জাহান্নামের আজাব
জাহান্নামের আজাব
জাহান্নামের
সবচেয়ে বেশি শাস্তি আগুনেরই
হবে, যে ব্যাপারে রাসূলূল্লাহ
(সাঃ) এরশাদ করেছেন যে, জাহান্নামের আগুন
দুনিয়ার আগুনের চেয়ে সত্তর গুণ বেশি গরম
হবে। (মুসলিম)
কুরআনের
কোনো কোনো স্থানে তাকে
“বড় আগুন” নামে আখ্যায়িত করা
হয়েছে। (সূরা আলা: ১২)
আবার
কোথাও “আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত অগ্নি” নামেও আখ্যায়িত করা হয়েছে ।
(সূরা হুমাযা: ৫)
আবার
কোথাও “লেলিহান জাহান্নাম”ও বলা হয়েছে।
(সূরা লাইল: ১৪)
আবার
কোথাও “জ্বলন্ত অগ্নি” ও বলা হয়েছে।
(সূরা গাসিয়া: ৪)
আগুনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কত জাহান্নামের
শাস্তি
হিসেবে যদি শুধু মানুষকে
জ্বালিয়ে দেয়াই উদ্দেশ্য হতো, তাহলে দুনিয়ার
আগুনই যথেষ্ট ছিল যাতে মানুষ
ক্ষণিকের মধ্যেই জ্বলে শেষ হয়ে যেতো।
কিন্তু জাহান্নামের আগুন তো মূলত
কাফির ও মুশরিককে বিশেষভাবে
আজাব দেয়ার জন্যই উত্তপ্ত করা হয়েছে, তাই
তা পৃথিবীর আগুনের চেয়ে কয়েক গুণ গরম হওয়া
সত্ত্বেও এ আগুন জাহান্নামীদেরকে
একেবারে শেষ করে দিবে
না, বরং তাদেরকে ধারাবাহিকভাবে
আজাব
নিমজ্জিত করে রাখবে। আল্লাহ
বলেন:
অর্থ:
“(জাহান্নামে) সে মরবেও না
বাঁচবেও না।” (সূরা ত্বাহা: ৭৪)
রাসূলূল্লাহ
(সাঃ) -কে স্বপ্নযোগে এক কুৎসিত আকৃতি
ও বিবর্ণ চেহারার লোক দেখানো হলো,
সে আগুন জ্বালিয়ে যাচ্ছে
এবং তাকে উত্তপ্ত করছে,
রাসূলূল্লাহ (সাঃ) জিবরাঈল (আঃ) -কে জিজ্ঞেস করলেন
এ কে? তিনি উত্তরে
বললেন: তার নাম মালেক
সে জাহান্নামের দারওয়ান (বুখারী)
জাহান্নামের
আগুনকে আজও উত্তপ্ত করা
হচ্ছে, কিয়ামত পর্যন্ত তাকে উত্তপ্ত করা
হতে থাকবে, জাহান্নামীদের জাহান্নামে যাওয়ার পরও তাকে উত্তপ্ত
করার ধারাবাহিকতা চলতে থাকবে।
জাহান্নামের
আগুন কত উত্তপ্ত হবে
তার হুবহু পরিমাণ বর্ণনা করা তো অসম্ভব,
তবে রাসূলূল্লাহ (সাঃ) -এর বর্ণনা অনুযায়ী
জাহান্নামের আগুনের তাপদাহ পৃথিবীর আগুনের চেয়ে ঊনসত্তর গুণ বেশি হবে।
জাহান্নামীদের পোশাক
ঐ
আগুন দিয়েই তাদের জন্য কার্পেট তৈরী
করা হবে। কঠিন আজাবের
এ নিকৃষ্ট স্থানে মানুষের জীবন যাপন কেমন
হবে, যারা নিজের হাতে
সামান্য একটি আগুনের কয়লাও
রাখার ক্ষমতা রাখে না?
মানুষের ধৈর্যের বাঁধ তো এই যে, জুন, জুলাই মাসে দুপুর ১২টার সময়ের তাপ ও গরম বাতাস সহ্য করাই অনেকের পক্ষে অসম্ভব হয়ে যায়, দুর্বল, অসুস্থ, বৃদ্ধ লোক এর ফলে মৃত্যুবরণও করে, অথচ রাসূলূল্লাহ (সাঃ) এর বাণী অনুযায়ী পৃথিবীর এ কঠিন গরম জাহান্নামের শ্বাস ত্যাগ বা তাপের কারণ মাত্র।
যে মানুষ জাহান্নামের
তাপই সহ্য করতে পারে
না, তারা তার আগুন
কি করে সহ্য করবে?
কিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুন
দেখে সমস্ত নবীগণ এত ভীত সন্ত্রস্ত
হবে যে,
তাঁরা
বলবে যে, অর্থ: “হে
আমার প্রভু! আমাকে বাঁচাও, হে আমার প্রভু!
