কিয়ামত কাকে বলে
আরবী
শব্দ কিয়ামত অর্থ ঊঠে দাড়ানো। অর্থাৎ শিঙ্গার ফুৎকারের শব্দ শুনে কবরবাসীগণ উঠে দাড়ানোকেই
কিয়ামত বলে। কিয়ামত কাকে বলে তাতো সংক্ষিপ্ত আকারে জানলাম। এবার জানবো কিয়ামতের দিন
কি হবে বা কিয়ামতের ঘটনা বা বিচারের দিন কি হবে তা নিম্নে বর্ণিত হলো।
কিয়ামত শব্দের
অর্থ
কি
বা বিচারের দিন সৃষ্টি জগতকে
একত্রিতকরণ
বিচারের
জন্য সমস্ত সৃষ্টি জগতকে একত্রিতকরণ বিচারের জন্য সমস্ত সৃষ্টি
জগতকে কিয়ামত দিবসে একত্রিত করণ বুঝাবার জন্য
পবিত্র কুরআনে হাশর শব্দটি ব্যবহৃত
হয়েছে।
সমস্ত
সৃষ্টি জগতকে এ দুনিয়ার কৃত
কর্মের বিচার ফায়সালা করার জন্য একত্রিত
করা মর্মে অনেক বিবরণ এসেছে।
আমরা এখানে তার কিছু বিবরণ
পেশ করছি। ১। মানুষ জ্বিন
ফেরেশতা পশু পাখী ইত্যাদিকে
বিচারের জন্য একত্রিত করণ
প্রসঙ্গে:
কিয়ামত কবে
হবে
মূলত কিয়মত যেকোনো শুক্রবার দিন অনুষ্ঠিত হবে। তবে তা কবে একমাত্র মহান আল্লাহপাকই বলতে পারেন কিয়ামত কবে হবে।
মানুষ
ও জ্বিন জাতিকে তো এজন্যই একত্রিত
করা হবে যে তারা
মুকাল্লাফ বা আল্লাহর আদেশ
নিষেধ পালনের দায়িত্ব প্রাপ্ত ও কর্তব্য অর্পিত।
সুতরাং এই দুনিয়ার কৃত
কর্মের জন্য তাদেরকে একত্রিত
করে হিসাব নিকাশ নেয়া হবে এবং বিচার
ফায়সালা করা হবে। এ
প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা'আলা বলেন:
কিয়ামতের দিন
কি
হবে
আর
ফেরেশতাদের হাশর হবে তাদের
মধ্যে আল্লাহর ফায়সালা বিধান এবং আল্লাহ্ তা'আলা কর্তৃক তাদের
জন্য নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের জন্য। আল্লাহ্ তা'আলা আরও
বলেন: “সেদিন রূহ (জিব্রাঈল) ও
ফেরেশতারা সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান হবে দয়ালু আল্লাহ
যাকে অনুমতি দিবেন তিনি ছাড়া আর
কেউ কথা বলবে না।
এবং সত্য কথা বলবে।
কিয়ামতের ঘটনা
আল্লাহ্
তা'আলা আরও বলেন:
“এমন আগুন হতে যার
ইন্ধন হবে মানুষ ও
পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে
নির্মম হৃদয়ের কঠোর স্বভাবের ফেরেশতাগণ।
যারা আল্লাহর আদেশ অমান্য করে
না। এবং যা আদেশ
করা হয় তা পালন
করে।”
এ
প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা'আলা বলেন:
“আর যেদিন আপনি দেখতে পাবেন
আরশের চার পাশে বেষ্টনকারী
ফেরেশতাদেরকে তারা তাদের প্রতিপালকের
তাছবীহ পড়ছে। আর তাদের মধ্যে
ন্যায়নীতি অনুযায়ী ফায়সালা করা হবে।”১০১
কিয়ামতের দিন
