবে। ফলে তার জন্য কবরের জান্নাতের বাগানে পরিণত হয়।
আর যদি মৃত ব্যক্তি নাফরমান ও মুনাফিক হয়, তাহলে সে মুনকার ও নাকীরের প্রশ্নের জবাবে বলে লোকদের যা বলতে শুনেছি আমিও তাই বলেছি। তার জবাব শুনে ফেরেশতাদ্বয় বলেন: আমরা ভাল করেই জানতাম যে তুমি এ ধরনের জবাব দেবে।
অতপর
যমিনকে বলা হয়: এ
ব্যক্তিকে চাপ দাও। ফলে
জমিন তাকে এমনভাবে চাপ
দেয় যে, একদিকের পাঁজর
অপর দিকে চলে যায়।
কিয়ামত পর্যন্ত সে উক্ত আযাবে
অবস্থান করতে থাকবে।
কবরের পরীক্ষক
ফেরেশতাগণ
এ
প্রসঙ্গে হাদীসের এক বর্ণনায় এসেছে,
একবার রাসূলুল্লাহ্ সা. ওমর রা.
কে বলেছিলেন: ওমর! মানুষ যখন
তোমাকে কবরে রেখে মাটি
দিয়ে চলে আসবে এবং
তোমার নিকট কবরের পরীক্ষক
ফেরেশতাগণ এসে উপস্থিত হবে,
তখন তোমার কী অবস্থা হবে?
তাদের আওয়াজ বজ্রের মত হবে। চোখ হবে দৃষ্টিশক্তি হরণকারী বিদ্যুতের ন্যায়। তাদের অবস্থা তোমাকে প্রকম্পিত করবে এবং তারা তোমার সাথে বিচারকের ন্যায় কথাবার্তা বলবে, তখন তোমার কী অবস্থা হবে? ওমর রা. আরজ করলেন: হে আল্লাহর রাসূল!
তখন কি আমার জ্ঞান
ঠিক থাকবে? রাসূলুল্লাহ্ সা. বললেন: হ্যাঁ,
আজ তোমার জ্ঞান যে অবস্থায় আছে,
সেদিনও একই অবস্থায় থাকবে।
রাসূলুল্লাহ্ সা. -এর উত্তর
শুনে ওমর রা. বললেন:
তাহলে পরিস্থিতি সামলে নিতে পারব ইনশাআল্লাহ।
কবরের আজাব
থেকে
মুক্তি
চাও
হাদীসের অপর এক বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, বাররা ইব্ন আযিব রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা একবার রাসূলুল্লাহ্ সা. -এর সাথে এক আনসারীর জানাযা নিয়ে কবরেরস্থানে গিয়েছিলাম। যাওয়ার পর দেখি তখনও কবর তৈরি হয়নি। ফলে রাসূলুল্লাহ্ সা. বসে পড়লেন, আমরাও নিশ্চুপ হয়ে বসে পড়লাম। যেন আমাদের মাথার উপর পাখী বসে আছে।
রাসূলুল্লাহ্ সা. এর হাতে এক খন্ড শলাকা ছিল। তা দ্বারা তিনি মাটিতে আঁচড় কাটছিলেন। যেমন গভীর চিন্তায় মগ্ন ব্যক্তি করে থাকে। কিছুক্ষণ পর রাসূলুল্লাহ সা. মাথা তুলে বললেন: তোমরা আল্লাহর কাছে কবরের আজাব থেকে মুক্তি চাও। দুবার কিংবা তিনবার এ কথা তিনি উচ্চারণ করলেন।
অতপর বললেন: যখন
কাফির ও নাফরমানের মৃত্যুর
সময় আসে, তখন আকাশ
থেকে কালো চেহারা বিশিষ্ট
একদল ফেরেশতা চট নিয়ে তার
কাছে আসে। (বাইহাকী, ইসবাতু আল্লাবুল কবরের, ১খ., পৃ. ২৫,
হাদীস নং-২১; ৭০.
তাবারানী)
সংগৃহীতঃ মৃত্যুর পরে অনন্ত জীবন
লেখকঃ মুহাম্মদ ইকবাল কীলানী
পোস্ট ট্যাগঃ