আমাকে বাঁচাও। এ বলে আল্লাহর
নিকট স্বীয় জীবনের নিরাপত্তা কামনা করবে।
জাহান্নামের আগুন
কেমন
উম্মুল
মু'মিনীন আয়েশা (রাঃ) জাহান্নামের আগুনের
কথা স্মরণ করে পৃথিবীতে কাঁদতেন
পৃথিবীতে থাকা অবস্থায়ই জান্নাতের
সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজন সাহাবীর একজন
ওমর (রা) কুরআন তেলাওয়াত
করার সময় জাহান্নামের আজাবের
কথা আসলে বেহুশ হয়ে
যেতেন, মুয়াজ বিন জাবাল, আবদুল্লাহ
বিন রাওয়াহা, ওবাদা বিন সামেত (রা)
দের মত সম্মানিত সাহাবাগণ
জাহান্নামের
আগুনের কথা স্মরণ করে
এতো কাঁদতেন যে, তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ়
হয়ে যেতেন। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা)
কামারের দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার
সময় সেখানে প্রজ্জ্বলিত আগুন দেখে জাহান্নামের
কথা স্মরণ করে কাঁদতে থাকতেন।
এ উত্তাপের
পরিমাণ
২০০০
সেন্টি
গ্রেডের
চেয়ে
বেশি
উল্লেখ্য:
আগুনের উত্তাপের নিদৃষ্ট পরিমাপ নির্ভর করে তার জ্বালানীর
ওপর, কখনো কখনো এ
উত্তাপের পরিমাণ ২০০০ সেন্টি গ্রেডের
চেয়ে কয়েকগুণ বেশিও হয়ে যাবে। সম্ভবত
এজন্যই আল্লাহ তাআলা কুরআনে জাহান্নামের জ্বালানীর কথাও উল্লেখ করেছেন,
তার
জ্বালানী হবে পাথর ও
মানুষ (সূরা বাকারা: ২৪)
সম্ভবত মানুষকে তার জ্বালানী এ
জন্যই করা হয়েছে যে,
তারা জাহান্নামের আগুনে জ্বলে শেষ হবে না।
বরং পাথরের ন্যায় তাদের অস্তিত্বও বাকী থেকে যাবে।
(আল্লাই এ ব্যাপারে ভালো
জানেন)
জাহান্নামের আগুন
রবী
(র) সারা রাত বিছানায়
একাত ওকাত হতে থাকলে
তার মেয়ে জিজ্ঞেস করল, আব্বাজান! সমস্ত
মানুষ আরামে ঘুমিয়ে গেছে আপনি কেন
জেগে আছেন? তিনি বললেন: হে
আমার মেয়ে! জাহান্নামের আগুন তোমার পিতাকে
ঘুমাতে দিচ্ছে না।
আল্লাহর
বাণী অর্থ: “তোমার প্রতিপালকের শাস্তি ভয়াবহ”। (সূরা বনী
ইসরাঈল: ৫৭) পরিবার পরিজনদেরকে
জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও:
পরিবারকে জাহান্নামের
আগুন
থেকে
বাঁচান
এ
আয়াতে আল্লাহ দু'টি কথা
স্পষ্ট শব্দে নির্দেশ দিয়েছেন।
১.
নিজে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।
২.
নিজের পরিবার-পরিজনদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।
পরিবার-পরিজন বলতে বুঝায়, স্ত্রী,
সন্তান, যেন প্রত্যেক ব্যক্তি
তার সাথে সাথে নিজের
স্ত্রী, সন্তানদেরকেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে
বাধ্যগত। স্বীয় পরিবার-পরিজনের প্রতি প্রকৃত কল্যাণকামিতার দাবী ও তাই।
এমনিভাবে যখন আল্লাহ তার
রাসূলকে এ নির্দেশ দেন
যে,
অর্থ:
“তোমার নিকট আত্মীয়দেরকে (জাহান্নামের
আগুন) থেকে সতর্ক কর।”
(সূরা শুআরা: ২১৪)
তখন
নবী সাঃ স্বীয় পরিবার
ও বংশের লোকদেরকে ডেকে, তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে সতর্ক
করলেন। সবশেষে স্বীয় কন্যা ফাতেমা (রা)-কে ডেকে
বললেন:
অর্থ:
“হে ফাতেমা! নিজে নিজেকে জাহান্নাম
থেকে বাঁচাও, (কিয়ামতের দিন) আল্লাহর সামনে
আমি তোমাদের জন্য কিছু করতে
পারব না।” (মুসলিম) নিজের পাড়া-প্রতিবেশী ও বংশের লোকদেরকে
জাহান্নাম থেকে সতর্ক করার
পর, নিজের কন্যাকে জাহান্নামের আগুন থেকে ভয়
দেখিয়ে, সমস্ত মুসলমানদেরকে সতর্ক করলেন যে, স্বীয় সন্তানদেরকে
জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোও
পিতা-মাতার দায়িত্বসমূহের মধ্যে একটি দায়িত্ব।
এক
হাদীসে নবী সাধার এরশাদ
করেছেন: “প্রত্যেকটি সন্তান ফিতরাত (ইসলামের) ওপর জন্মগ্রহণ করে,
কিন্তু তাদের পিতা-মাতা তাদেরকে
ইহুদী, নাসারা বা অগ্নিপূজক বানায়।
(বুখারী)
জান্নাত জাহান্নাম নিক্ষেপ
যেন
সাধারণ নিয়ম এই যে, পিতা-মাতাই সন্তানদেরকে জান্নাত বা জাহান্নামে নিক্ষেপ
করে।
আল্লাহ
তাআলা কুরআনে মাজীদে মানুষের বহু দুর্বলতার উল্লেখ
করেছেন। যেমন: মানুষ অত্যন্ত জালেম ও অকৃতজ্ঞ ।
(সূরা ইবরাহীম: ৩৪)
মানুষ
অত্যন্ত তাড়াহুড়া কারী (সূরা বনী ইসরাঈল:
১১)
অন্যান্য
দুর্বলতার ন্যায় একটি দুর্বলতা এই
বলে বর্ণনা করা হয়েছে যে,
মানুষ দ্রুত অর্জিত লাভ সমূহকে অগ্রাধিকার
দেয়, যদিও তা ক্ষণস্থায়ী
বা অল্পই হোক না কেন?