আর পশু পাখির হাশর হবে তাদের মধ্যে যেসব পশুপাখি অন্যপশু পাখির প্রতি এ পৃথিবীতে থাকতে কোন প্রকারের জুলুম করেছিল সে জুলুমের প্রতিশোধ গ্রহনের জন্য। আবু হুরাইরার (রা.) মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ্ সা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেন:
কিয়ামত
দিবসে প্রত্যেক হক ও অধিকার
প্রাপককে তার হক পাইয়ে
দেয়া হবে। এমনকি শিংহীন
ছাগল থেকে শিং বিশিষ্ট
ছাগল থেকে তার আঘাতের
প্রতিশোধ নেয়া হবে।
এ
প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা'আলা বলেন:
“ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল এমন জীব নেই
অথবা নিজ ডানার সাহায্যে
এমন কোন পাখি উড়ে
না যা তোমাদের মত
একটি উম্মত নয়। কিতাবে কোন
কিছুই আমি বাদ দিইনি।
অতপর স্বীয় প্রতিপালকের দিকে তাদের সকলকে
জমায়েত করা হবে।
মানুষের নগ্ন
পা
নগ্ন
দেহ
মানুষের
নগ্ন পা নগ্ন দেহ
এবং খত্নাবিহীন অবস্থায় হাশর হবে যেসব
প্রথমে জন্ম গ্রহণ করেছিল
এ
প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা'আলা বলেন:
“যেভাবে আমি সৃষ্টির সূচনা
করেছিলাম সেভাবেই পুনরায় সৃষ্টি করব। প্রতিশ্রুতি পালন
আমার কর্তব্য। আমি অবশ্যই তা
পালন করব।
ইবনে
আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত
তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেন: তোমাদের
আল্লাহর কাছে নগ্ন পায়ে
নগ্ন দেহে এবং খত্নাবিহীন
অবস্থায় জমায়েত (হাশর) করা হবে। যেভাবে
সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবেই পূনরায় সৃষ্টি করব। আমরা তা
অবশ্যই করব।”
ভিন্ন ভিন্ন
দলে
মানুষের
হাশর
হবে
কিয়ামত
দিবসের ভয়াবহতার কারণে মানুষজনের ভিন্ন ভিন্ন দলে হাশর হবে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা'আলা বলেন:
“সেদিন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন দলে বের হবে।
তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম দেখানো হবে।” সূরা আনআম,
৩৮
কাফেরদের অন্ধ
বোবা
ও
বহরাবস্থায়
হাশর
হবে
পবিত্র
কুরআনে এ প্রসঙ্গে বলা
হয়েছে: “কিয়ামতের দিন আমি তাদের
(কাফের)-কে সমবেত করব
তাদের মুখের উপর ভর দিয়ে
চলাবস্থায়। অন্ধ মুক ও
বধির করে। তাদের আবাসস্থল
হবে জাহান্নাম। যখনই তা স্তিমিত
হবে আমি তখনই তাদের
জন্য অগ্নিশিখা বৃদ্ধি করে দিব।
এটাই
তাদের প্রতিফল। এজন্যই যে তারা আমার
আয়াত সমূহ অস্বীকার করেছে।
এবং বলেছে আমাদের অস্তিসমূহ চুর্ণ বিচূর্ণ হলেও কি আমরা
নতুন সৃষ্টি রূপে পুনরোত্থিত হবো?”
এ প্রসঙ্গে আনাছ ইবনে মালেক
(রা.) থেকে বর্ণিত এক
হাদীসে আছে, বলা হল
হে আল্লাহর রাসূল! মানুষকে কি করে মুখমণ্ডলের
উপর ভয় করে হাশর
(সমবেত) করা হবে?