আর বিলম্বে অর্জিত লাভকে তারা উপেক্ষা করে
চলে, যদিও তা স্থায়ী
ও অধিকই হোকনা কেন।
জাহান্নামের বয়ান
এ
হলো মানুষের ঐ স্বভাবজাত দুর্বলতার
ফল, যে পিতা-মাতা,
স্বীয় সন্তানদেরকে, দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে উচ্চ মর্যাদা লাভ,
সম্মান এবং ভালো পজিশন
দেয়া, উচ্চ শিক্ষা দেয়ার
জন্য বেশিরভাগ গুরুত্ব দেয়। চাই এ জন্য
যত সময়ই লাগুক না কেন, আর
যত সম্পদই ব্যায় হোকনা কেন, আর যত
দুঃখ-কষ্ট পোহানো হোকনা
কেন।
অথচ
অনেক কম পিতা-মাতাই
আছে যারা, তাদের সন্তানদেরকে পরকালের স্থায়ী জীবন, উচ্চ পজিশন, সম্মান,
ভালো স্থান লাভের জন্য, দ্বীনি শিক্ষা দেয়ার জন্য গুরুত্ব দেয়।
যারা সৎ
মোত্তাকী,
দ্বীনদার
হবে
দুনিয়াবী
শিক্ষা অর্জনকারী বেশিরভাগ সন্তান, কর্মজীবনে স্বীয় পিতা-মাতার অবাধ্য
থাকে এবং নিজে নিজেকে
নিয়ে ব্যস্ত থাকে, পক্ষান্তরে দ্বীনি শিক্ষা অর্জনকারী বেশিরভাগ সন্তান, স্বীয় পিতা-মাতার অনুগত
থাকে এবং তাদের সেবা
করে। আর পরকালের দৃষ্টিতে
তো অবশ্যই এ সন্তানরা পিতা
মাতার জন্য কল্যাণকামী হবে।
যারা সৎ মোত্তাকী, দ্বীনদার
হবে।
এ
সমস্ত বাস্তবতাকে জানা সত্ত্বেও কোনো
অতিরঞ্জন ব্যতীতই ৯৯% মানুষই দুনিয়াবী
শিক্ষাকে, দ্বীনি শিক্ষার ওপর প্রাধান্য দেয়।
আসুন মানবতার এ দুর্বলতাকে অন্য
এক দিক দিয়ে বিবেচনা
করা যাক।
জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার
ধরুন-
কোনো জায়গায় যদি আগুন লেগে
যায়, তাহলে ঐ স্থানের সমস্ত
বসবাসকারীরা সেখান থেকে বের হয়ে
যাবে, ভুল ক্রমে যদি
কোনো বাচ্চা ঐ স্থানে থেকে
যায়, তাহলে চিন্তা করুন, ঐ অবস্থায় ঐ
বাচ্চার পিতা-মাতার অবস্থা
কি হবে? পৃথিবীর যে
কোনো ব্যস্ততা বা বাধ্যকতা যেমন
ব্যবসা, ডিউটি, দূর্ঘটনা, অসুস্থতা ইত্যাদি পিতা-মাতাকে, বাচ্চার
কথা ভুলিয়ে রাখতে পারবে? কখনো নয়।
যতক্ষণ
পর্যন্ত বাচ্চা আগুন থেকে বেরিয়ে
না আসতে পারবে, ততক্ষণ
পর্যন্ত পিতা-মাতা ক্ষণিকের
জন্যও আরাম বোধ করবে
না। নিজের বাচ্চাকে আগুন থেকে বাঁচানোর
জন্য যদি পিতা-মাতার
জীবন বাজি দিতে হয়,
তা হলে তাও দিবে।
কত
আশ্চার্য কথা যে এ
ক্ষণস্থায়ী জীবনে তো প্রত্যেক ব্যক্তিরই
অনুভূতি একাজ করে যে,
তার সন্তানকে যে কোনো মূল্যের
বিনিময়ে হলেও আগুন থেকে
বাঁচাতে হবে। কিন্তু পরকালে
জাহান্নামের আগুন থেকে নিজের
বাচ্চাকে বাঁচানোর অনুভূতি খুব কম লোকেরই
আছে। আল্লাহ তা'আলা কতইনা
সত্য বলেছেন
জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার উপায়
অর্থ:
“আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ।” (সূরা সাবা: ১৩)
নিঃসন্দেহে মানুষের এ দুর্বলতা ঐ
পরীক্ষার অংশ যার জন্য
মানুষকে এ পৃথিবীতে পাঠানো
হয়েছে। কিন্তু জ্ঞানী সেই যে, এ
পরীক্ষার অনুভূতি লাভ করেছে। আর
এ পরীক্ষার অনুভূতি এই যে, মানুষ
তার স্রষ্টা ও মনিবের হুকুম
বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নিবে। আল্লাহ
ঈমানদারদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচার এবং
নিজের স্ত্রী, সন্তানদেরকে তা থেকে বাঁচানোর
জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
তাহলে
ঈমানের দাবী এই যে,
প্রত্যেক মুসলমান নিজে নিজেকে এবং
তার বিবি- বাচ্চাকে, জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর
জন্য ৬০ গুণ বেশি
চিন্তিত থাকবে। যেমন সে তার
বিবি-বাচ্চাকে দুনিয়ার আগুন থেকে বাঁচানোর
জন্য প্রয়োজন অনুভব করে। এ দায়িত্ব
পূর্ণ করার জন্য প্রত্যেক
মুসলমান দু'টি বিষয়
গুরুত্বের চোখে দেখবে:
কুরআন ও হাদিসের আলোকে নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব
প্রথমত: কুরআন
ও
হাদীসের
শিক্ষার
গুরুত্বঃ
মুর্খতা এবং অজ্ঞতা চাই
তা দুনিয়ার ব্যাপারেই হোক আর দ্বীনের
ব্যাপারে হোক, তা মানুষের
জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়।
স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে এরশাদ করেছেন:
এ
সর্বসাধারণের কথা, যে ব্যক্তি
পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, হাশর-নাশর সম্পর্কে অবগত
আছে, জান্নাতের চিরস্থায়ী নিয়ামতসমূহ এবং জাহান্নামের শাস্তি
সম্পর্কে অবগত আছে, তার
জীবন ঐ ব্যক্তির জীবনের
চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা হবে,
যে
ব্যক্তি অফিসিয়াল ভাবে আখেরাতকে মানে,
কিন্তু হাশর নাশরের অবস্থা
জান্নাতের চিরস্থায়ী নিয়ামত এবং জাহান্নামের শাস্তি
সম্পর্কে অবগত নয়। কিতাব ও
সুন্নাতের জ্ঞান যারা রাখে, তারা
অন্য লোকদের মোকাবেলায় অধিক সঠিক পথে
ঈমানদার এবং কদমে কদমে
তারা আল্লাহকে ভয় করে।
আল্লাহর
বাণী: অর্থ: “মূলত আল্লাহর বান্দাদের
মধ্যে শুধু (কুরআন ও হাদীসের) জ্ঞান
যারা রাখে তারাই আল্লাহকে
অধিক ভয় করে।” (সূরা
ফাতির ২৮)
দ্বীনি শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
অতএব
যারা স্বীয় সন্তানদেরকে দুনিয়ার শিক্ষা দেয়ার জন্য কুরআন ও
হাদীসের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রাখে,
তারা মূলত নিজের সন্তানদের
পরকালকে বরবাদ করে, তাদের ওপর
অধিক জুলুম করছে। আর যারা তাদের
সন্তানদেরকে দুনিয়াবী শিক্ষার সাথে সাথে, কুরআন
ও হাদীসের শিক্ষাও দিয়ে যাচ্ছে, তারা শুধু তাদের
সন্তানদেরকে তাদের পরকালই আলোকময় করছে না, বরং
নিজেরা আল্লাহর আদালতে মাথা উঁচু করে
দাঁড়াতে পারবে।
ঘর নিয়ে হাদিস
দ্বিতীয়ত:
ঘরে
ইসলামী
পরিবেশ
তৈরী:
বাচ্চার ব্যক্তিত্বকে ইসলামী ভাবধারায় গড়ে তুলতে হলে,
ঘরে ইসলামী পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা, ঘরে আসা
ও যাওয়ার সময় সালাম দেয়া,
সত্য বলার অভ্যাস গড়ে
তোলা, পানাহারের সময় ইসলামী আদবের
প্রতি লক্ষ্য রাখা। দান-খয়রাত করার
অভ্যাস গড়ে তোলা।
ঘুমানোর দোয়া ও ঘুম থেকে
উঠার দোয়ার অভ্যাস
শয়ন
ও ঘুম থেকে উঠার
সময় দোয়া পাঠের অভ্যাস গড়ে তোলা, গান-বাজনা, ছবি না রাখা,
এমনকি ফিল্মী ম্যাগাজিন, উলঙ্গ ছবি যুক্ত পেপার
ইত্যাদি থেকে ঘরকে পবিত্র
রাখা। মিথ্যা, গিবত, গালিগালাজ, ঝগড়া থেকে বিরত থাকা।
নবীদের ঘটনাবলী, ভাল লোকদের জীবনী,
কুরআনের ঘটনাবলী, যুদ্ধ, সাহাবাদের জীবন সম্বলিত বই
পুস্তক, বাচ্চাদেরকে পড়ানো।
পরস্পরের
মাঝে উত্তম আচরণ করা, এ
সমস্ত কথা সন্তানদের ব্যক্তিত্ব
গঠনে মৌলিক বিষয়বস্তু। অতএব যে পিতা-মাতা স্বীয় সন্তানদেরকে
জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর
জন্য পুরোপুরী দায়িত্ব পালন করতে চায়,
তার জন্য আবশ্যক যে,
সে তার সন্তানদেরকে কুরআন
ও হাদীসের শিক্ষা দেয়ার সাথে সাথে ঘরের
মধ্যে পূর্ণ ইসলামী পরিবেশ তৈরী করা।
মানুষের নিকট পাপ কর্মকে শোভনীয় করব
আল্লাহর
নির্দেশ অমান্য করার পর শয়তান
যখন বিতাড়িত হলো তখন সে
অঙ্গিকার করল যে, “হে
আমার রব! আমি পৃথিবীতে
মানুষের নিকট পাপ কর্মকে
অবশ্যই শোভনীয় করে তুলব। আর
আমি তাদের সকলকেই বিপথগামী করেই ছাড়ব। (সূরা
হিজর ৩৯)
অন্যত্র
আল্লাহ শয়তানের এ উক্তিটি হুবহু
নকল করেছেন যে, “অতঃপর আমি
তাদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য তাদের
সম্মুখ দিয়ে, পিছন দিয়ে, ডান
দিক দিয়ে এবং বাম দিক
দিয়ে তাদের নিকট আসব, (সূরা
আরাফ ১৭)
শয়তান দিন
রাত
প্রত্যেক
মানুষের
পিছনে
লেগে
আছে
মূলত
শয়তান দিন রাত প্রত্যেক
মানুষের পিছনে লেগে আছে, যাতে
মৃত্যুর পূর্বে তাকে কোনো না
কোনো ফেতনায় ফেলে, জান্নাতের রাস্তা থেকে দূরে সরিয়ে
জাহান্নামের রাস্তায় নিক্ষেপ করতে পারে। মানুষকে
পাপের মধ্যে লিপ্ত রাখা ও তাকে
আমলহীন করার জন্য শয়তানের
সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো
এই যে, “আল্লাহ অত্যন্ত
ক্ষমাশীল এবং অত্যন্ত দয়ালু,
তিনি সবকিছু ক্ষমা করে দিবেন।”
এতে
কোনো সন্দেহ নেই যে, আল্লাহর
রহমত অত্যন্ত প্রশস্ত, আর তাঁর রহমত
তাঁর রাগের ওপর বিজয়ী। কিন্তু
এ রহমত প্রাপ্তির জন্যও
আল্লাহর দেয়া নিয়ম- কানুন কুরআন মাজীদে স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
ক্ষমা নিয়ে আল্লাহর বাণী
এ
আয়াতে আল্লাহ ক্ষমা করার জন্য চারটি
শর্ত করেছেন:
১.