রাসূলুল্লাহ্
সা. উত্তরে বললেন: যিনি তাদের পায়ের
উপর হাটাতে সক্ষম তিনি তাদেরকে মুখমণ্ডলের
উপর ভর দিয়ে চলাতেও
সক্ষম।”
অপর
এক হাদীসে আছে মানুষকে তিনটি
দরে বিভক্ত করে হাশর বা
সমবেত করা হবে। এক
দল থাকবে আরোহী ভরা পেটে পোশাক
পরিধান করাবস্থায়। অপর এক দল
পথচারী ও দ্রুতগামী অবস্থায়।
আর এক দলের সাথে
থাকবে ফেরেশতারা তারা তাদেরকে হাকিয়ে
মুখমণ্ডলের উপর ভর করে
হাটিয়ে নিয়ে যাবে জাহান্নামের দিকে।”
অপরাধীদের হাশর
হবে
নীল
চোখ
বিশিষ্ট
অবস্থায়
নীল
চোখ বলতে আরবীতে বুঝানো
হয় ভীতসন্ত্রস্ততার কারণে চোখে শর্ষেফুল দেখা
তথা কিছু দেখতে না
পাওয়া অবস্থাকে। কাফেরদের এরূপ অবস্থায় হাশর
হওয়া এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্
তা'আলা বলেন: “সেদিন
আমি অপরাধীদের নীলচক্ষু অবস্থায় সমবেত করব।” 'সূরা বনী ইস্রাঈল,
৯৭-৯৮।
অবস্থান স্থলের
দিকে
এস্ত-ব্যস্ত
হয়ে
সমবেত
হবে
সকল
মানুষ কিয়ামতের দিন কবর থেকে
উঠে ব্যাস্ত হয়ে সমবেত হবে।
আল্লাহ্ তা'আলা বলেন:
“যে
দিন পৃথিবী বিদীর্ণ হবে এবং মানুষ
বের হয়ে আসবে ব্যাস্ত
হয়ে, এভাবে সমবেতকরণ আমার জন্য সহ”
কবর থেকে
পূর্ণ
অস্তিত্ব
লাভ
করবে
ইবনে
কাসীর এ আয়াতের তাফসীর
প্রসঙ্গে বলেন: তা হবে এভাবে
যে, আল্লাহ্ তা'আলা আসমান
হতে বৃষ্টি বর্ষণ করাবেন সে বৃষ্টির ফলে
সমস্ত মানুষের দেহ তাদের কবর
থেকে পূর্ণ অস্তিত্ব লাভ করবে যেভাবে
পানির কারণে মাটিতে বীজের উদগমন হয়।
ইস্রাফিলকে আদেশ
করবেন
শিংগায়
ফুৎকার
দিতে
আর
যখন দেহ পূর্ণতা লাভ
করবে তখন আল্লাহ্ তা'আলা ইস্রাফিলকে আদেশ
করবেন শিংগায় ফুৎকার দিতে। তখন ফুৎকার দেয়া
হবে। আর যখন তাতে
ফুৎকার দেয়া হবে তখন সমস্ত
রূহ আসমান জমিনের মধ্যে ঘুরতে থাকবে। তখন আল্লাহ্ তা'আলা বলবেন। আমার
ইজ্জত ও মর্যাদার কসম!
প্রত্যেক রূহ যেন নিজেদের
পূর্বের দেহে ফিরে যায়।
তখন
সকল রূহ ফিরে যাবে
তার দেহে। বিষ যেমন দেহের
মধ্যে তেমনি ছড়িয়ে পড়ে রূহ ও
তার মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। তখন মাটি তাদের
উপর থেকে বিদীর্ণ করা
হবে। তখন তারা অবস্থান
স্থলের দিকে ত্রস্ত-ব্যাস্ত
হয়ে আল্লাহ আদেশ পালনার্থে ছুটতে
থাকবে।
ভিক্ষুকদের অবস্থা
আব্দুল্লাহ
ইবনে ওমর (রা.) থেকে
বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্
সা. বলেছেন, মানুষ লোকদের কাছে হাত পাততে
থাকবে (ভিক্ষা করতে থাকবে) অবশেষে
কিয়ামত দিবসে সে এমন অবস্থায়
আসবে যে তার মুখমণ্ডলে
কোন গোস্ত থাকবে না।”
এক স্ত্রীর
প্রতি
যারা
বেশী
ধাবিত
হয়
তাদের
অবস্থা
যার
একাধিক স্ত্রী আছে সে যদি
তার কোন স্ত্রীর প্রতি
বেশী ধাবিত হয় তাদের মধ্যে
সুবিচার ও ইনসাফ করে
কোন এক স্ত্রীর প্রতি
ঝুকে পড়ে তাকে সুযোগ
সুবিধা বেশী দেয় তাহলে
তার অবস্থা হবে নিম্নরূপ। আবু
হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত।
তিনি
বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন, যার
দুজন স্ত্রী আছে সে যদি
দুজনের একজনের প্রতি ধাবিত হয় অন্যজনকে অবজ্ঞা
করে কিয়ামত দিবসে সে এমন অবস্থায়
উপস্থিত হবে যে তার
(শরীরের) একদিক ঝুকে থাকবে।” সমস্ত
উপস্থিত জনগণ তা দেখতে
পাবে। তাদের এ অবস্থার উদ্দেশ্য
শাস্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করা ও অন্যদের
সামনে লজ্জিত করা। সূরা কাফ: ৪৪
আব্দুল্লাহ
ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন: কিয়ামত দিবসে হত্যাকৃত ব্যক্তি এক হাতে হত্যাকারীকে
ধরে আর অপর হাতে
তার নিজের মাথা নিয়ে উপস্থিত
হবে। অতপর সে বলবে
হে আমার প্রভু! আপনি
একে জিজ্ঞেস করুন সে আমাকে
কেন হত্যা করে ছিল?