তাওবাঃ
যদি কোনো ব্যক্তি প্রথমে
কুফর ও শিরকের মাঝে
লিপ্ত ছিল, তাহলে কুফর
ও শিরক থেকে বিরত
থাকা, তবে যদি কোনো
ব্যক্তি কাফির বা মুশরিক না
হয়, কিন্তু কবীরা গুনাহ করেছে তাহলে তার কবীরা গুনাহ
থেকে বিরত থাকা বা
তা পরিত্যাগ করা তার জন্য
প্রথম শর্ত।
২.
ঈমানঃ
বিশ্বস্ত অন্তর নিয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের
প্রতি ঈমান এনে, সাথে
সাথে আসমানী কিতাবসমূহ এবং ফেরেশতাগণ ও
আখেরাতের প্রতি ঈমান আনা দ্বিতীয়
শর্ত।
৩.
নেক
কাজঃ
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের
প্রতি ঈমান আনার পর
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের
নির্দেশ মোতাবেক, জীবন যাপন করা,
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসূল সাঃ-এর সুন্নাতের
অনুসরণ করা তৃতীয় শর্ত।
৪.
অবিচল
থাকাঃ
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের
আনুগত্যে যদি কোনো বিপদাপদ
আসে, তখন ঐ পথে
অবিচল থাকা চতুর্থ শর্ত।
যে
ব্যক্তি উল্লেখিত চারটি শর্ত পূর্ণ করবে,
তার সাথে আল্লাহ ক্ষমা
ও দয়ার ওয়াদা করেছেন। এ হলো দয়া
করা ও মানুষের গুনাহ
মাফ করার ব্যাপারে আল্লাহর
বেঁধে দেয়া নিয়ম-নীতি। অন্যত্র আল্লাহ তাআলা তাওবার নিয়ম বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন
যে, ঐ লোকদের তাওবা
কবুল যোগ্য যারা না জেনে
ভুলবশত গুনাহ করেছে, কিন্তু যারা জেনেশুনে গুনাহ
করে চলছে, তাদের জন্য ক্ষমা নয়
বরং বেদনাদায়ক শাস্তি।
জাহান্নামের আজাব
অর্থ:
নিশ্চয় তাওবা কবুল করা আল্লাহর
জিম্মায় তাদের জন্য, যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ
কাজ করে। তারপর শীঘ্রই
তাওবা করে। অতঃপর আল্লাহ
এদের তাওবা কবুল করবেন আর
আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। আর তাওবা নেই
তাদের, যারা অন্যায় কাজ
করতে থাকে, অবশেষে যখন তাদের কারো
মৃত্যু এসে যায়, তখন
বলে, আমি এখন তাওবা
করলাম, আর তাওবা তাদের
জন্য নয়, যারা কাফির
অবস্থায় মারা যায়; আমি
এদের জন্যই তৈরী করেছি যন্ত্রণাদায়ক
আজাব। (সূরা নিসা ১৭-১৮)
এ
আয়াতে তিনটি বিষয় অত্যন্ত স্পষ্টভাবে আলোচিত হয়েছে:
১.
গুনাহ থেকে ক্ষমা শুধু
ঐ সমস্ত লোকদের জন্য যারা অজ্ঞতা
বা ভুল করে গুনাহ
করতেছে।
২.
জীবনভর ইচ্ছাকৃত গুনাহকারীদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক
আজাব।
৩.
কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণকারীদের জন্যও রয়েছে বেদনাদায়ক আজাব।
তাবুকের যুদ্ধে
কা'ব
বিন
মালেক
(রা)
নবী
সাঃ-এর যুগে সংঘটিত
তাবুকের যুদ্ধে কা'ব বিন
মালেক (রা), হেলাল বিন
উমাইয়্যা (রা) এবং মুররা
বিন রাবি (রা) ভুলক্রমে অলসতা
করেছিল, আর তখন তারা
তিন জনেই তাওবা করল,
আর আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করলেন। অথচ
ঐ যুদ্ধেই মুনাফিকরা ইচ্ছা করে রাসূল সাঃ
এর নাফরমানী করল, তারাও তাঁর
নিকট উপস্থিত হয়ে ক্ষমা চাইল
এবং রাসূল সাঃ-কে সন্তুষ্ট
করতে চাইল।
তখন
আল্লাহ পরিষ্কারভাবে ঘোষণা দিলেন যে, অর্থ: “তারা
হচ্ছে অপবিত্র আর তাদের ঠিকানা
হচ্ছে জাহান্নাম। ঐ সব কর্মের
বিনিময়ে যা তারা করত”
(সূরা তাওবা ৯৫)
আশারায়ে মুবাশশারা
সাহাবাগণের
মধ্যে বেশিরভাগ এমন ছিল যে,
যাদেরকে রাসূল সাঃ অত্যন্ত স্পষ্ট
করে দুনিয়াতেই জান্নাতের সু-সংবাদ দিয়েছিলেন।
যেমন: আশারা মোবাশশারা (জান্নাতের সু সংবাদ প্রাপ্ত
দশজন), বদরের যদ্ধে অংশগ্রহণ কারীগণ, বৃক্ষের নীচে বাইয়াত কারীরা
কিন্তু এতদ সত্ত্বেও তারা
আল্লাহর ভয়ে এত ভীত
সন্ত্রস্ত থাকত যে, আখেরাতের
কথা স্মরণ হওয়া মাত্রই তারা কাঁদতে শুরু
করত।
ওসমান
(রা)-এর মত ব্যক্তি
যাকে রাসূল সাঃ একবার নয়,
বরং কয়েকবার জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন, এরপরও কবরের কথা স্মরণ হওয়া
মাত্রই এত কাঁদতেন যে,
তাঁর দাড়ি ভিজে যেত। ওমর
(রা) জুমআর খোতবায় সূরা তাকভীর তেলাওয়াত
করতে ছিলেন, যখন এ আয়াত
তেলাওয়াত করলেন: তখন এত ভীত-সন্ত্রস্ত হলেন যে, তাঁর
আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল।
জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি
ঘুম
হারাম
করেছে
সাদ্দাদ
বিন আওস যখন বিছানায়
শুইতেন, তখন একাত ওকাত
হতেন ঘুম আসত না,
আর বলতেন ‘হে আল্লাহ! জাহান্নামের
ভয় আমার ঘুম হারাম
করে দিয়েছে' এর পর উঠে
গিয়ে সকাল পর্যন্ত নামাযে
কান্নাকাটি করতেন।
আবু
হুরাইরা (রা) বলেন: সূরা
নাজম নাযিল হওয়ার সময় সাহাবাগণ এ
আয়াত শুনে এত কাঁদতেন
যে, দু'নয়নের অশ্রুতে
গাল ভেসে পড়তে ছিল,
রাসূল সাঃ না কান্নার আওয়াজ
শুনে সেখানে উপস্থিত হলেন, তাঁরও নয়ন অশ্রু প্রবাহিত
হতে লাগল।
অর্থ:
“তোমরা কি একথায় বিস্ময়
বোধ করছ? এবং হাসি
ঠাট্টা করছ! ক্রন্দন করছ
না?” (সূরা নাজম: ৫৯-৬০) আবদুল্লাহ বিন
ওমর (রা) সূরা মুতাফফিফীন
পাঠ করতে ছিলেন যখন
এ আয়াতে পৌঁছল তখন এত কাঁদলেন
যে নিজে নিজেকে কন্ট্রোল
করতে পারছিলেন না এবং তিনি
পড়ে গেলেন।
মৃত্যুর যন্ত্রণা কত কঠিন
আব্দুল্লাহ
বিন আব্বাস (রা) সূরা ক্বাফ
তেলওয়াত করতে করতে যখন
এ আয়াতে পৌঁছল: অর্থ: “মৃত্যু যন্ত্রণা সত্যই আসবে, এ থেকেই তোমরা
অব্যাহতি চেয়ে ছিলে।” (সূরা ক্বাফ ১৯)
তখন
কাঁদতে কাঁদতে তার নড়াচড়া বন্ধ
হয়ে গেল।
আবু
হুরাইরা (রা) মৃত্যু শয্যায়
শায়িত অবস্থায় কাঁদতে লাগল, লোকেরা তার কান্নার কারণ
জানতে চাইলে, তিনি বললেন: আমি
পৃথিবীর (টানে) কাঁদছিনা বরং এ জন্য
কাঁদছি যে, তোমার দীর্ঘ
সফরে পথের সম্বল খুবই
কম। আমি এমন এক
টিলার সামনে এসে উপস্থিত হয়েছি
যে, যার সামনে জান্নাত
ও জাহান্নাম, অথচ আমার জানা
নেই যে, আমার ঠিকানা
কোথায়?
আবু
দারদা (রা) আখেরাতের ভয়ে
বলছিল “হায় আমি যদি
কোনো বৃক্ষ হতাম যা কেটে
ফেলা হত, আর প্রাণীরা
তাকে ভক্ষিত তৃণ সাদৃশ করে
দিত।
ইমরান
বিন হুসাইন (রা) বলতেন হায়!