কোন মুসলমানের
হত্যায়
সহযোগীর
অবস্থা
আবু
হুরাইরা হতে বর্ণিত তিনি
বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন, যে
ব্যক্তি কোন মুসলমানকে হত্যার
কাজে সহযোগিতা করে এমন কি
অর্ধ শব্দ দ্বারাও সে
কিয়ামত দিবসে আসবে তখন তার
দুচোখের মধ্যে লিখা থাকবে আব্দুল্লাহর
রহমত থেকে নিরাশ।'
যাকাত আদায়
না
কারীর
অবস্থা
আবু
হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন, যাকে
আল্লাহ্ তা'আলা সম্পদ
দান করেছেন কিন্তু সে তার যাকাত
দিল না। তার জন্য
কিয়ামত দিবসে দুটি দাত যুক্ত
বিষধর সাপ ছেড়ে দেয়া
হবে। এ সাপ দু'টি কিয়ামতের দিন
তার গলায় বেড়ির মত পেচিয়ে থাকবে।
অতপর
তার উভয় চোয়ালে জড়িয়ে
বলবে, আমি তোমার সম্পদ,
আমি তোমার সঞ্চিত অর্থ। ১১৪ আহমদ, ৯৭০৯;
নাসায়ী, ৩৯৯১; তিরমিযি, ১০৬০; হাকেম হাদীসটি সহীহ বলে মন্তব্য
করে। ১১৫ নাসায়ী, ৩৯৩২।
১১৬ ইবনে মাজাহ, ২৬১০।
তারপর
রাসূল (সা.) নিম্ন লিখিত
আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন: “এবং আল্লাহ নিজ
অনুগ্রহে যা তোমাদের দিয়েছেন
তাতে যারা কৃপণতা করে
তাদের জন্য তা মঙ্গল
এটা যেন তারা কিছুতেই
মনে না করে। এটা
তাদের জন্য অমঙ্গল জনক।
এতে যদি তারা কৃপণতা
করবে কিয়ামতের দিন তা তাদের
গলার বেড়ি হবে।”
আমীর ওমরাদের
অবস্থা
আবু
হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত
তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন, যে
ব্যক্তি ধৈর্যসহ এমন কোন শপথ!
করল যার দ্বারা অপর
কোন মুসলমানের সম্পদ কেড়ে নিল। সে কিয়ামত
দিবসে আল্লাহর সাথে এমনাবস্থায় সাক্ষাৎ
করবে যে আল্লাহ্ তা'আলা তখন তার
উপর ক্রদ্ধ থাকবে না।”
এছাড়াও
আরও অনেক মানুষ কিয়ামত
দিবসে বিভিন্ন অবস্থায় উপস্থিত হবে, এ ব্যাপারে
রাসূলুল্লাহ্ সা. যা যা
বলেছেন তা সবই আমরা
বিশ্বাস করি যদি তা
সঠিক ও সহীহ হাদীস
দ্বারা প্রমাণিত হয়।
মৃত্যুর পরে অনন্ত জীবন
মুহাম্মদ ইকবাল কীলানী
পোস্ট ট্যাগঃ