আমি যদি কোনো টিলার
বালু কণা হতাম যা
বাতাস উড়িয়ে নিয়ে যেত।
আল্লাহর
সামনে উপস্থিত হওয়া এবং হিসাব নিকাশ,
আমলনামা, অতঃপর জাহান্নামের আজাবের কারণে এ অবস্থা শুধু
দু'একজন নয় বরং
সমস্ত সাহাবাগণই এরূপই ছিল।
আল্লাহ ক্ষমাশীল আরবি
প্রশ্ন
হলো সাহাবাগণের কি এ কথা
জানা ছিল না যে,
আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু? তাদের
কি জানা ছিল না
যে আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করতে পারেন? তাদের
কি একথা জানা ছিলনা
যে, আল্লাহর রহমত তাঁর গজবের
ওপর বিজয়ী। সবই তাদের জানা
ছিল বরং আমাদের চেয়ে
তারা এ বিষয়ে আরো
অধিক জ্ঞান রাখতেন। কিন্তু আল্লাহর বড়ত্ব, গৌরব ও মর্যাদার
ভয় সর্বদা অন্তরে রাখা ও একটি
ইবাদত।
আল্লাহর
বাণী: অর্থ: “অতএব যদি তোমরা
বিশ্বাসী হও তাহলে ওদেরকে
ভয় কর না বরং
আমাকেই ভয় কর” (সূরা
আলে ইমরান ১৭৫)
ফেরেশতারাও তাঁর আজাবকে ভয় করে
এ
কারণে আল্লাহর ফেরেশতারাও তাঁর আজাব ও
পাকড়াওকে ভয় করে। রাসূল
সাঃ-ও আল্লাহর আজাব
ও গ্রেফতারের ভয়ে ভীত থাকতেন।
তিনি বলেন: অর্থ: “আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে
তোমাদের সবার চেয়ে অধিক
ভয় করি।" (বুখারী শরীফ)
রাসূল
সাঃ স্বীয় দোআসমূহে স্বয়ং আল্লাহর ভয় কামনা করতেন।
তাঁর দোআসমূহের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দোআ
এ ছিল যে, অর্থ:
“হে আল্লাহ তুমি আমাকে তোমার
এতটা ভয় দান কর
যা, আমার ও তোমার
নাফরমানির মাঝে বাধা হবে।”
(তিরমিযী) অন্য এক দোআয়
রাসূল সাঃ আল্লাহর ভয়
শূন্য অন্তর থেকে আশ্রয় কামনা
করেছেন।
আল্লাহকে ভয় কর
অর্থ:
“হে আল্লাহ! আমি এমন অন্তর
থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই,
যা তোমাকে ভয় করে না।
তাবেয়ী,
তাবে তাবেয়ী অর্থাৎ: সোনালী যুগের সমস্ত মানুষ আল্লাহর আজাব ও গ্রেফতারকে
অধিক পরিমাণে ভয় করত। আল্লাহর
ভয় থেকে নির্ভয় হয়ে
যাওয়া কবীরা গুনাহ। যার ফলে নিজে
নিজেকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করা।
আল্লাহর
বাণী: অর্থ: “সর্বনাশগ্রস্ত সম্প্রদায় ব্যতীত কেউই আল্লাহর গ্রেফতার
থেকে নিঃশঙ্কক হতে পারে না
(সূরা আরাফ ৯৯)
আল্লাহ ক্ষমাশীল এ সম্পর্কে পাঁচটি বাক্য
অতএব
আল্লাহর ক্ষমা ও দয়ার আকাঙ্ক্ষা
ঐ ব্যক্তির রাখা দরকার, যে
আল্লাহকে ভয় করে জীবনযাপন
করে, আর তার অজান্তে
হয়ে যাওয়া গুনাহসমূহের জন্য সর্বদা ক্ষমা
প্রার্থনা করতে থাকে। কিন্তু
যে ব্যক্তি সর্বদা গুনাহ করে চলছে আর
একথা মনে করতেছে যে,
আল্লাহ অত্যন্ত দয়ালু ও ক্ষমাশীল তার
দৃঢ় বিশ্বাস করা দরকার যে,
সে সরাসরি শয়তানের চক্রান্তে লিপ্ত আছে।
যার
শেষ ফল ধ্বংস ব্যতীত
আর কিছুই নয়। লোকেরা জাহান্নামের
আজাব সম্পর্কে সতর্ক হয়ে তা থেকে
বাঁচার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা
করবে। এ জন্য জরুরী
ছিল যে, লোকদেরকে এ
সমস্ত কবীরা গুনাহ থেকে সতর্ক করা
যা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে।
এ
জন্য আমরা কোনো লম্বা
আলোচনায় না গিয়ে ইমাম
সাহাবীর 'কিতাবুল কাবায়ের থেকে কবীরা গুনাহসমূহের
সূচী পেশ করছি। এ
আশায় যে আল্লাহর শাস্তিকে
ভয় কারী, নেককার মুত্তাকী লোকেরা এ থেকে অবশ্যই
উপকৃত হবে ইনশাআল্লাহ।
৭০ টি কবিরা গুনাহের তালিকা
১.
শিরক করা ৷
২.
অন্যায়ভাবে কাউকে
হত্যা করা।
৩.যাদু করা বা
করানো।
8. নামায
ত্যাগ করা৷
৫.
যাকাত না দেয়া।
৬.
বিনা ওজরে রমযানের রোযা
ত্যাগ করা।
৭.
ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও হজ্জ
না করা।
৮.
পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া।
৯.
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা।
১০.
ব্যভীচার করা। পুরুষে পুরুষে ব্যভীচার করা।
১২.
সুদ আদান প্রদান করা,
তা লিখা, এ বিষয়ে সাক্ষী
থাকা ইত্যাদি একই ধরনের কবীরা
গুনাহ।
১৩.
ইয়াতীমের সম্পদ খাওয়া।
১৪.
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের
নামে মিথ্যা কথা চালিয়ে দেয়া।
১৫.
জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা
৷
১৬.
শাসক তার অধিনস্তদের প্রতি
যুলুম করা।
১৭.
অহংকার করা।
১৮.
মিথ্যা সাক্ষী দেয়া।
১৯.
মিথ্যা কসম করা।
২০.
জুয়া খেলা।
২১.
নির্দোষ মহিলাদেরকে মিথ্যা অপবাদ দেয়া।
২২.
গনীমতের মাল আত্মসাত করা।
২৩.
চুরি করা।
২৪.
ডাকাতি করা।
২৫.
মদ পান করা।
২৬.
যুলুম করা।
২৭.
চাঁদাবাজী করা।
২৮.
হারাম খাওয়া।
২৯.
আত্মহত্যা করা।
৩০.
মিথ্যা বলা।
৩১.
কিতাব ও সুন্নাত বিরোধী
বিচার ফায়সালা করা।
৩২.
ঘুষ নেয়া।
৩৩.
নারী পুরুষ একে অপরের সাদৃশ্যতা
অবলম্বন করা।
৩৪.
দাইউস হওয়া (নিজের স্ত্রীকে অন্য পুরুষের সহবাসে
দেয়া এবং তার উপার্জন
ভোগ করা)
৩৫.
হিলা (তিন তালাক প্রাপ্ত
মহিলার সাময়িক বিবাহ, যা পূর্ব স্বামীর
সাথে পুনঃ বিবাহে সহায়তা
করে)। করা বা
করানো।
৩৬.
পেসাব থেকে সাবধানতা অবলম্বন
না করা।
৩৭.
লোক দেখানো কাজ করা।
৩৮.
পার্থিব সুবিধা লাভের জন্য দ্বীনি ইলম
অর্জন করা এবং দ্বীনি
ইলম গোপনকরা।
৩৯.
খিয়ানত করা।
৪০.
উপকার করে তা বলে
বেড়ানো।
কবিরা গুনাহের
তালিকা
৪১.
তাকদীর (ভাগ্যকে) অস্বীকার করা।
৪২.
অপরের গোপনীয়তা প্রকাশ করা।
৪৩.
চোগলখোরী (এক জায়গার কথা
অন্য জায়গায় লাগানো) ও গীবত (পরনিন্দা)
করা।
৪৪.
লা'নত (অভিসম্পাত) করা।
8৫.
ওয়াদা ভঙ্গ করা।
৪৬.
গণকদের কথা বিশ্বাস করা।
৪৭.
স্বামীর সাথে স্ত্রীর চরিত্রহীন
আচরণ করা।
৪৮.
ছবি তোলা।
৪৯.
(আত্মীয়-স্বজনদের মৃত্যুতে) উচ্চ স্বরে কান্না-কাটি করা।
৫০.
স্ত্রীর কাজের লোকদের সাথে খারাপ আচরণ
করা।
৫১.
প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া।
৫২.
মুসলমানের ওপর হস্তক্ষেপ করা।
৫৩.
টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান
করা।
৫৪.
পুরুষের রেশম ও স্বর্ণ
ব্যবহার করা ৷
৫৫.
কাজের লোক ভেগে যাওয়া।
৫৬.
আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে
প্রাণী যবাই করা।
৫৭.
আপন পিতা ব্যতীত অপরের
প্রতি নিজের সম্পর্ক স্থাপন করা
৫৮.
অন্যায়ভাবে ঝগড়া করা।
৫৯.
নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি অপরকে না
দেয়া।
৬০.
ওজনে কম করা।
৬১.
আল্লাহর শাস্তি থেকে নির্ভয় হওয়া।
৬২.
সগীরা (ছোট গুনাহর) ওপর
অটল থাকা।
৬৩.
কোনো ওজর ব্যতীত জামাআত
ছেড়ে একা নামায পড়া।
৬৪.
ইসলাম বিরোধী উপদেশ (ওসীয়ত) করা ৷
৬৫.
কাউকে ধোঁকা দেয়া।
৬৬.
ইসলামী রাষ্ট্রের গোপন তথ্য ফাঁস
করা।
৬৭.
সাহাবাগণকে গালি দেয়া।
কবিরা গুনাহের তালিকা
এ
সমস্ত গুনাহ ঐ কবীরা গুনাহর
অন্তর্ভুক্ত যার যে কোনো
একটিতে লিপ্ত হওয়াই মানুষের জাহান্নামে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। অতএব
জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য
জরুরী হলো এই যে,
প্রথমত এ সমস্ত কবীরা
গুনাহ থেকে পরিপূর্ণভাবে বেঁচে
থাকা।
দ্বিতীয়ঃ আর কখনো যদি
মানুষিক কোনো কারণে কোনো
কবীরা গুনাহ হয়ে যায়, তাহলে
সাথে সাথে আল্লাহর নিকট
তাওবা করে ভবিষ্যতে কখনো
ঐ গুনায় লিপ্ত না হওয়ার জন্য
কঠোর মনোভাব গ্রহণ করবে।
তৃতীয়তঃ ঐ গুনাহর মাধ্যমে
যদি কোনো মানুষের হক
নষ্ট হয়, তাহলে তার
ক্ষতি পূরণ দেয়া বা
তার কাছ থেকে ক্ষমা
চেয়ে নেয়া। আর কোনো কারণে
(যেমন ঐ ব্যক্তি মৃত্যুবরণ
করেছে) যদি তা সম্ভব
না হয়, তাহলে তার
জন্য বেশি বেশি করে
ক্ষমা প্রার্থনা করবে।
চতুর্থঃ সগীরা গুনাহসমূহকে মাফকারী নেক আমল যেমন
নফল নামায, নফল রোযা, নফল
সাদকা, বেশি বেশি করে
করবে। কিন্তু এ কথা স্মরণ
রাখতে হবে যে, ইচ্ছাকৃতভাবে
কোনো সগীরা গুনাহর ওপর অটল থাকা,
সগীরা গুনাহকে কবীরা গুনায় পরিণত করে। যার জন্য
তাওবা করা জরুরী।
সগিরা গুনাহ মাফ
হয়
নেক
আমলের কারণে ঐ সমস্ত সগীরা
গুনাহ মাফ হয় যা
মানুষের অনিচ্ছা সত্ত্বেও হয়ে থাকে। উল্লেখিত
বিষয়সমূহ পালন করার পর
আল্লাহর নিকট দৃঢ় আশা
রাখতে হবে, যেন তিনি
স্বীয় দয়া ও অনুগ্রহের
মাধ্যমে অবশ্যই জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করেন
এবং তাঁর নিআমত ভরপুর
জান্নাতে প্রবেশ করান। আর তা আল্লাহর
জন্য মোটেও কষ্টকর নয়।
উল্লেখিত
সমস্ত গুনাহসমূহ সম্পর্কে ইমাম যাহাবী কুরআন
ও হাদীসের আলোকে রেফারেন্স সহ একথা প্রমাণ
করতে চেয়েছেন যে, এ সবগুলোই
কবীরা গুনাহ।
পোস্ট ট্যাগঃ